অনলাইন সীমান্তবাণী ডেস্ক : কৃষকের সেচযন্ত্র থেকে শুরু করে ব্যবসায়ীর মিটার, হরহামেশাই চুরি হচ্ছে। রবিবার দিবাগত রাতে নাটোরের গুরুদাসপুর পৌর শহরের চাঁচকৈড় কাঠহাট থেকে অন্তত ১৩টি বাণিজ্যিক মিটার চুরি হয়েছে। চুরি হচ্ছে বাসা-বাড়ির জামাকাপর, হাঁড়িপাতিলও।
এভাবে চুরির হিড়িক পড়লেও চুরি রোধে বা চোর ধরতে দৃশ্যত কোনো পদক্ষেপ নিতে নিচ্ছেন না গুরুদাসপুর থানা পুলিশ। এখন চোর চক্রের জালায় অতিষ্ঠ উপজেলাবাসী।
স্থানীয় সূত্র জানিয়েছে, বিকাশে টাকা পাঠিয়ে বৈদ্যুতিক মিটার ফিরে পাওয়া গেলেও ফিরে পাওয়া যায়না কৃষকের সেচযন্ত্রগুলো। রোববার (১৯ জানুয়ারি) দিবাগত রাতে চাঁচকৈড় বাজার থেকে আল মামুন, আলাল উদ্দিন, শামীম হোসেন, জামাল আলী, ভাদু সরকার, মহাতাব সরকার, আতিক হোসেন, তাজ সরকার, মোস্তফা, ময়েন উদ্দিন ও মহাসিনের কয়েকটি ‘স’ মিল, ওয়ার্কশপ, রাইসমিল, আইসক্রিম মিলসহ বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান থেকে অন্তত ১৩টি মিটার চুরি গেছে।
মিটার চুরি হওয়া প্রতিষ্ঠানের স্বত্বাধিকারীরা বলেন, চলনবিলের ব্যস্ততম বাণিজ্যিক হাটবাজার চাঁচকৈড়। এই বাজার থেকে এক রাতে ১৩টি প্রতিষ্ঠানের বাণিজ্যিক মিটার চুরি যাওয়ায় সোমবার দিনজুড়ে এসব ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম বন্ধ ছিল। এতে তারা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন।
ভুক্তভোগীরা বলেন, সোমবার সকালে শ্রমিকরা প্রতিষ্ঠানে এসে বিদ্যুৎ পাননি। একপর্যায়ে দেখেন মিটার নেই। মিটার খুলে নেওয়ার পর সেখানেই চোর চক্রের বিকাশ নম্বর সংবলিত মোবাইল নম্বর লিখে রাখা হয়েছে। ফেরতের জন্য চাহিদা হিসেবে প্রতিটি মিটার বাবদ ১০ হাজার টাকা দাবি করা হয়েছে। আর ৫ হাজার টাকায় চুরি যাওয়া মিটারের সন্ধান দেওয়ার কথা চিরকুটে লিখেছেন চোর চক্র।
ভুক্তভোগী আল মামুন জানান, গেল রাতে তার বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের দুটি মিটার চুরি গেছে। মিটার ফেরত দিতে যোগাযোগের জন্য একটি এবং বিকাশে টাকা পাঠানোর জন্য আরেকটি মোবাইল নম্বর দিয়েছে চোরচক্র। বিকাশে টাকা পাঠিয়ে একটি পুকুরের কচুড়িপানার মধ্যে দুটি মিটার পেয়েছেন তিনি। অথচ প্রযুক্তির ব্যবহারে সেই মোবাইল নম্বর থেকেও চোর ধরতে পারছে না পুলিশ।
স্থানীয়রা জানান, কিছুদিন আগে একই কায়দায় গারিষাপাড়া এলাকায় ১৩ টি মিটার চুরি হয়। তারাও টাকা দিয়ে চোর চক্রের সাথে সমঝোতা করে মিটার ফেরত পেয়েছেন। এমন ঘটনা নিয়মিত ঘটলেও চোরচক্রের সদস্যরা অধরা রয়েছেন।
নাটোর পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-২ গুরুদাসপুর জোনাল অফিসের ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার (ডিজিএম) মমিনুর রহমান বিশ্বাস বলেন, মিটার চুরি রোধে মিটারগুলো লোহার খাঁচায় তালাবন্ধ করে রাখতে গ্রাহকদের পরামর্শ দিয়েছেন তিনি।
এদিকে প্রায় ১৫দিন আগে উপজেলার ধারাবারিষা ইউনিয়নের সিধুলী ও উদবাড়িয়া মাঠ থেকে দুই রাতে দরিদ্র কৃষকের ১৮টি শ্যালো মেশিন চুরি হয়। এসব শ্যালো মেশিনগুলো ফসলের খেতে সেচ দেওয়ার কাজে ব্যবহার করা হচ্ছিল। সেচের শ্যালো হারিয়ে ৩শ বিঘায় সেচ দেওয়া নিয়ে দুশ্চিন্তায় পরেন শতাধিক কৃষক।
কৃষক তোফাজ্জল হোসেন মন্টু, আবু তাহের, তহিদুল, রফিকুল, আব্দুল আলিম বলেন, সম্প্রতি জমিতে সেচ দিতে গিয়ে তারা দেখেন শ্যালোগুলো নেই। তখন আশপাশে তল্লাশি করেও সন্ধান পাননি। চুরি যাওয়া ১৮টি শ্যালো মেশিনের পানিতে প্রায় শতাধিক ক্ষুদ্র চাষি প্রায় ৩শ বিঘা জমিতে সেচের চাহিদা মেটাতেন। এসব ঘটনায় থানায় লিখিত অভিযোগ দিয়েও কোনো প্রতিকার পাননি তারা। তাছাড়া সপ্তাহখানেক আগে পৌর শহরের অদূরের চলনালী গ্রাম থেকে অন্তত ২০টি বাড়িতে জামাকাপর-হাঁড়িপাতিল চুরির ঘটনা ঘটেছে।
মিটার এবং সেচযন্ত্র চুরির সত্যতা নিশ্চিত করে গুরুদাসপুর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) গোলাম সারওয়ার হোসেন বলেন, চোরচক্রের বিরুদ্ধে পুলিশ তদন্ত শুরু করেছে।
Leave a Reply