অনলাইন সীমান্তবাণী ডেস্ক : আগামী ২০ নভেম্বর শুরু হচ্ছে ফিফা বিশ্বকাপ ফুটবলের আসর। এর মধ্যেই ফুটবল উম্মাদনায় মেতে উঠেছেন ফুটবল ভক্তরা। প্রিয়দল ব্রাজিল ও আর্জেন্টিনার পতাকা উড়ানোর হিড়িক পড়েছে ব্রাহ্মণবাড়িয়া শহরে। এই উম্মাদনায় যুক্ত হয়েছে দক্ষিণ কোরিয়ার পতাকাও।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার বাঞ্ছারামপুর উপজেলার দড়িকান্দি ইউনিয়নের খাল্লা গ্রামের পশ্চিম পাড়ার আবু কাউছার মিন্টু নিজ বাড়ি থেকে শ্বশুর বাড়ি পর্যন্ত প্রায় ৪ কিলোমিটার লম্বা দক্ষিণ কোরিয়ার পতাকা টানিয়েছেন।
পৈতৃকভাবে পাওয়া একটি আম বাগান ও স্ত্রীর জমানো টাকা দিয়ে মিন্টু এই পতাকা বানিয়েছেন। প্রতিদিন তার এই পতাকা দেখতে দূর-দূরান্ত থেকে লোকজন ভীড় করছেন। তার এই পতাকা টানানো এলাকায় বেশ আলোড়ন সৃষ্টি করেছে।
জানা যায়, বাঞ্ছারামপুর উপজেলার দড়িকান্দি ইউনিয়নের খাল্লা গ্রামের পশ্চিমপাড়ার হাজী আবুল হাশেমের ছেলে আবু কাউছার মিন্টু ১৯৯৮ সালে জীবন-জীবিকার তাগিদে দক্ষিণ কোরিয়া যান। ২০০২ সালে ফুটবল বিশ্বকাপের আসর দক্ষিণ কোরিয়ায় হয়। সে সময় মাঠে বসে মিন্টু দক্ষিণ কোরিয়ার খেলা উপভোগ করেন। সে সময় থেকেই সে দক্ষিণ কোরিয়া ফুটবল দলকে সাপোর্ট করতে থাকেন।
সেই থেকেই সে দক্ষিণ কোরিয়া ফুটবল টিমের ভক্ত। ২০০৬ সালে মিন্টু ছুটিতে দেশে এসে বাঞ্ছারামপুর উপজেলার তেজখালী ইউনিয়নের তেজখালী গ্রামের পশ্চিম পাড়ার সাবিনা বেগমকে বিয়ে করেন। বিয়ের পর মিন্টুর দক্ষিণ কোরিয়া দলের প্রতি ভালোবাসা দেখে সাবিনাও দক্ষিণ কোরিয়া দলের ভক্ত হয়ে যান।
২০১৩ সালে মিন্টু প্রবাস জীবন শেষ করে দেশে ফিরে গাজীপুরে ব্যবসা শুরু করেন। ২০১৮ সালের ফুটবল বিশ্বকাপের সময় মিন্টু ঢাকার বিমানবন্দর এলাকার ওভার ব্রিজে প্রায় ১ হাজার ফুট লম্বা দক্ষিণ কোরিয়া ফুটবল দলের পতাকা টানিয়েছিলেন।
চলতি বিশ্বকাপকে সামনে রেখে মিন্টু ও তার স্ত্রী সাবিনা প্রায় ৫ লাখ টাকা খরচ করে মিন্টুর গ্রামের বাড়ি থেকে তার শ্বশুর বাড়ি পর্যন্ত প্রায় ৪ কিলোমিটার লম্বা দক্ষিণ কোরিয়ার পতাকা টানান।
শুধু তাই নয়, দক্ষিণ কোরিয়ার প্রতি ভালোবাসা স্বরূপ তারা প্রতিদিন ভাত খান দক্ষিণ কোরিয়ার পতাকাযুক্ত প্লেটে, পানি পান করেন দক্ষিণ কোরিয়ার পতাকাযুক্ত মগে।
নীয় বাসিন্দা অনিক মিয়া বলেন, আবু কাউছার মিন্টুর ভালোবাসা থেকেই সে এবছর বিশ্বকাপে দক্ষিণ কোরিয়াকে সমর্থন করে ৪ কিলোমিটার দীর্ঘ পতাকা টানিয়েছে। এই পতাকা বানাতে তিনি শখের আম বাগান বিক্রি করে দিয়েছেন। এই পতাকা দেখতে দূরদূরান্ত থেকে আসছে মানুষ।
এ বিষয়ে মিন্টুর স্ত্রী সাবিনা বেগম বলেন, “আমাদের বিয়ে হয়েছিল ২০০৬ সালে। এরপর থেকেই স্বামী দক্ষিণ কোরিয়া সম্পর্কে অনেক কথা জানিয়েছেন। তার কাছ থেকে শুনে আমিও দক্ষিণ কোরিয়া ফুটবল দলকে সমর্থন করি। দক্ষিণ কোরিয়ার প্রতি ভালবাসা থেকে চার বছর ধরে মাটির ব্যাংকে জমানো টাকা ও আম বাগান বিক্রি করে এই পতাকা বানিয়েছি।”
এ ব্যাপারে আবু কাউছার মিন্টু বলেন, “প্রথম যখন বিশ্বকাপ দেখেছিলাম, তখন দক্ষিণ কোরিয়া দলের আঞ্জুয়ান নামের একজন খেলোয়ার দুর্দান্ত খেলতেন। তার খেলা দেখেই আমি দলটির ভক্ত হই। দক্ষিণ কোরিয়া থেকে দেশে ফিরলেও দক্ষিণ কোরিয়ার প্রতি সেই ভালোবাসা কমেনি।”
তিনি আরও বলেন, “আমি চাই, এই পতাকার মাধ্যমে দক্ষিণ কোরিয়ার মানুষ বাংলাদেশকে ভালোভাবে চিনুক ও জানুক।”
Leave a Reply