22 Feb 2025, 02:00 pm

নৈসর্গিক সৌন্দর্যের অপরূপ লীলাভূমি শেরপুরের মধুটিলা ইকো পার্ক

নিজস্ব প্রতিবেদকঃ

অনলাইন সীমান্তবাণী ডেস্ক :  নৈসর্গিক সৌন্দর্যের অপরূপ লীলাভূমি শেরপুরের মধুটিলা ইকোপার্ক। এখানকার শাল-গজারি আর নানা প্রজাতির গাছগালি ঘেরা উঁচু-নিচু টিলা ও পাহাড় ভ্রমণ পিপাসুদের মন সহজেই কেড়ে নেয়। শেরপুর জেলার নালিতাবাড়ী উপজেলার সীমান্তবর্তী এলাকায় অবস্থিত অন্যতম একটি বিনোদন কেন্দ্র হলো ‘মধুটিলা ইকোপার্ক’। ৩৮৩ একর আয়তনের এ বনকে ১৯৯৯ সালে পরিবেশ-উদ্যান বা ইকোপার্ক ঘোষণা করা হয়।

গারো পাহাড় সংলগ্ন এলাকার এ ইকোপার্কটি সবসময় ভ্রমণ পিপাসুদের পদচারণায় মুখর থাকে। প্রতি বছর শীত মৌসুমে প্রতিদিন দেশের বিভিন্ন জেলা ও বিভাগীয় শহর থেকে শিক্ষা সফর ও বনভোজনে বাস, প্রাইভেট কার মাইক্রোবাসে করে বিপুলসংখ্যক ভ্রমণপিপাসু বেড়াতে আসে।

মধুটিলায় কি কি দেখবেন : উঁচু-নিচু পাহাড়ি টিলা ও ছোট ছোট ঝরনার বয়ে যাওয়া পানির কলকল শব্দ। সেই  সঙ্গে ওইসব পাহাড়ি টিলার ওপর শত শত বছর ধরে বসবাসকারী নৃ-ক্ষুদ্র গোষ্ঠীর নানা সম্প্রদায়দের লোকদের সংস্কৃতি ও জীবন-জীবিকা।

পার্কের গেট পেরিয়ে ভেতরে ঢুকতেই চোঁখে পড়বে সারি সারি গাছ। রাস্তা থেকে ডানপাশে খোলা প্রান্তর, আর দুই পাশে রকমারি পণ্যের দোকান এবং পাহাড়ি ঢালুর আঁকাবাঁকা রাস্তা। এরপর যত এগোনো যাবে ততই মন ভরে যাবে প্রকৃতির অপার সৌন্দর্যে। পথে বুনো গাছপালার ফাঁকে ফুটে আছে হরেক রকমের বুনোফুল, আর তাতে বাহারি প্রজাপতির বিচরণ। এক পাহাড় থেকে অন্য পাহাড়ে যাওয়ার পথে ঝোপঝাড়ে দেখা মিলবে হরিণ, রয়েল বেঙ্গল টাইগার, সিংহ, বানর, বিভিন্ন প্রজাতির পাখি, হ্রদের ধারে কুমির, ব্যাঙ আর মৎস্যকন্যার অতি চমৎকার সব ভাস্কর্য।

ওয়াচ টাওয়ারে উঠে ভারতে অবস্থিত উঁচু উঁচু পাহাড় আর সীমান্তবর্তী সবুজ গারো পাহাড় দেখতে পাবেন। ভাগ্য ভালো হলে ওয়াচ টাওয়ার থেকেই মিলতে পারে বুনোহাতির দলের দেখা। হাতিরা সাধারণত শেষ বিকেলে অথবা সন্ধ্যায় গভীর অরণ্য থেকে নেমে আসে।

বিভিন্ন রাইড নিয়ে সম্পূর্ণ আলাদা করে গড়ে তোলা হয়েছে শিশুদের খেলাধুলা ও বিনোদনের জন্য শিশুপার্ক। এছাড়া এখানে রয়েছে ডিসপ্লে মডেল, তথ্যকেন্দ্র, গাড়ি পার্কিং জোন, ক্যানটিন, মিনি চিড়িয়াখানা। ওষুধি ও সৌন্দর্যবর্ধক প্রজাতির বৃক্ষ, মৌসুমী ফুলসহ বিভিন্ন রঙের গোলাপের বাগান। রয়েছে বেশ কয়েকটি পিকনিক স্পটও। পার্কটিতে জীববৈচিত্রও প্রাণির সমাহারও চোখে পড়বে।

মধুটিলায় দিনে বেলা ব্যবহারের জন্য ভ্রমণকারীদের জন্য রয়েছে মহুয়া রেস্টহাউস। তবে এখানে রাত্রিযাপন করা যায় না এবং রেস্টহাউস ব্যবহার করতে চাইলে শেরপুর ডিসি অফিস থেকে অনুমতি নিতে হয়।

প্রবেশ ফি : মধুটিলা ইকোপার্কে প্রবেশ টিকেটের মূল্য জনপ্রতি ২০ টাকা। ওয়াচ টাওয়ারে উঠার ফি জনপ্রতি ১০ টাকা। বিভিন্ন রাইডের টিকেট মূল্য ২০-১০০ টাকা।

মধুটিলায় যেভাবে আসবেন : ঢাকা থেকে মধুটিলা ইকো পার্কে যেতে ময়মনসিংহ হয়ে যাতায়াত করা সবচেয়ে সুবিধাজনক। ঢাকার মহাখালী বাসস্ট্যান্ড থেকে ড্রিমল্যান্ড বা স্পেশাল বাসে করে শেরপুর আসতে জনপ্রতি ৪৫০ থেকে ৫০০ টাকা ভাড়া লাগবে। তবে মহাখালী থেকে দুপুর ২টায় শেরপুর যাওয়ার এসি বাস পাবেন, এসি বাসের ভাড়া জনপ্রতি ৬০০ টাকা। এছাড়া ঢাকার কমলাপুর থেকে ময়মনসিংহ হয়ে জামালপুর পর্যন্ত ট্রেনে আসতে পারেন। এরপর জামালপুর স্টেশন থেকে ২০ টাকা ভাড়ায় ব্যাটারিচালিত অটোরিকশায় করে শেরপুর-জামালপুর ব্রিজে আসতে হবে। পরে সিএনজি ও অটোরিকশায় করে শেরপুর আসা যায়। ভাড়া জনপ্রতি ৪০ থেকে ৫০ টাকা। জামালপুর থেকে শেরপুরের দূরত্ব মাত্র ১৫ কিলোমিটার এবং মাত্র ২০ থেকে ২৫ মিনিটের পথ।

শেরপুর বাসস্ট্যান্ড হতে জনপ্রতি ১০ টাকা অটো রিকশা ভাড়ায় খোয়ারপাড় শাপলা চত্বর আসতে হবে। শাপলা চত্বরে মধুটিলা ইকো পার্কে যাওয়ার জন্য অটো/সিএনজি রিজার্ভ পাওয়া যায়। সারাদিনের জন্য মধুটিলা ইকোপার্ক ঘুরে আসার অটোরিকশা বা সিএনজি  ভাড়া ৮০০ থেকে ১০০০ টাকা। প্রতি অটোরিকশায় ৬/৭ জন এবং সিএনজিতে ৫ জন ওঠা যায়।

এছাড়া শেরপুর পৌরপার্ক থেকে মাইক্রোবাস বা প্রাইভেট গাড়ি রিজার্ভ করে মধুটিলা ইকো পার্কে যেতে খরচ হবে ৩০০০ থেকে ৫০০০ টাকা।

কোথায় থাকবেন : নালিতাবাড়ী উপজেলা ডাকবাংলো এবং বনবিভাগের একটি রেস্ট হাউজ আছে। এগুলোতে পূর্ব অনুমতি নিয়ে থাকতে পারবেন। এছাড়া শেরপুর জেলায় ৫০০ থেকে ৮০০ টাকায় সাধারণ মানের গেস্ট হাউজের পাশাপাশি ১০০০ থেকে ১৫০০ টাকায় বেশকিছু আধুনিক মানের হোটেল রয়েছে। পাশাপাশি শেরপুরে সড়ক ও জনপথ বিভাগ, সার্কিট হাউজ, এলজিইডি, কৃষি ইনিস্টিটিউট এবং পল্লিবিদ্যুতের পৃথক পৃথক রেস্ট হাউজ রয়েছে। মধুটিলা ইকো পার্কে রেস্ট হাউসে শুধু মাত্র দিনের বেলায় বিশ্রাম নিতে চাইলে জেলা বা উপজেলা প্রশাসনের অনুমতি নিয়ে প্রতিটি কক্ষের জন্য ৫০০ থেকে ১০০০ টাকা ভাড়া দিতে হতে পারে।

এছাড়াও যেসব জায়গায় থাকতে পারবেন। সার্কিট হাউজ। হোটেল সম্পদ প্লাজা, রঘুনাথ বাজার, শেরপুর। হোটেল অবকাশ, নিউ মার্কেট, শেরপুর। হোটেল আয়সার ইন ,রঘুনাথ বাজার, শেরপুর। হোটেল ফ্রিডম, শহীদ বুলবুল সড়ক, শেরপুর। আরাফাত গেস্ট হাউজ, বটতলা, মেঘনা হল মার্কেট, শেরপুর।

কোথায় খাবেন : খেতে চাইলে শেরপুর জেলা শহরের হোটেলগুলো সবচেয়ে ভালো। বিশেষ করে শহরের নিউ মার্কেট এলাকায় হোটেল শাহজাহান, হোটেল স্টার, আলীশান ছাড়াও হোটেল আহার, হোটেল মান্নান এবং হোটেল প্রিন্সে যেতে পারেন। এছাড়া নালিতাবাড়ী উপজেলা বাজারে বেশ কয়েকটি ভালোমানের হোটেল রয়েছে। পাশাপাশি মধুটিলা ইকো পার্কের গেইটের সামনে খাবারের হোটেলগুলোও বেশ উন্নতমানের ও পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন। এখানে রয়েছে সাদা ভাত, ডিম, মুরগির মাংস, গরুর মাংস, ছোট মাছসহ দেশিয় প্রায় সব ধরনের ভর্তা ও ভাজি।

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

  • Visits Today: 5506
  • Total Visits: 1611595
  • Total Visitors: 4
  • Total Countries: 1708

আজকের বাংলা তারিখ

  • আজ শনিবার, ২২শে ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ ইং
  • ১০ই ফাল্গুন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ (বসন্তকাল)
  • ২২শে শা'বান, ১৪৪৬ হিজরী
  • এখন সময়, দুপুর ২:০০

Archives