ফারুক আহমেদ : নড়াইল জেলার সদর উপজেলার ১২ নং বিছালি ইউনিয়নে নড়াইল জেলা বিএনপির সাবেক উপদেষ্টা সৈয়দ ফারুক আশিক, বিছালি ইউনিয়ন বিএনপির সহ সভাপতি কাজী হাসরাত, বিছালি ইউনিয়ন পরিষদের ২ নং ওয়ার্ডের মেম্বার খন্দকার মঈন উদ্দিন ও এলাকার কৃষকদের মধ্যে মির্জাপুর গ্রামের মোঃ মফিদুল ইসলাম, নিয়ামত কাজী, ওবায়দুর, কামাল মুন্সি, জুখালি গ্রামের খুশিদার সহ আরও কৃষকদের অভিযোগ লবণাক্ত পানির প্রভাবে ধান, স্বাদু পানির মাছ ও তরকারির উৎপাদন হ্রাস পাচ্ছে।।
নড়াইল জেলা বিএনপি সাবেক উপদেষ্টা সৈয়দ ফারুক আশিক (দাদা ভাই) জানান, দীর্ঘদিন থেকে আমাদের এই বিছালী ইউনিয়ন এলাকায় কৃষকগণ এই সমস্যা নিয়ে জর্জরিত এবং বিস্তৃত এলাকা দীর্ঘ ২৫ থেকে ৩০ কিলোমিটার হবে বাইলডাঙ্গা বিলটা। এই বিলে কৃষক গত কিছুদিন ধরে ধান, সবজি উৎপাদন করে জীবিকা নির্বাহ করতো কিন্তু কৃষকরা জীবিকা নির্বাহ করতে পারছে না, বিধায় তারা আর্থিক সংকটের মধ্য দিয়ে জীবন যাপন করছে। আমি ব্যক্তিগতভাবে মনে করি এটার আশু সমাধান হওয়া দরকার কিছু ঘের মালিক আছে সিঙ্গে শৈলপুর ঘেরের কথা বলবো না তবে রানাঘাটের কিছু ঘের মালিক আছে তারা লবণাক্ত পানি উঠিয়ে তাদের বাগদা চিংড়ি চাষ প্রকল্প এবং অন্যান্য লবণাক্ত মাছ চাষের জন্য লাভবান হয় যেটা সভাপতি কাজী হাসরাত সাহেব বললেন। কিন্তু বাকি বিস্তৃত এলাকা এই এলাকাটা ফসলি জমিগুলা নষ্ট হচ্ছে এবং আমাদের যে সাদা মাছ আমরা চাষ করি ও গলদা চাষ করি সার্বিক ভাবে এই কৃষক ক্ষতিগ্রস্থ আর এই ক্ষতিগ্রস্থের কারণে প্রতিটা কৃষক আজ পথে বসে যাচ্ছে। আমাদের শ্লোগান কৃষক বাঁচলে আমরা বাঁচবো আজকে কৃষক বাঁচছেনা তাহলে আমরা বাঁচবো কেমনে, এটার আশু প্রতিকার চাচ্ছি এবং নড়াইল পানি উন্নয়ন বোর্ডের হস্তক্ষেপ চাচ্ছি। আমরা বারবার বলছি তাদের সুবিধামতো তারা পানি ছাড়ে কিন্তু যখন আমাদের পানি প্রয়োজন তখন তারা ছাড়ে না, এই জিনিসগুলো মাথায় রেখে লবণাক্ত পানি ঢুকাতে হয় তাহলে অবশ্যই পানি উন্নয়ন বোর্ড সেটার প্রতিকার করবে কিভাবে আমরা ধান চাষ করতে পারি, সবজির উৎপাদন করতে পারি, মাছ উৎপাদন করতে পারি সেখানে যেন ক্ষতিগ্রস্থ না হয় সেই পদক্ষেপ নিতে হবে। বিলের বিস্তৃত ২৫ কিলোমিটার এলাকায় নড়াইল জেলা মৎস্য কর্মকর্তার কাছে মৎস্য সংরক্ষণ মা মাছ সংগ্রহ ও সংরক্ষণের জন্য অভয়াশ্রম করার অনুরোধ জানিয়েছি। সরোজমিনে এসে খাল গুলিতে একটা অথবা দুইটা মৎস্য অভয়ারণ তৈরি করেন। যাতে মাছগুলো সংরক্ষণ থাকে এবং আমরা আগামীতে প্রচুর পরিমাণ বিলের মাছ পাই। তাতে আমাদের দেশও বাঁচবে কৃষকরা বাঁচবে তা না হলে এই জনপদ এই সমাজ বিলুপ্ত হয়ে যাবে। আজকে কৃষকরা অনেক অভাব বন্টন অনেক কষ্টে তারা কষ্টার্জিত করে কিন্তু ফসল যদি ঘরে না উঠাতে পারে ফলে তাদের এই শ্রম ও অর্থ এবং কিভাবে তারা সংসার পরিচালনা করবে এটা আমার বোধগম্য নয়। সর্বশেষ মিডিয়ার মাধ্যমে সরকার এবং আমাদের বিএনপি দল এই দেশটাকে কৃষক নির্ভরশীল এবং কৃষকদের প্রতি সহমর্মিতা সরকার এবং বিএনপি দলের আছে। যেহেতু সরকার ও দলের সহমর্মিতা আছে তাহলে আমাদের সরকারি সর্বোত্তক সহযোগিতা করতে হবে এই কৃষককে বাঁচানোর জন্য। যাতে এই কৃষক শস্য উৎপাদন, মাছ চাষ, ধান উৎপাদন করতে পারে এবং সুস্থ ভাবে জীবিকা নির্বাহ করতে পারে। সংযোগস্থল হচ্ছে সিঙ্গে সুইচগেট থেকে খড়েলা, ঈদিয়া, রুখালী, নলামারা বিল দিয়ে ২৫-৩০ কিলোমিটার এরিয়া হবে। এই এরিয়া লবণাক্তের জন্য ধান চাষ করতে পারছে না এবং পাঁচটি ইউনিয়নের সংযোগস্থল এখন যেটা মোটা ধান হচ্ছে এটাও নষ্ট হয়ে যাচ্ছে দিলে সরজমিনে গিয়ে দেখেন ও পরিদর্শন প্রত্যেক কৃষকের ধান হচ্ছে না ধানে কিন্তু চিঠে হয়ে গেছে। তাহলে কৃষক বাঁচবে কি সে তো ক্ষতিগ্রস্থ। বছরে দেখা গেলো ৫০-১০০ মণ ধান হয় সেটা বিক্রি করে সে তার সংসার চালায় পরিবার ও ছেলে মেয়ে নিয়ে।
১২ নং বিছালী ইউনিয়ন বিএনপির সহ সভাপতি কাজী হাসরাত জানান, এই অঞ্চলে প্রধান হচ্ছে দুই ফসলি জমি এখন যে ইরি ধান হচ্ছে এর উপর কিছু অসাধু ঘের মালিক এই সুইচ গেটের পাহারাদার তাদের যোগসাজশে লোনা পানি ঢুকাই। তাদের অধিক লাভবান হওয়ার জন্য দক্ষিণ অঞ্চলের লোনা মাছ চাষ করে তারা যোগসাজশে লোনা পানি ঢুকায়। যে কারণে দ্বিতীয়বার যে ফসল চাষ করা হয় আর এই ফসলের প্রচন্ড ক্ষতিগ্রস্থ হয় আর এর জন্য এই অঞ্চলের কৃষকের মেরুদন্ড ভেঙে গেছে। এখন আমরা চাই এই লোনা পানি থেকে পরিত্রাণ দিয়ে দুইটা ফসল সমানভাবে পাই, কৃষক এইদিকে দেখার জন্য যথাযথ কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন জানাচ্ছি।
বিছালী ইউনিয়ন পরিষদের ২ নং ওয়ার্ডের মেম্বার খন্দকার মঈন উদ্দিন জানান, আমি মনে করছি এই রানাঘাটের গেট দিয়ে লোনা পানির আসার কারণে এখানে আমাদের কৃষি ফসল ধান, পাট ও অন্যান্য কৃষি ফসল আছে এবং আমাদের এলাকায় যে মৎস্য সম্পদ আছে আপনারা জানেন আমাদের এই অঞ্চলের অনেক বৃহৎ বৃহৎ মাছের খামার আছে। আমাদের এলাকার কৃষক লোনা পানির কারণে প্রচন্ড আকার ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে যথাযথ কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন করি এই সমস্যার যেন অতি দ্রুত সমাধান হয়। আমাদের বাইলডাঙ্গা বিলের জন্য দুইটা সুইচগেট আছে একটা হচ্ছে সিঙ্গে শৈলপুর ও রানাঘাটে, সেরকম তদারকি নড়াইল উন্নয়ন বোর্ডের যারা আছেন এদের তদারকির গাফিলতির কারণ বা তদারকি নেই বলেই আজ এই সমস্যা।
এই অঞ্চলের কৃষকরা জানান, এই সমস্যা ধান কাটা আরম্ভ হয়ে গেলে এবং ধান কাটা শেষ হয়ে গেলে তারপরে লোনা পানি ঢুকিয়ে দেয়। আর এই লোনা পানি আটকা পড়ে যায় এবং লোনা পানি আটকা পড়ার কারণে ফসলের ক্ষতি হচ্ছে। লোনা পানি আসলে মাছের ক্ষতি, ফসলের ক্ষতি হচ্ছে, আমরা ইরি ধান কাটার পরে কিছু দুষ্কৃতি মহল লোনা পানি উঠিয়ে দেয় মাঠে। যার ফলে আউশ ধানের ক্ষতি হয়, ঘেরে চিংড়ি মাছ, সাদা মাছের মারাত্মক ক্ষতি হয়ে যায় আর এই জন্য আমরা কৃষকরা সবাই মিষ্টি পানির আশা করি বিলের মাঠে।
নড়াইল সদর উপজেলার বাইলডাঙ্গা বিল সংযোগ হচ্ছে চিত্রা নদীর সঙ্গে শোলপুর থেকে খড়োলিয়া, ঈদিয়া, রুখালী নলা মারা বিল পর্যন্ত বিস্তৃত প্রায় ২৫ কিলোমিটার ধান, শসা, টমেটো সহ সর্বপ্রকার সবজি সরিষা ও রায় ফসলের চাষ করা ব্যাহত ও উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। নড়াইল পানি উন্নয়ন বোর্ডের দায়িত্বরত তদারকি লোকজনের গাফিলতি ও অবহেলার কারণে সময়মত পানি না দেওয়ার কারণে ফসলের চাষে ধ্বস নেমেছে বিশেষ করে কৃষকরা সঠিক ধান উৎপাদন করতে পারছে না। আমরা নড়াইল জেলার যথাযথ কর্তৃপক্ষের সুদৃষ্টি কামনা করি তারা যেন লবণাক্ত পানির প্রভাব কমানোর সুব্যবস্থা করলে কৃষক সঠিকভাবে ধান উৎপাদন করতে পারবে।
এব্যাপারে মির্জাপুর গ্রামের কৃষক শেখ মফিদুল ইসলাম জানান, মির্জাপুর, রুখালী, চাকই, খলিসাখালী, বাশোয়াড়ী, ঈদিয়া, খড়োরিয়া, তারাপুর, সিঙ্গাশোলপুর, আড়পাড়া সহ আরও অনেক গ্রামে কৃষক তাদের জমিতে লোনা পানির কারণে ফসলের বিঘ্নিত ক্ষতি হচ্ছে এবং কৃষকের মাথায় হাত। মিষ্টি পানির সাদ্ধু মাছ , ধান সহ তরকারির ক্ষতি হচ্ছে মারাত্মক ভাবে।
নড়াইল সদর উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবিদ মোঃ রোকনুজ্জামান বলেন, লবণাক্ত পানির প্রভাবে ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হচ্ছে। বিশেষ করে খুলনা, সাতক্ষীরা ও বাগেরহাটের নদী দিয়ে প্রবাহিত লবণাক্ত পানির কারণে। আর ধান ও ফসলের উৎপাদন বিষয়টি নিয়ে বিছালী ইউনিয়নের মাঠ পরিদর্শন করা হবে।
নড়াইল পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী অভিজীৎ কুমার সাহা জানান, সরেজমিনে বিছালী ইউনিয়ন গিয়ে সুইচ গেটে পরিদর্শন করে লবণাক্ত পানির বিষয়টা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
নড়াইল সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার সঞ্চিতা বিশ্বাস জানান, বিছালী ইউনিয়নের মাঠে লবণাক্ত পানির প্রভাবে ফসল উৎপাদনের ব্যাহতের কারণের বিষয়টি সম্পর্কে খোঁজ খবর নিচ্ছি।
নড়াইল জেলা প্রশাসক শারমিন আক্তার জাহান কে বিছালী ইউনিয়ন পরিষদের লোনা পানির প্রভাবে ফসল ও সাদা মাছের ব্যাপক ক্ষতির বিষয়টা জানানো হয়েছে।