অনলাইন সীমান্তবাণী ডেস্ক : উন্নয়নশীল দেশে ক্রমবর্ধমান বিদ্যুতের চাহিদা পূরণের লক্ষ্যে ‘দশকব্যাপী বিরতির পর প্রথমবারের মতো’ পরমাণু জ্বালানি খাতে আবারো অর্থায়নে ফিরছে বিশ্বব্যাংক। গতকাল বুধবার এমনটাই জানিয়েছেন সংস্থাটির প্রেসিডেন্ট অজয় বাঙ্গা।
কর্মীদের কাছে পাঠানো এক ইমেইলে বাঙ্গা বলেছেন, বিশ্বব্যাংক এখন থেকে জাতিসংঘের পরমাণু পর্যবেক্ষক সংস্থা আন্তর্জাতিক আনবিক শক্তি সংস্থার সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করবে। যাতে নিরস্রীকরণ সংক্রান্ত নিরাপত্তা ও নিয়ন্ত্রক কাঠামোতে পরামর্শ দেওয়ার সক্ষমতা আরো জোরদার করা যায়।
বাঙ্গা তার বার্তায় উল্লেখ করেছেন, উন্নয়নশীল দেশগুলোতে বিদ্যুৎ চাহিদা ২০৩৫ সালের মধ্যে দ্বিগুণেরও বেশি হতে চলেছে। এই চাহিদা পূরণে, বিদ্যুৎ উৎপাদন, গ্রিড এবং সংরক্ষণ ব্যবস্থায় বার্ষিক বিনিয়োগ বর্তমানের ২৮০ বিলিয়ন ডলার থেকে বাড়িয়ে প্রায় ৬৩০ বিলিয়ন ডলারে নিয়ে যেতে হবে।
বাঙ্গা আরো বলেছেন, যেসব দেশে ইতোমধ্যে বিদ্যমান পরমাণু চুল্লি রয়েছে, সেখানে আমরা সেগুলোর কার্যকাল বাড়াতে সহায়তা করব এবং গ্রিড উন্নয়ন ও সংশ্লিষ্ট অবকাঠামোতে সহায়তা করব।
ওয়াশিংটন-ভিত্তিক এই ঋণদাতা প্রতিষ্ঠানটি ছোট আকারের পরমাণু চুল্লি বা স্মল মডুলার রিঅ্যাক্টরের ( এসএমআর) সম্ভাবনা ত্বরান্বিত করতে কাজ করবে। যাতে এগুলো ভবিষ্যতে আরো দেশের জন্য ব্যবহারযোগ্য হয়ে ওঠে।
২০২৩ সালে বিশ্বব্যাংকের নেতৃত্ব নেওয়ার পর থেকে বাঙ্গা ব্যাংকটির জ্বালানি নীতিতে পরিবর্তন আনার জন্য কাজ করে যাচ্ছেন।
বিশ্বব্যাংকের বোর্ড সভার ঠিক একদিন পর কর্মীদের উদ্দেশ্যে লেখা ওই চিঠিতে তিনি বলেছেন, ‘আমাদের লক্ষ্য হলো দেশগুলোকে তাদের জনগণের প্রয়োজনীয় জ্বালানি সরবরাহে সহায়তা করা, যাতে তারা নিজেদের উন্নয়ন কৌশল অনুযায়ী পথ বেছে নিতে পারে।’
বাঙ্গা আরো জানান, গ্রিড পারফরম্যান্স উন্নয়নের ওপর জোর দেওয়ার পাশাপাশি ব্যাংকটি কয়লা চালিত বিদ্যুৎকেন্দ্র বন্ধ বা পুনঃব্যবহারে অর্থায়ন অব্যাহত রাখবে এবং শিল্প ও বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য কার্বন ক্যাপচার প্রযুক্তিকে সমর্থন করবে।
গত এপ্রিল মাসে, আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) ও বিশ্বব্যাংকের বসন্তকালীন বৈঠকের সময় যুক্তরাষ্ট্রের অর্থমন্ত্রী স্কট বেসেন্ট বলেছেন, ব্যাংকটি উন্নয়নশীল দেশগুলোকে জ্বালানি প্রবেশাধিকারে সহায়তা করে আরো দক্ষভাবে তার সম্পদ ব্যবহার করতে পারে।
তিনি আরো বলেছেন, বিশ্বব্যাংকের উচিত ‘নির্ভরযোগ্য প্রযুক্তিতে’ বিনিয়োগ করা শুধুমাত্র ‘ক্ষতিকর জলবায়ু অর্থায়ন লক্ষ্য’ পূরণে নয়। এর অর্থ হতে পারে গ্যাস ও অন্যান্য জীবাশ্ম-জ্বালানিভিত্তিক জ্বালানি উৎপাদনে বিনিয়োগ করা।
মার্কিন অর্থমন্ত্রী স্কট বেসেন্ট সেই সময় বিশ্বব্যাংকের পরমাণু জ্বালানিতে সমর্থনের নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়ার প্রচেষ্টারও প্রশংসা করেন।
পরমাণু শক্তি অর্থায়নের পরিবর্তনের বাইরে বাঙ্গা বুধবার বলেছিলেন, ব্যাংকটি এখনো তার বোর্ডের মধ্যে ‘আপস্ট্রিম গ্যাসে জড়িত হওয়া উচিত’ কি-না এবং কোন পরিস্থিতিতে এটি করা উচিত সে বিষয়ে চুক্তিতে পৌঁছাতে পারেনি।
বিশ্বব্যাংকের বৃহত্তম শেয়ারহোল্ডার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, পরমাণু প্রকল্পগুলোকে সমর্থন করার ওপর নিষেধাজ্ঞা পুনর্বিবেচনার জন্য গ্রুপের পক্ষে প্রচারণা চালানো দেশগুলোর মধ্যে অন্যতম।