অনলাইন সীমান্তবাণী ডেস্ক : চলতি সপ্তাহে পাকিস্তানের রাজধানী ইসলামাবাদে ঘটে যাওয়া আত্মঘাতী বোমা হামলার ঘটনায় জড়িত চার ব্যক্তিকে গ্রেফতার করেছে নিরাপত্তা কর্মীরা। শুক্রবার (১৪ নভেম্বর) এ তথ্য নিশ্চিত করে দেশটির সরকার জানায়, হামলাটি আফগানিস্তান থেকেই পরিচালিত হয়েছিল।
মঙ্গলবার (১১ নভেম্বর) আদালত ভবনের বাইরে হওয়া ওই হামলার দায় স্বীকার করেছে তেহরিক-ই-তালেবান পাকিস্তান (টিটিপি), যেটি পাকিস্তানি তালেবানের একটি অংশ,। ইসলামাবাদ কর্তৃপক্ষ বলছে, গ্রেফতার চারজনই টিটিপির সঙ্গে সম্পর্কিত।
পাকিস্তান সরকারের বিবৃতিতে বলা হয়েছে, এই নেটওয়ার্ককে প্রতিটি ধাপে পরিচালনা ও দিকনির্দেশনা দিয়েছে আফগানিস্তানভিত্তিক উচ্চপর্যায়ের কমান্ড। এতে আরও জানানো হয়, অভিযুক্ত কমান্ডারসহ চারজন এখন হেফাজতে রয়েছে।
তদন্ত অব্যাহত রয়েছে জানিয়ে বিবৃতিতে আরও বলা হয়, শিগগিরই নতুন তথ্য ও আরও গ্রেফতারের সম্ভাবনা আছে। হামলাকারীর পরিচয় হিসেবে উসমান ওরফে কারির নাম জানানো হয়েছে। তিনি পূর্ব আফগানিস্তানের নানগারহার প্রদেশের বাসিন্দা। তবে কোথায় অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেফতার করা হয়েছে, সেই তথ্য জানায়নি পাকিস্তান সরকার।
বৃহস্পতিবার (১৩ নভেম্বর) সিনেটে দেশটির স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মোহসিন নাকভি বলেন, হামলাকারী ছিলেন আফগান নাগরিক। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ইসলামাবাদ বড় ধরনের জঙ্গি হামলা থেকে অনেকটাই নিরাপদ ছিল। সর্বশেষ আত্মঘাতী হামলা হয়েছিল ২০২২ সালের ডিসেম্বর মাসে।
তবে সাম্প্রতিক সময়ে দেশটিতে সহিংসতা আবারও বাড়ছে। কর্মকর্তাদের দাবি, এর প্রধান কারণ আফগান ভূমিতে আশ্রয় নেওয়া সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলো। নাকভি আরও বলেন, উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের সামরিক-সংশ্লিষ্ট শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ক্যাডেট কলেজ ওয়ানায় এ সপ্তাহে হওয়া আরেকটি হামলায়ও আফগান নাগরিকরা অংশ নেয়।
এদিকে, পাকিস্তানের এসব অভিযোগে এখনো আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া জানায়নি আফগান তালেবান সরকার। তবে দুই হামলার ঘটনায় তারা ‘গভীর দুঃখ ও নিন্দা’ প্রকাশ করেছে।
সম্প্রতি পাকিস্তান ও আফগানিস্তানের সম্পর্কে মারাত্মকভাবে অবনতি ঘটেছে। গত মাসের একটি হামলা কেন্দ্র করে সীমান্তে কয়েক বছরের মধ্যে সবচেয়ে ভয়াবহ সংঘর্ষ ঘটে দুই দেশের মধ্যে, যেখানে জাতিসংঘের তথ্য অনুযায়ী ৭০ জনের বেশি মানুষ নিহত হয়। নিহতদের মধ্যে বহু আফগান বেসামরিক নাগরিকও ছিলেন।
দুই দেশ নাজুক এক যুদ্ধবিরতিতে পৌঁছালেও কয়েক দফা আলোচনায় এর বিস্তারিত চূড়ান্ত করা যায়নি। উভয় পক্ষই অপর পক্ষকে দায়ী করেছে এ অচলাবস্থার জন্য। চলতি সপ্তাহের নতুন হামলাগুলো আবারও উত্তেজনা বাড়িয়ে দিয়েছে।
বুধবার (১১ নভেম্বর) সংসদে দেওয়া বক্তব্যে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরীফ ইসলামাবাদ হামলাকে ‘ভয়াবহ সন্ত্রাসী ঘটনা’ হিসেবে উল্লেখ করে বলেন, আমরা শান্তি চাই। আমরা চাই, আফগানিস্তানও শান্তির অংশীদার হোক। আমাদের বিশ্বাস, পাকিস্তানের মঙ্গল মানেই তাদের (আফগানিস্তান) মঙ্গল। কিন্তু সন্ত্রাসীদের লাগামহীন হতে দেওয়া যাবে না।