November 13, 2025, 5:43 am
শিরোনামঃ
ঝিনাইদহে দুইদিন ব্যাপি কৃষক প্রশিক্ষণের উদ্বোধন আগামী বছর হজ করতে পারবেন সাড়ে ৭৮ হাজার বাংলাদেশি বিভিন্ন চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় আর্মি সার্ভিস কোরকে প্রস্তুত থাকতে সেনাপ্রধানের আহ্বান আসন্ন সংসদ নির্বাচন উপলক্ষে প্রবাসী ভোটার নিবন্ধনে নির্দেশনা দিয়ে পরিপত্র জারি বাংলাদেশে অবস্থিত রোহিঙ্গাদের জন্য ২০ হাজার ২৬৫ মেট্রিক টন চাল সহায়তা দিল দ. কোরিয়া গত অক্টোবরে সারা দেশে সড়ক দুর্ঘটনায় ৪৬৯ জন নিহত সুনামগঞ্জের টাঙ্গুয়ার হাওরের জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণে মতবিনিময় সভা গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশের পর নাকফুল- আংটি-বদনা ফিরে পেলেন বাগেরহাটের শ্রাবণী বাগেরহাটের চিতলমারী ও মোল্লাহাটে অবাধে চলছে অতিথি পাখি শিকার চাঁদপুরে পাঁচটি পাইপগানসহ দেশীয় অস্ত্র উদ্ধার
এইমাত্রপাওয়াঃ

পাবনায় তীব্র খরায় ঝরে পড়ছে লিচু ও আমের গুটি : ফলন বিপর্যয়ের আশঙ্কা

অনলাইন সীমান্তবাণী ডেস্ক লিচুর রাজধানী হিসেবে খ্যাত পাবনার ঈশ্বরদী ও চাটমোহরে প্রচন্ড খরা ও তীব্র তাপপ্রবাহে লিচু ও আমের বোঁটা শুকিয়ে যাচ্ছে। ফলে ব্যাপকভাবে ঝরে পড়ছে গুটি। গাছের গোড়ায় পানি দিয়েও গুটি ঝরা রোধ করা যাচ্ছে না। ফলে লিচুর ফলন বিপর্যয়ের আশঙ্কা করছেন চাষিরা।
রসালো ও সুস্বাদু লিচু উৎপাদনের জন্য বিখ্যাত ঈশ্বরদীতে বৈশাখের মাঝামাঝিতে গাছে মুকুল আসে এবং চৈত্র মাসে মুকুল থেকে লিচুর সবুজ গুটি দেখা যায়। এখন লিচু গাছের দিকে তাকালেই চোখে পড়ে ছোট ছোট সবুজ গুটি। এ বছর প্রতিটি গাছে রেকর্ড পরিমাণ মুকুল এসেছিল। মুকুল থেকে গুটিও বেশ ভালো হয়। তাই এবার চাষিরা লিচুর ভালো ফলনের আশায় বুক বেধেছিলেন। কিন্তু গত ২৮ মার্চ থেকে অদ্যবধি ২০ এপ্রিল পর্যন্ত টানা ২৪ দিন প্রচন্ড তাপদাহে লিচুর গুটি ব্যাপভাবে ঝরে পড়ছে। বহু গাছে শুধু বোঁটা দেখা যাচ্ছে। তাই লিচু চাষিদের স্বপ্নভঙ্গের আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
উপজেলার লিচুগ্রাম হিসেবে পরিচিত রাজাপুর, তিনগাছা, ব্যাংগারা, বক্তারপুর, জগন্নাথপুর, বাঁশেরবাদা, জয়নগর, মিরকামারী, মানিকনগর, সাহাপুর, আওতাপাড়া, চরসাহাপুর ও চাটমোহর উপজেলার নতুন পাড়া, জালেশ^র, রামচন্দ্রপুর ও গুনাইগাছায় লিচুর আবাদ হয় সবচেয়ে বেশি। সারি সারি লিচুর বাগানের পর বাগান। বিগত বছরগুলোর তুলনায় এবার লিচুর গুটি বেশি ছিল। প্রায় প্রতিটি গাছেই প্রচুর গুটি এসেছিল। কিন্তু বৈরি আবহাওয়া ও  তীব্রতাপদহে যেভাবে লিচুর বোঁটা শুকিয়ে যাচ্ছে এবং গুটি ঝরে পড়ছে তাতে ফলনে বিপর্যয় হওয়ার আশংকা রয়েছে।
রাজাপুর গ্রামের রওশন আলী জানান, তার ২০ বিঘা জমিতে লিচুর বাগান রয়েছে। তিনি বলেন,‘এবার লিচু গাছে রেকর্ড পরিমাণ মুকুল এসেছিল। চৈত্রের খরতাপে লিচুর গুটির বেশ ক্ষতি হচ্ছে। এভাবে গুটি ঝরে পড়া অব্যাহত থাকলে ভালো ফলনের আশা করতে পারব না।’
তিনি বলেন, ‘টানা ২৪দিন প্রচন্ড খরার কারণে গাছের লিচুর গুটি সব ঝরে যাচ্ছে। রাতে ও সকালে পানি ও ওষুধ স্প্রে করেও গুটি ঝরা রোধ করা যাচ্ছে না। দিনে প্রচন্ড গরম আবার রাতের আবহাওয়া ঠান্ডা থাকে। গরম-ঠান্ডার কারণে লিচুর গুটি ঝরে যাচ্ছে। এইভাবে গুটি ঝরে গেলে প্রত্যাশার অর্ধেক লিচুও পাবো না।’
বাাশেরবাদা গ্রামের আদর্শ লিচু চাষি রফিকুল ইসলাম বলেন,‘ আমার আড়াই বিঘা জমিতে লিচুর বাগান আছে। লিচুর গুটি ঝরা রোধে পুরো বাগান লাঙ্গল দিয়ে নালা করে পানি দিয়ে ভিজিয়ে রেখেও গুটি ঝরা বন্ধ করতে পারছি না।’ তিনি বলেন,‘ গত বছর শ্যালো মেসিন মালিক ঘন্টা প্রতি ২,০০০ (দুই) হাজার টাকা নিলেও এবার সেখানে দিতে হচ্ছে ২,৫০০ টাকা। এছাড়া কীটনাশকের দাম অত্যধিক বেড়েছে। প্রচুর খরচ করেও লিচুতে এবার দুঃখ।’ গত বছর তার বাগান থেকে ৭,২৪,০০০ টাকা আয় হয়েছিল। এবার ২ লাখ টাকাও আসবে কিনা সংশয় প্রকাশ করেন তিনি।
ব্যাংগারা গ্রামের লিচু চাষি চাম্পা খাতুন আড়াই বিঘা লিচুর বাগানে পানি দিতে দিতে হাঁপিয়ে উঠেছেন। তিনি বলেন, আর পানি দেয়ার মত অর্থ নেই; তদারকি ছেড়ে দিয়েছি-যা থাকে কপালে।
তিনগাছা গ্রামের বিপ্লব হোসেন ও আসলাম হোসেন জানান, তারা ২২ বিঘা জমিতে লিচুর বাগানে এ পর্যন্ত ৬ বার পানি কিনে দিয়েছেন। এক দিকে পানি দেয়া হচ্ছে,  আর সঙ্গে সঙ্গে মাটি পানি চুষে খাচ্ছে। খরার যে অবস্থা, তাতে ফলন তো দূরের কথা -এক চতুর্থাংশ লিচুও পাওয়া যাবে না বলে মনে হচ্ছে।
কীটনাশক ও সার ব্যবসায়ীরা বলেন,‘এবার প্রচন্ড খরার কারণে লিচুর গুটি ঝরে পড়ছে। চাষিরা গুটি ঝরা রোধ করতে আমাদের কাছে এসে পরামর্শ চাইছেন। আমরা কৃষি কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করে গুটি ঝরা রোধে চাষিদের কীটনাশক দিচ্ছি।’
ঈশ্বরদী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মিতা সরকার বলেন,‘এ বছর ঈশ্বরদীতে ৩ হাজার ১০০ হেক্টর জমিতে লিচুর আবাদ হয়েছে এবং উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে ১০ মেট্রিক টন। বৈশাখ মাসে আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় প্রতিটি লিচু গাছে এবার ভালো মুকুল এসেছিল । লিচুর ভালো ফলনের আশাও করেছিল কৃষি বিভাগ। কিন্তু প্রচন্ড খরা ও তীব্র তাপপ্রবাহে লিচুর গুটি ঝরে যাচ্ছে প্রচুর। এমতাবস্থায় লিচুর গুটি ঝরা রোধে চাষিদের সঠিকভাবে লিচু বাগান পরিচর্যা করা ও প্রয়োজনমতো কীটনাশক ব্যবহারের পরামর্শ দেয়া হচ্ছে।’
পাবনা কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের উপপরিচালক ড. মো. জামাল উদ্দিন বলেন.‘ পাবনা জেলায় লিচুর বাগান রয়েছে ৪,৭২১ হেক্টর এবং এবছর উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৩৭,৭৬৮ মেট্রিক টন। আমের বাগান রয়েছে ২,৭৩০ হেক্টর এবং উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্র ধরা হয়েছে ৪০,৯০০ মেট্রিক টন। গুটি ধরে রাখতে চাষিদের উপযুক্ত পরামর্শ দেয়া হচ্ছে। গাছের গোড়ায় পর্যাপ্ত পরিমান পানি দেয়ার মাধ্যমে গুটি ঝরা অনেকটা রোধ করা সম্ভব বলে চাষিদের পরামর্শ দেয়া হচ্ছে। উপসহকারি কৃষি কর্মকর্তারা সার্বক্ষণিক বাগানে গিয়ে কৃষকদের পরামর্শ দিচ্ছেন।’
তবে এবারের প্রচন্ড খরার কারণে লিচু ও আমের গুটি ঝরে পড়ায় উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ না হওয়ার আশংকা প্রকাশ করেন এই কৃষি কর্মকর্তা।

আজকের বাংলা তারিখ

November ২০২৫
Mon Tue Wed Thu Fri Sat Sun
« Oct    
 
১০১১১২১৩১৪১৫১৬
১৭১৮১৯২০২১২২২৩
২৪২৫২৬২৭২৮২৯৩০


Our Like Page