অনলাইন সীমান্তবাণী ডেস্ক : পিরোজপুরের মঠবাড়িয়ার বেতমোর ইউনিয়নের প্রত্যন্ত গ্রাম পশ্চিম মিঠাখালীর কৃষক ফিরোজ মাতুব্বর (৪৮) পতিত জমিতে মাদ্রাজি কমলার আবাদ করে সফল হয়েছেন। ৩৩ শতাংশ পতিত জমিতে কান্দি বেড় পদ্ধতিতে ১২০টি মাদ্রাজি কমলা গাছে এবার তিন লক্ষাধিক টাকার কমলা ধরেছে। এ উপজেলায় তিনিই একমাত্র কমলাচাষি যিনি প্রথম মাদ্রাজি কমলা আবাদ করে সফলতার মুখ দেখেছেন। এ কৃষক কমলা আবাদের পাশাপাশি জোর কলম বা সায়ন পদ্ধতি অনুসরণ করে এ সুমিষ্ট কমলার চারা উৎপাদন করছেন।
মঙ্গলবার দুপুরে উপজেলার পশ্চিম মিঠাখালী গ্রামে কমলাচাষি ফিরোজের বাগানে সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, ৩৩ শতাংশ পতিত জমি জুড়ে সারি সারি কমলার গাছে হলুদাভ রঙের বর্ণিল কমলা পাকতে শুরু করেছে। ইতিমধ্যে কৃষক ৩০ হাজার টাকার কমলা বিক্রি করেছেন।
কৃষক জানান, আগামী ২০ দিনের মধ্যে পুরো কমলা পাকবে। আরো ৩ লাখ টাকা লাভের আশা করছেন এ কৃষক। তিনি জানান, তার বাবা মতিলাল মাতুব্বর একজন প্রান্তিক চাষি। তিনি শিশুকাল থেকেই বাবার সঙ্গে কৃষিশ্রমে সহায়তা করতে শুরু করেন। ২০০৫ সালে পৈত্রিক জমি আর হালের বলদ বিক্রি করে সৌদি আরবে যান ফিরোজ। সেখানে একটি সিমেন্ট কারখানায় কয়েক বছর কাজ করেন। সৌদি আরবে থাকার সময় কুষ্টিয়ার জীবনগরের একজনের সঙ্গে তার পরিচয় ঘটে। তার কাছ থেকে মাদ্রাজি কমলা চাষের বিষয়ে প্রথম জানতে পারেন ফিরোজ। পরে তিনি কুষ্টিয়ার জীবননগরের ওমর ফারুক খানের নার্সারি থেকে ১০ হাজার টাকায় শতাধিক মাদ্রাজি কমলার চারা সংগ্রহ করেন। দুই বছর আগে নিজের বসতবাড়ি সংলগ্ন ৩৩ শতাংশ জমিতে বেড় কেটে কান্দি প্রস্তুত করেন। এরপর সারি করে কমলার চারা রোপণ করেন। চারা রোপণের দেড় মাসের মাথায় চারায় মুকুল আসে। ঐ বছর বাগান থেকে মাত্র ৩০ হাজার টাকা আয় হয় তার।
চলতি বছর তার বাগানে তিন লক্ষাধিক টাকার কমলা উৎপাদন হয়েছে। পাইকারি ১২০ টাকা কেজি দরে বাগানে এসে ব্যবসায়িরা কিনে নিচ্ছেন। পরিপক্ক এসব কমলা পাকতে শুরু করেছে। সেই সঙ্গে তার কমলার নার্সারিতে জোড়কলম বা সায়ন পদ্ধতিতে ১ হাজার চারা উৎপাদনও করেছেন। এসব চারা আগামী মাসেই তিনি এলাকার অন্য কৃষকদের কাছে বিক্রি করে মাদ্রাজি কমলার আবাদ সম্প্রসারণ ঘটানোর স্বপ্ন দেখছেন।
সফল কমলাচাষি ফিরোজ মাতুব্বর বলেন, যে কোনো কৃষক পতিত জমিতে কান্দি বেড় পদ্ধতিতে এর আবাদ করে মৌসুমে আর্থিক লাভবান হতে পারেন। এ ব্যাপারে মঠবাড়িয়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. মনিরুজ্জামান বলেন, পিরোজপুর অঞ্চল মালটা চাষে সমৃদ্ধ অঞ্চল। তবে কমলা চাষেরও ব্যাপক সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। স্থানীয় পশ্চিম মিঠাখালী গ্রামের প্রান্তিক কৃষক ফিরোজ মাতুব্বর তার দৃষ্টান্ত। সে পতিত জমিতে কমলার আবাদ করে মাত্র দুই বছরেই সফলতা পেয়েছেন। যা যে কোনো কৃষকের জন্য দৃষ্টান্ত ।
Leave a Reply