পেশার চাইতে বড়, শিক্ষকতা একটি ব্রত। পেশাটি মানব সভ্যতার ক্রমবিকাশের সাথে এগিয়েছে তার আপন গতিতে। এটি অন্যসব পেশা তৈরির সূতিকাগার। শিক্ষা ব্যবস্থাকে সার্থক ও সুন্দর করে তোলার জন্য প্রয়োজন আদর্শবান সুশিক্ষক। যিনি নীতি নৈতিকতা মূল্যবোধ ও জ্ঞানে গরিমায় অপর দশজনের চাইতে আলাদা। মা-বাবার পরেই একজন শিক্ষকের স্থান। একজন মানুষের জীবনের পরতে পরতে শিক্ষকের অবদান। শিক্ষকের শিক্ষা নিয়েই মানুষ তার জীবন গঠনের জন্য প্রয়াসী হন। সে মানুষ স্বল্প শিক্ষিত হোক বা উচ্চশিক্ষিত হোক। শিক্ষকের অবদানকে অস্বীকার করে এমন লোক খুঁজে পাবেন না। মা বাবা তার সন্তানকে পরম স্নেহে আগলিয়ে রেখে মানুষ গড়ার জন্য সচেষ্ট থাকেন, ঠিক তেমনি শিক্ষকরাও তাদের শিক্ষার আলো দিয়ে শিক্ষার্থীর ভবিষ্যতকে আলোকিত করার চেষ্টা করে যান। শিক্ষক মানুষের জীবনে প্রদীপ শিখা প্রজ্বলিত করে তার জীবনকে সার্থক ও সুন্দর করে তোলেন। এখানেই একজন শিক্ষকের বিশেষত্ব।
শিক্ষকের কাছে পড়াশুনা করা শৈশবের স্মৃতি অনেকের মনে এখনো দাগ কেটে আছে। শিক্ষককে নিয়ে আছে যেমন ভয়ের গল্প তেমনি আছে অনেক অম্ল মধুর স্মৃতিও। ছোটবেলায় একসময় কোনো কোনো শিক্ষককে মনে হতো শাসন করার কারণে ঐ শিক্ষক নিতান্তই মন্দ একজন লোক। কিন্তু জীবনের এক প্রান্তে এসে অনেকেরই মনে হয় আসলেই ঐ শিক্ষকের কঠোরতাই ছিলো তার সুন্দর জীবন গঠিত হবার অন্যতম কারণ। এক সময় এসে সে শিক্ষকের প্রতি শ্রদ্ধায় মাথা নুয়ে আসে।
একসময় এদেশে খুব বনেদী পরিবার বা খুব ভালো পড়াশুনা জানা লোকেরা শিক্ষকতা পেশায় আসতেন। তাঁদের শিক্ষাদান পদ্ধতি, জ্ঞানবিলানোর নিরন্তর প্রচেষ্টায় ছাত্ররা বিমোহিত হতো। অর্থ-বিত্ত প্রাপ্তির বিষয়টি তেমন মুখ্য ছিল না। আমাদের দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলের বিভিন্ন প্রাচীন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের খোঁজ নিলেই দেখা মিলবে অনেক শিক্ষকের নাম এখনো লোক মুখে ফেরে। বাংলা,গণিত, ইংরেজি কিংবা বিজ্ঞান পড়ানো সেই সব প্রবীণ শিক্ষকের কাছে যারা শিক্ষা লাভ করে প্রতিষ্ঠিত হয়েছেন তাঁদের পাঠদান পদ্ধতি সেই শিক্ষার্থীদের কাছে এখনো অমলিন।
এখন শিক্ষকতা পেশায় আসা শিক্ষকরা অন্য নতুন পেশার খোঁজে হন্য হয়ে ছুটছেন। সুযোগ পেলেই চলে যাচ্ছেন, আর কেউ কেউ সুযোগ না পেয়ে হয়তো হতাশা নিয়েই থেকে যাচ্ছেন।
শিক্ষক নিয়োগ প্রক্রিয়া, শিক্ষকের আচার আচরণ, প্রশিক্ষণসহ শিক্ষার উন্নয়নে বিশ্বের সাথে তাল মিলিয়ে আধুনিক ধ্যান-ধারণার প্রয়োগ ঘটানো দরকার। শিক্ষকের যোগ্যতা, পদোন্নতি, চাকরির নিরাপত্তা, পেশাগত স্বাধীনতা ও সুযোগ সুবিধা,জবাবদিহিতা,পর্যবেক্ষণ ও মূল্যায়ন, শিক্ষা সংক্রান্ত নীতিনির্ধারণী প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণের সুযোগ, কার্যকর শিক্ষাদানের পরিবেশ, সামাজিক ও আর্থিক নিরাপত্তা এবং একটি নীতি নৈতিকতা ও মানবিক মূল্যবোধসম্পন্ন শিক্ষক তৈরির কথা জাতিকে ভাবতে হবে।
শিক্ষকরা হচ্ছেন সভ্যতার ধারক-বাহক। শিক্ষক শুধু শিক্ষাদানই করেন না, তিনি মানুষ গড়ার কারিগরও। পিতা-মাতা আমাদের জীবনদান করেন ঠিকই। শিক্ষকরা সেই জীবনকে সুন্দরভাবে গড়ে তুলতে সাহায্য করেন। শিক্ষকরা স্ব-মহিমায় বিশুদ্ধ জ্ঞান, মানবিক আর নৈতিক শিক্ষায় সুশিক্ষিত এবং দীক্ষিত করে গড়ে তোলেন দেশের যোগ্য নাগরিক হিসেবে।
শিক্ষক সম্পর্কে উইলিয়াম আর্থার ওয়ার্ডের বিশ্লেষণ সত্যিই যথার্থ। তিনি বলেন, একজন সাধারণ শিক্ষক বক্তৃতা করেন, একজন ভালো শিক্ষক বিশ্লেষণ করেন, একজন উত্তম শিক্ষক প্রদর্শন করেন, একজন শ্রেষ্ঠ শিক্ষক অনুপ্রাণিত করেন। আমেরিকার ইতিহাসবিদ হেনরি এডামস শিক্ষকের গুরুত্ব সম্পর্কে বলেছেন, একজন শিক্ষক সামগ্রিকভাবে প্রভাব ফেলেন, কেউ বলতে পারে না তার প্রভাব কোথায় গিয়ে শেষ হয়। দার্শনিক বাট্টার্ন্ড রাসেল এ বিষয়ে বলেছেন, শিক্ষক সমাজ হচ্ছেন প্রকৃত সমাজ ও সভ্যতার বিবেক। এ কারণেই শিক্ষকদের বলা হয় সমাজ নির্মাণের স্থপতি। সমাজতান্ত্রিক সোভিয়েতের প্রথম শিক্ষামন্ত্রী লুনাচারস্কি বলেছিলেন, শিক্ষক হলেন এমন এক ব্যক্তি যিনি নতুন প্রজন্মের কাছে যুগ-যুগান্তরে সঞ্চিত যাবতীয় মূল্যবান সাফল্য হস্তগত করবেন, কিন্তু কুসংস্কার,দোষ ও অশুভকে ওদের হাতে তুলে দেবেন না। ভøাদিমির ইলিচ উলিয়ানভ লেনিন বলেছেন, সমাজ পরিবর্তনের পূর্বশর্ত মানুষের পরিবর্তন। সেই পরিবর্তনের অভিভাবকত্ব শিক্ষকদের পেশাগত দায়িত্ব। কার্ল জং সুইস মনোবিজ্ঞানী বলেন, ব্রিলিয়ান্ট শিক্ষকদের প্রতি লোকরা সম্মানের দৃষ্টিতে তাকায়, কিন্তু কৃতজ্ঞতার দৃষ্টিতে তাকায় তাদের প্রতি, যারা আমাদের মানবিক অনুভূতিকে স্পর্শ করে।
শিক্ষকতাকে একটি মহৎ ও মানবিক পেশা হিসাবে গণ্য করা হলেও শিক্ষণ প্রক্রিয়া অনেক জটিল কাজ। শিক্ষকতা কেবল একটি পেশা নয়, বরং সমাজ ও দেশের এক ধরনের সেবা। একজন সফল শিক্ষক হওয়ার জন্য কেবল বিষয়সংশ্লিষ্ট জ্ঞান ও শেখানো পদ্ধতিবিষয়ক জ্ঞানই যথেষ্ট নয়। বিশেষ করে বিষয়গত জ্ঞানের পাশাপাশি শিক্ষার সামাজিক, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, মনস্তাত্ত্বিক ও দার্শনিক প্রেক্ষাপট সম্পর্কেও জানা দরকার। শিক্ষকের পেশাগত শিক্ষা এমন হবে, যা শুধু শিক্ষার্থীদের পাঠদান ও শ্রেণি ব্যবস্থাপনার মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকবে না, তার পড়াশোনার পরিধি হবে ব্যাপক। আর আর্থ-সামাজিক ও সাংস্কৃতিক বিষয়ে আগ্রহ থাকবে অফুরন্ত। সেই সঙ্গে চিন্তা ও বিবেচনাবোধ থাকবে সীমাহীন। শিক্ষককে শিক্ষার্থীদের জানতে ও বুঝতে হবে এবং তার সব কর্মকান্ডে মানবিক মূল্যবোধ প্রতিফলিত হবে।
প্রাচ্যদেশীয় শিক্ষাব্যবস্থায় ছাত্র-শিক্ষক সম্পর্ক সবসময়ই গুরু-শিষ্যের মতো ছিল। প্রাচীন ভারতের নালন্দা থেকে শুরু করে সোমপুর বৌদ্ধবিহার ও শালবন বৌদ্ধবিহার এবং নিকট অতীতের পন্ডিত সমাজ থেকে শুরু করে শিক্ষকতা পেশা সারা বিশ্বের সবচেয়ে সম্মানিত চাকরিগুলোর মধ্যে একটি। তাই শিক্ষকদের সম্মানার্থে ১৯৯৫ সাল থেকে প্রতিবছর ৫ অক্টোবর বিশ্বব্যাপী শিক্ষক দিবস পালিত হয়। ইউনেস্কোর মতে, বিশ্ব শিক্ষক দিবস শিক্ষা ও উন্নয়নের ক্ষেত্রে শিক্ষকদের অসামান্য অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ পালন করা হয়। বাংলাদেশ সরকার ২০০৩ সালের ১৯ জানুয়ারি থেকে জাতীয় শিক্ষক দিবস চালু করে।
শিক্ষকের দায়িত্ব ও কর্তব্যের পরিসর অত্যন্ত ব্যাপক। উদাহরণ হিসাবে বলা যায়, আর্নল্ড জোহান্স সমরফিল্ড নতুন নতুন ধারণা দিয়ে বিশ্বকে চমকে দিয়েছিলেন। তিনি ৮৪ বার নোবেল পুরস্কারের জন্য মনোনীত হলেও শেষ পর্যন্ত পুরস্কার পাননি। সমরফিল্ড একজন শিক্ষক ছিলেন। নিজে নোবেল পুরস্কার পাননি বলে হাল ছেড়ে দেননি, বরং তিনি তার ছাত্রদের এমনভাবে গড়ে তুলেছিলেন যে তার ছাত্ররা নোবেল পুরস্কারে ভূষিত হয়েছিলেন। তিনি যত না বড় বিজ্ঞানী ছিলেন, তার চেয়ে বড় ছিলেন শিক্ষক হিসাবে। একজন শিক্ষকের স্বপ্ন তার ছাত্ররা তাকে একদিন অতিক্রম করবে। সমাজে এ ধরনের শিক্ষকের বড়ই অভাব। তবে শিক্ষা ও সংস্কৃতি এবং সমাজ উন্নয়নে সব শিক্ষকেরই ভূমিকা থাকবে এমনটি নয়। বিশেষ করে শিক্ষকের প্রভাব, প্রতিপত্তি ও সুনাম শুধু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের আঙিনায় বিদ্যমান থাকে না। একজন শিক্ষক আদর্শ মানবসৃষ্টির শৈল্পিক কারিগরও বটে এবং তার দৃষ্টিভঙ্গি, নির্দেশনা ও আদর্শ-জাতি, ধর্ম ও বর্ণের ঊর্ধ্বে উঠে মানবতার কল্যাণে নিবেদিত হয়। তাই বলা হয়, ব্যক্তি মানব এখানে অর্থহীন। কিন্তু ব্যক্তি শিক্ষক সবার শ্রদ্ধার ও সম্মানের পাত্র। তাছাড়া শিক্ষক সমাজ সর্বজনীন, কল্যাণকর ও প্রভাবশালী সচেতন প্রতিনিধি। এক্ষেত্রে সমাজে শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠা, সামাজিক কর্মকান্ডে নেতৃত্বদান, সংগঠিত মনোভাব সৃষ্টি এবং প্রয়োজনীয় ক্ষেত্রে নির্দেশনা প্রদান শিক্ষকের নৈতিক দায়িত্ব। শিক্ষককে সমাজে অনুকরণীয় ব্যক্তিত্ব হিসেবে সামাজিকতা, জনসচেতনতা সৃষ্টি, সামাজিক বিভিন্ন কর্মকান্ডে নেতৃত্বদান, জনমত গঠন, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কার্যক্রমে অংশগ্রহণ, সামাজিক বিবাদ-মীমাংসা, অপরাধ প্রবণতা রোধে করণীয় নির্ধারণ এবং সামগ্রিক উন্নয়নে অংশগ্রহণ ইত্যাদি কর্মকান্ডে ভূমিকা পালন করতে হয়।
অ্যারিস্টটল ও প্লেটো থেকে শুরু করে সম্রাট আলমগীরের পুত্রের সঙ্গে শিক্ষকের সম্পর্ক আর স্কটিশ চার্চ কলেজের শিক্ষক ড. সিদ্ধেশ্বর সাঁই ও তার ছাত্র পার্থপ্রতিম পাঠকের সম্পর্ক ছাত্র-শিক্ষক সম্পর্কের স্বর্ণালি অধ্যায়ের কথা মনে করিয়ে দেয়।
বর্তমানে ছাত্র-শিক্ষকের সেই চিরায়ত সম্পর্কে যেন চিড় ধরেছে। এর কারণ, এখন শিক্ষক কোনো আদর্শ ব্যক্তিত্ব নন আর ছাত্রও অনুগত শিষ্য নয়। বর্তমানে ছাত্র ও শিক্ষক অনেক ক্ষেত্রে যেন পরস্পরের প্রতিদ্বন্দ্বী। এক্ষেত্রে অবশ্য শিক্ষকের ভূমিকা নিষ্ক্রিয়। বর্তমানে ছাত্ররাই সক্রিয় বলদর্পী। তারা যখন-তখন শিক্ষককে অপদস্ত ও লাঞ্ছিত করতে পারে, এমনকি প্রাণনাশের কারণও হতে পারে। প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে শুরু করে সরকারি-বেসরকারি কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় পর্যন্ত সর্বত্রই শিক্ষক নিগ্রহের ঘটনা লক্ষ্য করা যায়। এতে রাষ্ট্রের মর্যাদার তেমন কোনো ক্ষতি বা বৃদ্ধি হয় না বলে অনেকে মনে করে।
বর্তমান সমাজে শিক্ষার্থীদের ক্লাসে অনুপস্থিতি নিয়ে কথা বলতে নেই, টিউটোরিয়াল-অ্যাসাইনমেন্ট নিয়ে কোনো প্রশ্ন করতে নেই, পরীক্ষার সময় নকল ধরতে নেই, ব্যবহারিক-মৌখিক পরীক্ষায় প্রশ্ন করতে নেই, ক্লাসে মোবাইল ফোনের ব্যবহার নিয়ে ধমক দিতে নেই, চুলের ফ্যাশন ও পোশাক নিয়ে কথা বলতে নেই এবং শিষ্টাচার শেখাতে নেই। সর্বোপরি কোনো হিতোপদেশও দিতে নেই। উল্লেখ্য, আতঙ্ক (১৯৮৬) চলচ্চিত্রে ন্যায়নিষ্ঠ অধ্যাপক সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের মতো একটি বাণী এখানে মেনে চলতে হয়-‘মাস্টার মশাই আপনি কিন্তু কিছুই দেখেননি।’ পন্ডিতদের ধর্মে রবীন্দ্রনাথ বিদ্রুপ করে বলেছিলেন, ‘যার সবকিছু পন্ড হয়ে গিয়েছে, সেই পন্ডিত।’ এ তথাকথিত দুর্বল, ভীরু, গেঁয়ো ও দন্তবিহীন শিক্ষক সমাজকে সঙ্গে নিয়েই আমরা মানসম্মত শিক্ষা অর্জন করতে চাই।
১৯৫২ সালে ইসরাইলের প্রথম প্রেসিডেন্ট ওয়াইজম্যানের মৃত্যুর পর বিজ্ঞানী আলবার্ট আইনস্টাইনকে প্রেসিডেন্ট হওয়ার জন্য অনুরোধ করা হয়। কিন্তু যার মধ্যে নতুন জ্ঞান সৃষ্টির আনন্দ নেই, তার কাছে ক্ষমতা মূল্যহীন। তিনি প্রেসিডেন্ট হওয়ার লোভনীয় প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে গবেষণাকেই জীবনের ব্রত হিসাবে বেছে নিয়েছেন। আমাদের শিক্ষকরাও যদি এমন ভাবতে পারতেন, তাহলে হয়তো শিক্ষার্থীদের নতুন জ্ঞান অন্বেষণ করা সম্ভব হতো। আমাদের দেশে শিক্ষকসমাজ যদি ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে কর্মক্ষেত্রে আন্তরিকতা, একাগ্রতা, একনিষ্ঠতা ও সততার মাধ্যমে কর্ম সম্পাদন করত, তাহলে বাংলাদেশকে একটি আধুনিক দেশ হিসাবে গড়ে তোলা যেত। সর্বোপরি, বিশ্বের বুকে মাথা উঁচু করে দাঁড়ানো সম্ভব হতো।
লেখক : এম এ কবীর, ফ্রিল্যান্স সাংবাদিক, কলামিস্ট ও সভাপতি- ঝিনাইদহ জেলা রিপোর্টার্স ইউনিটি।
Leave a Reply