অনলাইন সীমান্তবাণী ডেস্ক : ফরিদপুর শহরের গোয়ালচামটের খোদাবক্স রোডের চারঘাটা এলাকার বাসিন্দা আঃ রহিম শেখ (৮৭) ও জহুরা বেগম (৭৫) দম্পত্তি। তাদের তিন ছেলে ও তিন মেয়ে রয়েছেন। সন্তানদের মধ্যে সম্পত্তি ভাগ-বণ্টন করে দেওয়ার পর তাদের জীবনে নেমে এসেছে চরম দুর্বিসহ অন্ধকার।। নানা রোগ-শোক আর স্ট্রোক করে শয্যাশয়ী রহিম শেখ ও স্ত্রী জহুরা বেগম।
স্থানীয় ও পরিবার সূত্রে জানা গেছে, বর্তমানে ছোট ছেলে মো. মিজান শেখের সঙ্গে বসবাস করছেন এই দম্পতি। মিজান দর্জির কাজ করেন। তিনি সংসার ও অসুস্থ বাবা-মায়ের খরচ চালাতে হিমশিম খাচ্ছেন। ২০১১ সালে ৬ সন্তানের মধ্যে সম্পত্তি বণ্টন করে দেন আঃ রহিম শেখ।
এ সময় কথা ছিল বাবা-মায়ের ভরণ-পোষণের জন্য প্রত্যেক সন্তান প্রতি মাসে ১৫০০ টাকা করে দেবেন। কিন্তু নিয়ম অনুযায়ী ভরণ-পোষণের দাবি করায় ছোট ছেলে বাদে বাকি পাঁচ সন্তানের কাছে লাঞ্ছনার শিকার হতে হয়েছেন এই বৃদ্ধ দম্পত্তিকে। জীবনের শেষ লগ্নে বেঁচে থাকতে, একটু শান্তির জন্য সন্তানদের ভরণ-পোষণ পেতে প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন তারা।
এই দম্পত্তির ৬ সন্তান রয়েছে। এর মধ্যে বড়ছেলে আহমেদ শেখ (৫৫) বিয়ে করে অন্য জায়গায় বসবাস করেন। মেজো ছেলে রমজান শেখ (৪৫) একজন ইলেট্রনিক্স মিস্ত্রি। বৃদ্ধ মা-বাবার টিন শেডের ঘরের পাশেই একতলা বিশিষ্ট পাকা ঘরে স্ত্রী-সন্তানদের নিয়ে সুখেই বসবাস করছেন। ছোট ছেলে মিজান দর্জির কাজ করে সংসার ও বাবা-মাকে নিয়ে রয়েছেন।
তিন মেয়ে বেদেনা বেগম, আখলিমা বেগম ও তাছলিমা বেগম তারা প্রত্যেকেই স্বামীর সংসার করছেন। তারা নিজেদের নিয়ে ব্যস্ত থাকেন।
রহিম শেখ বলেন, আমাদের ভরণ-পোষণের কথা বলে জমি-জমা লিখে নেয় সন্তানরা। এখন আমাদের কেউ দেখে না। আর কিছু বলারও নেই। আমরা নানা রোগ শোকে জর্জরিত। ওষুধ কিনে খাওয়া তো দূরে থাক তিনবেলা ঠিকমতো খেতে পরতেই পারি না। ছোট ছেলেটা দর্জির কাজ করে যা রোজকার করে তা দিয়ে ঠিকমতো চলে না।
বৃদ্ধ জহুরা বেগম বলেন, জমি-জমা ভাগ-বণ্টনের সময় কথা দিলেও এখন তারা বলে তোমাদের দেখতে পারবো না, তোমরা কি করতে পারবা। জমি আমরা লিখে নিয়ে গেছি, এখন তোমাদের দেখলেও পারি, না দেখলেও পারি। এরই মধ্যে ডায়রিয়া হয়েছিল। মনে করছে মরে যাব। বাড়ি নিয়ে আসার পর এখনো দেখতেও আসেনি।
তিনি বলেন, এই একটা ছেলে ওষুধ দিয়ে, সংসার দিয়ে কীভাবে চলবে? আমার স্বামী স্ট্রোক করে তার পেছনে অনেক টাকা গেছে। প্রতিদিন এক হাজার টাকার ওষুধ লাগে, আমি প্রশাসন ও র্যাবের কাছে যেতে চেয়েছিলাম। আমার স্বামী বলেন, র্যাবের কাছে গেলে ওদের মারধর করবে। পরে আমি যাইনি। জমি লিখে নেওয়ার পর কয়েকদিন দেখেছিলো, পরে আমাদের বের করে দেয়। বড় ছেলে বলে, মরে গেলে মাটি দিয়ে রেখে আসবো।
ছোট ছেলে মিজান বলেন, প্রথম থেকেই আমি মা-বাবাকে দেখাশোনা করে আসছি। ২০১১ সাল থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত আমাদের সম্পত্তি সব ভাগ-বাটোয়ারা হয়ে যায়। ওই সময়ে একটা শালিস হয়। শালিসে সিদ্ধান্ত হয়, সব ভাই-বোন প্রত্যেকে মা-বাবাকে ১৫০০ টাকা করে দেবে।
‘তাতো দেয়ই নাই, উল্টা মানসিক ও শারীরিকভাবে আমাদের নির্যাতন করছে। এক বছর ধরে বাবা-মা অসুস্থ। আজ পর্যন্ত কেউ এসে দেখে নাই। ভরণ-পোষণ আমি একা বহন করতে পারছি না। আমি সামান্য দর্জির কাজ করে কীভাবে চালাবো। চোখেমুখে শুধু অন্ধকার দেখি।’
এ বিষয়ে আহমেদ শেখের বক্তব্য জানতে তার মোবাইলে একাধিকবার কল করেও পাওয়া যায়নি। তিনি ফোন ধরেননি।
মেজো ছেলে রমজান শেখের সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, আপনি ফোন দিয়েছেন কেন? আমার পারিবারিক ঝামেলায় আপনি কে? ফোন রাখেন বলে কেটে দেন।
Leave a Reply