অনলাইন সীমান্তবাণী ডেস্ক : ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় চলমান যুদ্ধবিরতির শর্ত ভঙ্গ করে একটি বিয়ের অনুষ্ঠানে ভয়াবহ বিমান হামলা চালিয়েছে ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ)।
শুক্রবার (১৯ ডিসেম্বর) গাজা সিটির তুফাহ এলাকায় একটি স্কুলে আশ্রয় নেওয়া বাস্তুচ্যুত ফিলিস্তিনিদের বিয়ের আসরে এই বোমা হামলার ঘটনা ঘটে। কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা জানিয়েছে, এই নৃশংস হামলায় বর-কনে পক্ষের অন্তত ৬ জন ঘটনাস্থলেই নিহত হয়েছেন এবং আহত হয়েছেন আরও বেশ কয়েকজন।
যুদ্ধবিধ্বস্ত গাজায় যখন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রস্তাবিত শান্তি পরিকল্পনার অধীনে যুদ্ধবিরতির দ্বিতীয় পর্যায় শুরুর প্রস্তুতি চলছে, ঠিক তখনই এমন প্রাণঘাতী হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল।
তুফাহ এলাকার একটি স্কুল ভবনে যুদ্ধের কারণে ঘরবাড়ি হারানো কয়েকটি পরিবার আশ্রয় নিয়েছিল এবং সেখানেই দোতলার একটি কক্ষে বিয়ের আয়োজন করা হয়েছিল। আনন্দমুখর সেই পরিবেশে হঠাৎ ইসরায়েলি যুদ্ধবিমান থেকে বোমা বর্ষণ করা হলে মুহূর্তেই উৎসবের আমেজ শোকে পরিণত হয়।
আল জাজিরা তাদের প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছে, বাস্তুচ্যুত মানুষের আশ্রয়ের জায়গায় এই হামলার কোনো যৌক্তিক কারণ এখন পর্যন্ত ব্যাখ্যা করেনি ইসরায়েলি বাহিনী। উল্লেখ্য যে, গত ১০ অক্টোবর ডোনাল্ড ট্রাম্পের মধ্যস্থতায় তিন স্তরের একটি শান্তি চুক্তির প্রথম ধাপ হিসেবে ৬ সপ্তাহের যুদ্ধবিরতি শুরু হয়েছিল, যার মেয়াদ বর্তমানে শেষের দিকে।
প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প এবং মার্কিন প্রশাসনের কর্মকর্তারা যখন হামাস ও ইসরায়েল উভয় পক্ষকে যুদ্ধবিরতির দ্বিতীয় মেয়াদ শুরু করার জন্য জোরালো তাগাদা দিচ্ছেন, তখন আইডিএফ-এর এই কর্মকাণ্ড শান্তি প্রক্রিয়াকে চরম ঝুঁকির মুখে ঠেলে দিয়েছে।
গত দুই বছর ধরে চলা এই যুদ্ধে ইতিমধ্যে ৭০ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি প্রাণ হারিয়েছেন এবং ১ লাখ ৭০ হাজারের বেশি মানুষ আহত হয়েছেন। ধ্বংসস্তূপে পরিণত হওয়া গাজায় সাময়িক স্বস্তি ফিরলেও ইসরায়েলি বাহিনীর বারবার শর্ত লঙ্ঘনের ঘটনায় আন্তর্জাতিক মহলে তীব্র ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।
গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, ১০ অক্টোবর যুদ্ধবিরতি কার্যকর হওয়ার পর থেকে এখন পর্যন্ত ইসরায়েলি বাহিনী ছোট-বড় মিলিয়ে দেড় শতাধিকবার হামলা চালিয়ে চুক্তির শর্ত লঙ্ঘন করেছে। তুফাহ এলাকার এই স্কুলটিতে হামলা চালিয়ে ৬ জনকে হত্যার ঘটনাটি সেই ধারাবাহিকতারই অংশ বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
যুদ্ধের বিভীষিকা কাটিয়ে যখন সাধারণ মানুষ একটু স্বাভাবিক জীবনে ফেরার চেষ্টা করছিল, তখন বিয়ের আসরে এই রক্তপাত ফিলিস্তিনিদের মধ্যে নতুন করে আতঙ্ক ও অনিশ্চয়তা তৈরি করেছে। সূত্র: আল জাজিরা