20 Jan 2025, 01:01 am

ফিলিস্তিনের প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাসের বাহিনী সংগ্রামী জনগণ ও সাংবাদিকদের হত্যা করছে !

নিজস্ব প্রতিবেদকঃ

অনলাইন সীমান্তবাণী ডেস্ক : ফিলিস্তিনের তথাকথিত স্বশাসন কর্তৃপক্ষের সেনারা গত দুই সপ্তায় কয়েক বার জেনিন শরণার্থী শিবিরে হামলা চালিয়েছে।  সম্প্রতি ফিলিস্তিন স্বশাসন কর্তৃপক্ষের অনুগত কর্মীরা পশ্চিম-তীরের জেনিনে হামলা চালিয়ে সাযা আসসাব্বাগ নামের এক ফিলিস্তিনি নারী সাংবাদিককে শহীদ করেছে।

একজন বন্দুকধারীর গুলি তার মাথার খুলিতে আঘাত হানলে তিনি আহত হন এবং হাসপাতালে নেয়ার পর তিনি শাহাদত বরণ করেন। তার পরিবার আলজাজিরা টেলিভিশনকে জানিয়েছে, সাযা তার বাসভবন থেকে বের হওয়ার সময় গুলিবিদ্ধ হয়ে মাটিতে পড়ে যান। গত বছরের মার্চ মাসে এই সাংবাদিকের ভাই মোতাসেম আসসাব্বাগ ইসরাইলি সেনাদের হামলায় শহীদ হয়েছিলেন।

এখন থেকে ২৪ দিন আগে ইসরাইল বিরোধী প্রতিরোধ যোদ্ধাদের ওপর শুরু-হওয়া ফিলিস্তিনি স্বশাসন কর্তৃপক্ষের নিরাপত্তা বাহিনীর হামলায় এ পর্যন্ত দুই শিশুসহ ৬ ফিলিস্তিনি শহীদ হয়েছেন।

জেনিন শরণার্থী শিবিরে স্বশাসন কর্তৃপক্ষের নিরাপত্তা বাহিনীর হামলার ঘটনা ইসরাইলের সঙ্গে নিরাপত্তা সহযোগিতার আওতায় ঘটেছে এবং এর ফলে বেশ কয়েকজন সংগ্রামীকে গ্রেপ্তার করা হয়।

ফিলিস্তিনের জনগণ ও সংগ্রামী দলগুলো বিভিন্ন সময়ে ঘোষণা করেছে যে কথিত ফিলিস্তিনি স্বশাসন কর্তৃপক্ষ পশ্চিম তীর ও আলকুদস অঞ্চলে ফিলিস্তিনিদের রক্ষার পরিবর্তে ইহুদিবাদীদের পেটোয়া বা সেবাদাস বাহিনীতে পরিণত হয়েছে এবং তারা ইসরাইলের বিরুদ্ধে ফিলিস্তিনি সংগ্রামীদের তৎপরতা সীমিত করতে চায়। ফিলিস্তিনের জনগণ ও সংগ্রামী দলগুলো ইসরাইলের সঙ্গে স্বশাসন কর্তৃপক্ষের নিরাপত্তা সহযোগিতার অবসান ঘটিয়ে ফিলিস্তিনি জনগণের পাশে এসে দাঁড়াতে এই কর্তৃপক্ষের প্রতি বার বার আহ্বান জানিয়ে আসছেন।

ফিলিস্তিনি সংগ্রামের ইতিহাসে উত্থান-পতন বা চড়াই উৎরাই বেশ লক্ষণীয়। ফিলিস্তিন মুক্তি সংস্থা বা পিএলও’র সামরিক শাখা গঠন করা হয় ১৯৬৪ সালে। এই সংস্থা ও ইসরাইলের মধ্যে কথিত অসলো শান্তি চুক্তি স্বাক্ষরের ঘটনা ঘটে ১৯৯৩ সালে এবং ইসরাইল এই চুক্তির আওতায় ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষকে একটি পুলিশ বাহিনী গড়ার অনুমতি দেয় যাতে গাজা ও পশ্চিম তীরে অভ্যন্তরীণ ও গণ-নিরাপত্তা রক্ষা করতে পারে এই বাহিনী এবং বাইরের হুমকিগুলো মোকাবেলার দায়িত্ব ন্যস্ত হয় ইসরাইলি সশস্ত্র বাহিনীর ওপর।

এরপর ১৯৯৪ সালে কায়রোয় আরেকটি চুক্তি হয়। এ চুক্তি অনুযায়ী গাজা ও জেরিকোর কিছু অঞ্চল থেকে ইসরাইলি সেনা সরিয়ে নেয়া হয় যাতে ফিলিস্তিনি স্বশাসন কর্তৃপক্ষ তাদের প্রথম পর্বের স্বশাসন তৎপরতা শুরু করতে পারে।  এরপর ১৯৯৫ সালে দ্বিতীয় অসলো সমঝোতা হয় যেখানে পশ্চিম তীরকে তিনটি অঞ্চলে ভাগ করা হয়:

১. আলিফ বা ‘এ অঞ্চল’ যার আওতায় রয়েছে পশ্চিম-তীরের ৮টি বড় শহর ও পুরো গাজা উপত্যকা। এসব অঞ্চলের প্রশাসনিক ও নিরাপত্তার দায়িত্ব থাকবে স্বশাসন কর্তৃপক্ষের হাতে, তবে এর বাইরে থাকবে ইহুদি বসতিগুলো ও ইসরাইলি সামরিক অবস্থানগুলো।

২. আর বি বা ‘বে অঞ্চল’ যার আওতায় রয়েছে ৪৫০টি শহর ও গ্রাম-এইসব অঞ্চলে ফিলিস্তিন স্বশাসন কর্তৃপক্ষের কেবলই প্রশাসনিক ক্ষমতা থাকবে।

৩. অন্যদিকে জি বা ‘জিম অঞ্চল’ যা গোটা পশ্চিম তীরের ৬১ শতাংশ তার নিরাপত্তা ও প্রশাসনিক কর্তৃত্ব থাকবে ইসরাইলের ওপর।

তাই ফিলিস্তিনি স্বশাসন কর্তৃপক্ষ আর সেই অতীত দিনের ফিলিস্তিনি মুক্তি সংস্থা অভিন্ন নয়। পিএলও আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ফিলিস্তিনি জনগণের প্রতিনিধি হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছিল ও জাতিসংঘেও এর সদস্য পদ রয়েছে। কিন্তু ফিলিস্তিনি স্বশাসন কর্তৃপক্ষের তৎপরতা ফিলিস্তিনের ফিলিস্তিনি অধ্যুষিত কিছু অঞ্চলের ঘরোয়া কার্যক্রমেই সীমিত।

শত্রুর সঙ্গে স্বশাসন কর্তৃপক্ষের সহযোগিতার কারণে ফিলিস্তিনি প্রতিরোধ আন্দোলনগুলো যার শীর্ষে রয়েছে হামাস তার সঙ্গে এই কর্তৃপক্ষের সম্পর্ক চরম তিক্ততায় উপনীত হয়। ১৯৯৪ সালের ১৮ নভেম্বর ওই কর্তৃপক্ষের পুলিশ গাজায় ফিলিস্তিনি বিক্ষোভকারীদের ওপর গুলি চালালে ১৮ জন বিক্ষোভকারী শহীদ হন এবং ১৯৯৬ সালে এই কর্তৃপক্ষের সেনারা হামাসের সদস্যদের গ্রেফতার করার এক বড় অভিযান শুরু করে।  সে সময় মার্কিন সরকার ফিলিস্তিন স্বশাসন কর্তৃপক্ষকে অনুরোধ করেছিল ফিলিস্তিনি প্রতিরোধকামীদের দমনের জন্য তারা যেন ইসরাইলি সশস্ত্র বাহিনীর সঙ্গে সমন্বয় অব্যাহত রাখে।

মার্কিন কংগ্রেসের গবেষণা কেন্দ্র জানিয়েছে, ১৯৯৬ সালে মার্কিন কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা সিআইএ ফিলিস্তিনি প্রতিরোধ আন্দোলন মোকাবেলার জন্য নিরাপত্তা সংস্থাগুলোকে সরাসরি কোটি কোটি ডলার প্রদান করে।

১৯৯০’র দশকের শেষের দিকে ফিলিস্তিনি স্বশাসন কর্তৃপক্ষ প্রতিরোধ আন্দোলনের ওপর পরিকল্পিত আঘাত হানার কাজ শুরু করে। এ সময় স্বশাসন কর্তৃপক্ষ ফিলিস্তিনি জনগণের সঙ্গে প্রকাশ্যেই বিশ্বাসঘাতকতা করে প্রতিরোধ যোদ্ধাদেরকে ফিলিস্তিনি জাতির শত্রু ইসরাইলের কাছে তুলে দিতে থাকে।

ফিলিস্তিনি স্বশাসন কর্তৃপক্ষ দাবি করে যে তারা ফিলিস্তিনি জনগণের প্রতিনিধি। অথচ এই সংস্থা পুরোপুরি মার্কিন সরকার ও ইসরাইলের ওপর নির্ভরশীল ও তাদের নজরদারির আওতাধীন। ইহুদিবাদী ইসরাইলের সঙ্গে ফিলিস্তিনি স্বশাসন কর্তৃপক্ষের নিরাপত্তা সহযোগিতা ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবরের আলআকসা তুফান নামক অভিযান শুরু হওয়ার পরও অব্যাহত থাকায় ফিলিস্তিনি জনগণের মধ্যে এর অবস্থান মারাত্মকভাবে দুর্বল বা নড়বড়ে হয়ে পড়েছে এবং সংস্থাটি তার বৈধতা হারিয়ে ফেলছে।  সূত্র : পার্স টুডে

 

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

  • Visits Today: 2364
  • Total Visits: 1496123
  • Total Visitors: 4
  • Total Countries: 1694

আজকের বাংলা তারিখ

  • আজ সোমবার, ২০শে জানুয়ারি, ২০২৫ ইং
  • ৬ই মাঘ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ (শীতকাল)
  • ১৯শে রজব, ১৪৪৬ হিজরী
  • এখন সময়, রাত ১:০১

Archives

MonTueWedThuFriSatSun
  12345
20212223242526
2728293031  
       
15161718192021
293031    
       
  12345
2728     
       
     12
3456789
10111213141516
17181920212223
31      
  12345
6789101112
13141516171819
20212223242526
27282930   
       

https://youtu.be/dhqhRb9y018