অনলাইন সীমান্তবাণী ডেস্ক : ফুটবলের রাজা খ্যাত ব্রাজিলীয় কিংবদন্তি পেলে সাও পাওলোর একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেছেন। বেশ কিছু বছর ধরে কোলন ক্যানসারের সঙ্গে লড়ছিলেন ফুটবল মাঠের এই জাদুকর। তার বয়স হয়েছিল ৮২ বছর।
নভেম্বরের শেষ দিকে ব্রাজিলের সাও পাওলোর আলবার্ট আইনস্টাইন হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল পেলেকে। শরীর ফুলে যাওয়ার পাশাপাশি শ্বাসকষ্ট হচ্ছিল তার।
পেলের শরীরের সবশেষ অবস্থা ভক্ত-অনুসারীদের জানিয়ে আসছিলেন তার কন্যা কেলি নাসিমেন্তো। বৃহস্পতিবার বাবার চিরবিদায়ের খবর দিয়ে তিনি তার ইনস্টাগ্রাম পোস্টে লিখেছেন, ‘আমরা আজ যা, সবই তোমার সুবাদে। আজীবন তোমাকে ভালোবেসে যাবো। শান্তিতে থাকো।’ পরে পেলের ভেরিফায়েড ফেসবুক, টুইটার ও ইনস্টাগ্রাম আইডিতেও তার জীবনাবসানের খবর জানানো হয়।
পেলের মৃত্যুতে তিন দিনের রাষ্ট্রীয় শোক ঘোষণা করেছেন ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট জইর বোলসোনারো। তিনি এক শোকবার্তায় লিখেছেন, “ইতিহাসের সেরা ফুটবলারদের একজন আমাদের ছেড়ে চলে গেছেন। আমরা সব সময় সেই সময়ের কথা মনে রাখব, যখন পেলে তার নৈপুণ্য দিয়ে পৃথিবীকে নাড়িয়ে দিয়েছিলেন। তার পরিবার এবং ব্রাজিলের মানুষ যারা তাদের হৃদয়ে পেলেকে রাখবেন তাদের আলিঙ্গন।”
এছাড়া, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শোক প্রকাশ করছেন ব্রাজিলের অধিনায়ক নেইমার, আর্জেন্টিনা অধিনায়ক মেসি, ফ্রান্স ও পিএসজি ফরোয়ার্ড এমবাপে, পর্তুগিজ তারকা রোনালদোসহ অনেকেই।
পেলের ইচ্ছানুযায়ী, তাঁর মরদেহ নিয়ে যাওয়া হবে সাও পাওলো রাজ্যের ভিলা বেলমিরো স্টেডিয়ামে। এর আগে আইন রীতি অনুযায়ী, সমাহিতের জন্য মরদেহ প্রস্তুত করা হবে আলবার্ট আইনস্টাইন স্টেডিয়ামে। সেখান থেকে ২ জানুয়ারি (সোমবার) সকালে কফিন নিয়ে যাওয়া হবে সান্তোস ক্লাব স্টেডিয়ামে।
সান্তোস ক্লাবের বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, স্টেডিয়ামের মাঝমাঠে ২৪ ঘণ্টা পেলের মরদেহ রাখা হবে। সেখানেই ‘ফুটবল রাজা’কে শ্রদ্ধাজ্ঞাপন করতে পারবেন জনসাধারণ।
৩ জানুয়ারি সকালে পেলের মরদেহ নিয়ে ‘শেষযাত্রা’ হবে সান্তোসের রাস্তায়। কফিন বহন করে নিয়ে যাওয়া হবে কেলেস্তের সড়ক দিয়ে, যেখানে পেলের মা থাকেন। ১০০ বছর বয়সী পেলের মা শয্যাশায়ী।
অগস্ত্যযাত্রা শেষে পেলেকে মেমোরিয়া নেকরোপোল একিউমেনিকা নামের সমাধিস্থলে পরিবারের সদস্যদের উপস্থিতিতে সমাহিত করা হবে। সমাহিত করার অনুষ্ঠানটিতে জনসাধারণের প্রবেশাধিকার থাকবে না।
গত ২৯ নভেম্বর হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার পর পেলেকে নিয়ে পুরো ফুটবল বিশ্ব উৎকণ্ঠায় ভুগছিল। আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমে ফলাও করে প্রকাশ করা হয়েছিল, জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে পেলে। পরে অবশ্য পেলের মেয়ে কেলি নাসিমেন্তো ও ফ্লাভিয়া আরান্তেস ভক্তদের উদ্দেশে জানান, ব্রাজিলিয়ান জীবন্ত কিংবদন্তি অবশ্য সুস্থ হয়ে উঠছেন।
হাসপাতালে শয্যাশায়ী অবস্থাতেই কাতার বিশ্বকাপে দেখেছেন ব্রাজিলের জার্সিতে নেইমারের তাকে ছাড়িয়ে যাওয়া। সেই সঙ্গে সাক্ষী হয়েছেন তিন যুগ পর আর্জেন্টিনার বিশ্বকাপ শিরোপা জয়ের।
ফুটবল ইতিহাসে পেলে একমাত্র ফুটবলার, যিনি তিনটি বিশ্বকাপ জয় করেন। ১৯৫৮ সালে ব্রাজিল যখন বিশ্বকাপ জয় করে, তখন তার বয়স ছিল ১৭ বছর। এরপর ১৯৬২ এবং ১৯৭০ সালেও বিশ্বকাপ জয় করেন তিনি। তিন বিশ্বকাপজয়ী পেলে ব্রাজিলের হয়ে ৭৭টি গোল করেছেন। ২১ বছরের ফুটবল ক্যারিয়ারে ১ হাজার ৩৬৩ ম্যাচ খেলে তিনি গোল করেছেন ১ হাজার ২৮১টি। পেলে ২০০০ সালে ফিফার ‘শতাব্দীসেরা খেলোয়াড়’ নির্বাচিত হন।
Leave a Reply