অনলাইন সীমান্তবাণী ডেস্ক : বাংলাদেশি দুই বন্ধুর সঙ্গে দেখা করতে আমেরিকা থেকে নাটোরের গুরুদাসপুরে এসেছেন তেরি পারসন (৫৮) নামের এক ব্যবসায়ী। সেখানে গিয়ে চলনবিল দেখে মুগ্ধ হয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের জর্জিয়া অঙ্গরাজ্যের এই নাগরিক। তাকে ঘিরে উচ্ছ্বাস সৃষ্টি হয়েছে পুরো গ্রামজুড়ে। নেওয়া হয়েছে নিরাপত্তা ব্যবস্থা।
এর আগে মঙ্গলবার (২১ অক্টোবর) ভোরে হযরত শাহ জালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে তেরি পারসনকে সপরিবারে অভ্যর্থনা জানান তার বন্ধু সেতু প্রামাণিক (২৫)।
সেতু পেশায় রাজমিস্ত্রি। বন্ধু তেরি পারসনকে সেতুর গ্রামের বাড়ি গুরুদাসপুর উপজেলার খুবজিপুর ইউনিয়নের চলনবিল অধ্যুষিত চরবিলশায় রাখা হয়েছে।
রাজমিস্ত্রি সেতু প্রামাণিক বলেন, মাস খানেক আগে ফেসবুকের মাধ্যমে তেরি পারসনের সঙ্গে আমার বন্ধুত্ব হয়। এই সময়ে অনেকবার দুই বন্ধুর ভিডিও কলে কথোপকথন হয়েছে। স্বল্প দিনের বন্ধুত্বের মায়ায় পরে বাংলাদেশ ভ্রমণে আসার সম্মতি জানান তেরি পারসন। আমিও আমন্ত্রণ জানায়। গত ২১ অক্টোবর তেরি পারসন বাংলাদেশে আসেন। আসার সময় আমার জন্য উপহার হিসেবে জামা কাপড়ের সঙ্গে একটি স্বর্ণের চেইন এনেছে।
সেতু আরও বলেন, তেরি পারসনকে নিয়ে চলনবিল ঘুরিয়ে দেখিয়েছি। তার খাবারের তালিকায় রাখা হয়েছে গরুর মাংস, দেশি এবং বয়লার মুরগির মাংস, দেশি-বিদেশি ফল এবং কোমল পানীয় কোক।
সেতুর পরিবারের সদস্যরা বলেন, আমরা কখনও বিদেশি মানুষ দেখেননি। এখন আমেরিকার মানুষ আমাদের বাড়িতে থাকছেন- এটি ভেবে খুব আনন্দ পাচ্ছি। তেরি পারসন আমাদের জন্যও উপহারও দিয়েছেন।
বৃহস্পতিবার একই গ্রামের আরেক বন্ধু কৃষক আনোয়ারের বাড়িতে যাওয়ার কথা রয়েছে তেরি পারসনের।
আনোয়ার জানান, তেরি পারসনের সঙ্গে ফেসবুকে বন্ধুত্ব। আমাদের সঙ্গে দেখা করতে বাংলাদেশে এসেছে। সে আমাকে জামা কাপড়ের সঙ্গে ডায়মন্ডের আংটি উপহার দিয়েছেন। থৈ থৈ পানি আর চলনবিলের রূপে মুগ্ধ হয়েছেন তেরি পারসন। আজকে (বৃহস্পতিবার) আমার বাড়িতে আসার কথা রয়েছে। তার দুপুরের খাবারের জন্য দুই জাতের মুরগি ও ফলের আয়োজন করা হয়েছে।
তেরি পারসন ইত্তেফাককে বলেন, পরিবারে আমার ছোট বোন রয়েছে। বোনের বিয়ে দিলেও নিজে বিয়ে করিনি। প্রেমে ব্যর্থ হওয়ার পর একাকীত্বকে বেছে নিয়েছি। দেশি-বিদেশি বন্ধুদের সঙ্গেই আমি সময় কাটায়।
তিনি আরও বলেন, ‘বাংলাদেশ চমৎকার একটি দেশ। বিশেষ করে চলনবিলের ফসল, সড়ক যোগাযোগ আর উন্মুক্ত জলরাশি আমাকে ভীষণভাবে মুগ্ধ করেছে। তাছাড়া স্থানীয় লোকজনের আতিথেয়তা, শিশুদের বন্ধুসুলভ ব্যবহার আমাকে বাংলাদেশ নিয়ে নতুন করে ভাবাতে শুরু করেছে। আমি মোট ১১ দিন গুরুদাসপুরের চলনবিলে থাকতে চাই। এই সময়ে গ্রামের মানুষের সঙ্গে সময় কাটাবো। আমেরিকায় গিয়ে সেখানকার বন্ধুদের বাংলাদেশে আসার জন্য আমন্ত্রণ জানাবো। আমি নিজেও কিছুদিন পার আবার এখানে আসবো।’
খুবজিপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মনিরুল ইসলাম দোলন বলেন, আমেরিকার নাগরিক তেরি পারসনের সঙ্গে দেখা করে কথা বলেছি। এলাকার মানুষ তেরি পারসনকে দেখতে আসার বিষয়টি খুব উপভোগ করছেন তেরি। শিশুদের সঙ্গে হৈ-হুল্লোড়, ভিন্ন ভাষাভাষী হলেও গুরুদাসপুরের গ্রামের দোকানে চা পান, বড়দের সঙ্গে গল্প আড্ডা দিচ্ছেন তেরি। তেরি পারসনের চরবিলশায় আসার খবর ছড়িয়ে পড়েছে পুরো গুরুদাসপুরে। দুরের মানুষও আসছেন দেখতে।
গুরুদাসপুর থানার ওসি মো. দুলাল হোসেন বলেন, বন্ধুত্বের টানে আমেরিকার নাগরিকের গুরুদাসপুরে আসার খবর পেয়েছি। পেয়েছেন। নিরাপত্তার কথা বিবেচনায় সেখানে ফোর্সও পাঠানো হয়েছে।