অনলাইন সীমান্তবাণী ডেস্ক : ভারতের প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং বলেছেন, বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের উচিত নিজের বক্তব্যে শব্দচয়নে সতর্ক থাকা। তিনি জানিয়েছেন, ভারত তার প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে কোনো ধরনের উত্তেজনা চায় না, বরং সুসম্পর্ক বজায় রাখাই দিল্লির মূল লক্ষ্য।
আজ ৮ নভেম্বর শনিবার প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে সংবাদ মাধ্যম ফার্স্টপোস্ট জানিয়েছে, ভারতের সংবাদমাধ্যম নেটওয়ার্ক ১৮ গ্রুপের শীর্ষ সম্পাদক রাহুল জোশিকে দেওয়া বিশেষ সাক্ষাৎকারে তিনি এসব কথা বলেন। দীর্ঘ এই সাক্ষাৎকারে রাজনাথ সিং আলোচনা করেন অপারেশন সিন্দুর সামরিক সফলতা, পাকিস্তান ও আফগানিস্তানের মধ্যকার সাম্প্রতিক সংঘাত, যুক্তরাষ্ট্রের পরমাণু পরীক্ষা-সংক্রান্ত মন্তব্য এবং ভারতের প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে সম্পর্ক নিয়ে।
বাংলাদেশ প্রসঙ্গ : সাক্ষাৎকারে এক প্রশ্নের জবাবে রাজনাথ সিং বলেন, বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস প্রায়ই উসকানিমূলক বক্তব্য দেন। সম্প্রতি তিনি একজন পাকিস্তানি জেনারেলকে এমন একটি মানচিত্র দিয়েছেন, যেখানে ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলকে বাংলাদেশের অংশ হিসেবে দেখানো হয়েছে। এটা খুবই দুঃখজনক। আমি মনে করি, তার এমন কাজ এড়িয়ে চলা উচিত। আমরা প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে ভালো সম্পর্ক বজায় রাখতে চাই। কোনো ধরনের উত্তেজনা বা সংঘাত আমাদের কাম্য নয়।
ভারত–পাকিস্তান সংঘাত : সাক্ষাৎকারে রাজনাথ সিং ‘অপারেশন সিন্দুর’ প্রসঙ্গেও বিস্তারিত কথা বলেন। তিনি বলেন, আমরা প্রমাণ করেছি—ভারত আগের মতো নয়। আমরা সন্ত্রাসীদের ঘরে ঢুকে জবাব দিয়েছি। তবে আমরা যুদ্ধ চাই না। পাকিস্তানের পক্ষ থেকে যুদ্ধবিরতির অনুরোধ এলে আমরা তা বিবেচনা করি। যুদ্ধ থেমে আছে, শেষ হয়নি; প্রয়োজনে আবারও ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ভারত কখনও কারও চাপে সিদ্ধান্ত নেয় না। আমরা নিজেদের স্বার্থে, নিজেদের সময়মতো সিদ্ধান্ত নেব।
পাকিস্তান ও আফগানিস্তান নিয়ে অবস্থান : পাকিস্তান ও আফগানিস্তানের সাম্প্রতিক সীমান্ত সংঘর্ষ প্রসঙ্গে রাজনাথ বলেন, পাকিস্তান বলছে, ভারত এই সংঘাতে ভূমিকা রাখছে—এই অভিযোগ সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন। আমরা শান্তি চাই, কিন্তু কেউ যদি আমাদের উসকায়, তাহলে ভারতও জবাব দিতে জানে। আফগানিস্তান-পাকিস্তানের বিরোধকে ভারতের অভ্যন্তরীণ বিষয় নয় বলেই মনে করে দিল্লি। আমরা অন্য দেশের বিষয়ে হস্তক্ষেপে বিশ্বাস করি না। দুই দেশ নিজেরাই আলোচনার মাধ্যমে সমস্যা সমাধান করুক।
চীন প্রসঙ্গে কূটনৈতিক বার্তা : ভারত-চীন সীমান্তে উত্তেজনা প্রসঙ্গে প্রতিরক্ষামন্ত্রী বলেন, এলএসি’র কয়েকটি স্থানে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়েছে। চীনের প্রতিরক্ষামন্ত্রীর সঙ্গে আমার বৈঠকে তারা জানিয়েছেন—তারা আলোচনার মাধ্যমে সব বিষয় সমাধান করতে চায়। আমরা আশা করি, এই বরফ গলবে।
ভারতের প্রতিরক্ষা শক্তি : সাক্ষাৎকারে রাজনাথ সিং জানান, ভারতের নিজস্ব প্রতিরক্ষা উৎপাদন এখন দ্রুত এগোচ্ছে। আমরা ২০২৯ থেকে ২০৩০ সালের মধ্যে ৫০ হাজার কোটি রুপির প্রতিরক্ষা রপ্তানি লক্ষ্য স্থির করেছি। ৫৫০টি সামরিক সরঞ্জাম বিদেশ থেকে আমদানি না করে দেশেই তৈরি করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। আমরা চাই, ভারতের প্রতিটি অস্ত্র ভারতেই তৈরি হোক—ভারতের মাটিতে, ভারতীয় হাতে। নতুন প্রজন্মের যুদ্ধবিমান ‘অ্যাডভান্সড মিডিয়াম কমব্যাট এয়ারক্রাফট’ প্রকল্পে অগ্রগতি হয়েছে এবং আগামী কয়েক বছরের মধ্যেই দেশেই ইঞ্জিন তৈরি শুরু হবে।
যুক্তরাষ্ট্র, চীন ও রাশিয়ার সঙ্গে সম্পর্ক : মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের পারমাণবিক পরীক্ষার মন্তব্য নিয়ে তিনি বলেন, কে কী করবে, তা তারা জানে। ভারত ভয় বা চাপের কারণে কোনো পদক্ষেপ নেবে না। ভারতের স্বার্থে যা প্রয়োজন, তাই করবে।
রাশিয়ার সঙ্গে প্রতিরক্ষা চুক্তি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আমরা এখনও এস-৪০০ মিসাইল সিস্টেমের প্রয়োজন বোধ করছি। সুযোগ পেলে আরও কেনা হবে।
প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে সম্পর্ক : সাক্ষাৎকারের শেষদিকে রাজনাথ সিং বলেন, ভারত শান্তির পক্ষে। তবে কেউ যদি আমাদের সার্বভৌমত্বে আঘাত হানে, ভারত জবাব দিতে পিছপা হবে না। আমাদের নীতি—শান্তি চাই, দুর্বলতা নয়। আটল বিহারী বাজপেয়ী সব সময় বলতেন—বন্ধু পরিবর্তন করা যায়, কিন্তু প্রতিবেশী নয়। তাই আমাদের লক্ষ্য—সব প্রতিবেশীর সঙ্গে স্থিতিশীল ও পারস্পরিক শ্রদ্ধার সম্পর্ক গড়ে তোলা।