অনলাইন সীমান্তবাণী ডেস্ক : ছোট্ট ঘরের সামনে ছোট্ট উঠানটি যেন এক টুকরা সবজি বাগান। দূর থেকে দেখলে নয়ন জুড়াবে যে-কারও। ঘরের চাল আর মাচায় ঝুলছে লাউ। উঠানে বেগুনসহ নানা রকম সবজি দেখা যাচ্ছে। বলছি বাগেরহাটের মোরেলগঞ্জ উপজেলার চতুর্থ পর্যায়ে একটি আশ্রয়ণ প্রকল্পের বাসিন্দাদের কথা, বাড়ির আঙিনা ঘেষে কলাগাছসহ বিভিন্ন গাছের সমাহার। এর মধ্যে হাঁস-মুরগির ডাকে মুখরিত ঘরগুলো। কেউ কেউ পালন করছেন গরু ও ছাগল। আর বিষ মুক্ত সবজি চাষ করে পারিবারিক পুষ্টি নিশ্চিতের পাশাপাশি বাজারজাত করে স্বচ্ছলতার মুখ দেখছে এই আশ্রয়ণ প্রকল্পে পুণর্বাসিত প্রান্তিক অসহায় পরিবারগুলো। পুরুষরা ছুটছেন দৈনন্দিন কাজে। নারীদের কেউ কেউ ব্যস্ত হাঁস-মুরগি, গরু-ছাগল ও বসতবাড়ির নিজ আঙিনায় গড়ে তোলা সবজি বাগানের পরিচর্যা নিয়ে। বর্তমানে এমন জীবন পেয়ে দারুণ খুশি এক সময়ের ছিন্নমূল এসব মানুষেরা। চতুর্থ পর্যায়ে জমি ও ঘর পেয়ে বাগেরহাটের মোরেলগঞ্জ উপজেলার একটি আশ্রয়ণ প্রকল্পের ৩২টি পরিবারের সদস্যদের মুখে ফুটেছে হাঁসির ঝিলিক।
উপজেলার একটি ইউনিয়নের আশ্রয়ণ প্রকল্প ঘুরে দেখা যায়, বঙ্গবন্ধুর সুযোগ্য কন্যা প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার দেয়া আশ্রয়ণ প্রকল্পের দুই শতক জমিতে গড়ে তোলা ঘরের পাশে অল্প অংশটুকু খালি রাখছেন না কেউই। সদ্য প্রধানমন্ত্রীর উপহারের বাড়ি পেয়ে বদলে গেছে উপজেলার সদর ইউনিয়ন ও খাওলিয়া ইউনিয়নের আশ্রয়ণ প্রকল্পের বাসিন্দাদের জীবনযাত্রার মান। যেখানে জমি কেনা দুঃস্বপ্ন ছিল, সেখানে বিনা মূল্যে ২ শতক জমিসহ বসত বাড়ি পেয়েছেন ভূমিহীনরা। তাদের অনেকেরই জীবন পরিবর্তনের অনুপ্রেরণা হিসেবে কাজ করছে এ অসামান্য উপহার। মাথা গোঁজার নিজস্ব ঠিকানা পেয়ে অনেকেই আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী হওয়ার পাশা পাশি বদলে ফেলছেন জীবনের গল্প। আশ্রয়ণের ঘরের পাশে অল্প ফাঁকা জমি কোন না কোন ভাবে কাজে লাগাচ্ছেন তারা।
পানগুছির তীরে সদ্য আশ্রয়ণের জমি ও ঘর পাওয়া জালাল উদ্দিন বলেন, আমি ঘরের সামনে ছোট সবজি বাগান করেছি। এতে করে আমার সবজি কেনা লাগে না। শুধু চাল ডাল কিনলেই হয়।ছাগল পালন করছি, তিনি দৈনন্দিন কাজের ফাঁকে এই সবজি চাষ করেন ও তার স্ত্রী হাস, মুরগি ছাগল দেখভাল করেন। ঘর পাওয়া একজন মুক্তিযোদ্ধার স্ত্রী আমেনা খাতুন বলেন, মানুষ অনেক স্বপ্ন দেখে, কিন্তু সব স্বপ্ন তো পূরণ হয় না। তবে আমার একটি স্বপ্ন পূরণ হয়েছে, তা হল ঘর। আমার স্বপ্ন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পূরণ করেছেন।
সদর ইউনিয়নের গাবতলা আশ্রয়ণ প্রকল্পের একটি ঘরে থাকেন রোকেয়া বেগম,অতিতের স্মৃতি তুলে ধরে বৃদ্ধ রোকেয়া বলেন, আমার কোনো ঘর ছিল না, স্বামীকে নয়ে অনেক কষ্ট করেছি, আগে যেখানে থাকতাম একটু বৃষ্টি হলেই শরীর ভিজে যেত, হাঁস-মুরগি পালনসহ নানা কাজ করার সুযোগ পেয়েছি- সত্যিই এটা স্বপ্নের। এমনটি হবে ভাবিনি, সৃষ্টিকর্তার কাছে হাসিনার জন্য দোয়া করি।
এদিকে এই আশ্রয়ণ প্রকল্পের কয়েকজন বাসিন্দা একটি মসজিদ ও একটি কবরস্থানের দাবি জানান। তারা বলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনা অনুযায়ী এক ইঞ্চি জমিও খালি রাখছেন না কেউই। আশ্রয়ণের ঘরের পাশে অল্প ফাঁকা জমি কোন না কোনভাবে কাজে লাগাচ্ছেন তারা। অত্মকর্মসংস্হানের সুযোগ হয়েছে।
তারা আরও বলেন বিভিন্ন উপায়ে অনেকে ক্ষুদ্রঋণ গ্রহণ করে গৃহপালিত পশু-পাখি পালন করছেন। আবার নিজেদের উদ্যোগে বিভিন্ন সবজির চাষ করে সাবলম্বী হচ্ছেন, তবে মোরেলগঞ্জ কৃষি অফিস থেকে তারা বিনা মূল্যে কোন সবজির বীজ পান না বলে অভিযোগ তাদের, কৃষি বিভাগের কেউ তাদের খোঁজ নেন না, তারা যেন বিনামূল্যে বিভিন্ন সবজির বীজ পান সে দাবির কথাও তুলে ধরেন এই আশ্রয়ণ প্রকল্পের বাসিন্দারা।
মোরেলগঞ্জ উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা আবদুল্লাহ আল জাবির বলেন, প্রধানমন্ত্রী মুজিববর্ষ উপলক্ষে আশ্রয়ণ প্রকল্প-২ এর আওতায় উপজেলায় হতদরিদ্র যাদের বসবাসের কোনো ঠিকানা ছিল না, তাদের স্থায়ী আশ্রয়ের ব্যবস্থা করেছেন। এটা সত্যিই বিস্ময়কর। প্রধানমন্ত্রীর উপহারের ঘরের কাজের সাথে সামিল হতে পেরে আমরাও আনন্দিত, আশ্রয়নের ঘর পেয়ে অসহায় পরিবারগুলো তাদের ভাগ্যের চাকা নতুনভাবে ঘোরাতে শুরু করেছে।
মোরেলগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) এস এম তারেক সুলতান বলেন, আশ্রয়ণ প্রকল্পের মাধ্যমে গরিব অসহায় মানুষের মুখে হাসি ফোটাতে এই প্রকল্প বাস্তবায়নের নির্দেশ দেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী। আমরা এই প্রকল্পের কাজ সঠিকভাবে বাস্তবায়ন করার চেস্টা করছি, আশ্রয়ণ প্রকল্পের বাসিন্দাদের সামাজিক, নিরাপত্তার নানা কর্মসূচিসহ সবধরনের সহায়তা ও পুরুষের পাশাপাশি সেখানকার নারীদেরকেও আত্মনির্ভরশীল করে গড়ে তুলতে নানা ধরনের প্রশিক্ষণ ও পরামর্শ দেয়া হচ্ছে।
Leave a Reply