অনলাইন সীমান্তবাণী ডেস্ক : বাড়ির পথ হারিয়ে ফরিদপুরের ভাঙ্গায় ঘুরে বেড়াচ্ছেন কিরণ (৬২) নামে শ্রবণ-বাকপ্রতিবন্ধী এক বৃদ্ধ। পরিবারকে হারিয়ে যেন নিঃস্ব হয়ে গেছেন তিনি। স্বজনদের কাছে ফিরতে অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছেন এই বৃদ্ধ।
চিনেন না নিজ এলাকার রাস্তা। আবার বলতে কিংবা বোঝাতেও পারেন না নিজের ঠিকানা। তবে ইশারায় বোঝানোর চেষ্টা করেন। মানুষ দেখলেই ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে থাকেন। নীরবে কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন। শুধু বাড়ি ফেরার আকুতি তার।
বর্তমানে ওই ব্যক্তি ভাঙ্গা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. জিয়ারুল ইসলামের তত্ত্বাবধানে আছেন। এছাড়া মহিউল হক নামে স্থানীয় এক ব্যবসায়ী তার থাকা-খাওয়াসহ যাবতীয় ব্যয় বহন করছেন।
স্থানীয় ও পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, প্রায় চারমাস আগে ওই বৃদ্ধ যাত্রীবাহী বাসে ঘুমিয়ে পড়েন। ধারণা করা হয়, সঠিক গন্তব্যে নামতে না পারায় এক পর্যায়ে ভাঙ্গা গোল চত্বরে নামিয়ে দেন বাসের হেলপার। বাস থেকে নেমে পথ হারিয়ে ভাঙ্গা পৌর শহরের একটি আবাসিক হোটেলের সামনে আসেন। পরে সেখান থেকে তার কাছে থাকা ব্যাগ চুরি হয়ে যায়। একজন মানবিক ব্যবসায়ীর সহযোগিতায় ভাঙ্গার একটি হোটেলে ঘুমাচ্ছেন ও খাচ্ছেন। তবে তিনি নিজের বাড়িতে ফিরে যেতে চান।
এ ব্যপারে স্থানীয় ব্যবসায়ী মহিউল হক বলেন, ওই ব্যক্তিকে প্রায় পাঁচমাস আগে ভাঙ্গা পৌরসদরের একটি আবাসিক হোটেলের সামনে কাঁদতে দেখি। তার কান্নার কারণ বের করতে গিয়ে জানতে পারি তিনি বাকপ্রতিবন্ধী ও নিরক্ষর। সঙ্গে থাকা কাগজপত্রসহ ব্যাগ চুরি হয়ে গেছে। তারপর থেকে তাকে একটি হোটেলে থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা করে দিয়েছি। পথ হারিয়ে পরিবার ছেড়ে ভাঙ্গায় দিন যাপন করে চলেছেন। বাড়ির পথ চেনেন না, কিছু বলতেও পারেন না। ইশারায় বোঝাতে চেষ্টা করেন যে উনার স্ত্রী ও সন্তান আছে। পরিবারের কাছে যেতে ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন। বিষয়টি স্থানীয় থানার ওসিকে জানানোর পর তিনিও সাধ্যমতো সাহায্য সহযোগিতা করেছেন। একই সঙ্গে তার ঠিকানা বের করার চেষ্টা করে যাচ্ছেন।
এ বিষয়ে ভাঙ্গা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. জিয়ারুল ইসলাম বলেন, তিনি একজন শ্রবণ ও বাক প্রতিবন্ধী। কথা বলে যতদূর বুঝি তার নাম কিরণ। তার বাড়িতে স্ত্রী ও দুটি সন্তান রয়েছে। চট্টগ্রামের বায়েজিদ বোস্তামী এলাকায় নিজের ঠিকানা হতে পারে। প্রাথমিক চেষ্টাসহ আমি উনার ফিঙ্গার নিয়ে ঠিকানা বের করতে ব্যর্থ হয়েছি। কাছে থাকা কাগজপত্র বারবার দেখেছি কিন্তু তেমন কিছু পাওয়া যায়নি।
তিনি আরও বলেন, পাঁচমাস আগে তিনি যেকোনোভাবে ভাঙ্গাতে আসেন। কোনো বাস থেকেই এখানে নেমেছেন এবং উদ্দেশ্যহীনভাবেই এখানে রয়েছেন। একজন মানবিক ব্যবসায়ীর সহযোগিতায় ভাঙ্গার একটি হোটেলে ঘুমাচ্ছেন ও খাচ্ছেন। আমি মাঝেমধ্যে কিছু সহযোগিতা করে আসছি। তিনি নিজের বাড়িতে ফিরে যেতে চান। তাকে শ্রবণ প্রতিবন্ধী স্কুলে নিয়ে যাওয়া হবে। উনার আপন ঠিকানা খোঁজে পেতে আপনাদের যেকোনো পরামর্শ আমাকে আরও একধাপ এগিয়ে নিবে। তার ঠিকানা কারো জানা থাকলে থানায় যোগাযোগের অনুরোধ করেন তিনি।
Leave a Reply