অনলাইন সীমান্তবাণী ডেস্ক : বিএনপির রাজনীতি ছেড়ে অবসরে যাওয়ার ঘোষণা দিয়ে অবাক করেছিলেন শমসের মবিন চৌধুরী। মাঝখানে বি চৌধুরীর দল বিকল্প ধারায় যোগ দিয়ে দেখিয়েছিলেন চমক। এরপর অনেকটাই আলোচনার বাইরে থাকা বিএনপির সাবেক এই ভাইস চেয়ারম্যান এবার হাল ধরেছেন প্রয়াত নাজমুল হুদার দল তৃণমূল বিএনপির।
প্রথমবারের মতো অনুষ্ঠিত দলের কাউন্সিলে তৃণমূল বিএনপির চেয়ারপারসনের দায়িত্ব পাওয়ার পরদিন বুধবার শমসের মবিন কথা বলেছেন ঢাকা টাইমসের সঙ্গে। তৃণমূল বিএনপির নবনির্বাচিত এ চেয়ারম্যান বলছেন, ‘বিদ্যমান সংবিধান অনুযায়ী ক্ষমতাসীন সরকারের অধীনেই সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব। তবে, সেক্ষেত্রে নির্বাচন কমিশনকে প্রভাবমুক্ত রাখতে হবে।’
শমসের মবিন এও বলছেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে বিএনপি যে আন্দোলন করছে তাতে দলটির কিছু কর্মী ছাড়া সাধারণ জনগণ সাড়া দেবে না। তবে আমরা অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন চাই।
সম্প্রতি আকস্মিকভাবে গণমাধ্যমের শিরোনামে উঠে আসেন শমসের মবিন। খবর হয়, তিনি যোগ দিচ্ছেন চলতি বছরেই নির্বাচন কমিশনের নিবন্ধন পাওয়া তৃণমূল বিএনপিতে। তার সঙ্গে দলটিতে যোগ দিচ্ছেন বিএনপি থেকে বহিষ্কৃত হেভিওয়েট নেতা তৈমুর আলম খন্দকারও।
মঙ্গলবার রমনায় ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউট মিলনায়তনে তৃণমূল বিএনপির প্রথম দলীয় কাউন্সিলে শমসের মবিন ও তৈমুর আলম খন্দকার চেয়ারম্যান ও মহাসচিব নির্বাচিত হন।
হঠাৎ নতুন দলে যোগ দেওয়ার কারণ ব্যাখ্যা করতে গিয়ে শমসের মবিন বলেন, তৃণমূল শব্দটা আমার কাছে খুব পছন্দ। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ করেছে তৃণমূলের মানুষ। আজকে বাংলাদেশের তৃণমূলের মানুষ বঞ্চিত, তাদের মূল্যায়ন হয় না। আমি চেষ্টা করব তাদের কথা বলতে।
শমসের মবিন চৌধুরী বলেন আমরা চাই অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন। আর সেটা বর্তমান সংবিধান অনুযায়ী এ সরকারের অধীনেই সম্ভব। সেক্ষেত্রে প্রশাসন যদি তাদের নিরপেক্ষ দায়িত্ব পালন করে, নির্বাচন কমিশনকে তাদের দায়িত্ব নিরপেক্ষভাবে পালন করতে পারে এবং ইসিকে যদি তাদের প্রদত্ত ক্ষমতা দেওয়া হয়, সে ক্ষমতা যদি তারা সঠিকভাবে প্রয়োগ করা হয় তাহলে অবশ্যই সংবিধান অনুযায়ীই আগামী নির্বাচন সম্ভব। দেশের মানুষ একটি সুষ্ঠু নির্বাচন চায়, আমরা সে লক্ষ্যেই এগুচ্ছি।
তার কাছে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বলেন, বর্তমান সরকারের অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচন অবশ্যই সম্ভব। তফসিল ঘোষণার পর নির্বাচন কমিশনের ওপর কোনো রকম প্রভাব বিস্তার করা যাবে না। সকল নির্বাহী ক্ষমতা তাদের হাতে থাকতে হবে। জনপ্রশাসনসহ অন্যান্য প্রশাসন যদি স্বাধীন ও নিরপেক্ষভাবে ভূমিকা পালন করতে পারে তাহলে অবশ্যই এ সরকারের অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব।
তিনি বলেন, ইতিমধ্যে অনেকে আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করছেন এবং এখনো করছেন। আমাদের নীতি ও আদর্শে সাড়া দিয়ে অনেকে তৃণমূল বিএনপিতে যোগ দেবেন।
সাবেক পররাষ্ট্র সচিব বলেন, অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও দৃশ্যমান উন্নয়ন হয়েছে। তবে, যে কয়টি বিষয় জনগণকে আঘাত করেছে তার অন্যতম হলো দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাচ্ছে। আজকে আমরা পর্যাপ্ত আলু উৎপাদন করলেও আমদানি করতে হচ্ছে। সরকার যদি মজুদদারদের সঠিকভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে না পারে তাহলে ভোগান্তি দিনে দিনে বেড়েই চলবে। আমি বিশ্বাস করি সিন্ডিকেটগুলো চাপে রাখার শক্তি সরকারের আছে। যদি নিয়ন্ত্রণ করতে ব্যর্থ হয় সেক্ষেত্রে সরকার সমস্যায় পড়তে পারে। আমি মনে করি সরকারের হাতে এখনও সময় আছে। এবং দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ সম্ভব।
শমসের মবিন বলেন, দেশে কিংস পার্টি বলতে কিছু নেই। এক-এগারোর সময় কয়েকটি দল কিংস পার্টি নামে আবির্ভূত হওয়ার চেষ্টা করেছিলো। তৃণমূল বিএনপি জনগণের পার্টি। আমরা মানুষের কথা বলব। নতুন প্রজন্ম নতুন বার্তা শুনতে চায়। অসাম্প্রদায়িক রাষ্ট্র গড়ে তুলতে চায়। আমরা স্বাধীনভাবে এবং মুক্ত চিন্তাধারায় কাজ করছি। আর সে লক্ষ্যেই মাঠে নেমেছি।
বিএনপির তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে আন্দোলন সম্পর্কে তিনি বলেন, এই তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রস্তাব প্রথমে নাজমুল হুদাই দিয়েছিলে। যার কারণে, তাকে মন্ত্রী থেকে পদত্যাগ করতে বাধ্য করা হয়েছিলো। এখন ঘুরে ফিরে তারা এ জায়গায় এসেছে। আমি মনে করি তাদের কিছু দলীয় কর্মী ছাড়া জনগণ তাদের আন্দোলনে সাড়া দেবে না।
Leave a Reply