অনলাইন সীমান্তবাণী ডেস্ক : বিএনপির উদ্দেশে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, সরকার পতনের হাঁকডাক দিয়ে কোনো লাভ নেই। অনুমতি চেয়েছেন, অনুমতি দিয়েছে। আপনাদের সমাবেশে কেউ বাধা দেবে না।
বৃহস্পতিবার (১ নভেম্বর) দুপুরে গোপালগঞ্জ শহরের পৌরপার্কের মুক্তমঞ্চে অনুষ্ঠিত গোপালগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের ত্রিবার্ষিক সম্মেলনের উদ্বোধকের বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
বিএনপিকে উদ্দেশ করে ওবায়দুল কাদের আরও বলেন, ‘খেলা হবে। অপেক্ষা করুন, নির্বাচনে খেলা হবে। ডিসেম্বরে খেলা হবে। বিএনপির আগুন আর লাঠির বিরুদ্ধে খেলা হবে। আগুন আর লাঠি নিয়ে এলে খেলা হবে। দুর্নীতির বিরুদ্ধে, ভোট চুরির বিরুদ্ধে, ভুয়া ভোটার তালিকার বিরুদ্ধে খেলা হবে।’
সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে বিএনপিকে সমাবেশের অনুমতি দেওয়া হয়েছে জানিয়ে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘কিন্তু উনারা সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে স্বাচ্ছন্দ্রবোধ করছেন না। ফখরুলের মুখে মধু আর অন্তরে বিষ। এরই নাম ফখরুল। ফখরুল সাহেব, অনুমতি দেওয়া হয়েছে। আপনাদের মিটিংয়ে কেউ বাধা দেবে না। আমরা রাজশাহীতেও বলে দিয়েছি সেখানে যেন পরিবহন ধর্মঘট না করে। ঢাকাও পরিবহন ধর্মঘট হবে না নেত্রী বলে দিয়েছেন।’
ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘ফখরুল (মির্জা ফখরুল) এখন নাটক শুরু করছেন। নাটক কী? কোথাও সমাবেশ দিলে সাতদিন আগে থেকে প্রচার করেন, মিথ্যাচার করেন বাধা দেওয়া হচ্ছে। সরকার বাধা দিচ্ছে। আর কাঁথা-বালিশ-হাঁড়ি-পাতিল, চালের বস্তা, সঙ্গে টাকার বস্তা আর মশার কয়েল নিয়ে সমাবেশস্থলে আসে। কুমিল্লাতে তো কেউ বাধা দেয়নি।’
এ সময় হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে সেতুমন্ত্রী বলেন, ‘সমাবেশের অনুমতি দেওয়ার পরও যদি বাড়াবাড়ি করেন, লাফালাফি করেন, আগুন নিয়ে নামেন, লাঠির সঙ্গে জাতীয় পতাকা লাগিয়ে মাঠে নামেন তাহলে খবর আছে। খেলা হবে দারুণ। পাল্টাপাল্টি আমরা করবো না। আমরা শান্তি চাই। আমরা ক্ষমতায় আছি। ক্ষমতায় থেকে আমরা অশান্তি কেন করবো? মানুষকে কেন আতঙ্কে রাখবো? আমরা তো মানুষকে শান্তিতে রাখতে চাই। আমরা ক্ষমতায় আছি। অশান্তি হলে তো সেখানে মাথা ঘামাতে হবে।’
বর্তমান পরিস্থিতি প্রসঙ্গে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘যুদ্ধের (রাশিয়া-ইউক্রেন) কারণে নিষেধাজ্ঞার জন্য আমরা একটু বিপদে আছি। মানুষ কষ্টে আছে। অভাবি মানুষ, সাধারণ মানুষ, স্বল্পআয়ের মানুষ কষ্টে আছে। এটা শেখ হাসিনা নিজেই স্বীকার করেন। চেষ্টা করছেন তিনি। এখনো বাংলাদেশে সোমালিয়া -সুদানের মতো দুর্ভিক্ষ হয়নি। এখনো আমরা অনেক দেশের তুলনায় ভালো আছি। শেখ হাসিনা ভালো থাকলে বাংলাদেশ ভালো থাকবে।’
সেতুমন্ত্রী বলেন, ‘তারেক (তারেক রহমান) লন্ডনে বসে শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে, বাংলাদেশের বিরুদ্ধে, মুক্তিযুদ্ধের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছে। তাই তারেকের হাওয়া ভবনের অর্থপাচারের বিরুদ্ধে খেলা হবে। সারা বাংলাদেশ থেকে কত টাকা পাচার করা হয়েছে শেখ হাসিনা তা খতিয়ে দেখছেন। সব টাকা উদ্ধার করা হবে। টাকা পাচারকারী তারেক রহমানসহ যারাই আছে প্রত্যেকের টাকা উদ্ধার করা হবে।’
প্রধানমন্ত্রীর প্রশংসা করে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মতো এত সৎ মানুষ ৭৫’র পর আর আসেনি। এত সাহসী রাজনীতিবীদ আর একজনও আসেনি। এই বাংলায় তার মতো ত্যাগী, বিচক্ষণ, দক্ষ প্রশাসক আর একজনও আসেনি। আমাদের নেত্রীকে নিয়ে আমরা গর্ব করি। যতদিন আছে শেখ হাসিনার হাতে দেশ, পথ হারাবে না বাংলাদেশ।’
সম্মেলনে প্রধান অতিথি ছিলেন আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য শেখ ফজলুল করিম সেলিম।
এ সময় অন্যদের মধ্যে আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য মুহাম্মদ ফারুক খান, উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য কাজী আকরাম উদ্দিন আহমেদ, সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা আজম, এসএম কামাল হোসেন, উপ-দপ্তর সম্পাদক সায়েম খান, নারী আসন-২৫ এর এমপি নার্গিস রহমান বক্তব্য রাখেন।
সম্মেলনের দ্বিতীয় পর্বে মাহাবুব আলী খানকে সভাপতি ও জিএম সাহাব উদ্দিন আজমকে সাধারণ সম্পাদক করে জেলা আওয়ামী লীগের কমিটি ঘোষণা করেন শেখ ফজলুল করিম সেলিম।
এরআগে জাতীয় ও দলীয় পতাকা উত্তোলন এবং জাতীয় সংগীত পরিবেশনের মধ্যদিয়ে গোপালগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের ত্রিবার্ষিক সম্মেলনের কার্যক্রম শুরু হয়।
তার আগে গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সমাধিসৌধের বেদিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান ওবায়দুল কাদের। পরে বঙ্গবন্ধু ও তার পরিবারের শহীদ সদস্যদের রুহের মাগফেরাত কামনা করে ফাতেহা পাঠ ও বিশেষ মোনাজাতে অংশ নেন। পরে তিনি সমাধিসৌধ কমপ্লেক্সের অ্যাডমিন ভবনে রক্ষিত পরিদর্শন বইয়ে মন্তব্য লিখে সই করেন।
Leave a Reply