অনলাইন সীমান্তবাণী ডেস্ক : বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ বা বিজিবির সঙ্গে স্থানীয় জনগণের শক্ত অবস্থানের কারণে সীমান্তে ভারত কাঁটাতারের বেড়া নির্মাণকাজ বন্ধ রাখতে বাধ্য হয়েছে বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী।
আজ (রোববার) আইনশৃঙ্খলা সংক্রান্ত উপদেষ্টা কমিটির সভা শেষে সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা জানান। সচিবালয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সম্মেলনকক্ষে আইনশৃঙ্খলা সংক্রান্ত উপদেষ্টা কমিটির এ সভা অনুষ্ঠিত হয়।
সম্প্রতি সীমান্তের পাঁচটি জায়গায় ভারত কাঁটাতারের বেড়া নির্মাণকাজ শুরু করেছে জানিয়ে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) সঙ্গে স্থানীয় জনগণের শক্ত অবস্থানের কারণে ভারত ওইসব স্থানে কাজ বন্ধ রাখতে বাধ্য হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, তাদের সঙ্গে আমাদের যোগাযোগ হচ্ছে। এ মুহূর্তে কাজ বন্ধ আছে। ভারতের রাষ্ট্রদূতকে ডেকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে এ বিষয়টি জানানো হবে।
বাংলাদেশ ও ভারতের সঙ্গে সীমানা নির্ধারণ এবং উভয় দেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনীর সঙ্গে এ পর্যন্ত চারটি সমঝোতা স্মারক সই হয়েছে জানিয়ে উপদেষ্টা বলেন, ‘এগুলোর মধ্যে ছিল- সীমান্তের ১৫০ গজের মধ্যে ডিফেন্স পোটেনশিয়ালিটি আছে এমন কাজ কেউ করতে পারবে না। শূন্য লাইন থেকে ১৫০ গজের মধ্যে কোনো উন্নয়নমূলক কাজ করতে গেলে একে অপরের সঙ্গে কাছ থেকে সম্মতি নিতে হবে। সম্মতি ছাড়া তারা এ কাজটা করতে পারবে না।’
জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেন, ‘ভারত কর্তৃপক্ষ বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে বিদ্যমান ৪ হাজার ১৫৬ কিলোমিটার সীমান্তের মধ্যে তিন হাজার ২৭১ কিলোমিটারে ইতিমধ্যে কাঁটাতারের বেড়া দিয়ে ফেলেছে। বাকি রয়েছে ৮৮৫ কিলোমিটার। বিগত সরকারের সময়ে ২০১০ থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত ভারত সীমান্তে কিছু অসম কাজ করেছে, যেগুলো ভারতের করা উচিত হয়নি, কিন্তু আমাদের আগের সরকার সেই সুযোগ দিয়েছে। এ সুযোগের মধ্যে রয়েছে তারা ১৬০টি স্থানে কাঁটাতারের বেড়া দিয়েছে, সেখানে ঝামেলা রয়েছে। ৭৮টি স্থানে আরেকটি ঝামেলা রয়েছে। এখন পাঁচটি স্থানে ঝামেলা দেখা দিয়েছে। চাঁপাইনবাবগঞ্জ, লালমনিরহাটের তিন বিঘা করিডোর, নওগাঁর পত্নীতলা, ফেনী, কুষ্টিয়া ও কুমিল্লায় সম্প্রতি (কাঁটাতারের বেড়া নির্মাণ নিয়ে) ঝামেলা দেখা দিয়েছে।’
কাঁটাতারের বেড়া নির্মাণ নিয়ে বিজিবি ও বিএসএফের ভেতরে একটা আলোচনা হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আমাদের বিজিবি খুব শক্ত অবস্থান নেওয়ায় তারা (ভারত) এই জায়গা (কাঁটাতারের বেড়া নির্মাণ) থেকে কাজ বন্ধ করতে বাধ্য হয়েছে। কিন্তু এখানে একটা বড় সমস্যা হচ্ছে- আগের সরকার যেহেতু কিছু কিছু জায়গায় লিখিত দিয়ে গেছে। এই জায়গায় এটা করতে পারবে, ওই জায়গায় ওইটা করতে পারবে। যেগুলো তাদের দেওয়া উচিত হয়নি।’
উপদেষ্টা বলেন, ‘বিভিন্ন জায়গায় বিজিবির সঙ্গে আমাদের জনগণ খুব শক্ত অবস্থান নেওয়ায় অন্য জায়গাগুলোতে তারা কাজ বন্ধ করতে বাধ্য হয়েছে। তাদের এ শক্ত অবস্থানের জন্য বিজিবি এবং বাংলাদেশের জনগণকে আমি অনেক অনেক ধন্যবাদ জানাই। স্থানীয় সাংবাদিকরা আমাদের এক্ষেত্রে পূর্ণ সহযোগিতা করেছেন।’
তিনি বলেন,‘ভারতের সঙ্গে আমাদের যোগাযোগ হচ্ছে, আমরা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কেও জানিয়েছি। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আজ-কালের মধ্যে ভারতীয় হাইকমিশনারকে ডেকে বসতেও পারে, যে এটার ব্যাপারে কী করবেন।’
সীমান্তে আজকের অবস্থা কী- এ বিষয়ে উপদেষ্টা বলেন, ‘কাজ বন্ধ আছে। যে কয়টা জায়গায় কাজ শুরু হয়েছিল সব জায়গায় বন্ধ আছে। আমরা এই কাজগুলো করতে দেবো না।’
আগামী (১৬ ফেব্রুয়ারি) মাসে বিজিবি-বিএসএফের মহাপরিচালক পর্যায়ের বৈঠক আছে জানিয়ে উপদেষ্টা বলেন, ‘এগুলো নিয়ে আলোচনা হবে আলোচনা করে, যাতে কাজগুলো বন্ধ করা যায়।’
Leave a Reply