25 Feb 2025, 10:04 am

যশোরের বেনাপোল ও শার্শায় কাঠের আগুণে পুড়ছে ২ ভাটার ইট

নিজস্ব প্রতিবেদকঃ

ইয়ানূর রহমান : যশোরের শার্শায় কয়লার পরিবর্তে কাঠের আগুণে পুড়ছে ২টি ইটভাটার ইট। সরকারি নিয়মনীতি উপেক্ষা করে চলছে ২০টি অবৈধ ইটভাটার রমরমা বাণিজ্য। স্থানীরা বলেছেন, শার্শা উপজেলার উলাশী ইউনিয়ন বিএনপি’র সহ-সভাপতি সামছুর রহমান আওয়ামীলীগের ঘাড়ে ভর করে দীর্ঘদিন ধরে অবৈধ পন্থায় ইট ভাটার রমরমা বাণিজ্য চালিয়ে যাচ্ছে। উপজেলার কুচেমোড়া এলাকায় গোল্ড-২ ব্রিক্স ভাটা স্থাপন করে সেখানে কয়লার পরিবর্তে কাঠ, মুরগির পায়খানা, সোয়াবিন তেলের গাদ, স-মিলের গুড়া সহ সরকারী নিয়ম পরিপন্থী বিভিন্ন উপায়ে ভাটায় আগুন জালিয়ে ইট পোড়াচ্ছে। তাতে পরিবেশের উপর নানাভাবে প্রভাব পড়ছে। মারাত্বক হুমকির মুখে পড়ছে পাশ দিয়ে স্কুল কলেজ মাদ্রাসা এয়াতিমখানার যাওয়া কোমলমতি শিক্ষার্থীসহ আবাল বৃদ্ধ বণিতারা। ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে মাঠের ফসল।
একইসাথে পাল্লা দিয়ে বেনাপোল পোর্ট থানার মালিপোতা ফসলের মাঠে মুকুল ব্রিক্সে একই পন্থায় ইট পোড়ানোর মহোৎসব। এতে করে মারাত্বকভাবে আর্থিক হুমকির মুখে পড়ছে সরকার ঘোষিত নিয়ম মেনে চলা ভাটা মালিকরা। সরকার থেকে অসাদুপন্থায় ইট পোড়ানো বন্ধ না হলে ইট বিক্রয়ের প্রতিযোগিতায় বৈধ ব্যবসায়ীরা দেউলিয়া হয়ে পড়বে বলে ভীত সংশয় প্রকাশ করেন এসকল ভাটা মালিকরা।
পরিবেশ অধিদপ্তরের এক কর্মকর্তা টেলিফোনে জানান, সরকারি নিয়ম অনুযায়ী অনেকগুলো শর্তমেনে পরিশেষে পরিবেশ অধিদপ্তর থেকে ছাড়পত্র নিয়ে ইটভাটার লাইসেন্স নিয়ে ব্যবসা করতে হয়। সেখানে অধিকাংশরা নিয়ম নীতির কোন তোয়াক্কা না করে অনায়াসে কয়লার আদলে কাঠ পুড়িয়ে রমরমা বাণিজ্য চালিয়ে যাচ্ছে। তাতে সরকারের রাজস্ব আর পরিবেশের ভারসম্যের ক্ষতি হলেও সেসকল ব্যবসায়ীরা কম খরচে ইট উৎপাদন করে অল্প টাকায় বিক্রয় করলেও তাদের লাভ হচ্ছে অধিক। আর সরকারের নিয়ম মেনে যারা ভাটায় কয়লা পুড়িয়ে ইট তৈরি করছে তাদের খরচ যেমন বেশি হচ্ছে তেমনি ইটগুলোও চড়ামূল্যে বিক্রি না করলে এসকল ভাটা মালিকরা একসময়ে দেউলিয়া হয়ে যাবে। যা নিয়ে মারাত্বক ভীত ও সংশয় প্রকাশ করেন এসকল ব্যবসায়ীরা।
সরেজমিনে কথা হয় পরিবেশ বিপর্যয়ের কারণে মারাত্বক হুমকির মুখে থাকা স্থানীয়দের সাথে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, বেনাপোল ও শার্শায় সরকারি নিয়ম-নীতি উপেক্ষা করে চলছে একাধিক ইট ভাটা। সংশ্লিষ্ট দপ্তরের অনুমোদন ছাড়াই এসকল ইট ভাটায় কয়লার পরিবর্তে কাঠ পোড়ানোর প্রতিযোগিতায় নেমেছে মালিক পক্ষ। মহামান্য উচ্চ আদালত, জেলা প্রশাসন এবং সংশ্লিষ্ট দপ্তরের কয়লা পোড়ানোর নির্দেশনা থাকলেও বিশেষ করে বেনাপোল ও শার্শার ২টি ইট ভাটায় কয়লার বদলে রয়েছে কাঠের স্তুপ, মুরগির বিষ্ঠা ও স-মিলের কাঠের গুড়ার স্তুপ। আগুণ জ¦লছে কাঠ সহ এসকল মুরগির পায়খানা ও আবর্জনা দিয়ে। যা থেকে পরিবেশের উপর মারাত্বক হুমকি আসলেও এসকল মালিকরা প্রভাবশালী হওয়ায় যথাযথ ব্যবস্থা নিতে পারছেন না আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারি বাহিনী ও প্রয়োগকারী কার্যালয়ের কর্মকর্তারা।
কথা হয় শার্শা উপজেলা ইট ভাটা মালিক সমিতির সভাপতি আবুল হাসান জহিরের সাথে। তিনি বলেন, তাদের সমিতি থেকে সকল সদস্যকে ডেকে মিটিংয়ের মাধ্যমে ভাটায় কয়লা পোড়ায়ে ইট তৈরি করা জন্য বলা হয়েছে। শোনা যাচ্ছে কয়লার দাম বেশি হওয়ায় কেউ কেউ কাঠ পোড়াচ্ছে। যদি কেউ নিজ দায়িত্বে কাঠ পুড়িয়ে থাকে তাহলে সে নিশ্চয় অন্যায় করছেন। একারণে ইট ভাটা মালিক সমিতি এ অন্যায় কাজের দ্বায়ভার নেবেনা বলে জানান তিনি।
উপজেলা প্রশাসন সুত্র হতে জানা যায়, শার্শা উপজেলায় বৈধ-অবৈধ মিলে ২৬টি ইট ভাটা রয়েছে। এরমধ্যে ৬টি ইট ভাটা অনুমোদিত এবং ৪টি অনুমোদনের অপেক্ষায়। বেনাপোল ও শার্শার ২টি ভাটায় কয়লার পরিবর্তে কাঠসহ মুরগীর বিষ্টা, ভোজ্য তেল সোয়াবিনের গাদ ও বিভিন্ন কিছুর উপায়ে ইট পোড়ানো হচ্ছে বলে তারাও শুনেছেন, তবে নাম প্রকাশে নিষেধাজ্ঞা তাদের।
এ বিষয়ে শার্শা উপজেলা সহকারি কমিশনার (ভূমি) ফারজানা ইসলাম বলেন, যশোর জেলা প্রশাসন ও শার্শা উপজেলা প্রশাসন থেকে ভাটা মালিকদের কয়লা পুড়িয়ে ইট প্রস্তুতের কথা বলা হয়েছে। কেউ যদি আইন অমান্য করে কয়লার পরিবর্তে কাঠ বা অন্যান্য কিছু পোড়ায় তাহলে তার বিরুদ্ধে কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
যশোর পরিবেশ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক বলেন, উপজেলায় ২৬টি বৈধ-অবৈধ ইট ভাটার মধ্যে ৪টি ইট ভাটাকে ছাড়পত্র দেওয়া হয়েছে।
এদিকে নির্ভরযোগ্য সুত্র বলছে, ছোট-বড় এবং বৈধ-অবৈধ মিলিয়ে অন্তত ৩৪ ইট ভাটা রয়েছে। এসকল ইটভাটা র্নিমানের প্রথম ধাপে মানা হয়না নূণ্যতম নীতিমালা। কৃষি জমি বিনষ্ট ও নিরিহদের জমি দখল করে গড়ে তোলা হয়েছে অসংখ্য ইট ভাটা। আবার যত্রতত্র বসত-বাড়ী এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের আশেপাশে গড়ে উঠেছে অধিকাংশ ইট ভাটা।

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *