ভদ্রতা বা শিষ্টাচার হলো মানুষের শ্রেষ্ঠ গুণাবলির মধ্যে অন্যতম গুণ। সম্পদ, ক্ষমতা, মর্যাদা ও পদাধিকার বলে যা অর্জন করা অসম্ভব, ভদ্রতা প্রদর্শন করে তা অতি সহজে অর্জন করা যায়। বস্তুত মানুষের মন জয় করার শ্রেষ্ঠতম যাদুমন্ত্র হলো ভদ্রতা ।
সামাজিক জীবনে একের সাথে অপরের মিলন আবশ্যক। আর এ মিলনের মুথ্য উদ্দেশ্য হওয়া উচিৎ পরস্পরে প্রতি ভক্তি শ্রদ্ধা, স্নেহÑমমতা, সমবেদনা ও সহানুভূতির পরিপূর্ণ রূপায়ণ। যদি তা না হয় তবে মিলনই বৃথা। তাই ইসলাম মানবজাতিকে এমন একটি জীবন বিধান প্রদান করেছে যা আলাহ্র নিকট থেকে ফেরেশতামন্ডলী এবং মানবজাতি শিক্ষা গ্রহণ করেছে। তাকে আমরা তাহিয়্যাত বা অভিবাদন বলি। এর ব্যবহারিক রূপ, ‘আসসালামু আলাইকুম।” এটা দয়া , ভালবাসা, বন্ধুত্ব ও প্রার্থনা প্রভৃতি যাবতীয় অর্থ বহন করে থাকে। ইসলামের বিধান অনুযায়ী আদবÑকায়দা ও শিষ্টাচারের এ পবিত্র রীতির মাধ্যমে সকল মুসলমান একই সূত্রে আবদ্ধ হয় এবং একটি বিরাট পরিবারের বিভিন্ন ব্যক্তি হিসাবে পরস্পর ভ্রাতার ন্যায় জীবন যাপন করার সুযোগ পায়।
অতএব তাহিয়্যাত বা সালামের মূল্য অপরিসীম। মুসাফাহা (করমর্দন) মু‘আনাকা (কোলাকুলি) ও হস্তচুম্বন প্রভৃতি ও শিষ্টাচারের বিভিন্ন রূপ । কিন্তু সালাম আদানÑপ্রদান হলো সর্বশ্রেষ্ঠ এবং এর প্রভাব মানব মনে অনেক বেশি।
১। মহান আলাহ্ হযরত আদম (আ) কে তাঁর নিজ আকৃতিতে সৃষ্টি করলেন। তাঁর দৈর্ঘ্য ছিল ষাট গজ। তারপর আলাহ্ তা‘আলা তাঁকে আদেশ করলেন, যাও এবং ফেরেশতাদের যে দলটি বসে আছে তাদেরকে সালাাম কর এবং মনোযোগ দিয়ে শ্রবণ কর তারা তোমাকে কি দু‘আ করে। কারণ, তাই তোমাকে ও তোমার সন্তান Ñসন্তুতিদের পরস্পরের অভিবাদন পদ্ধতি হবে। অতঃপর তিনি গেলেন এবং বললেন,‘আসসালামু আলাইকুম’। তাঁর সালামের জবাবে ফেরেশতাগন বললেন, ‘ওয়া আলাইকুমুস সালাম ওয়া রহমাতুলাহ,’ সুতরাং ফেরেশতাগণ ওয়া রাহমাতুলাহ বুদ্ধি করলেন। অতএব, যে সব ব্যক্তি বেহেশতে প্রবেশ করবে তারা আদমের আকৃতির জীব এবং তারা ষাট গজ হবে। তারপর হতে সৃষ্ট মানবের দেহ আকৃতিতে ছোট হতে লাগল এমনকি বর্তমান পর্যায়ে এসে পৌঁছেছে। ইমাম আহমদ ও শায়খাইন আলোচ্য হাদীসখানা হযরত আবূ হুরায়রা (রা)Ñএর সূত্রে বর্ণনা করেছেন।
২. যখন আলাহ্ তা‘আলা হযরত আদম (আ) Ñকে সৃষ্টি করলেন এবং তাতে আতœা প্রবেশ করালেন তখন তিনি হাঁচি দিলেন এবং আলাহ্র অনুমতিক্রমে বললেন,‘আলহামদুলিলাহ’। তখন তার প্রতিপালক বললেন, ইয়ার হামুকালাহÑহে আদম! ফেরেশতাদের যে সম্প্রদায় বসে আছে , তুমি তাদের নিকট যাও এবং বল, ‘আসসালামু আলাইকুম ।’ অতএব, তিনি ফেরেশতাদের নিকট গিয়ে বললেন, ‘আসসালামু আলাইকুম’। জবাবে ফেরেশতাগণ বলল, ‘ওয়া আলাইকুমুস সালাম ওয়া রহমাতুলাহ।” তারপর আদম তার প্রভুর নিকট ফিরে আসলেন, আলাহ্ বললেন, “নিশ্চয়ই তা তোমার ও তোমার সন্তানের ও তাদের সন্তানদের অভিবাদন পদ্ধতি।” তখন আলাহ্ নিজ (কুদরতী) হাত দুটি মুষ্ঠিবদ্ধ অবস্থায় তাঁকে বললেন , ‘তুমি এ দুই-এর যেটি খুশি পছন্দ কর”। তিনি বললেন,“ আমি আমার প্রতিপালকের ডান হাত গ্রহণ করলাম, আর আমার প্রভুর উভয় হাতই ডান হাত এবং উভয়ই কল্যাণকর।” অতঃপর আলাহ্ এটা প্রসারিত করলেন এবং আদম সহসা তার সন্তান-সন্ততি দেখলেন এবং বললেন, “হে আমার প্রতিপালক! এরা কারা? আলাহ্ বললেন,“তারা তোমার সন্তান-সন্ততি।” আর তা বিচিত্র যে, প্রত্যেক মানুষের আয়ু তার দুইচোখের মাঝখানে লেখা রয়েছে। অতঃপর তাদের মধ্যে ছিল এক উজ্জ্বলতম অথবা উজ্জ্বলতম ব্যক্তিদের মধ্যে ছিলো একজন। আদম জিজ্ঞাসা করলেন, “হে প্রভু! ইনি কে? ” আলাহ্ বললেন,“ সে তোমার ছেলে দাউদ, আর আমি তার আয়ু চলিশ বছর লিখে রেখেছি। আদম বললেন “হে রব! তার আয়ু বাড়িয়ে দিন।” আর আলাহ্ বললেন “আমি তার জন্য এহাই নির্ধারণ করেছি।” তখন আদম বললেন , “হে রব! আমি আমার হায়াত থেকে ষাট বছর প্রদান করলাম।” আলাহ্ বললেন,“ এর বিনিময় তোমার এবং তার মধ্যে।’ তাকে আলাহ্ যেরূপ চাইলেন, বেহেতবাসী করলেন ও তা থেকে দুনিয়ায় প্রেরণ করলেন। অতঃপর তার আয়ু হিসাব করতে লাগলেন। অতঃপর একদা তার নিকট মৃত্যুর দূত এসে হাজির হল। তখন আদম তাকে বললেন,“তুমি নির্ধারিত সময়ের পূর্বে এসে গিয়েছ। কারণ, আমার আয়ু এক হাজার বছর লেখা আছে।” মৃত্যৃর দূত বলল, হ্যাঁ, কিন্তু তুমি তোমার ছেলে দাউদকে ষাট বছর প্রদান করেছ।”আদম কিন্তু তা অস্বীকার বরলেন। তারপর তার সন্তান-সন্ততিও অস্বীকার করল। কারণ, আদম ও তাঁর সন্তান-সন্ততি সে কথা ভুলে গিয়েছিল। সে দিন থেকে লেখার ও সাক্ষ্য প্রদান করার আদেশ প্রদান করা হলো। ইমাম তিরমিযি হযরত আবূ হুরায়রা (রা)Ñএর সূত্রে বর্ণনা করেছেন।
Leave a Reply