অনলাইন সীমান্তবাণী ডেস্ক : কলকাতা হাইকোর্ট এক অন্তঃসত্ত্বা ভারতীয় নারী সোনালি খাতুনকে ‘অবৈধ বাংলাদেশি’ সন্দেহে বাংলাদেশে ঠেলে দেওয়ার ঘটনাকে বেআইনি ঘোষণা করেছে। বিচারপতি তপোব্রত চক্রবর্তী এবং ঋতব্রত মিত্রের বেঞ্চ নির্দেশ দিয়েছে, সোনালি খাতুনসহ আরও পাঁচজন ভারতীয় নাগরিককে আগামী চার সপ্তাহের মধ্যে দেশে ফিরিয়ে আনতে হবে।
এই নারীকে বর্তমানে বাংলাদেশের চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার কারাগারে বন্দি রাখা হয়েছে। মানবাধিকার কর্মীরা এই রায়কে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত হিসেবে দেখছেন। আদালত কেন্দ্রীয় সরকারকে এই নির্দেশ বাস্তবায়নের জন্য চার সপ্তাহের সময় দিয়েছে এবং দিল্লি পুলিশের দ্রুত সিদ্ধান্ত গ্রহণ ও তাড়াহুড়ো করে পরিচয় যাচাই প্রক্রিয়া শেষ করার তীব্র সমালোচনা করেছে।
বিচারপতিরা রায়ে বলেছেন, আইন অনুযায়ী বিদেশি সন্দেহে আটক হলে তার পরিচয় যাচাইয়ের জন্য একটি নির্দিষ্ট সময়সীমা রয়েছে। কিন্তু এই পরিবারকে মাত্র দুই দিনের মধ্যে বাংলাদেশে ফেরত পাঠানো হয়েছে, যা স্পষ্টতই আইনি নিয়মের পরিপন্থী। হাইকোর্টের এই রায় ভারতের অন্যান্য রাজ্যে কাজ করতে যাওয়া পরিযায়ী শ্রমিকদের জন্য একটি বড় জয় হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।
বিগত প্রায় চার মাস ধরে ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে ‘অবৈধ বাংলাদেশি’ চিহ্নিত করার জন্য যে বিশেষ অভিযান চালানো হচ্ছে, তার ফলে পশ্চিমবঙ্গ থেকে কাজে যাওয়া বহু বাংলাভাষী পরিযায়ী শ্রমিক ‘বাংলাদেশি’ সন্দেহে আটক হচ্ছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। মানবাধিকার সংগঠনগুলো জানিয়েছে, এই ধরনের বহু ঘটনা সামনে এসেছে যেখানে পশ্চিমবঙ্গের বৈধ বাসিন্দাদেরও ‘অবৈধ বাংলাদেশি’ বলে আটক করে বাংলাদেশে ঠেলে দেওয়া হয়েছে।
যে ছয়জনকে বাংলাদেশে ঠেলে দেওয়া হয়েছিল, তারা দুটি ভিন্ন পরিবারের সদস্য। সোনালি খাতুন, তার স্বামী দানেশ শেখ এবং তাদের ছেলে সাবির শেখ পশ্চিমবঙ্গের বীরভূম জেলার পাইকর থানার বাসিন্দা। অন্য পরিবারটির সদস্যরা একই জেলার মুরারই থানার ধিতেরা গ্রাম থেকে এসেছেন। তারা হলেন সুইটি বিবি, কুরবান শেখ (১৬) এবং ইমাম শেখ (৬)। পশ্চিম দিল্লির পুলিশ এদের আটক করে ‘বাংলাদেশি’ হিসেবে চিহ্নিত করলেও, বীরভূম জেলা পুলিশ জমির দলিলসহ একাধিক প্রমাণ সংগ্রহ করে নিশ্চিত করেছে যে তারা ভারতীয় নাগরিক। এইসব প্রমাণ দাখিল করার আগেই দিল্লি থেকে তাদের বাংলাদেশে পাঠিয়ে দেওয়া হয়।
এদিকে, চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার পুলিশ সুপার মোহাম্মদ রেজাউল করিম জানিয়েছেন, সোনালি খাতুনের গর্ভাবস্থার বিষয়টি তারা জানতেন। তিনি বলেন, গ্রেপ্তারের সময়েই সে অন্তঃসত্ত্বা ছিলেন এবং ফেরত পাঠানোর চেষ্টা সত্ত্বেও সম্ভব হয়নি। পরে তাদের আদালতে তোলা হলে কারাগারে পাঠানো হয়।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ কারাগারের জেলার মোহাম্মদ জাকির হোসেন জানিয়েছেন, সোনালি খাতুনের স্বাস্থ্য এবং চিকিৎসার বিষয়ে কারাগারের ডাক্তার নজর রাখছেন এবং প্রয়োজন হলে তাকে বাইরের হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হবে। পশ্চিমবঙ্গ পরিযায়ী শ্রমিক উন্নয়ন পর্ষদের চেয়ারম্যান সামিরুল ইসলাম এবং পশ্চিমবঙ্গ পরিযায়ী শ্রমিক ঐক্য মঞ্চের সাধারণ সম্পাদক আসিফ ফারুক এই রায়কে স্বাগত জানিয়েছেন এবং এটিকে শ্রমিকদের জন্য বড় স্বস্তি হিসেবে উল্লেখ করেছেন।