ফারুক আহমেদ, মাগুরা জেলা প্রতিনিধি : মাগুরা শালিখা উপজেলায় ২০২৪-২০২৫ অর্থবছরে গ্রামীণ অবকাঠামো সংস্কার কাবিটা (চাল), কাবিখা (গম) ও টিআর (নগদ অর্থ) সাধারণ কর্মসূচির আওতায় উপজেলাভিত্তিক ১ম ও ২য় কিস্তির গৃহীত প্রকল্পের অধিকাংশ প্রকল্পের কাজে ব্যাপক অনিয়ম, কাজের ফাঁকি ও দুর্নীতি হয়েছে। গত ২৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ তারিখে মাগুরা জেলা প্রশাসক মোঃ অহিদুল ইসলাম, শালিখা উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ বনি আমিন, মাগুরা জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা এ টি এম বেনজির রহমান, শালিখা উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মোহাম্মদ রাশেদুল হাসান সাক্ষরিত ৭ টি ইউনিয়ন শালিখা, ধনেশ্বরগাতী, বুনাগাতী, গঙ্গারামপুর, তালখড়ি, শতখালী ও আড়পাড়া, এই ইউনিয়ন গুলোতে কাবিটার ৫৮ টি প্রকল্পের কাজের বরাদ্দ ১ কোটি ৩১ লাখ ৩৬ হাজার ৫১৩ বা ১৩১৩৬৫১৩ টাকা, কাবিখা কাজের বরাদ্দ ১১ টি প্রকল্পে ৯৩.৮৩২২ টন গম ও টিআর কাজের বরাদ্দ ৭১ টি প্রকল্পের ১ কোটি ২৫ লাখ ৩৪ হাজার ১৭৪ টাকা বা ১২৫৩৪১৭৪ টাকা।

সরেজমিনে গিয়ে জানা যায়, তালখড়ী ইউনিয়নের কাবিটা কাজের ৩৪ নম্বর ভাটোয়াইল উত্তরপাড়া গোরস্থান মাদ্রাসায় সঠিক নিয়মে মাটি ভরাট করা হয়নি বরাদ্দকৃত টাকার পরিমাণ ৪,৪৯,৬১০ টাকা, উজগ্রাম পশ্চিমপাড়া ইকরামুলের বাড়ির পার্শ্ব রাস্তা হইতে ফারুক মোল্লার বাড়ির পার্শ্ব রাস্তা পর্যন্ত ফ্ল্যাট সলিং নির্মাণ ও মাটি দ্বারা উন্নয়ন এই কাজে ৯ নং ওয়ার্ডের মেম্বার খাইরুল ইসলাম রাস্তার ৩ পাশে মাটির কাঁচা রাস্তা গ্রামবাসীর অভিযোগ গ্রামের মধ্যে খানে পঁচা ইট দিয়ে নিম্ন মানের কাজ করেছে কাজে সবোচ্চ খরচ হয়েছে ৬০-৭০ হাজার টাকা কাজের বরাদ্দকৃত টাকার পরিমাণ ২ লাখ টাকা, সাবলাট সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মাঠ সাবলাট খেলার মাঠ মাটি দ্বারা সংস্কার বরাদ্দকৃত টাকার পরিমাণ ৭,৩০,০০০ টাকা কিন্তু মাটি কাটা মালিকদের কাছে জানা যায় ৩০০ ট্রাক্টর মাটি দেওয়া হয়েছে প্রতি গাড়ি মূল্য ১ হাজার টাকা হলে ৩ লাখ টাকার মাটি দেওয়া হয়েছে আর কোন মাটি দেওয়া হবে না এখানে অথ্যাৎ ৪ লাখ ৩০ হাজার টাকার শুভংকর ফাঁকি দেওয়া হয়েছে। এব্যাপারে তালখড়ী ইউনিয়ন পরিষদের কাজের পিআইসি চেয়ারম্যান মোঃ সিরাজ উদ্দিন মন্ডল গড়িমসি কথা বলেন তিনি রাগান্বিত হয়ে বলেন ৭০০ শত ট্রাক্টর মাটি ঐ সাবলাট স্কুলে দেওয়া হয়েছে।
বুনাগাতী ইউনিয়নে টিআর কাজে প্রকল্প নম্বর ১৮ বাউলিয়া বিধান লস্কারের বাড়ী হতে নারানের বাড়ী পর্যন্ত মাটি ভরাট ৩ লাখ ৯০ হাজার ৬৭৪ বা ৩৯০৬৭৪ টাকা এই কাজেও সঠিক নিয়মে মাটি ভরাট হয়নি, বুনাগাতী ইউনিয়ব কাবিটা কাজ প্রকল্প ছাবড়ী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মাঠে মাটি ভরাট বরাদ্দকৃত টাকার পরিমাণ ২০০০০০ টাকা এখানেও সঠিক পরিমাণ মাটি দেওয়া হয়নি বলে মহিলা মেম্বার জানায় ১০০ ট্রাক্টর মাটি দিয়েছি, প্রকল্প নম্বর ১৭ হাটবাড়ীয়া পশ্চিমপাড়া নুরানী মাদ্রাসায় মাঠে ভরাট বরাদ্দকৃত টাকার পরিমাণ ২ লাখ টাকা কিন্তু এখানে মাদ্রাসার সাথের খাল থেকে মাটি নিয়ে এসে ভরাট করা হয়েছে যে কোন সময় অতিবৃষ্টি বা বর্ষার সময় বড় ধরনের বিপদ ঘটবে এখানে বাইরে থেকে ২০ হাজার টাকার মাটি আনা সবোর্চ্চ ৫০-৬০ হাজার টাকার বিনিময়ে মাটির কাজ করা হয়েছে।

এছাড়াও প্রকল্প নম্বর কুয়াতপুর মুচি পুকুর হতে দোয়ারের রাস্তায় মাটি ভরাট ২ লাখ টাকা, ২০ নম্বর প্রকল্প নরপতি স্কুল হতে বিলের রাস্তা ২২৭৮০০ টাকা মাটি ভরাট, ২১ নম্বর প্রকল্প রাধাডাঙ্গা বজলুর বাড়ী হতে মতিয়ারের বাড়ী পর্যন্ত ২ লাখ টাকার রাস্তা সংস্কার, কাবিখা কাজের বুনাগাতী ইউনিয়নে প্রকল্প নম্বর ০৩ রামপুর বক্কার শিকদারের বাজার হতে লুৎফর মাস্টারের বাড়ী পর্যন্ত ৭.৩৪০ মেট্রিক টন গমের বরাদ্দের রাস্তা মাটি দ্বারা উন্নয়ন এই সমস্ত কাজ সহ অধিকাংশ শালিখা উপজেলার ইউনিয়ন গুলোতে কাজের চরম দূনীতি, ফাঁকি, ইন্টার ইট, পঁচা ইট, নিম্ন মানের বালি, বালির পরিমাণ ৬ ইঞ্চির কম, কোন জায়গায় মাত্র ১০ হাজার টাকা মাটি দেওয়া, প্রকল্পের নামা তালিকায় ৭ টি ইউনিয়নে কাজের শুরু থেকে শেষ বাড়ীর নাম নেই উদাহরণ গঙ্গারামপুর টিআর কাজ প্রকল্প নম্বর মেম্বার মহিলা সুমি পিআইসি সাবেক খাটর জহুর মোল্লার বাড়ি হতে শামীম সর্দারের বাড়ি পর্যন্ত ইটের সলিং করণ ১১৫০০০ টাকা বরাদ্দ কিন্তু সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায় জহুর মোল্লার বাড়ি হতে শহীদের বাড়ি কাজ হয়েছে অল্প পরিমাণ নিম্ন মানের ইট, কাজে ব্যাপক দূর্নীতি ও অনিয়ম হয়েছে, কাজের সাইডে নেই কোন সাইনবোর্ড। এই উপজেলায় শুধু আড়পাড়া ইকোপার্ক রাস্তার এইচবিবি ইটের সলিং কাজে একটা সাইনবোর্ড অর্ক এন্টারপ্রাইজ বাঁশ দিয়ে টানিয়েছে।
ঢাকা থেকে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তর উপপরিচালক (কাবিখা-২) মোহাম্মদ নুরুজ্জামান জানান, কাবিখা কাজগুলো সহ অন্যান্য কাজে সর্ব সাধারণের নিকট কাজের দৃশ্যমান সাইনবোর্ড প্রদর্শন করা নিয়ম এবং ফাস্ট ক্লাস ইট দিয়ে ইটের সলিং নির্মাণ, এস্টিমেট অনুযায়ী মাটির ঘনফুট, কাজের দুরত্ব ইত্যাদি অনুযায়ী কাজ হতে হবে। সরকারি বরাদ্দকৃত টিআর, কাবিটা, কাবিখা কোন কাজেই অনিয়ম করা যাবে না, প্রকল্প ভূয়া হিসেবে চিহ্নিত, সরকার কর্তৃক নির্ধারিত সময়সীমার মধ্যে কাজ সম্পন্ন না হলে প্রকল্প বাতিল করে দেয়া এবং দায়ী ব্যক্তিগণকে চিহ্নিত করে বরাদ্দকৃত টাকা ফেরত নিয়ে দেশে প্রচলিত আইন অথবা বিধিমোতাবেক ব্যবস্থা নেয়া হবে।
মাগুরা জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা এটিএম বেনজির রহমানের সাথে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।
শালিখা উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মোহাম্মদ রাশেদুল হাসান জানান, ২০২৪-২৫ অর্থবছরের কাবিটা কাবিখা, টিআর কাজে সর্ব সাধারণের দৃশ্যমানের জন্য সাইনবোর্ড প্রদর্শন বিষয়ে বলেন সাইনবোর্ড প্রদর্শন করা নিয়ম আছে এবং উচিৎ কিন্তু সাইনবোর্ডের এস্টিমেট নাই এবং বরাদ্দ নাই বলে লাগানো হয়নি। তালখড়ি ইউনিয়নের সাবলাট সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মাঠে ৭ লাখ ৩০ হাজার টাকা বরাদ্দকৃত মাটির অনিয়ম সম্পর্কে বলেন মাটি মেপে ও পরীক্ষা করে দেখা হবে। তিনি আরও জানান ইটের সলিং ২ লাখ টাকায় ৩০০ ফুট কাজ, ১ লাখ ১৫ হাজার টাকা ১৭০ ফুট কাজ হয় এবং আমরা মাটির রাস্তার কাজ ও মাটি ভরাট বরাদ্দকৃত টাকা পরীক্ষা না করে দিবো না। আগামী ১৫ এপ্রিল সরকার কর্তৃক নির্ধারিত কাজের মেয়াদ শেষ হবে। কেউ কাজ শেষ না করলে তার কাজের বরাদ্দকৃত টাকা সরকারি নিয়মে ফেরত নেয়া হবে।
শালিখা উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ বনি আমিন বলেন, শালিখা উপজেলায় সরকারি বরাদ্দকৃত কাজে কোন অনিয়ম করার সুযোগ নেই। মাটি ভরাট সবোর্চ্চ ১-২ লাখ টাকা বরাদ্দের জন্য বলা হয়ে ছিলো কিন্তু ৪ লাখ টাকা, ৩ লাখ টাকা ও ৭ লাখ টাকা এতো বেশি পরিমাণের বরাদ্দের কথা বলা হয়নি। কাজের অনিয়ম সম্পর্কে বলেন আমি সরেজমিনে গিয়ে পরিদর্শন করবো এবং কাজের অনিয়ম ও দূর্নীতির প্রমাণ পেলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তিনি আরও বলেন, বিভিন্ন ইউনিয়নের বেশ কয়েকটি ফ্লাট ইট সলিংয়ের কাজ পরিদর্শন করে দেখেছি ভালো মানের কাজ হয়েছে তবে অনিয়ম কাজগুলোর ব্যাপারে অনুসন্ধান করে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।