ফারুক আহমেদ, মাগুরা জেলা প্রতিনিধি : দুর্নীতির আখড়ায় পরিণত হয়েছে মাগুরা জনস্বাস্থ্য অফিস সরকারি চাকরি করে ঠিকাদারী কাজে জড়িত অফিসের লোকজন।
একই দপ্তরে কেউ ২০-৩০ বছর কেউ আবার ১৫- ২০ বছর নিজ জেলায় থেকে হয়েছেন কোটিপতি। দীর্ঘদিন সুবিধাবাদী ঠিকাদারের একক আধিপত্যে কাজ পাইয়ে দেওয়া এবং সেই কাজ (সরকারি চাকরিজীবীর কাছে) সাব-কন্ট্রাক্টে ক্রয়-বিক্রয়ের অভিযোগ উঠেছে জেলা জনস্বাস্থ্য অফিসের ক্যাশিয়ার মো. ইমামুল হক বিরুদ্ধে।
জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের দুর্নীতির অভিযোগে ব্যাপক আলোচিত এই ক্যাশিয়ার মো. ইমামুল হক। সাবেক প্রধান প্রকৌশলী সাইফুল রহমানের যোগ্য উত্তরসূরি হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন মাগুরা জনস্বাস্থ্য অধিদপ্তরে। ইজিপি টেন্ডারের নামে ঠিকাদার থেকে মোটা অঙ্কের টাকা নিয়ে কাজ পাইয়ে দেয়ার মূলে যে সকল দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে তার সব কটিতেই সম্পৃক্ত। অনুসন্ধানে জানা গেছে, গোপালগঞ্জ জনস্বাস্থ্য অফিসে নাইট গার্ড পদে প্রজেক্টের আওতায় ২ বছরের জন্য নিয়োগ দেওয়া হয় তাকে। এরপর উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের যোগসাজশে যশোর জেলার জনস্বাস্থ্য অফিসে আসেন। ঘুষ দুর্নীতির মাধ্যমে কোর্টে মামলা করে সরকারি রাজস্বের আওতায় এলেও তার এসএসসি-এইচএসসি সার্টিফিকেট জাল। উক্ত বিষয়ে দপ্তরে জানাজানি হলে যশোর থেকে নড়াইলে বদলি করা হয়। নড়াইলে টেন্ডার সংক্রান্ত বিষয় ঠিকাদারদের সাথে সংঘর্ষে জড়িয়ে গেলে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ম্যানেজ করে মাগুরায় বদলি হন। এরপর থেকে মাগুরা জনস্বাস্থ্য অফিসের ক্যাশিয়ার পদে দ্বায়িত্ব পালন করছেন। তার বিরুদ্ধে মাগুরায় ইজিপি টেন্ডার সহ ঠিকাদারদের কাজ পাইয়ে দেওয়া, আবার সেই কাজ সাবকন্টাকে বিক্রি করা, নির্বাহী প্রকৌশলী এবং ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার সাথে পার্সেন্টেজ বাণিজ্য ভাগাভাগি, অফিসের পুরাতন মালামাল ভাংড়ি দোকানে বিক্রি, জাল সনদে চাকরিসহ, গুরুতর বেশ কিছু অভিযোগ উঠেছে।
মাগুরা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর যেন হরিলুটের কারখানা, এখানে এখনো বহাল তবিয়তে দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি লুটের রাজত্ব হয়েছে, তদন্ত সাপেক্ষে আনা হয়নি আইনের আওতায়। অভিযোগ উঠেছে, ম্যাশন নূর ইসলামের বিরুদ্ধে, তিনি দীর্ঘ ৩০ বছরেরও বেশি সময় ধরে নিজ জেলা মাগুরায় চাকরি করছেন। এর সুবাদে অফিসের কাজগুলো সাবকন্টাকে নিজের ছেলে বাঁধন এবং বিভিন্ন কনস্ট্রাকশন, সেনেটারিজ, ইলেকট্রনিক্স দোকানের নামে কাজ নিয়ে নিজেই করছেন। গত বৃহস্পতিবার বিকালে শহরের হাজী রোডে ম্যাশন নুর ইসলামের গোডাউনে নিম্ন মানের জনস্বাস্থ্য অফিসের কাজে ব্যবহারিত মালামাল স্থানীয়রা আটক করলে এ সময় তিনি পালিয়ে যান। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, একাধিক কাজ সাবকন্টাকে ক্রয় করে করছেন তিনি এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য কন্ট্রাক্টর দীপা এন্টারপ্রাইজ থেকে সাবকন্টাকে 66nos গভীর TW সহ সাবমারসিবল পাম্প 100 x 38 মিমি ডায়া ট্যারা ডিপ টিউবয়েল কূপের সাথে নিরাপদ পানি প্রজেক্ট শালিখা উপজেলা DPHE, 2024-2025-এ প্রকল্পের (প্যাকেজ নং-SRWSPCC-WT-3) ওয়ার্ক অর্ডার নং- ৩৮৩ (ই-টেন্ডার) আইডি- ৯৮৪৫৪৮ সাপ কন্টাকে কাজ করছেন অফিসটির ম্যাশন নূর ইসলাম। নিজের ছেলে বাধনকে দিয়ে কাজের সাইড দেখাশোনা করেন তিনি। নামে বেনামে বিভিন্ন অর্থ সম্পদের পাশাপাশি নিজ গ্রামের বাড়ি পলাশবাড়ী ইউনিয়নের ঝোকা গ্রামে ১ কোটি টাকার উপরে ব্যয়ে করেছেন তিনতলা ভবন। নিজ জেলায় দীর্ঘদিন চাকরি করা সহ জ্ঞাত আয় বহির্ভূত অর্থ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ উঠেছে তার বিরুদ্ধে। অভিযোগ পাওয়া গেছে, মেকানিক রেহেলা খানমের বিরুদ্ধেও। দীর্ঘ ১৫ বছরেরও বেশি সময় ধরে ঘুরে ফিরে নিজ জেলা মাগুরা গড়ে তুলেছেন বহুতল ভবনসহ নামে-বেনামে অজস্র সম্পদ। মাগুরা মাতৃসদন হাসপাতালের সামনে ৪৫ লাখ টাকা ব্যয়ে ক্রয় করেছেন ফ্ল্যাট এছাড়াও রয়েছে তার শহরে তিনটি বাড়ি।
একই অধিদপ্তরের নিম্নমান সহকারি মো. কামরুজ্জামান বয়স গোপন করে ৩৩ বছর বয়সে সরকারি চাকরি নিয়েছেন এবং ১৫ বছর যাবৎ চাকরি করছেন। সরকারি বেতন ভাতাও নিচ্ছেন। ইতিমধ্যে এদের সম্পর্কে লিখিত অভিযোগও জমা পড়েছে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টার নিকট।
দপ্তরের কোনো কাজ বাইরের ঠিকাদার পায় না বলে অভিযোগ করেছেন বিভিন্ন ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। এদের মধ্যে ঠিকাদার রিপন হোসেন বলেন, মাগুরা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অফিসে ঘুষ বানিজ্য, পার্সেন্ট বিড়ম্বনায় পাইনা কাজ। টাকা যে বেশি দিতে পারে অফিসারদেরকে সেই পায় ঘুরে ফিরে কাজ। সরকারি বিধিমালা অনুসারে নিজ জেলায় বাড়ি থাকলে সে জেলায় চাকরি করা যায়না। এমন নীতিমালা থাকার পরও মাগুরায় এমন অনেকেই এভাবে নিজ জেলায় কাজ করছে। অফিসের লোক সাবকন্টাকে নিজেরাই কাজ করে আমরা কিভাবে কাজ পাবো। প্রতিটা চলমান কাজ তদন্ত করে দেখুক নিম্নমানের মালামাল ব্যবহার হয়েছে। স্থানীয় বাসিন্দা হোসেন বলেন, চতুর্থ প্রাথমিক শিক্ষা উন্নয়ন কর্মসূচি (পিইডিপি-৪) এর আওতায় সরদার জাহিদ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, মাগুরা সদর। ওয়াশ ব্লক নির্মাণ কাজ চলমান রয়েছে কিন্তু কাজটি দীর্ঘদিন বন্ধ থাকায় জনভোগান্তি ও হয়রানি হচ্ছে। এ রুপ আরও অনেক বিদ্যালয়ে ওয়াশ ব্লকের কাজে সমস্যা চলমান, যা তদন্তে পাওয়া যাবে। মাগুরা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর উক্ত প্রকল্পের আওতায় নির্ধারিত গ্রামীন জনপদের সুবিধাবঞ্চিত মানুষের নিরাপদ পানির নিশ্চয়তা প্রদানে গভীর/অগভীর নলকূপ স্থাপনে নিম্নমানের মালামাল ব্যবহার, সাব-কন্টাকে কাজ বিক্রি কাজ শেষ না করে বিল উত্তোলণ। নানারকম দুর্নীতি-অনিয়ম, স্বেচ্ছাচারিতা ও নিম্নমানের কাজের মধ্যদিয়ে প্রকল্পের কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। উক্ত বিষয়ে মো. আবু বকর সিদ্দিক, নির্বাহী প্রকৌশলী মাগুরা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর গণমাধ্যম কর্মীদের কাছে কোন বক্তব্য দিতে রাজি নন।
মাগুরার জনস্বাস্থ্য প্রকৌশলী অধিদপ্তরের মোঃ নূর ইসলাম ভি এস লেবার ম্যাশন সরকারি রাজমিস্ত্রীর জোগালে ও ক্যাশিয়ার ইমামুল হকের অনিয়ম দুর্নীতি ফাঁস। শুক্রবার ২৯ নভেম্বর মাগুরা সাংবাদিক ফোরামের (সভাপতি) সাংবাদিক মিরাজ আহমেদ সরাসরি সরকারি রাজমিস্ত্রীর জোগালে ম্যাশন নুর ইসলামের পাচারকৃত মালামাল গুলো হাতে নাতে ধরে ফেলেছে। এসময় ইমরুল হক বলে এই মালগুলো ভাই ভাই মেশিনারীজ নায়েবের। সেখানে রুমের দেওয়ালে ফ্রেন্ডস কন্সট্রাকশন ফার্ম (এফসিএফ) এর সাইনবোর্ড দেখা যায়, আর রুমের মধ্যে লিরা কোম্পানির পাইপ ও বেশ কয়েকটি গাজী কোম্পানির সাবমারসিবল পানির পাম্প পড়ে থাকতে দেখা যায়।
মাগুরা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের সদর জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল ম্যাশন পদের নুর ইসলাম ও জেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের ক্যাশিয়ার ইমামুল হক সরকারি চাকরি করে ঠিকাদারের কাজ করে যাওয়ার ও পাওয়ানোর অভিযোগ উঠেছে। ম্যাসন নুর ইসলাম সরকারি রাজমিস্ত্রির জুগালে পদে চাকরি করে ব্যবসা করে নিজেকে বাইরে বড় পদের পরিচয় দেয় ম্যাকানিক বলে। ৭ লাখ টাকা দিয়ে দুই গ্রুপ ১৫ টি ওয়াশ ব্লক ক্রয় করে মেলিন নামক ব্যক্তির কাছ হতে এবং তার পূর্বের কাজের ভালো না। তার গ্রামের বাড়ি পলাশবাড়ীয়া ইউনিয়নের জুকা গ্রামে ১ কোটি টাকার বেশি মূল্য দিয়ে বাড়ি করেছে। বাইরের যে কাজগুলো যারা অরজিনাল মাগুরা পাবলিক হেলথের জনস্বাস্থ্যের ঠিকাদার এরা বেশির ভাগ কাজ থেকে বঞ্চিত এবং বাইরের ঠিকাদার সিংহ ভাগ কাজ পায়। বাইরের ঠিকাদাররা হলো ২৫০০ হাজার কনস্ট্রাকশন কুষ্টিয়া, বরগুনার কামাল সাহেব, চুয়াডাঙ্গার ইলিয়াস, গোপালগঞ্জের কামাল সাহেব, রাজবাড়ীর ঠিকাদার গণ, কুষ্টিয়া এবং ঝিনাইদহ জেলার ঠিকাদার। কাজ কর্মগুলো উঠিয়ে দেয় ম্যাশন নুর ইসলাম এবং ক্যাশিয়ার ইমামুল হক। ম্যাশন নুর ইসলামের সাথে কাজ করে মিস্ত্রী হিসেবে কাশিনাথপুর গ্রামের খাইরুল ইসলাম। আর অপরদিকে মাগুরার হেলথ এর ঠিকাদার হাতেগোনা কয়েকজন তারা হলো খবির আহমেদ, পাল্লার আনু, মিরুল ইসলাম ও সেলিম এরা ঠিকমত ঠিকাদার কাজ পাই না।
এবিষয়ে গত একসপ্তাহ পূর্বে ম্যাসন নুর ইসলামের কাছে ১৫ টি ওয়ার্ড ব্লক সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি অস্বীকার করেন এবং পরবর্তীতে মোবাইল ফোন রিসিভ করেন না। সে জানাই তার ছেলে ব্যবসা করে সে কিছু জানে না।
এ বিষয়ে মাগুরা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ আবু বকর সিদ্দিক তার কাছে শোনা হলে তিনি জানান, বাইরের জেলার ৬৪ জেলার ওটিএম টেন্ডারে ঠিকাদার অংশগ্রহণ করতে পারবে। আর এলটিএম হলে নিজের জেলায় অংশগ্রহণ করতে পারবে। বেশিরভাগ জনস্বার্থে ৯০% পারসেন্ট কাজ ওটিএম ৬৪ জেলার ১ ভাগ পাবে মাগুরা জেলার ঠিকাদার। এলটিএম টেন্ডার ভাগ নিতে হলে ডিপার্টমেন্ট লাইসেন্স লাগবে এবং ওটিএম টেন্ডার নিতে হলে জেনারেল লাইসেন্স লাগবে। তার কাছে ম্যাসন নুর ইসলাম কিভাবে সরকারি চাকরি করে ওয়াশ ব্লক ক্রয় করে ঠিকাদারি করছে এ বিষয় সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন সরকারি চাকরি করে ঠিকাদারী করা যায় না এই বিষয় সম্পর্কে আমার জানা নাই এবং ক্যাশিয়ার ইমামুল হক গোপনে ঠিকাদারদের মোটা অঙ্কের টাকার বিনিময়ে কাজ পাওয়ার কথা শুনালে তিনি বলেন এটা আমার জানা নাই। তার কাছে ১৫ টি ওয়াস ব্লকের সদরের কাজের তথ্য চাওয়া হলে তিনি সরকারি নিয়ম অনুযায়ী তথ্য এর মাধ্যমে আবেদন করতে বলেন এছাড়া তিনি কোন তথ্য ও ভিডিও বক্তব্য দিবেন না এবং শেষে বলেন সাংবাদিকের কাছে বক্তব্য দিতে হলে আমার উর্দ্বোতন কর্তৃপক্ষের অনুমতি নিতে হবে।
Leave a Reply