25 Nov 2024, 07:53 am

মাদকসেবীদের জন্য ঢাকায় তৈরি করা হচ্ছে ২৫০ শষ্যার হাসপাতাল: স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী

নিজস্ব প্রতিবেদকঃ

অনলাইন সীমান্তবাণী ডেস্ক :  মাদকসেবীদের চিকিৎসায় ঢাকায় ২৫০ শষ্যার হাসপাতাল তৈরি করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল। তিনি বলেন, আর বিভাগীয় শহরগুলোতে ২০০ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতাল নির্মাণের কার্যক্রম নেওয়া হয়েছে। সবাইকে মাদকের বিরুদ্ধে সমবেত হয়ে সামাজিক আন্দোলন গড়ে তোলার আহ্বান জানান স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। রবিবার মাদকদ্রব্যের অপব্যবহার ও অবৈধ পাচারবিরোধী আন্তর্জাতিক দিবসের মূল থিয়েটার হলে আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন।

১৯৮৭ সালে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ৪৭ তম অধিবেশনে ২৬ জুনকে মাদকদ্রব্যের অপব্যবহার ও অবৈধ পাচারবিরোধী আন্তর্জাতিক দিবস হিসেবে পালনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। মাদকদ্রব্যের অপব্যবহার ও পাচার রোধে জনসচেতনতা সৃষ্টি এবং মাদকাসক্তির চিকিৎসার বিষয়ে সর্বসাধারণকে অবহিত ও উদ্ধুদ্ধ করার লক্ষ্য নিয়ে ১৯৮৮ সাল থেকে প্রতি বছর ২৬ জুন জাতিসংঘ ঘোষিত ‘মাদকদ্রব্যের অপব্যবহার ও অবৈধ পাচারবিরোধী আন্তর্জাতিক দিবস’ বিশ্বব্যাপী পালিত হয়ে আসছে।

মুসলিম সম্প্রদায়ের প্রধান ধর্মীয় উৎসব পবিত্র ঈদ-উল আযহা’র ছুটির কারণে সরকার মাদকদ্রব্যের অপব্যবহার ও অবৈধ পাচারবিরোধী আন্তর্জাতিক দিবসের অনুষ্ঠান আমাদের দেশে ২৬ জুন এর পরিবর্তে ৩০ জুলাই ২০২৩ উদযাপনের সিদ্ধান্ত নেয়। মাদকের করাল ছোবল থেকে বিশ্ববাসীকে রক্ষা করার জন্য জনসচেতনতা সৃষ্টি এবং মাদকের ভয়াবহতার মর্মস্পর্শী ও করুণচিত্র বিশ্বের সর্বস্তরের জনগণের সামনে তুলে ধরার মাধ্যমে মাদকবিরোধী ব্যাপক সামাজিক আন্দোলন গড়ে তোলাই এ দিবস পালনের মূল লক্ষ্য। দিবসটির এ বছরের প্রতিপাদ্য হচ্ছে: মানুষই মুখ্য। মাদককে না বলুন, শক্তিশালী প্রতিরোধ গড়ে তুলুন ।

দিবসটি উদযাপন উপলক্ষ্যে রবিবার সকাল আটটায় রমনা পার্কের “দক্ষিণ” পূর্ব পার্শ্বের (স্টার গেটের সামনে) মানববন্ধন কর্মসূচি পালিত হয়। সকাল ১০ টায় বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় নাট্যশালার মূল থিয়েটার হলে আলোচনা সভা ও পুরস্কার বিতরণ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। ওই অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সুরক্ষা সেবা বিভাগের সচিব মো. আবদুল্লাহ আল মাসুদ চৌধুরী। আর সভাপত্বি করেন মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মো. আবদুল ওয়াহাব ভূঞা।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশে কোন মাদক উৎপন্ন হয়না। কিন্তু ভৌগোলিকভাবে বিশ্বের দুটি বৃহৎ মাদক বলয় গোল্ডেন ট্রায়াঙ্গেল ও গোল্ডেন ক্রিসেন্টের মধ্যবর্তী স্থানে বাংলাদেশের অবস্থান হওয়ায় তাদের প্রভাবে বাংলাদেশে অবৈধ মাদকদ্রব্যের প্রবাহ বৃদ্ধি পেয়েছে। আর এসব মাদকদ্রব্য মাদক চোরাকারবারীদের মাধ্যমে দেশে অনুপ্রবেশ করছে এবং এর ফলে সমাজের একটি অংশ বিশেষ করে যুব সমাজ মাদকাসক্ত হয়ে পড়ছে।

মন্ত্রী বলেন, প্রধানমন্ত্রী মাদকের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স ঘোষণা করেছেন। প্রধানমন্ত্রীর এই নির্দেশনা বাস্তবায়নে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর এবং অন্যান্য আইন প্রয়োগকারী সংস্থার কঠোর নজরদারি ও মাদকবিরোধী প্রচারণা কার্যক্রম বৃদ্ধি পাওয়ার কারণে বর্তমানে মাদক পরিস্থিতি অনেকটা নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল বলেন, বর্তমান সরকার মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরকে যুগোপগোগী করার জন্য বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। জনবল ও লজিস্টিক সুবিধাদি বৃদ্ধি করা হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, মাদকাসক্তদের চিকিৎসায় ঢাকায় ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতাল এবং বিভাগীয় শহরগুলোকে ২০০ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতাল নির্মাণের কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়েছে। তিনি সকলকে মাদকের বিরুদ্ধে সমবেত হয়ে সামাজিক আন্দোলন গড়ে তোলার আহবান জানান।

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে সুরক্ষা সেবা বিভাগের সচিব বলেন, মাদকের বিরুদ্ধে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০১৮ সালের নির্বাচনী ইশতেহারে ‘জিরো টলারেন্স’ নীতি ঘোষণা করেছেন। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর মাদকের বিরুদ্ধে ‘জিরো টলারেন্স’ নীতি বাস্তবায়নে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর, বাংলাদেশ পুলিশ, র‌্যাব, বিজিবি, কোস্টগার্ডসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এবং মাঠ প্রশাসন সম্মিলিতভাবে কাজ করে যাচ্ছে। দেশের সকল কারাগারে মাদক সংক্রান্ত অপরাধে আটক ও বন্দিদের মাঝে নিয়মিত মাদকবিরোধী সচেতনতামূলক কার্যক্রম পরিচালনা করা হচ্ছে। পাশাপাশি কারা বন্দিদের মধ্যে যারা মাদকাসক্ত তাদেরকে কারাগারের অভ্যন্তরে চিকিৎসা ও কাউন্সিলিং সেবা দেওয়া হচ্ছে। তিনি বর্তমান সরকারের স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে মাদকমুক্ত সমাজ গড়ার জন্য সকলকে এগিয়ে আসার আহবান জানান।

সভাপতির বক্তব্যে মহাপরিচালক বলেন, আমাদের দেশকে একটি আধুনিক ও উন্নত রাষ্ট্রে পরিণত করতে প্রয়োজন সুস্থ, শিক্ষিত, মেধাবী ও কর্মক্ষম জনশক্তি। কিন্তু মাদকের হিংস্র থাবায় এই জনশক্তির উল্লেখযোগ্য একটি অংশ আজ মাদকাসক্ত। আইনের প্রয়োগের পাশাপাশি মাদক নির্মূলে প্রয়োজন সচেতনতা ও জনসম্পৃক্ততা। সকলের সমন্বিত প্রয়াসেই সম্ভব মাদকাসক্তি মুক্ত বাংলাদেশ গড়ে তোলা।

দিবসটি উপলক্ষ্যে সারা দেশে শিশু-কিশোরদের অংশগ্রহণে মাদকবিরোধী রচনা ও চিত্রাংকন প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়েছে। ওই অনুষ্ঠানে এসব প্রতিযোগিতায় বিজয়ী ২১ জন ছাত্র-ছাত্রীকে পুরস্কৃত করা হয়। দিবসটি উপলক্ষ্যে রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর বাণী সম্বলিত জাতীয় দৈনিক পত্রিকায় বিশেষ ক্রোড়পত্র এবং অধিদপ্তরের কাযর্ক্রম নিয়ে স্যুভেনির প্রকাশ করা হয়েছে। অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি স্যুভেনির এর মোড়ক উম্মোচন করেন। দিবসের প্রতিপাদ্য বিটিআরসির সহযোগিতায় মোবাইল ফোনের মেসেজের মাধ্যমে প্রচার করা হয়েছে। বিভিন্ন টিভি চ্যানেলে মাদক সচেতনতা বৃদ্ধি বিষয়ক স্ক্রল নিউজ, টিভিসি ও আলোচনা অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে।

অপরদিকে মাদকবিরোধী স্লোগান ও দিবসের প্রতিপাদ্য লেখা ফেস্টুন, বিলবোর্ড দিয়ে ঢাকা শহরের প্রধান প্রধান সড়ক ও সড়কদ্বীপগুলো সুসজ্জিত করা হয়েছে। দেশের সকল সরকারি ও লাইসেন্স প্রাপ্ত বেসরকারি মাদকাসক্তি নিরাময় কেন্দ্রগুলোতে চিকিৎসাধীন রোগীদের জন্য উন্নত মানের খাবার পরিবেশন করা হয়েছে।এছাড়া বিভাগ, জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে পালিত কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে মাদকবিরোধী র‌্যালি, আলোচনা সভা, চিত্রাংকন প্রতিযোগিতা, বিভিন্ন জনবহুল স্থানে মাদকবিরোধী লিফলেট ও স্টিকার বিতরণ, মাদকবিরোধী সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও গুরত্বপূর্ণ স্থানে মাদকবিরোধী শর্টফিল্ম প্রদর্শন ইত্যাদি।

 

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

  • Visits Today: 14693
  • Total Visits: 1302166
  • Total Visitors: 4
  • Total Countries: 1668

আজকের বাংলা তারিখ

  • আজ সোমবার, ২৫শে নভেম্বর, ২০২৪ ইং
  • ১১ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ (হেমন্তকাল)
  • ২২শে জমাদিউল-আউয়াল, ১৪৪৬ হিজরী
  • এখন সময়, সকাল ৭:৫৩

Archives

MonTueWedThuFriSatSun
    123
252627282930 
       
15161718192021
293031    
       
  12345
2728     
       
     12
3456789
10111213141516
17181920212223
31      
  12345
6789101112
13141516171819
20212223242526
27282930   
       

https://youtu.be/dhqhRb9y018