অনলাইন সীমান্তবাণী ডেস্ক : মাদারীপুরে কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনে ছাত্রলীগ, পুলিশ ও আন্দোলনকারীদের ত্রিমুখী সংঘর্ষে প্রায় ৪০ কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। ওই তাণ্ডবে তিনজন নিহত হয়েছেন। জেলা প্রশাসনের গঠিত তদন্ত কমিটির রিপোর্ট হাতে পাওয়ার পর এসব তথ্য দেন অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মো. নাজমুল ইসলাম। এখনো ধ্বংসের ক্ষত রয়েছে শহরের বিভিন্ন স্থানে।
বুধবার (২৪ জুলাই) বিকালের দিকে অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মো. নাজমুল ইসলাম জানান, গত বৃহস্পতি (১৮ জুলাই) ও শুক্রবার (১৯ জুলাই) দুই দিন কোটা সংস্কারের দাবিতে ছাত্রদের আন্দোলনে ঢুকে পড়ে একদল দুর্বৃত্ত। এ সময় নাশকতাকারীরা শহরে ও মস্তফাপুরে তাণ্ডব চালায়। জেলা প্রশাসকের কার্যালয়, আওয়ামী লীগ কার্যালয়, মস্তফাপুর ট্রাফিক পুলিশ বক্স, মস্তফাপুর বাস কাউন্টার ও মুক্তিযোদ্ধা সংসদে ব্যাপক ভাঙচুর করা হয়।
এছাড়া সার্বিক ইন্টারন্যাশনালের সব ফিলিং স্টেশন, সব বাস ডিপো, লঞ্চঘাট, পুলিশ ফাঁড়ি ও পৌর মুক্তিযোদ্ধা অডিটোরিয়াম, জাতীয় মহিলা সংস্থার মালামাল আগুনে পুড়িয়ে দেওয়া হয়। পুড়িয়ে দেওয়া হয় সার্বিক পরিবহনের ৩২টি বিলাসবহুল বাস, একটি লরি, একটি ট্যাঙ্কার, পাঁচটি পেট্রোল পাম্পের মেশিন, পাঁচটি মোটরসাইকেল। দুর্বৃত্তদের ধ্বংসযজ্ঞে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয় সার্বিক পরিবহন, পেট্রোল পাম্প ও অন্যান্য সম্পদ। এ সবের ক্ষতির পরিমাণ প্রায় ৩০ কোটি টাকা বলে নিশ্চিত করেন সার্বিক ইন্টারন্যাশনালের ম্যানেজার গোপাল চন্দ্র হালদার।
শনিবার (২০ জুলাই) জেলা প্রশাসন থেকে গঠন করা হয় তিন সদস্যদের তদন্ত কমিটি। কমিটির প্রধান করা হয় গণপূর্ত বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী শাহরিয়ার রহমানকে। এ ছাড়া বাকি দুই সদস্য হলো এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলী বাদল চন্দ্র কীর্ত্তনীয়া ও সহকারী পরিচালক মো. নুর হোসেন। ঘটনাস্থল পরিদর্শন ও ক্ষতিগ্রস্তদের সঙ্গে কথা বলেন তদন্ত কমিটির সদস্যরা। পরে মঙ্গলবার রাতে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ উল্লেখ করে জেলা প্রশাসনের হাতে রিপোর্ট প্রদান করেন কমিটির সদস্যরা।
জানা যায়, কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনে ছাত্রলীগ, পুলিশ ও আন্দোলনকারীদের ত্রিমুখী সংঘর্ষ হয়। হামলাকারী দুর্বৃত্তদের তাণ্ডবে ধ্বংসযজ্ঞে পরিণত হয় শহরের বিভিন্ন এলাকার মূল্যবান সম্পদ ও সরকারি-বেসরকারি স্থাপনা। প্রতিটি হামলার ঘটনায় অংশ নেয় শত শত মানুষ। এতে রোমান বেপারী ও তাওহীদ সন্ন্যামাত নামের দুজন নিহত হন। এ ছাড়া তাড়া খেয়ে শকুনী লেকের পানিতে ডুবে আমিরাবাদ এলাকার স্বপন দের ছেলে দীপ্ত দে নামের এক শিক্ষার্থীর মৃত্যু হয়। অর্ধশত পুলিশসহ আহত হয়েছেন শতাধিক।
এ ঘটনায় পুলিশের পক্ষ থেকে আলাদা চারটি মামলায় তিন শতাধিক মানুষকে আসামি করা হয়েছে। এছাড়া অজ্ঞাতনামা আসামি দেড় থেকে দুই হাজার। এখন পর্যন্ত ৮২ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। টানা দুই দিন রণক্ষেত্রের পর মাদারীপুরে স্বস্তি ফিরে এসেছে। শহরের গুরুত্বপূর্ণ স্থানে বসানো হয়েছে তল্লাশি চৌকি, কাজ করছেন সেনাবাহিনী, বিজিবি, পুলিশ ও র্যাবের সদস্যরা।
Leave a Reply