অনলাইন সীমান্তবাণী ডেস্ক : ফিলিপাইনের সাবেক প্রেসিডেন্ট রদ্রিগো দুতার্তেকে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের (আইসিসি) গ্রেপ্তারি পরোয়ানার ভিত্তিতে মঙ্গলবার ম্যানিলায় গ্রেপ্তার করেছে দেশটির পুলিশ।
ম্যানিলা থেকে এএফপি জানায়, ৭৯ বছর বয়সী দুতার্তের বিরুদ্ধে ‘মানবতাবিরোধী অপরাধ হিসেবে হত্যার’ অভিযোগ এনেছে আইসিসি। তার মাদকবিরোধী অভিযানে হাজার হাজার দরিদ্র মানুষ প্রাণ হারিয়েছেন বলে অভিযোগ রয়েছে, যাদের অনেকের বিরুদ্ধে মাদক সংশ্লিষ্টতার কোনো প্রমাণ ছিল না।
প্রেসিডেন্টের দপ্তর এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, ‘আজ ভোরে ইন্টারপোল ম্যানিলা আইসিসির গ্রেপ্তারি পরোয়ানার আনুষ্ঠানিক কপি গ্রহণ করেছে। বর্তমানে সাবেক প্রেসিডেন্ট নিরাপত্তা বাহিনীর হেফাজতে আছেন।’
বিবৃতিতে আরও বলা হয়েছে, দুতার্তে ও তার দল সুস্থ আছেন এবং তাদের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা হচ্ছে।
গ্রেপ্তারের পর দুতার্তের প্রতিক্রিয়া : গ্রেপ্তারের পর নিজের কনিষ্ঠ কন্যা ভেরোনিকা দুতার্তের ইনস্টাগ্রাম অ্যাকাউন্টে পোস্ট করা এক ভিডিওতে দুতার্তে তার গ্রেপ্তারের যৌক্তিকতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন।
তিনি বলেন, ‘আমাকে কেন গ্রেপ্তার করা হলো? আমার অপরাধ কী? আমি এখানে কেন, তা আইন অনুযায়ী ব্যাখ্যা চাই।’
‘আমি স্বেচ্ছায় আসিনি, আমাকে অন্য কেউ এনেছে… এখন তোমাদের আমার স্বাধীনতা হরণ করার জবাব দিতে হবে,’ বলেন তিনি।
তার অবস্থান সম্পর্কে সরকারি কোনো তথ্য দেওয়া হয়নি। তবে তার রাজনৈতিক দলের প্রকাশিত এক ছবিতে দেখা গেছে, তিনি ম্যানিলা বিমানবন্দরের পাশে ভিলামোর এয়ার বেসে আটক রয়েছেন।
‘বেআইনি’ গ্রেপ্তার দাবি : দুতার্তের সাবেক প্রধান আইন উপদেষ্টা সালভাদর পানেলো এই গ্রেপ্তারকে ‘বেআইনি’ বলে অভিহিত করেছেন।
তিনি বলেন, ‘ফিলিপাইনের জাতীয় পুলিশ (পিএনপি) দুতার্তের আইনজীবীদের একজনকে তার সঙ্গে দেখা করতে দেয়নি এবং গ্রেপ্তারের আইনি ভিত্তি নিয়ে প্রশ্ন তোলার সুযোগ দেয়নি।’
তিনি আরও জানান, এখনও পর্যন্ত আইসিসির গ্রেপ্তারি পরোয়ানার কোনো মুদ্রিত কপি দেওয়া হয়নি।
বিরোধীদের উল্লাস : যারা দুতার্তের মাদকবিরোধী অভিযানকে চ্যালেঞ্জ করেছেন, তারা এই গ্রেপ্তারকে স্বাগত জানিয়েছেন।
‘রাইজ আপ ফর লাইফ অ্যান্ড ফর রাইটস’ সংগঠনের সমন্বয়ক রুবিলিন লিতাও বলেন, ‘অনেক মায়ের স্বামী-সন্তান এই অভিযানে প্রাণ হারিয়েছে। তারা বহুদিন ধরে এই মুহূর্তের অপেক্ষায় ছিলেন।’
ফিলিপাইনের মানবাধিকার সংগঠন ‘করাপাতান’ বলেছে, ‘এখন প্রেসিডেন্ট মার্কোসের উচিত দুতার্তেকে হেগে পাঠিয়ে বিচারের ব্যবস্থা করা।’
মানবাধিকার সংগঠন হিউম্যান রাইটস ওয়াচ ফিলিপাইন সরকারকে ‘দুতার্তেকে দ্রুত আইসিসির কাছে হস্তান্তর’ করার আহ্বান জানিয়েছে।
দীর্ঘ আইনি প্রক্রিয়া শেষে গ্রেপ্তার : মঙ্গলবার সকালে দুতার্তেকে ম্যানিলা আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে গ্রেপ্তার করা হয়। তিনি তখন হংকং সফর শেষে দেশে ফিরছিলেন।
হংকংয়ে প্রবাসী ফিলিপিনোদের উদ্দেশে দেওয়া এক বক্তৃতায় তিনি আইসিসির তদন্তের সমালোচনা করে বলেন, ‘তারা যদি আমাকে গ্রেপ্তার করতে চায়, তাহলে সেটাই হবে আমার ভাগ্য।’
২০১৯ সালে দুতার্তের নির্দেশে ফিলিপাইন আইসিসি থেকে বেরিয়ে যায়। তবে আদালত বলেছে, তার শাসনামলে সংঘটিত হত্যাকাণ্ডের বিচার করার এখতিয়ার তাদের রয়েছে।
২০২১ সালে আইসিসি আনুষ্ঠানিকভাবে তদন্ত শুরু করলেও ফিলিপাইন সরকার কয়েক মাস পর তা স্থগিত করতে বলে। তারা তখন দাবি করেছিল, পুলিশের গুলিতে নিহতদের বেশ কয়েকটি মামলা নতুন করে পর্যালোচনা করা হবে।
২০২৩ সালের জুলাইয়ে পাঁচ সদস্যের বিচারক প্যানেল ফিলিপাইনের আপত্তি খারিজ করে তদন্ত চালিয়ে যাওয়ার অনুমতি দেয়।
এরপর থেকেই প্রেসিডেন্ট মার্কোসের প্রশাসন বলেছে, তারা এই তদন্তে সহযোগিতা করবে না।
তবে রবিবার প্রেসিডেন্টের যোগাযোগ দপ্তরের উপমন্ত্রী ক্লেয়ার কাস্ত্রো বলেন, ‘ইন্টারপোল যদি সরকারকে সহায়তা চায়, তবে আমাদের তা করা বাধ্যতামূলক।’
জনপ্রিয়তা ও রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ : দুতার্তে ফিলিপাইনে এখনও বিশেষ করে যারা অপরাধ দমনে তার কঠোর অবস্থানকে সমর্থন করেন তাদের কাছে জনপ্রিয়।
তিনি আসন্ন মধ্যবর্তী নির্বাচনে দাভাও শহরের মেয়র পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। তিনি দীর্ঘদিন সেখানকার মেয়র ছিলেন।
দেশটিতে জাতীয়ভাবে কিছু মাদকবিরোধী অভিযানের বিরুদ্ধে মামলা হলেও মাত্র ৯ জন পুলিশ সদস্যকে দোষী সাব্যস্ত করা হয়।
দুতার্তে নিজেকে ‘স্বঘোষিত খুনি’ দাবি করে বলেছিলেন, তিনি সন্দেহভাজন মাদকাসক্তদের ‘প্রয়োজনে গুলি করে হত্যা’ করার নির্দেশ দিয়েছেন এবং তার দাবি, এটি ফিলিপাইনকে ‘মাদক-নিয়ন্ত্রিত রাষ্ট্র’ হয়ে যাওয়া থেকে রক্ষা করেছে।
২০২৪ সালের অক্টোবরে ফিলিপাইন সিনেটে মাদকবিরোধী অভিযান নিয়ে শুনানিতে তিনি বলেন, ‘আমি যা করেছি, তা আমার দেশের জন্য করেছি। কোনো অনুশোচনা নেই, কোনো অজুহাত নেই।’