অনলাইন সীমান্তবাণী ডেস্ক : মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অর্থায়ন বন্ধের জেরে আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্র, বাংলাদেশের (আইসিডিডিআর,বি) এক হাজারেরও বেশি কর্মকর্তা-কর্মচারীকে চাকরিচ্যুতির চিঠি দেওয়া হয়েছে। এসব কর্মকর্তা-কর্মচারী যুক্তরাষ্ট্রের আন্তর্জাতিক উন্নয়নবিষয়ক সংস্থার (ইউএসএআইডি) অর্থায়নে পরিচালিত বিভিন্ন প্রকল্পে চাকরি করতেন। স্থায়ী ভিত্তিতে নিয়োগপ্রাপ্তদের তিন মাসের সময় দিয়ে চিঠি দিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি। আর অস্থায়ীদের তাৎক্ষণিক অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। আইসিডিডিআর,বির একাধিক কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলে এ তথ্য নিশ্চিত হয়েছে বাংলা ট্রিবিউন।
আইসিডিডিআর,বির কয়েকজন কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ইউএসএআইডির অর্থায়ন বন্ধ হওয়ায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে যক্ষ্মা নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচি। সেখান থেকেই সবচেয়ে বেশি ছাটাই করা হয়েছে। সারা দেশে এক হাজার কর্মকর্তাকে চাকরিচ্যুতির চিঠি পাঠানো হয়। এর মধ্যে স্থায়ী নিয়োগপ্রাপ্তদের তিন মাস সময় দিয়ে চাকুরিচ্যুত করা হয়েছে। আর অস্থায়ী নিয়োগ প্রাপ্তদের তাৎক্ষণিকভাবে চাকরিচ্যুত করা হয়। আগামী মাস থেকে তারা কাজ করতে পারবেন না।
প্রতিষ্ঠানটির নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মকর্তা বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, আইসিডিডিআর,বির গবেষণা কাজে সবচেয়ে বেশি ফান্ড আসে ইউএসএআইডি থেকে। এরপর ফান্ডিং করে বিল অ্যান্ড মেলিন্ডা গেটস ফাউন্ডেশন। এই পুরো প্রতিষ্ঠান চলে ফান্ডিংয়ের ওপর। বড় সংখ্যক কর্মী এখানে প্রকল্পভিত্তিক চাকরিতে নিয়োজিত আছে।
সারা বিশ্বের মতো বাংলাদেশেও সহযোগিতা কার্যক্রম স্থগিত করেছে ইউএসএইড। এই সংস্থার মাধ্যমে মার্কিন সরকার বিশ্বের বিভিন্ন দেশে সহায়তা কার্যক্রম পরিচালনা করে থাকে। গত ২৫ জানুয়ারি এক চিঠিতে মার্কিন সহায়তা কার্যক্রম পরিচালনা করা দেশীয় প্রতিষ্ঠানগুলোর কাছে পাঠানো এক চিঠিতে এ কথা জানানো হয়। চিঠিতে সই করেন ইউএসএইডের অধিগ্রহণ ও সহায়তা তত্ত্বাবধায়ক চুক্তি কর্মকর্তা ব্রায়ান অ্যারন। যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বিদেশে সব ধরনের সহায়তা কার্যক্রম স্থগিত করেছে এবং নতুন সাহায্য অনুমোদন বন্ধ রেখেছে। দেশটির ফাঁস হওয়া অভ্যন্তরীণ নথিতে এ তথ্য জানা গেছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কর্মকর্তা ও বিদেশি দূতাবাসগুলোতে এই নির্দেশনা পাঠানো হয়। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সোমবার (২৭ জানুয়ারি) একটি নির্বাহী আদেশ জারি করেন। এরপরই সহযোগিতা বন্ধের বিষয় প্রকাশ্যে আসে।
আইসিডিডিআরবি,র মানবসম্পদ বিভাগ থেকে ইমেইলে পাঠানো চিঠিতে বলা হয়, গত ২০ জানুয়ারি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বৈদেশিক সহায়তা পুনর্মূল্যায়ন ও পুনর্বিন্যাস সম্পর্কে নির্বাহী আদেশ বাস্তবায়নের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে আমরা আমাদের দাতা ইউএসএআইডির কাছ থেকে তাৎক্ষণিক সব কার্যক্রম স্থগিত করার চিঠি পেয়েছি। এই তাৎক্ষণিক কর্মবিরতির আদেশ পালনে ২৪ জানুয়ারি থেকে অ্যালায়েন্স ফর কমব্যাটিং টিবি ইন বাংলাদেশ (এসিটিবি) প্রকল্পের সব কার্যক্রম বন্ধ করতে হয়েছে। সে জন্য আমরা আইসিডিডিআর,বি এবং আইসিডিডিআর,বি স্টাফ রেগুলেশন এবং এইচআর প্রসিডিওর ম্যানুয়ালের সঙ্গে কর্মীদের এমপ্লয়মেন্ট কন্ট্রাক্ট মেনে সমাপ্তির নোটিশ দিয়েছি।
চিঠিতে আরও বলা হয়, কর্মীর প্রাপ্য পাওনা যথাসময়ে বুঝিয়ে দেওয়া হবে। এছাড়া প্রভিডেন্ট ফান্ড, নীতিমালা অনুযায়ী অব্যবহৃত বার্ষিক ছুটির বিপরীতে অর্থ পরিশোধ করা হবে। তবে প্রকল্পটি চালিয়ে যাওয়ার জন্য দাতার কাছ থেকে কোনও নোটিস পাওয়া গেলে আমরা কর্মীদের জানাবো।
আইসিডিডিআর,বির সিনিয়র ম্যানেজার (কমিউনিকেশন্স) এ কে এম তারিফুল ইসলাম খান বলেন, ‘আমরা যুক্তরাষ্ট্র সরকারের নির্দেশনা অনুযায়ী তাদের অর্থায়নে পরিচালিত প্রকল্প ও গবেষণাগুলো পরবর্তী নির্দেশ না পাওয়া পর্যন্ত স্থগিত রেখেছি। আমাদের সেবাগ্রহীতা, বিভিন্ন অংশীদার ও সহকর্মীদের অসুবিধার জন্য সহানুভূতি ও দুঃখ প্রকাশ করছি। আমরা আশাবাদী, পুনরায় আমাদের কার্যক্রম শুরু করতে পারবো। ’
Leave a Reply