শিকাগোতে ইসরাইলি কনস্যুলেটের সামনে ফিলিস্তিন সমর্থকদের সাথে মার্কিন পুলিশের সংঘর্ষ
অনলাইন সীমান্তবাণী ডেস্ক : আমেরিকার একটি সংবাদমাধ্যম সতর্ক করে দিয়ে লিখেছে: মানবাধিকার প্রতিষ্ঠান এবং আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের বিরুদ্ধে মার্কিন নিষেধাজ্ঞা গণহত্যার পুনরাবৃত্তি রোধের ঐতিহাসিক প্রতিশ্রুতিকে হুমকির মুখে ফেলেছে।
দ্য নিউইয়র্ক টাইমস আরও লিখেছে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর বিশ্বব্যাপী ন্যায়বিচারের অর্জনগুলোকে ভেঙে পড়ার মুখে ফেলে দিয়েছে ওই নিষেধাজ্ঞা।
পার্সটুডে জানিয়েছে, মানবাধিকার প্রতিষ্ঠান এবং আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর ওপর মার্কিন নিষেধাজ্ঞা বিশ্বকে তাদের প্রতিরোধমূলক এবং পর্যবেক্ষণমূলক ভূমিকা থেকে বঞ্চিত করে। এ প্রসঙ্গে, আমেরিকার সংবাদপত্র “দ্য নিউইয়র্ক টাইমস” একটি নিবন্ধে লিখেছে: গণহত্যার পুনরাবৃত্তি রোধের প্রতিশ্রুতি, যা দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর “আর কখনও নয়” স্লোগান দিয়ে উত্থাপিত হয়েছিল এবং মানবাধিকার প্রতিষ্ঠান ও আন্তর্জাতিক জবাবদিহিতা ব্যবস্থার আকারে মূর্ত হয়েছিল, এখন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মাধ্যমে তা ভেঙে পড়ছে।
নিউ ইয়র্ক টাইমসের প্রতিবেদনে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসনের একাধিক পদক্ষেপের কথা উল্লেখ করা হয়েছে, যার মধ্যে রয়েছে ৪ সেপ্টেম্বর ফিলিস্তিনি তিনটি বিশিষ্ট মানবাধিকার সংস্থার বিরুদ্ধে আরোপিত নিষেধাজ্ঞা। জুনের শুরুতে, ট্রাম্প প্রশাসন মানবাধিকার গোষ্ঠী আল-দামিরকে আরেকটি নিষেধাজ্ঞার আওতায় আনার জন্য টার্গেট করেছে।
প্রতিবেদনে জোর দেওয়া হয়েছে মার্কিন চাপ ফিলিস্তিনি নাগরিক সমাজের বাইরে আন্তর্জাতিক বিচার ব্যবস্থা পর্যন্ত বিস্তৃত হয়েছে এবং ট্রাম্প প্রশাসন কেবল এই গোষ্ঠীগুলোকেই নয়, আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের প্রসিকিউটর, ডেপুটি প্রসিকিউটর, ছয় বিচারক এবং অধিকৃত ভূখণ্ড ইসরাইলে জাতিসংঘের বিশেষ দূত ও প্রতিবেদক ফ্রান্সেসকা আলবানিজের বিরুদ্ধেও নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে।
নিউইয়র্ক টাইমস আরও জানিয়েছে: আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু এবং প্রাক্তন যুদ্ধমন্ত্রী ইয়াভ গ্যালান্টের বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধ এবং যুদ্ধাপরাধের অভিযোগ তদন্ত করছে। এই তদন্তের ব্যাপারে মার্কিন প্রতিক্রিয়া জবাবদিহিতা ব্যবস্থাকে নীরব করে দেওয়ার প্রচেষ্টামাত্র।
নিউ ইয়র্ক টাইমস আরও জানিয়েছে,ওয়াশিংটনের পদক্ষেপ আইনের শাসন এবং নিয়ম-ভিত্তিক বিশ্বব্যবস্থার ওপর ব্যাপক আঘাত হেনেছে। ট্রাম্প প্রশাসন জাতিসংঘের বাজেট কমিয়ে দিয়েছে, জাতিসংঘের মানবাধিকার কাউন্সিল থেকে নিজেদের প্রত্যাহার করেছে, এমনকি মানবাধিকার রক্ষাকারীদের এবং গুরুত্বপূর্ণ মানবিক সহায়তাকে সমর্থনকারী প্রায় সমস্ত মার্কিন বিদেশী সাহায্য বন্ধ করে দিয়েছে।
আমেরিকার এই মিডিয়া আউটলেটটি আরও উল্লেখ করেছে অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল এবং হিউম্যান রাইটস ওয়াচ(এইচআর ডব্লিউ) কয়েক দশক ধরে ফিলিস্তিনি গোষ্ঠী এবং প্রতিষ্ঠানগুলোর সাথে কাজ করে আসছে। এইচআর ডব্লিউ তাদের কাজকে অপরিহার্য এবং অপরিবর্তনীয় বলে মনে করে। ১৯৯৮ সালে প্রতিষ্ঠিত আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত বিশ্বব্যাপী ট্র্যাজেডির পুনরাবৃত্তি রোধেও একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। যদিও এই বিশ্ব ব্যবস্থা নিখুঁত নয়, তবু ক্ষমতার সর্বোচ্চ স্তরে জবাবদিহিতা প্রতিষ্ঠার ক্ষমতা বারবার আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘনের চক্র ভেঙে দেয়।
নিউ ইয়র্ক টাইমসের স্বীকারোক্তি অনুযায়ী, মার্কিন সরকার আজ দখলদার ইসরাইলকে সমর্থন করে এই প্রতিষ্ঠানগুলোর ওপর চাপ প্রয়োগের মাধ্যমে বিশ্বকে তাদের ক্ষমতার সুবিধা থেকে বঞ্চিত করছে।
আমেরিকার এই গণমাধ্যমটি আরও মার্কিন নিষেধাজ্ঞার বিষয়ে সতর্ক করে দিয়েছে। পত্রিকাটি বলেছে, এসব নিষেধাজ্ঞার মধ্যে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের ব্যাপক বয়কট অন্তর্ভুক্ত রয়েছে, যা বিশ্বজুড়ে ভুক্তভোগীদের অধিকারকে বিপন্ন করে তোলার আশঙ্কা রয়েছে এবং দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরে তারা যে ব্যবস্থাটি প্রতিষ্ঠা করেছিল তা রক্ষা করার জন্য সরকারগুলোকে রুখে দাঁড়ানোর আহ্বান জানিয়েছে।