29 Jan 2025, 07:38 pm

মুক্তিযুদ্ধকে কটাক্ষ করে রাজনীতি কখনোই সফল হবে না : রুহুল কবির রিজভী

নিজস্ব প্রতিবেদকঃ

অনলাইন সীমান্তবাণী ডেস্ক : ইসলামী ছাত্রশিবিরের মাসিক প্রকাশনা ‘ছাত্র সংবাদ’-এর এক প্রবন্ধে মহান মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে বিতর্কিত মন্তব্য করা হয়েছে। এ বিষয়ে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, মুক্তিযুদ্ধকে কটাক্ষ করে রাজনীতি কখনোই সফল হবে না।

তিনি বলেন, ছাত্রশিবির তাদের একটি লেখার মধ্যে মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে বিতর্কিত মন্তব্য করেছে। এটি কেন? মুক্তিযুদ্ধকে কটাক্ষ করে রাজনীতি কখনোই সফল হবে না। আমাদের শ্রেষ্ঠ অর্জন মুক্তিযুদ্ধ। সেটাকে ছোট করে, কটাক্ষ করে রাজনীতি কখনোই সফল হবে না। আমরা সব চেতনাকে ঐক্যবদ্ধ করে সবাই শান্তিতে থাকতে চাই।

বুধবার (২৯ জানুয়ারি) দুপুরে রাজধানীর রমনায় ইনস্টিটিউশন অব ইঞ্জিনিয়ার্স মিলনায়তনে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন। বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের ৮৯তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে এ আলোচনা সভার আয়োজন করে প্রকৌশলীদের সংগঠন অ্যাসোসিয়েশন অব ইঞ্জিনিয়ার্স, বাংলাদেশ (অ্যাব)।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে রুহুল কবির রিজভী বলেন, গত দেড় দশকে শেখ হাসিনা নিজে ও পরিবারের লোকজনের সমন্বয়ে দেশে গোষ্ঠীতন্ত্র কায়েম করেছিলেন। এখন শেখ হাসিনা পাশের দেশ থেকে কর্মসূচির ঘোষণা দিচ্ছেন। আর যে কয়জন ধরা পড়ে জেলখানায় আছেন তাদের মধ্যে একজন দরবেশ (সালমান এফ রহমান) তিনি কারাগার থেকে ঝাড়ফুঁক দিচ্ছেন। তিনি মাঝেমধ্যে জেলখানা থেকে ঝাড়ফুঁক পাঠাচ্ছেন। আমি জানি না তাদের বিচার প্রক্রিয়া কীভাবে চলছে? কীভাবে তারা সেখান (কারাগার) থেকে বেরিয়ে এই কথাগুলো বলছেন! নিশ্চয়ই তাদের নানানভাবে সহায়তা দেওয়া হচ্ছে। তারা সেটির সুযোগ নিয়ে কথাবার্তা বলছেন।

কারাগারে বিরোধীদলের নেতাকর্মীদের ওপর নির্যাতন প্রসঙ্গে রিজভী বলেন, আমাদের কারাগারে নিয়ে মাদকসেবী ও ফাঁসির আসামিদের সঙ্গে রাখা হতো। আমাদের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রযন্ত্র ব্যবহার করে নির্যাতন-নিপীড়ন করা হয়েছে। শেখ হাসিনার নির্দেশে গুম-খুন করা হয়েছে, যা গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে। তিনি রাষ্ট্রীয়ভাবে পৃষ্ঠপোষকতা করেছে।

অন্তর্বর্তী সরকারের সংস্কার কার্যক্রম প্রসঙ্গে তিনি বলেন, সরকার সংস্কারের কথা বলছে ভালো, কিন্তু সংস্কারের নামে আপনারা সময়ক্ষেপণ করবেন না। এমন সংস্কার আনুন যাতে ফ্যাসিবাদ পুনরায় প্রতিষ্ঠিত হতে না পারে। এমন সংস্কার নিয়ে আসুন যাতে মানুষ ন্যায়বিচার পায়। এমন সংস্কার আনুন যাতে ফ্যাসিবাদের কবর রচনা করতে হবে। আর যাতে কোনো ফ্যাসিবাদের জন্ম না হয়। তা না হলে মানুষ ভালোভাবে নেবে না।

জিয়াউর রহমান সম্পর্কে রিজভী বলেন, জিয়াউর রহমান বহুমুখী প্রতিষ্ঠান। স্বল্প পরিসরে তাকে নিয়ে আলোচনা করা কঠিন। তার বিভিন্ন কর্মকাণ্ড বিরাট বিস্তৃত। তিনি একজন সফল রাষ্ট্রনায়ক। যথাসময়ে দেশের মানুষের প্রয়োজন বুঝতে পেরেছিলেন। তার গুণাবলি ছিল অপরিসীম।

মুক্তিযুদ্ধে জিয়াউর রহমানের অবদান প্রসঙ্গে রিজভী বলেন, তৎকালীন রাজনৈতিক নেতা ছিলেন দ্বিধান্বিত। সেসময় তিনি কী করবেন কী করবেন না এমন সময় শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের স্বাধীনতার ঘোষণা শুনে দেশের মানুষ উদ্বেলিত হয়ে ওঠে। কিন্তু পলাতক প্রধানমন্ত্রীর স্বামী ড. ওয়াজেদ তার বইয়ে লিখে গেছেন যে, জিয়াউর রহমান ও তার অবদান মুছে ফেলতে সব চক্রান্ত ও ষড়যন্ত্র করেছিলেন পলাতক প্রধানমন্ত্রী (শেখ হাসিনা)।

তিনি বলেন, স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে জনগণের প্রতি আওয়ামী লীগের আচরণ মানুষ দেখেছে। আওয়ামী লীগের কোন্দল ও পাল্টা কোন্দলে ১৫ আগস্ট ঘটেছে। কিন্তু জিয়াউর রহমান একটি রাষ্ট্র দর্শন বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদ ঘোষণার মাধ্যমে দেশের সব শ্রেণির মানুষকে একটি প্ল্যাটফর্মে নিয়ে আসেন। যার বিশালতা অনেক।

রিজভী আরও বলেন, পররাষ্ট্রনীতি, শিক্ষানীতি কিংবা আত্মনির্ভরশীল হওয়ার ক্ষেত্রে সব খাতে জিয়াউর রহমানের অবদান। যুদ্ধোত্তর একটি জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করার কৃতিত্ব তো জিয়াউর রহমানের। জোর করে আয়নাঘর বানিয়ে রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীদের ওপর নির্যাতন করে ইতিহাস লিখেছেন। কিন্তু মানুষ সেটি গ্রহণ করেনি। স্কুলের শিক্ষার্থীদের পড়াতে বাধ্য করা হতো যে, শেখ মুজিব দেবতাতুল্য! গত ১৫-১৬ বছর ধরে শেখ হাসিনা এটি করার চেষ্টা করেছেন। জবরদস্তি করে একটি গোষ্ঠীতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করেছিলেন শেখ হাসিনা। তিনি তার পরিবারের সদস্যদের নামে বিভিন্ন স্থাপনার নামকরণ করেছেন। পটুয়াখালী যেতে পর পর তিনটি সেতুর নাম তার পরিবারের সদস্যদের নামে রাখা হয়েছে। দেশে কি আর কোনো খ্যাতিমান লোক নেই? এটা কি কোনো দেশ ছিল? এটি ছিল শেখ হাসিনার গোষ্ঠীতন্ত্র।

তিনি বলেন, তিনি (হাসিনা) ভাসানীর নামে নভোথিয়েটারের নাম বদলে বাপের (শেখ মুজিবুর রহমান) নামে রেখেছেন। অথচ তার পিতা ছিলেন ভাসানীর শিষ্য। তিনি বেঁচে থাকলেও তো এটি করতেন না?

অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন অ্যাবের সভাপতি ও আইইবি প্রেসিডেন্ট প্রকৌশলী রিয়াজুল ইসলাম রিজু। সংগঠনটির যুগ্ম মহাসচিব প্রকৌশলী এ কে এম আসাদুজ্জামান চুন্নুর সঞ্চালনায় এতে বক্তব্য দেন- অ্যাবের মহাসচিব প্রকৌশলী আলমগীর হাছিন আহমেদ, প্রকৌশলী আব্দুল হালিম মিয়া, সহ-সভাপতি প্রকৌশলী মো. মোস্তাফা-ই জামান সেলিম (সিআইপি), আইইবি ঢাকা সেন্টারের চেয়ারম্যান প্রকৌশলী হেলাল উদ্দিন তালুকদার, সাধারণ সম্পাদক প্রকৌশলী মাহবুব আলম, অ্যাব নেতা প্রকৌশলী আবদুস সালাম, প্রকৌশলী গোলাম মাওলা, প্রকৌশলী এ কে এম জহিরুল ইসলাম, প্রকৌশলী শাহাদাত হোসেন বিপ্লব, প্রকৌশলী রুহুল আলম, প্রকৌশলী মোতাহার হোসেন, প্রকৌশলী শামীম রাব্বি সঞ্চয় প্রমুখ।

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

  • Visits Today: 1929
  • Total Visits: 1528944
  • Total Visitors: 4
  • Total Countries: 1698

আজকের বাংলা তারিখ

  • আজ বুধবার, ২৯শে জানুয়ারি, ২০২৫ ইং
  • ১৬ই মাঘ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ (শীতকাল)
  • ২৯শে রজব, ১৪৪৬ হিজরী
  • এখন সময়, সন্ধ্যা ৭:৩৮

Archives

MonTueWedThuFriSatSun
15161718192021
293031    
       
  12345
2728     
       
     12
3456789
10111213141516
17181920212223
31      
  12345
6789101112
13141516171819
20212223242526
27282930   
       

https://youtu.be/dhqhRb9y018