28 Sep 2024, 05:48 am

মুন্সীগঞ্জে চাষ হচ্ছে বিশ্বের সবচেয়ে দামি আম মিয়াজাকি

নিজস্ব প্রতিবেদকঃ

অনলাইন সীমান্তবাণী ডেস্ক : মুন্সীগঞ্জের টঙ্গিবাড়ী উপজেলার উত্তর বেতকা মামুদাদপুর এলাকায় চাষ হচ্ছে বিশ্বের সবচেয়ে দামি আম। এটি জাপানের বিখ্যাত মিয়াজাকি আম। এই আমের মিষ্টতা সাধারণ আমের চেয়ে ১৫ ভাগ বেশি। একটি আম ৩৫০ গ্রাম পর্যন্ত বড় হয়। দক্ষিণ জাপানের কিয়োশু অঞ্চলের মিয়াজাকি নামকস্থানে এ আমের জন্ম। তাই এই আমের নাম মিয়াজাকি।

জাপানের ট্রেড প্রমোশন ব্যুরোর তথ্য বলছে, এই আমে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টি অক্সিডেন্ট, বিটা ক্যারোটিন ও ফলিক এসিড আছে। তাই এটি চোখের দৃষ্টিশক্তি বাড়াতে সাহায্য করে।

এই আমটি সারা পৃথিবীতে বিখ্যাত হওয়ার পেছনে সবচেয়ে বড় কারণ হলো এই আমের মূল্য। কারণ দামের বিচারে সবচেয়ে মূল্যবান আম হলো এটি। এই জাতের এক পিস আমের দাম প্রায় ২১ হাজার টাকা। তবে কেজি দরে নিলে আরও বেশি দাম দিতে হবে। আন্তর্জাতিক বাজারে মিয়াজাকি আম দুই লাখ ৭০ হাজার টাকা প্রতি কেজি দরে বিক্রি হয়।

আর এই বিখ্যাত আম চাষ হচ্ছে মুন্সীগঞ্জের টঙ্গিবাড়ী উপজেলার উত্তর বেতকা মামুদাতপুর গ্রামের রকির বাগানে। ওই বাগানে ৪টি আমগাছে এ বছর ৩০ কেজি পরিমাণ মিয়াজাকি আম উৎপাদিত হয়েছে বলে ওই বাগান শ্রমিকদের সূত্রে জানা গেছে। তবে রকির বাগানে ৭০০ টাকা কেজি দরে মিলছে এই বিখ্যাত মিয়াজাকি আম।

রকির বাগানে এই মিয়াজাকি আম ছাড়াও রয়েছে বিখ্যাত ব্রুনাই কিং জাতের আম। এটি বিখ্যাত এই কারণে যে এক একটা আমের ওজন ৪/৫ কেজি পর্যন্ত হয়ে থাকে। এই আম রকির বাগানে ৩০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। রকির বাগানে আম ৩ থেকে সাড়ে ৪ কেজি ওজন পর্যন্ত হয়ে থাকে। রকি সর্বোচ্চ একটি আম ১৬০০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি করেছেন।

বিশিষ্ট গার্মেন্টস ব্যবসায়ী সাব্বির হোসেন রকি মুন্সীগঞ্জের টংগিবাড়ী উপজেলার দক্ষিণ বেতকা গ্রামের আব্দুল লতিফ শেখের ছেলে। নারায়ণগঞ্জে রয়েছে তার ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। বাজারে ফরমালিনযুক্ত ফলের ছড়াছড়ির খবর জানতে পেরে পরিবারের সদস্যদের ফরমালিনমুক্ত ফল খাওয়াতে শখের বশে ২০২০ সালে তার বাড়ির আঙিনা ও পুকুর পারের পরিত্যক্ত জমি ও ভিটায় আমসহ বিভিন্ন ফলের চাষ শুরু করেন। এখন তার আম বাগানে রয়েছে ৭০০টি আম গাছ। যেসব গাছ থেকে এখন বাণিজ্যিকভাবে আম বিক্রি শুরু হয়েছে। এ বছর ৩ লাখ টাকার উপরে আম বিক্রি হবে বলে আশা রকির পরিবারের।

রকির বাগানে এখন উৎপাদিত হচ্ছে ২০/২৫ জাতের দেশী-বিদেশি আম। এর মধ্যে মিয়াজাকি কিং চাকাপাত, চিয়াংমাই, আমেরিকান রেড পালমাল, কিউজাই, ব্রুনাই কিং, বারি-৪, বারি-১১, ফোরকেজি, গোরমতি, ব্যানানা, আল ফ্রনচো, ডকমাই, থাই কাঁচামিঠা, কাটিমন উল্লেখযোগ্য। দেশি জাতের আমের মধ্যে হাড়িভাঙ্গা, সুরমা, ফজলি, আশ্বিনী, আম্রপালি, ল্যাংড়া, নাক ফজলি, গুটি অন্যতম। এছাড়া তার বাগানে পাওয়া যাচ্ছে এসব আমের চারাও।

সরেজমিনে দেখা যায়, সাব্বির হোসেন রকির আম বাগানে গাছে গাছে ঝুলে রয়েছে দেশী-বিদেশি বিভিন্ন প্রকারের আম। সাব্বির হোসেন রকি ব্যবসায়ী কাজে সংযুক্ত আরব আমিরাত (দুবাইয়ে) অবস্থান করছেন বলে জানান তার পরিবার। কিন্তু তার অনুপস্থিতেও থেমে নেই গাছের পরিচর্যা। একদিকে তার আম গাছে চলছে ওষুধ স্প্রে অন্যদিকে চলছে গাছ হতে আম সংগ্রহ। রকি বাড়ির পাশের পরিত্যক্ত ভিটার পাশাপাশি তার বাড়ির পাকা উঠানে গর্ত করেও আম গাছ লাগিয়েছেন। কীটনাশকের ব্যবহার কমিয়ে সমন্বিত রোগ বালাই দমন ব্যবস্থার মাধ্যমে কীটপতঙ্গ দমন করেছেন। আমগাছগুলো একদিকে তার বাড়ির আঙিনার সৌন্দর্য বাড়িয়েছে, অন্যদিকে বাহারি আম বিশেষ করে লাল রঙের আমের সৌন্দর্য মানুষের চোখ জুড়াচ্ছে। তার বাগানের আম দেখতে দূর-দূরান্ত থেকে ছুটে আসছে মানুষ। অনেকে আমবাগান দেখতে এসে কিনেও নিয়ে যাচ্ছেন।

রকির আম বাগানের শ্রমিক আসলাম হোসেন বলেন, ৪ বছর আগে আমরা এখানে আমবাগান শুরু করি। এখনও প্রতিনিয়তই আমরা আমের চারা বাগানে বৃদ্ধি করছি। এই পর্যন্ত আমাদের বাগানে বিভিন্ন প্রকারের দেশী-বিদেশি ৭০০ প্রকারের চারা রোপণ করেছি। এগুলা বেশিরভাগই বিদেশি জাতের। বিভিন্ন জাতের আম পাওয়া যায় আমাদের বাগানে। যাতে সারাবছর আমাদের বাগানে আম পাওয়া যায় আমরা সেভাবেই বাগানটাকে সাজিয়েছি।

দেখভালের দায়িত্বে থাকা মোহাম্মদ নেয়ামত উল্লাহ বলেন, আমরা সাধারণত বিষমুক্ত আম খাওয়ার জন্য এই আমবাগান শুরু করি। এখন আমরা বাণিজ্যিকভাবে বিক্রি করছি। আমরা আমে তেমন কোনো কিটনাশক স্প্রে করি না। কোনো ফরমালিন দেই না। বিভিন্ন জাতের পোকামাকড় দমনে আমরা সমন্বিত রোগ বালাই দমন ব্যাবস্থাপনা ব্যবহার করছি। যাতে আম বিষমুক্ত থাকে। আমরা অর্গানিকভাবে চাষাবাদ করছি।

তিনি আরও বলেন, চার বছর আগে আমরা রাজশাহী প্লাস সাভার থেকে উন্নতমানের বিদেশী জাতের আম চারা এনে চাষাবাদ শুরু করি। আমরা ধীরে ধীরে আম বাগানগুলোকে সম্প্রসারণ করছি। এখন আমাদের আম বাগানে ৭০০ আম গাছ রয়েছে এবং এখানে উন্নতমানের আম চারাও পাওয়া যাচ্ছে। আমাদের বাগানে পৃথিবীর সবচেয়ে দামি মিয়াজাকি জাতের ৪টি আমগাছে এ বছর ৩০ কেজির মতো আম হয়েছে।

রকির স্ত্রী সোনালী বেগম বলেন, আমরা আমের পাশাপাশি আমাদের এ বাগানে আম চারা উৎপাদন করে বিক্রি করছি। এখানে উন্নত মানের আমচারা পাওয়া যাচ্ছে। আম ছাড়াও রকির বাগানে রাম ভুটান, শান্তল, অ্যাপ্রিকট, অ্যাভোকাডো, জাবটিকাবা, চায়না থ্রি লিচু, লঙ্গন, আখরোট, কমলা, মালটা, আপেল, চেরি, ব্লাকবেরি, মালবেরি, স্ট্রোবেরি, তীন, জয়তুন, আলু বোখারা, পিচফল, আমড়া, কুল, জলপাই, জাম্বুরা ইত্যাদি ফলের গাছ রয়েছে।

টংগিবাড়ী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা জয়নুল আবদিন তালুকদার বলেন, রকি নিজ উদ্যোগে বিষমুক্ত আম উৎপাদন করছে। তার উৎপাদিত আমের গুণগত মান ভালো এবং বিষমুক্ত। আমাদের শেখানো প্রযুক্ত মতো কীটনাশক ব্যবহারের পরিবর্তে সমন্বিত বালাই দমন ব্যবস্থার মাধ্যমে বিষমুক্ত আম উৎপাদন করছে সে। মিয়াজাকি আমের মূল্যের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এই আম দেখতে অনেক সুন্দর হওয়ায় সাধরণত অন্যান্য আমের তুলনায় এই আমের দাম বেশি।

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

  • Visits Today: 2303
  • Total Visits: 1088534
  • Total Visitors: 4
  • Total Countries: 1639

আজকের বাংলা তারিখ

  • আজ শনিবার, ২৮শে সেপ্টেম্বর, ২০২৪ ইং
  • ১২ই আশ্বিন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ (শরৎকাল)
  • ২৪শে রবিউল-আউয়াল, ১৪৪৬ হিজরী
  • এখন সময়, ভোর ৫:৪৮

Archives

MonTueWedThuFriSatSun
      1
30      
15161718192021
293031    
       
  12345
2728     
       
     12
3456789
10111213141516
17181920212223
31      
  12345
6789101112
13141516171819
20212223242526
27282930   
       

https://youtu.be/dhqhRb9y018