অনলাইন সীমান্তবাণী ডেস্ক : মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলে দুটি সিএনজি পাম্পে গ্যাসের সঙ্গে বাতাস ভরে দিয়ে প্রতারণার অভিযোগে ফুসে উঠেছেন ড্রাইভার শ্রমিকরা। তাদের অভিযোগ, গ্যাসের সঙ্গে ৩০ ভাগ বাতাস দিয়ে প্রতিদিন লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়ে রাতারাতি আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ হয়ে উঠছেন সিএনজি গ্যাস পাম্পের মালিকরা।
চালকদের অভিযোগ, শ্রীমঙ্গল শহরতলীর হবিগঞ্জ সড়কস্থ সখিনা সিএনজি ফিলিং স্টেশন ও উপজেলার মৌলভীবাজার সড়কস্থ কালাপুর মেরিগোল্ড ফিলিং স্টেশনের গ্যাস রিফিল করলে গ্যাসের সাথে বাতাস দিয়ে বছরের পর বছর ধরে প্রতারণা করে আসছে পাম্প দুটি।
শ্রীমঙ্গল কাালিঘাট রোড সিএনজি চালক সমতির সাধারণ সম্পাদক রুমন হোসেন জানান, দীর্ঘদিন যাবৎ তারা এ ধরনের প্রতারণার শিকার হয়ে আসছেন। তিনি বলেন, বিগত সরকার দলের সাথে আতাত করে তারা ওজনে গ্যাস কম দিয়ে বাতাস ভরে তাদেরকে ক্ষতিগ্রস্ত করে আসছে। এতে গরিব সিএনজি চালকরা দিন শেষে খরচের টাকা রোজগার করতে পারেন না।
তিনি বলেন, প্রায় সময় শতকরা ৫০ ভাগ গ্যাস কম দেয়া হয়েছে।
এ ব্যাপারে মাইক্রো চালক মো. নাসির উদ্দিন এবং সাইফুল ইসলাম অভিযোগ করে বলেন, সিএনজি পাম্প দুটি থেকে ১ হাজার টাকার গ্যাস ভরলে ৩০০ টাকার গ্যাসের হিসাব মিলে না। জেলার অন্য পাম্প থেকে গ্যাস ভরলে শ্রীমঙ্গলের পাম্প থেকে ভরা গ্যাসের সাথে ৩০০ টাকার গড়মিল পাওয়া যায়। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কাছে তারা এ পুকুর চুরি বন্ধের করার দাবি জানান।
মৌলভীবাজার সড়ক পরিবহণ শ্রমিক ইউনিয়নের সাবেক নেতা খায়রুজ্জামান কামাল বলেন, দীর্ঘদিন যাবৎ শ্রীমঙ্গলের দুটি গ্যাস পাম্প থেকে চালকরা গ্যাস নিয়ে প্রতারণার শিকার হয়ে আসছেন। পাম্পে গ্যাস কম দেয়াতে চালকরা মালিকের কাছে চোর সাজতে হচ্ছে। তিনি বিষয়টি দ্রুত সমাধান করতে প্রশাসনের প্রতি আহ্বান জানান।
এ ব্যাপারে অভিযুক্ত সখিনা সিএনজি ফিলিং স্টেশনের মালিক শের আলী হেলাল অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, এমন অভিযোগে গত ২৮ ও ২৯ আগষ্ট পৃথক দুই দিন সিলেট জালালাবাদ গ্যাসের ভিজিলিস্ট টিম তাদের পাম্প পরীক্ষা করে। তবে কোন অনিয়ম পাননি বলে মন্তব্য খাতায় লিখে গেছেন।
এসময় জালালাবাদ গ্যাসের ভিজিলিস্ট টিমের ব্যবস্থাপক জাহাঙ্গীর আলম স্বাক্ষরিত লিখিত মন্তবে দেখা যায়, অনুমদিত নকশা অনুযায়ী অভ্যন্তরিন গ্যাস পাইপ লাইনের অবস্থা ঠিক আছে ও আরএমএস’র অবস্থা সুবিধাজনক। তবে পেশার গ্যাসের মিটার পরিবর্তন করতে হবে।
সখিনা সিএনজি ফিলিং স্টেশনের মালিক শের আলী হেলাল বলেন, ভিজিলিস্ট টিমের পরামর্শ অনুযায়ী তাদের পেশার গ্যাসের দুটি মিটার পরিবর্তন করেছেন। তিনি বলেন, এর জন্য ব্যাংকে টাকা জমা দিয়েছেন এবং ভিজিলিস্ট টিমই দুটি পেশার গ্যাসের দুটি মিটার পরিবর্তন করে সিলগালা করে দিয়ে গেছেন।
বাস্তবতা নিরিখে গণমাধ্যম কর্মীরাও তার পাম্প থেকে গ্যাস নিয়ে দেখেছেন তাদের পাম্প থেকে গ্যাস নিলে অন্য পাম্পের চেয়ে খরচ বেশি হয়। এ বিষয়ে জানতে চাইলে শের আলী হেলাল বলেন, তাদের লাইনটি শ্রীমঙ্গল আবাসিক লাইনের সাথে যে কারণে তারা পেশার কম পান এবং এতে বাতাস প্রবেশ করে। এ বিষয়টি তিনি জালালাবাদ গ্যাস কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছেন।
তবে শ্রীমঙ্গল মেরিগোল্ড সিএনজি পাম্পের মালিক মো. সাইফুল ইসলাম বলেন, তাদের সংযোগ মেইন লাইন থেকে শুধু মাত্র গাড়ির লম্বা লাইন হলে পেশার কমে যায়। এটা মাঝে মধ্যে হয় সবসময় না। তারও দাবী আমাদেরটা পরীক্ষা করে দেখা হোক।
এ বিষয়ে শ্রীমঙ্গল পৌরসভার সাবেক মেয়র মহসিন মিয়া মধু বলেন, পরিবহন শ্রমিকদের অভিযোগটি উপজেলা প্রশাসনের কাছে দেয়া হয়েছে। তিনি বলেন, এতে ড্রাইভার শ্রমিক ও গাড়ির মালিকরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। এ বিষয়ে তদন্ত করে আইনি ব্যবস্থা নেয়া প্রয়োজন।
শ্রীমঙ্গল উপজেলা নিবার্হী কর্মকর্তা মো: আবু তালেব জানান, তিনি পৃথক অভিযোগ পেয়েছেন, তবে শ্রীমঙ্গলে এটি পরীক্ষা করার কোন এক্সপার্ট টিম নেই। এর জন্য পেট্টোলিয়াম কপোর্রেশন বা সংশ্লিষ্ট বিভাগে অভিযোগ করার পরামর্শ দিয়েছেন তিনি।
Leave a Reply