আওয়ামী লীগ নেতা স্বপন ভট্টাচার্য্য ও শাহীন চাকলাদার
অনলাইন সীমান্তবাণী ডেস্ক : দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে যশোরের ছয়টি আসনের মধ্যে দুটিতে ক্ষমতাসীন দলের নৌকার প্রার্থী দুই আসনে ধাক্কা খেয়েছেন। ওই দুই প্রভাবশালী রাজনীতিক, বর্তমান সংসদ সদস্য ও হেভিওয়েট প্রার্থী নতুন দুই মুখের কাছে পরাজিত হয়েছেন।
এর মধ্যে একজন স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী স্বপন ভট্টাচার্য্য এমপি ও অপরজন জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক, সাবেক সংসদ সদস্য শাহীন চাকলাদার।
স্থানীয় বাসিন্দা ও সংশ্লিষ্টদের সাথে কথা বলে জানা গেছে তাদের পরাজিত হওয়ার পেছনের কিছু কারণ।
শাহীন চাকলাদার : দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে যশোর-৬ (কেশবপুর) আসনে চমক দেখিয়েছেন উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক, জেলা পরিষদের সাবেক সদস্য আজিজুল ইসলাম ওরফে খন্দকার আজিজ। তিনি জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বর্তমান এমপি শাহীন চাকলাদারকে পরাজিত করেছেন। ঈগল প্রতীকে আজিজুল ইসলাম পেয়েছেন ৪৮ হাজার ৯৪৭ ভোট। আর শাহীন চাকলাদার নৌকা প্রতীকে পেয়েছেন ৩৯ হাজার ২৬৯ ভোট। তাদের ভোটের ব্যবধান ৯ হাজার ৬৭৮টি।
স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, স্থানীয় পৌরসভার মেয়র ও তার ভাগ্নের সঙ্গে সবচেয়ে নিবিড় সম্পর্ক রাখতেন সংসদ সদস্য শাহীন চাকলাদার। এরা সবাই মিলে গত তিন বছরে কেশবপুরে তিন শতাধিক নিয়োগ বাণিজ্য করেছেন।
এই আসনে নির্বাচনের মাঠে ছিলেন চার প্রার্থী। আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী ও যশোর জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শাহীন চাকলাদারের প্রতিপক্ষ হিসেবে প্রার্থী হন উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি এইচএম আমির হোসেন, সাবেক ছাত্রলীগ নেতা তরুণতুর্কি আজিজুল ইসলাম ও জাতীয় পার্টির নেতা জি এম হাসান।
তবে, ভোটে চমক দেখিয়েছেন আজিজুল ইসলাম। দলের নেতা বর্তমান এমপি শাহীন চাকলাদার ও উপজেলা আওয়ামী লীগের বর্ষীয়ান নেতা সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান এইচএম আমির হোসেনকে পেছনে ফেলে কেশবপুরের নয়া এমপি হয়েছেন তিনি।
স্থানীয়রা বলছেন, শাহীন চাকলাদারের বিরুদ্ধে সোচ্চার, প্রতিবাদী এবং ‘বাইরের লোক’ হটাও আন্দোলনের প্রধান সিপাহশালার, সাহসী এই তরুণ নেতা আজিজুল এলাকার তরুণদের কাছে সবচেয়ে জনপ্রিয় হয়ে ওঠেন।
স্থানীয় একজন বয়োজ্যেষ্ঠ সচেতন নাগরিক নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, শাহীন চাকলাদারের ধরাশায়ী হওয়ার পেছনে উপযুক্ত কারণ ছাড়াও আরও দুটি নিয়ামক কাজ করেছে। সেটি হচ্ছে, দীর্ঘ ২৭ বছর কেশবপুরবাসী ‘বাইরের লোককে’ এমপি হিসেবে পেয়ে আসছেন। আজিজুল ইসলাম গত দুই থেকে আড়াই বছর গ্রামে গ্রামে তরুণদের সঙ্গে সংযোগ রেখে চলেছেন, এবং তিনিই ‘বাইরের লোক হটাও’ ইস্যুতে নতুন ভোটারদের মাঝে আলোড়ন সৃষ্টি করতে সক্ষম হয়েছেন। আরেকটি বিষয় যশোর সদরের সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান মশিয়ার রহমান সাগর কেশবপুরে প্রায় সবসময় অবস্থান করতেন শাহীন চাকলাদারের সঙ্গে।
মশিয়ার রহমান সাগর কেশবপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক গাজী গোলাম মোস্তফাকে মাতাল অবস্থায় ব্যাপক গালিগালাজ করেন। যার অডিও রেকর্ড ভাইরাল হলে নেতাকর্মীদের মধ্যে বিরূপ প্রভাব পড়ে।
এ ছাড়া শাহীন চাকলাদার সাইফুল ইসলাম নামে এক পরিবেশবাদী কর্মীকে ফাঁসাতে থানায় বোমা মেরে মামলা দিতে ওসিকে চাপ দিয়েছিলেন। সেই অডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হলে সেটিও স্থানীয় নেতাকর্মীদের মাঝে ব্যাপক প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়।
সর্বোপরি দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের ভোটগ্রহণের আগে শাহীন চাকলাদার যশোর থেকে তিন শতাধিক দলীয় নেতাকর্মী এসে প্রচার প্রচারণায় নামেন বলে এলাকায় ব্যাপক প্রচার হয়। শুরুতেই তারা দলীয় নেতাকর্মী ও ভোটারদের হুমকিধমকি দিয়ে ব্যাপক ত্রাস সৃষ্টি করে বলে কেশবপুরে রটে যায়।
স্থানীয়রা বলছেন, এমপি শাহীন চাকলাদারের ঘনিষ্ঠ কেশবপুর পৌর মেয়র রফিকুল ইসলাম ও তার ভাগ্নে আলমগীর সিদ্দিকী টিটো গত সাড়ে তিন বছর নিয়োগ বাণিজ্যসহ বিভিন্ন অপকর্ম করেছেন। তাদের হাত থেকে রেহাই পায়নি উপজেলা যুবলীগের সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক আল শাহরিয়ার সান্টুও। তার ঘেরটিও দখল করে তারা। যা সাধারণ মানুষ ভালোভাবে নেয়নি।
শাহীন চাকলাদার গত সাড়ে তিন বছরে নিয়োগ-বাণিজ্য করেছেন। কেশবপুরের বিভিন্ন স্কুল-কলেজ ও প্রকল্পে তিনি নিজের লোকদের সভাপতি বানিয়ে এ বাণিজ্যের কাজটি সেরেছেন। কেশবপুরে চাউর ছিল- শাহীনের সভাপতি হলে সম্মান পাবে, সম্মানী না। যেমন, শ্রীপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের পরিচালনা কমিটি নির্বাচনের মাধ্যমে হয়েছিল। কিন্তু শাহীন চাকলাদার জোরপূর্বক ওই কমিটি বাতিল করে দেন। এরপর তার পছন্দের লোককে ডিও দিয়ে সভাপতি মনোনীত করেন। ওই সভাপতির মাধ্যমে নিয়োগ বাণিজ্য করেছেন শাহীন চাকলাদার। এ রকম অসংখ্য উদাহরণ কেশবপুরে বিদ্যমান।
এসব নানামুখী কারণে স্থানীয় নেতারা তার সঙ্গে ছিলেন না ভোটের সময়। আর এই সবকিছুর ফায়দা নিয়েছেন বয়সে তরুণ কিন্তু মেধাবী নেতা আজিজুল ইসলাম। শেষের দিকে তার সবচেয়ে বড় অস্ত্র হয়ে যায় স্থানীয় মিডিয়া।
উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক গাজী গোলাম মোস্তফা বলেন, ‘নৌকার পরাজয়ের ব্যাখ্যা করা কঠিন। সাধারণ মানুষের চাহিদা অনুযায়ী এবার আজিজুল ইসলাম সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন। এ আসনে বরাবরই বহিরাগতরা এমপি হয়েছেন এবং জনগণ শাসিত হয়েছে। জনগণ ত্যক্ত বিরক্ত হয়ে ভালো-মন্দ যাই হোক এবার স্থানীয় একজনকেই এমপি হিসেবে বেছে নিয়েছেন।’
ফল বিপর্যয়ের বিষয়ে আওয়ামী লীগের প্রার্থী শাহীন চাকলাদারের নির্বাচন পরিচালনা কমিটির সদস্য সচিব আবদুস সামাদ বলেন, ‘শাহীন চাকলাদার অনেক ভোট পেয়েছেন। তবে বিএনপি-জামায়াতের একটি অংশের ভোট পাওয়ায় আজিজুল ইসলাম জয় পেয়েছেন। এর পাশাপাশি প্রশাসন থেকে নৌকার কর্মীদের ওপর অতিরিক্ত খবরদারি করা হয়। ফলে তারা সহজে প্রচারণা চালাতে পারেননি। এটাও ফল খারাপ হওয়ার একটা কারণ।
নিয়োগ বাণিজ্য, চাঁদাবাজি, সন্ত্রাসী লালন পালনের যে অভিযোগ আনা হচ্ছে তা ভিত্তিহীন।’
তার দাবি, ‘বরং শাহীন চাকলাদার এই এলাকার এমপি নির্বাচিত হওয়ার পর সব ধরনের অন্যায় কাজ বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। প্রশাসন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার চাওয়া মতে একটি সুষ্ঠু নির্বাচন করেছে।
বিজয়ী আজিজুল ইসলাম বলেছেন, কেশবপুরের মানুষের ভালোবাসার কারণে তিনি তাদের কাছে আজীবন কৃতজ্ঞ থাকবো। ‘বহিরাগত’ হিসেবে শাহীন চাকলাদার এবং তার লোকজন কেশবপুরবাসীকে নানাভাবে বঞ্চিত করেছেন। সেই বঞ্চিত মানুষই ভোটের মাধ্যমে তারা তাদের রায় দিয়েছেন।’
স্বপন ভট্টাচার্য : যশোর-৫ (মণিরামপুর) আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী দুইবারের সংসদ সদস্য স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় প্রতিমন্ত্রী স্বপন ভট্টাচার্য এবার হেরেছেন। এই আসনের নতুন প্রার্থী জেলা কৃষক লীগের সহ-সভাপতি এস এম ইয়াকুব আলীর কাছে তার পরাজয় হয়েছে। ইয়াকুব আলী স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে ঈগল প্রতীকে পেয়েছেন ৭৭ হাজার ৪৬৮ ভোট। অপরদিকে স্বপন ভট্টাচার্য পান ৭২ হাজার ৩৩২ ভোট। ভোটের ব্যবধান ৫ হাজার ১৩৬টি।
যশোর-৫ (মণিরামপুর) আসনে একদম নতুন প্রার্থী, জেলা কৃষক লীগের সহ-সভাপতি এস এম ইয়াকুব আলী আওয়ামী লীগের মনোনয়ন চেয়ে ব্যর্থ হন। দল দ্বিতীয়বারের মতো স্বপন ভট্টাচার্য্যকে নৌকা প্রতীক বরাদ্দ দেয়। প্রথমবার (১০ম জাতীয় নির্বাচন) সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী নেতা টিপু সুলতানকে হারিয়ে স্বতন্ত্র হিসেবে।
এবারের নির্বাচনে নতুন প্রার্থীর কাছে তার পরাজয়ের কারণ হিসেবে স্থানীয় লোকজন ও রাজনীতিকরা নানা বিষয়কে সামনে এনেছেন। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য প্রধান কারণ হিসেবে তারা বলছেন, গোটা মণিরামপুরকে তিনি ও তার পরিবার লুটপাটের একটি আখড়া বানিয়েছিলেন। প্রতিমন্ত্রীর স্ত্রী তন্দ্রা ভট্টাচার্য্য, ছেলে সুপ্রিয় ভট্টাচার্য্য এবং ভাগ্নে উত্তম চক্রবর্তী বাচ্চু- ছিলেন মণিরামপুরের হর্তাকর্তা। দলীয় নেতাকর্মীদের কোনও স্থান ছিল না কোনও কাজেই। এরাই ছিলেন বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সভাপতি; নিয়োগের ক্ষেত্রে বাণিজ্যের সবকিছুই নিয়ন্ত্রণ হতো তাদের মাধ্যমে।
স্বপনের বিরুদ্ধে সবচেয়ে জোরালো যে অভিযোগ, তা হচ্ছে মণিরামপুরে জামায়াত-বিএনপিকে প্রশ্রয় দেওয়া, তাদের লালন পালন। এ ছাড়া এই অঞ্চলের মানুষের সবচেয়ে বড় দুঃখ হচ্ছে ভবদহ। সেই ভবদহের টিআরএম প্রকল্প যাতে পাস না হয়, সেই ব্যবস্থা করে স্থানীয় মানুষদের স্বার্থবিরোধী সেচ প্রকল্প গ্রহণের মাধ্যমে টেন্ডারবাজি করে কোটি কোটি টাকা উপার্জন করেছেন তার ছেলে।
স্থানীয়রা বলছেন, যে কারণে টিপু সুলতানকে হারিয়ে লোকজন স্বপন বাবুকে জিতিয়েছিলেন, বিজয়ের পর থেকেই তিনিও সেই পথে হাঁটেন। তিনি স্থানীয় লোকজনের সেন্টিমেন্টকে থোড়াই কেয়ার করেছেন। এ ছাড়া হরিদাসকাটিসহ আশপাশের হিন্দু অধ্যুষিত এলাকায় নিম্নবর্ণের হিন্দুদের সঙ্গে তাদের পরিবারের একটি বড় দূরত্ব সৃষ্টি হয়। হাজিরহাট গ্রামে শারদীয় উৎসবকে সামনে রেখে কয়েক গ্রামের মানুষ এক হয়ে পূজা উদযাপন কমিটি করেন। সেই কমিটিতে স্বপন বাবুর লোকজনকে রাখা না হওয়ায় তিনি যশোরের পূজা উদযাপন পরিষদের নেতাদের নিয়ে সেখানে সেই কমিটি ভেঙে নিজের পছন্দের লোক দিয়ে কমিটি গঠন করেন। এই অঞ্চলের সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের লোকজনও সে কারণে তার প্রতি বিরক্ত।
যেমন ভোটগ্রহণের দিন খেদাপাড়া ইউনিয়নের হেলাঞ্চি কৃষ্ণবাটি স্কুল কেন্দ্রে স্বতন্ত্র প্রার্থীর কর্মী সাবেক ইউপি সদস্য সাধন কুমারকে কুড়াল দিয়ে কুপিয়ে জখম করে নৌকা সমর্থিতরা।
বিগত পাঁচ বছর ধরে এমন অসহনীয় পরিবেশের মধ্যে স্থানীয়রা নতুন কাউকে খুঁজছিলেন। এস এম ইয়াকুব আলী এই সময়কালে গোটা মণিরামপুরে নিজের টাকায় দান-ধ্যান করে নাম কিনে ফেলেন। মূলত তিনি একজন ব্যবসায়ী। হালে এসে রাজনীতিক হয়েছেন। লোকজন সৎ-বিনয়ী এবং দাতা হিসেবে তার সাহচর্য পেয়েছেন। বলা বাহুল্য, মণিরামপুরে স্বপন ভট্টাচার্য কর্তৃক নিগৃহীত মানুষজন বিশেষ করে এই আসনের সর্বাধিক পাঁচ বারের সংসদ সদস্য প্রভাবশালী রাজনীতিক টিপু সুলতানের অনুসারীদের একটা বড় অংশ তাকে সর্বাত্মক সহযোগিতা করেছেন। তৃণমূল পর্যায়ে দলের নেতাকর্মীরা তাকে বিশ্বাস করেছেন। সেই বিশ্বাসের জায়গা থেকেই দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনে তাকে বিজয়ী হতে সহায়তা করেছে।
স্বপন ভট্টাচার্য্যের পরাজয়ের কারণ উল্লেখ করতে গিয়ে হরিহর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি, জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সহ-সভাপতি মোস্তফা কামাল বলেন, সীমাহীন দুর্নীতি, নামমাত্র কাজ করে ভবদহের কয়েকশ’ কোটি টাকা লুটপাট, দলীয় নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা, বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে নিয়োগে বিএনপি-জামায়াতের লোকজন বিশেষ করে নাশকতা মামলার আসামিদের চাকরি প্রদান, দলের নেতাকর্মীদের সঙ্গে বিশেষ করে তৃণমূলের নেতাকর্মীদের সঙ্গে সম্পর্কহীনতা এবং নিজের স্ত্রী, ছেলে আর ভাগ্নের একটা বলয় তৈরি করে একটি সিন্ডিকেট বানিয়েছিলেন তিনি।
এসব বিষয়ে জানতে চাইলে উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ফারুক হোসেন বলেন, তিনি মণিরামপুরে যে উন্নয়নের কাজ করেছেন বলে বেড়ান, তা রাষ্ট্রের উন্নয়নের গতানুগতিক কাজ। আসলে মণিরামপুরবাসী পরিবর্তন চেয়েছিল। মানুষের ঘের দখল, টেন্ডারবাজি, সংখ্যালঘু নির্যাতন, ভাগ্নে কর্তৃক চাল চুরি, নিয়োগ বাণিজ্য, দলীয় নেতাকর্মীদের সঙ্গে দূরত্ব তৈরি করেছিলেন তিনি। সাধারণ ভোটাররা সেসব কিছুরই রায় দিয়েছেন।
স্বতন্ত্র প্রার্থী ইয়াকুব আলীর প্রধান নির্বাচনি এজেন্ট উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক যুগ্ম সম্পাদক জি এম আব্দুল মজিদ বলেন, বিগত দিনে আওয়ামী লীগের তৃণমূল পর্যায়ের নেতাকর্মীরা প্রতিমন্ত্রীর কাছ থেকে অত্যাচারিত হয়েছেন, অবহেলার শিকার হয়েছেন। ইয়াকুব সাহেব একজন ভালো মানুষ, দানবীর। তৃণমূলের নেতাকর্মীরা এইবার ঈগলে ভোট দিয়ে প্রতিমন্ত্রীর ওপর বদলা নিয়েছেন।
এ বিষয়ে জানতে স্বপন ভট্টাচার্য্যের ঘনিষ্ঠজন হিসেবে পরিচিত, মণিরামপুর পৌরসভার মেয়র উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি কাজী মাহমুদুল হাসানের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। পরাজয়ের কারণ হিসেবে তিনি বলেন, ‘নামধারী কিছু দলীয় নেতা এবার নৌকার বিপক্ষে কাজ করেছেন। তারা নৌকায় ভোট দেননি। তাছাড়া সাংগঠনিকভাবে স্বতন্ত্র প্রার্থীর পক্ষে ভোট করার বিষয়ে কোনও বাধা ছিল না। তাছাড়া, ভোটের দিন বিএনপি-জামায়াতের লোকজনও ভোট দিয়েছে। সঙ্গত কারণে তারা নৌকায় ভোট দেবে না।’
প্রতিমন্ত্রী তার স্ত্রী, ছেলে, ভাগ্নে নিয়ে একটি বলয় তৈরি করে নিয়োগ-বাণিজ্য করেছেন, দলের লোকজনকে দূরে সরিয়ে দিয়েছেন অভিযোগের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘এগুলো মোটেও সত্য নয়’।
স্বপন ভট্টাচার্য্য ছাত্রজীবনে ছাত্র ইউনিয়নের সঙ্গে জড়িত থাকলেও পরে তিনি আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে আসেন। তার বড় ভাই পীযূষ কান্তি ভট্টাচার্য্য কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য।
স্বপন ভট্টাচার্য্য রাজনৈতিক জীবনে ২০০৯ সালে উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। এরপর ২০১৪ সালের নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে এবং ২০১৮ সালে আওয়ামী লীগের দলীয় প্রতীকে নির্বাচন করে সংসদ সদস্য হন। ২০১৮ সালে নির্বাচনে বিজয়ী হওয়ার পর তিনি স্থানীয় সরকার ও সমবায় প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পান।
Leave a Reply