অনলাইন সীমান্তবাণী ডেস্ক : ইউক্রেনে যুদ্ধ অব্যাহত থাকায় এবং ইউরোপের বিভিন্ন দেশের অর্থনৈতিক ও সামাজিক অবস্থার দিন দিন অবনতি ঘটায় ইউরোপীয় নাগরিকরা ইউক্রেনের ব্যাপারে পশ্চিমা নীতি এবং ওই দেশটিতে হস্তক্ষেপের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ সমাবেশ অব্যাহত রেখেছে।
জার্মানির বার্লিনে সমবেত বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের হাজার হাজার সমর্থক যুদ্ধবিরোধী বিক্ষোভ করে ইউক্রেন সংকট অবসানের জন্য দ্রুত সংলাপে বসার আহ্বান জানিয়েছে। বিক্ষোভকারীরা জার্মান সাংবাদিক ওয়াগেন কানেশত্ এর উত্থাপিত ‘শান্তি ইশতেহার’এর প্রতি সমর্থন জানিয়েছেন। এ ছাড়া, ইউক্রেন যুদ্ধ দীর্ঘায়িত হওয়ায় এবং ইউরোপের সামাজিক অবস্থান দিন দিন খারাপের দিকে যাওয়ায় ইউক্রেনের ব্যাপারে ন্যাটোর নীতির বিরুদ্ধে স্পেন ও ব্রিটেনেরও শত শত মানুষ বিক্ষোভ করেছে।
পর্যবেক্ষকরা বলছেন, ইউক্রেন যুদ্ধ দীর্ঘায়িত হওয়ায় ইউরোপীয় নাগরিকদের অর্থনৈতিক, সামাজিক ও রাজনৈতিক জীবনে এর নেতিবাচক প্রভাব পড়ায় ইউরোপীয় সরকারগুলোর বিরুদ্ধে জনগণের প্রতিবাদ তীব্রতর হচ্ছে এবং সরকারগুলো বেশ চাপের মুখে পড়েছে। কেননা সরকারগুলো ইউক্রেনকে সমর্থন দেয়ায় যুদ্ধ পরিস্থিতি আরো জটিল হয়ে উঠেছে।
ইউক্রেনে যুদ্ধ শুরুর পর গত এক বছর ধরে ইউরোপীয় সরকারগুলো রাশিয়ার বিরুদ্ধে একের পর এক কঠোর নিষেধাজ্ঞা দিয়েই যাচ্ছে অন্যদিকে ইউক্রেনকে অস্ত্রে সজ্জিত করছে যাতে রাশিয়াকে পরাজিত করা যায়। সরকারগুলো এই নীতির কারণে খোদ ইউরোপীয় জনগণই আর্থ-সামাজিক ক্ষেত্রে চরম ভোগান্তির মুখে পড়েছে। যুদ্ধের ফলে ইউরোপে জ্বালানির দাম বৃদ্ধি, ক্রমবর্ধমান মুদ্রাস্ফীতি ও খাদ্য ঘাটতির ফলে জনগণ সরকারের যুদ্ধনীতির বিরুদ্ধে ফুসে উঠছে এবং যে কোনো সময় জনবিস্ফোরণ ঘটতে পারে যা ইউরোপের কোনো সরকারের জন্যই শুভকর হবে না।
ইউক্রেনে যুদ্ধ শুরুর বার্ষিকীতে ইউরোপের বিভিন্ন দেশের হাজার হাজার নাগরিক, যুদ্ধবিরোধী সংগঠন, মানবাধিকার সংগঠন এবং নাগরিক অধিকার কর্মীরা প্রতিবাদ বিক্ষোভ অব্যাহত রেখেছে। কারো কারো প্ল্যাকার্ডে লেখা আছে ‘যুদ্ধ নয় ন্যাটোও নয়, অস্ত্র দেয়া বন্ধ কর, যুদ্ধ থামাও’। তারা সমস্বরে ইউক্রেনকে পাশ্চাত্যের অস্ত্র দেয়া বন্ধ করে অবিলম্বে যুদ্ধ বন্ধের দাবি জানিয়েছেন। একজন যুদ্ধবিরোধী আন্দোলনকারী দালিয়া সানচেয বলেছেন, ‘যুদ্ধে এ পর্যন্ত বহু লোক প্রাণ হারিয়েছে সে যেদেশের লোকই হোক না কেন। আমরা চাই না ইউক্রেনকে অস্ত্র দেয়া হোক কারণ এতে যুদ্ধ দীর্ঘায়িত হবে’।
তবে, ইউরোপ জুড়ে যুদ্ধবিরোধী প্রতিবাদ বিক্ষোভ হলেও ইউরোপীয় সরকারগুলো ইউক্রেনকে সমর্থন দেয়া ও অস্ত্র সরবরাহ অব্যাহত রাখার নীতিতে অটল রয়েছে। বিভিন্ন খবরে জানা গেছে, ইউরোপীয় ইউনিয়ন প্রায় এক হাজার ২০০ কোটি ডলার মূল্যের অস্ত্র ইউক্রেনকে সরবরাহ করেছে। এ অবস্থায় ইউক্রেন যুদ্ধ পরাশক্তিগুলোর মধ্যে বিশ্বযুদ্ধে রূপ নিতে পারে বলে ইউরোপীয়রা শঙ্কিত।
ফরাসি রাজনীতিবিদ ম্যারি লুপান বলেছেন, ‘এই সংঘাতের জেরে ইউরোপ ও রাশিয়ার মধ্যকার সম্পর্ক কার্যত ছিন্ন হয়ে গেছে এবং চীন ও ভারত মস্কোর গুরুত্বপূর্ণ শরীকে পরিণত হয়েছে। এ অবস্থায় ইউক্রেনে শান্তির জন্য এখনই পদক্ষেপ নেয়া উচিত’।
যাইহোক, ইউক্রেন যুদ্ধে ইউরোপীয় নাগরিকরা ক্লান্ত হয়ে পড়েছে এবং তারা এখন যুদ্ধ বন্ধের দাবি জানাচ্ছে। কিন্তু যুদ্ধ অব্যাহত থাকলে ইউরোপের পরিস্থিতি আরো খারাপ হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। তবে, রাশিয়া চেয়েছিল ইউরোপের জনগণ যুদ্ধের বিরুদ্ধে প্রতিবাদী হয়ে উঠুক যাতে ইউরোপীয় সরকারগুলো বেকায়দায় পড়ে। এ অবস্থায় শেষ পর্যন্ত রাশিয়ার লক্ষ্যই পূরণ হতে যাচ্ছে বলে অনেকে মনে করছেন।
Leave a Reply