অনলাইন সীমান্তবাণী ডেস্ক : আসন্ন রমযান ও ঈদকে ঘিরে পাবনায় ভেজাল দুধ-ঘি তৈরি বেড়েছে। পাবনার দুধ উৎপাদন প্রধান এলাকাগুলো বিশেষ করে সাঁথিয়া, সুজানগর, কেড়ায় দেদারছে তৈরি হচ্ছে ভেজাল দুধ ও ঘি। এক শ্রেণির অসাধু ব্যবসায়ী বাড়িতে কিংবা নির্জন এলাকায় কারখানা গড়ে তুলে এ ভেজাল বাণিজ্য করে যাচ্ছেন। ভেজাল বিরোধী অভিযানে কেউ কেউ ধরা পড়লেও বন্ধ হচ্ছে না এমন প্রতারণা।
অভিযোগ আছে, তৈরি করা ভেজাল দুধের বেশিরভাগই খাঁটি দুধের সঙ্গে মিশিয়ে চলে যায় স্থানীয় বাজারে। জেলায় গড়ে ৪০ হাজার লিটার ভেজাল দুধ আর ১৫০০ লিটার ভেজাল ঘি বাজারজাত হচ্ছে। রমজান মাস আর আসন্ন ঈদকে সামনে রেখে দুধের চাহিদা ও দাম বাড়ায় এ ভেজাল ব্যবসা বেড়েছে।
স্থানীয়দের মতে, দুধ সরবরাহকারীদের কারখানা ও তাদের বাড়িতে অভিযান চালিয়েই কেবলমাত্র এ ভেজাল দুধ, ছানা ও ঘি তৈরি বন্ধ করা সম্ভব।
পাবনার সুজানগর পৌর বাজারের নন্দিতাপাড়ায় ৯ মার্চ ঘি তৈরির কারখানায় অভিযান চালায় জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর। ভেজাল ঘি তৈরির অপরাধে কারখানা মালিক শ্রী দুলাল ঘোষকে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। এ সময় জব্দ ভেজাল ঘি ডাস্টবিনে ফেলে নষ্ট করা হয়।
ভোক্তা অধিদপ্তর জানায়, মানবদেহের জন্য খুবই ক্ষতিকারক বিষাক্ত কেমিক্যাল দিয়ে এ কারখানায় ভেজাল ঘি তৈরি করে আসছিলেন শ্রী দুলাল ঘোষ। গোপন সংবাদের ভিত্তিতে এ অভিযান পরিচালনা করা হয়। জব্দ ভেজাল ঘি ধ্বংস করা হয়।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, সুজানগরের সুনিল কুন্ড, মিলন ঘোষ, সাঁথিয়া ও বেড়া উপজেলার কুদ্দুস, নাজমুল, মানিক, সুমন, কালা ঘোষের মতো অনেকে ভেজাল দুধ, ছানা ও ঘি তৈরির সঙ্গে জড়িত। দুগ্ধ উৎপাদন প্রধান এলাকায় ছানা তৈরির কারখানায় প্রতিদিন হাজার হাজার লিটার ভেজাল দুধ তৈরি হচ্ছে। এসব কারখানায় ছানা তৈরির পর ছানার পানি ফেলে না দিয়ে তা মজুত করে রাখা হয়। পরে ওই ছানার পানি দিয়ে তৈরি করা হয় ভেজাল দুধ।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে প্রতারণা ছেড়ে দেওয়া এক ব্যক্তি জানান, প্রতি মণ ছানার পানিতে দুই কেজি ননী, লবণ, খাবার সোডা, সামান্য ইউরিয়া, এক কেজি চিনি ও দুধের কৃত্রিম সুগন্ধি মিশিয়ে ভেজাল দুধ তৈরি করা হয়। এছাড়া এক মণ ফুটন্ত পানিতে এক কেজি দুধের ননী, আধা কেজি স্কিমড মিল্ক পাউডার, বাটার অয়েল, হাইড্রোজেন পার অক্সাইড, এক ফোঁটা ফরমালিনসহ নানা উপকরণ মিশিয়েও ভেজাল দুধ তৈরি করা হয়। রাসায়নিক পরীক্ষা ছাড়া শুধু ল্যাকটোমিটার দিয়ে এ ভেজাল দুধ আসল না নকল বোঝার উপায় নেই।
তিনি আরও জানান, ভেজাল ঘি তৈরিতে ব্যবহার করা হয় সয়াবিন, পামঅয়েল, পশুর চর্বি, ভেজিটেবল ফ্যাট, আলুর পেস্ট, রাসায়নিক দ্রব্য, রং ও ফ্লেভার। প্রতিবছরই রোজা বা ঈদকে সামনে রেখে এ ভেজাল ব্যবসা জমজমাট হয়ে ওঠে।
পাবনা প্রাণী সম্পদ বিভাগ সূত্রে জানা যায়, পাবনা জেলায় ছোট-বড় প্রায় ১৫০০ দুগ্ধ খামার আছে। এসব খামারে উৎপাদিত দুধের চাহিদা দেশব্যাপী। এ সুযোগে অধিক লাভের আশায় ছানা উৎপাদক এবং এক শ্রেণির অসাধু ব্যবসায়ী গোপনে ভেজাল দুধ তৈরি করে তা খাঁটি দুধের সঙ্গে মিশিয়ে বেসরকারি দুগ্ধ প্রক্রিয়াজাতকারী প্রতিষ্ঠানে সিংহভাগ এবং কিছু স্থানীয় হাট-বাজারে বিক্রি করে কালো টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে।
বাংলাদেশ দুগ্ধ উৎপাদনকারী সমবায় ইউনিয়নের সাবেক সভাপতি হাসিব খাঁন তরুণ বলেন, মিল্কভিটায় বিশ্বের সর্বাধুনিক মিল্ক টেস্টিং মেশিনের সাহায্যে পরীক্ষা করে দুধ সংগ্রহ ও পরীক্ষা করার পর তা বাজারজাত করা হয়। তাই মিল্ক ভিটায় কেউ ভেজাল দুধ সরবরাহ করতে পারে না।
তিনি আরও বলেন, দু-একজন ভেজাল দেয় বলে সবাই করে তা কিন্তু নয়। কতিপয় অসাধু ব্যবসায়ীর জন্য এ অঞ্চলের দুধের সুনাম নষ্ট হচ্ছে। এতে খামারিরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন।
পাবনা জেনারেল হাসপাতালের কনসালটেন্ট ডা. হাবিবুল্লাহ বলেন, ভেজাল দুধ পানে মানবদেহে ক্ষতিকর প্রভাব পড়বে। ফরমালিন মেশানোর ফলে লিভার রোগ, কিডনি রোগ, ক্যানসার আক্রান্ত হতে পারে। শরীরের পেছনের অংশে ব্যথা, চর্মরোগ, হজমে সমস্যা, পেটের পীড়াসহ নানা উপসর্গ দেখা দিতে পারে।
জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর পাবনার সহকারী পরিচালক মাহমুদুল হাসার রনি বলেন, আসন্ন রমজানকে সামনে রেখে ভেজাল বিরোধী অভিযান জোরদার করা হচ্ছে। ভেজাল দুধ ও ঘি তৈরি বাজারজাত বন্ধে বিশেষ অভিযান চলবে।
Leave a Reply