26 Nov 2024, 11:19 pm

রাজধানীতে গৃহকর্মীর মুখে স্কচটেপ ও হাতে গ্লু লাগিয়ে নির্যাতন

নিজস্ব প্রতিবেদকঃ

অনলাইন সীমান্তবাণী ডেস্ক : রাজধানী বনানীর ২৩ নম্বর সড়কের একটি বাড়ির সাততলার ফ্ল্যাটে গৃহকর্মী তানিয়া বেগমকে নির্যাতনের ঘটনায় এখনও কোনও মামলা হয়নি। গত মঙ্গলবার দুপুরে এ ঘটনা ঘটলেও আজ শুক্রবার বিকাল ৪টা পর্যন্ত এ বিষয়ে কোনও মামলা করতে ‘কেউ আসেননি’ বলে জানিয়েছে বনানী থানা পুলিশ। তবে স্বজনরা বলছেন, মামলা করার মতো সামর্থ নেই তাদের।

শুক্রবার (২৩ ডিসেম্বর) বনানী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা নুরে আযম মিয়া এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

পুলিশের এই কর্মকর্তা বলেন, ‘এ বিষয়ে এখনও কোনও মামলা হয়নি বা কেউ অভিযোগ করতে আসেননি। মামলা হলে আমরা দ্রুত পদেক্ষেপ গ্রহণ করবো।’

পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, গত মঙ্গলবার দুপুরে ৯৯৯-এ কল করে এক ব্যক্তি জানান, বনানীর ২৩ নম্বর সড়কের একটি বাড়ির সাততলার ফ্ল্যাটে একজনকে নির্যাতন করা হচ্ছে। বাইরে থেকে চিৎকার-চেঁচামেচির আওয়াজ আসছে।

বেলা সোয়া ২টার দিকে ওই ফ্ল্যাটে গিয়ে দেখা যায়, একজনের হাতে সুপারগ্লু ও মুখ স্কচটেপ দিয়ে বাঁধা রয়েছে। মাথার চুল ও ভ্রু ছেঁটে দেওয়া হয়েছে। শরীরজুড়ে নির্যাতনের অসংখ্য ক্ষত। মারধরে পুরো মুখমণ্ডল ফুলে গেছে। সেই ভুক্তভোগীর নাম তানিয়া বেগম। ওই বিল্ডিংয়ের একটি ফ্ল্যাটে গৃহকর্মী হিসেবে কাজ করতো সে। তাকে উদ্ধার করে বনানী থানা পুলিশ।

তানিয়াকে উদ্ধারের পর গৃহকর্ত্রী সামিনা আলমকে আটক করে নেওয়া হয় বনানী থানায়। তবে ভুক্তভোগীর পক্ষ থেকে কোনও অভিযোগ কিংবা তাৎক্ষণিক এ ঘটনার কোনও আইনগত ব্যবস্থা নেয়নি থানা পুলিশ। পুলিশ জানিয়েছে, ভুক্তভোগী গৃহকর্মীর পক্ষ থেকে কোনও মামলা করতে রাজি না হওয়ায় গৃহকর্ত্রী সামিনা আলমকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।

কেন মামলা করতে রাজি হয়নি ভুক্তভোগীর স্বজনরা—জানতে চাইলে ভুক্তভোগী তানিয়া বেগমের ভাই শফিকুর রহমান বলেন, ‘আমার বোনকে যারা নির্যাতন করেছে তারা প্রভাবশালী, মামলা করে তাদের বিরুদ্ধে লড়াই করা কঠিন। এছাড়া মামলার খরচ জোগানোর সামর্থ নেই আমাদের। এ কারণে মামলা করা হয়নি।’ তবে কেউ এগিয়ে আসলে রাষ্ট্র বা কোনও সংস্থার সহযোগিতা পেলে তিনি আইনগত ব্যবস্থা নিতে চান।

এ প্রসঙ্গে বনানী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা নুরে আযম মিয়া বলেন, ভুক্তভোগী তানিয়ার স্বজনদের আমরা অনুরোধ করেছি মামলা করার জন্য। তবে তারা কোনও মামলা করতে রাজি হননি। তারা মামলা না করলে আমরা কীভাবে ব্যবস্থা নেবো। আইনি ব্যবস্থা নিতে গেলে ভুক্তভোগী পরিবারের সহায়তা লাগবে। তারা আজ পর্যন্ত মামলা করতে আসেনি। মামলা করতে আসলে যেকোনও সহায়তা দিতে আমরা প্রস্তুত আছি।

এ বিষয়ে আইনজীবীরা বলছেন, এটি একটি ফৌজদারি অপরাধ। ভুক্তভোগী পরিবার ভয়ে কিংবা অন্য কোনও কারণে মামলা করতে আগ্রহী না হলে রাষ্ট্রের পক্ষে পুলিশ বাদী হয়ে মামলা করতে পারবে। এ ঘটনার ক্ষেত্রেও পুলিশ বাদী হয়ে মামলা করতে পারতো। কিন্তু সেটি না করায় গৃহকর্ত্রী নির্যাতন করেও পার পাওয়ার সুযোগ তৈরি হয়েছে।

তানিয়া বেগমের ভাই শফিকুর রহমান জানান, দুই বছর আগেও গৃহকর্ত্রী সামিনার বাসায় কাজ করেছিলেন তানিয়া। পরে কাজ ছেড়ে গ্রামের বাড়ি নেত্রকোনার কলমাকান্দায় চলে যান। তবে দুই মাস আগে বাসা থেকে রাগ করে তার বোন ঢাকায় এসে সামিনার বাসায় আবারও কাজে যোগ দেন। তানিয়া কোথায় ছিলেন, বিষয়টি পরিবারের কেউ জানতো না। পুলিশ তানিয়াকে উদ্ধার করার পর তারা জানতে পারেন।

গৃহকর্ত্রীর সামিনার একটি শিশু সন্তান আছে। ওই শিশু কান্না করলেই তানিয়ার ওপর নির্মম নির্যাতন করা হতো বলেও অভিযোগ করেন শফিকুর রহমান।

তিনি জানান, তানিয়া এখন পরিবারের হেফাজতে চিকিৎসা নিচ্ছেন। চিকিৎসা শেষে গ্রামের বাড়িতে ফিরে যাবেন।

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

  • Visits Today: 11309
  • Total Visits: 1322379
  • Total Visitors: 4
  • Total Countries: 1668

আজকের বাংলা তারিখ

  • আজ মঙ্গলবার, ২৬শে নভেম্বর, ২০২৪ ইং
  • ১২ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ (হেমন্তকাল)
  • ২৪শে জমাদিউল-আউয়াল, ১৪৪৬ হিজরী
  • এখন সময়, রাত ১১:১৯

Archives

MonTueWedThuFriSatSun
    123
252627282930 
       
15161718192021
293031    
       
  12345
2728     
       
     12
3456789
10111213141516
17181920212223
31      
  12345
6789101112
13141516171819
20212223242526
27282930   
       

https://youtu.be/dhqhRb9y018