অনলাইন সীমান্তবাণী ডেস্ক : রাজধানীর গ্রিন রোডে অবস্থিত সেন্ট্রাল হসপিটালে ভুল চিকিৎসায় নবজাতকের মৃত্যু এবং মা মৃত্যুঝুঁকিতে পড়ার ঘটনায় দুই চিকিৎসককে গ্রেপ্তার করেছে ধানমন্ডি থানা পুলিশ। তারা হলেন, ডা. শাহজাদী ও ডা. মুন্না।
ধানমন্ডি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. পারভেজ ইসলাম বৃহস্পতিবার (১৫ জুন) দুপুরে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
ওসি জানান, এ ঘটনায় বুধবার ধানমন্ডি থানায় ‘অবহেলাজনিত মৃত্যু’র একটি মামলা হয়েছে। মামলায় মোট ৫ জনের নাম উল্লেখ করা হয়েছে। এছাড়া কয়েকজন ‘অজ্ঞাত’ আসামিও উল্লেখ করা হয়েছে।
তবে মামলায় ডা. সংযুক্তা সাহাকে এজাহারভুক্ত করা হয়নি। ওসি বলেন, তিনি দেশের বাইরে ছিলেন। মামলায় তার নাম উল্লেখ করা হয়নি।
এদিকে অভিযোগ প্রসঙ্গে ডা. সংযুক্তা সাহা বলেন, ‘রোগীর পরিবার অনেক কিছুই বলতে পারে, কারণ তারা স্বজন হারিয়েছেন। কিন্তু বাঁচা-মরা তো আল্লাহর ইচ্ছা। আমরা তো ইচ্ছা করে কাউকে মেরে ফেলি না।’
তিনি বলেন, ‘চিকিৎসক হিসেবে আমরা আমাদের সর্বোচ্চটাই করে থাকি। তারপরও অনেক সময় রোগীকে বাঁচাতে পারি না, চিকিৎসক কখনোই জেনে-বুঝে রোগীকে সমস্যায় ফেলতে পারেন না।’
সেন্ট্রাল হসপিটালে ভুল চিকিৎসা ও কর্তৃপক্ষের প্রতারণায় মাহবুবা রহমান আঁখি নামে এক প্রসূতি মৃত্যুঝুঁকিতে পড়েছেন বলে অভিযোগ করেন তার স্বামী ইয়াকুব আলী সুমন। তার দাবি, হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের অবহেলায় মারা গেছে তাদের নবজাতক সন্তানও।
জানা গেছে, গত তিন মাস ধরে সেন্ট্রাল হসপিটালের গাইনি ও প্রসূতি বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. সংযুক্তা সাহার অধীনে চিকিৎসা নিচ্ছিলেন মাহবুবা রহমান আঁখি। তার শারীরিক অবস্থা স্বাভাবিক ছিল বলে চিকিৎসক জানিয়েছিলেন। নরমাল ডেলিভারির মাধ্যমে তার সন্তান প্রসব সম্ভব বলে আশ্বস্ত করেছিলেন ডা. সংযুক্তা সাহা।
প্রসব ব্যথা ওঠায় গত ৯ জুন রাত ১২টা ৫০ মিনিটে সেন্ট্রাল হসপিটালে ডা. সংযুক্তা সাহার অধীনে ভর্তি করা হয় মাহবুবা রহমান আঁখিকে। তখন ডা. সংযুক্তা সাহা হাসপাতালে উপস্থিত ছিলেন না। তারপরও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানায়, তিনি আছেন এবং ওটিতে (অপারেশন থিয়েটার) কাজ করছেন।
এ বিষয়ে আঁখির স্বামী ইয়াকুব আলী ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমার স্ত্রীকে যখন ওটিতে ঢোকানো হয় এবং নরমাল ডেলিভারির জন্য চেষ্টা শুরু করা হয়, তখনও আমি সংযুক্তা সাহা হাসপাতালে আছেন কি না জানতে চাই। কর্তৃপক্ষ জানায়, তিনি আছেন এবং তিনি চেষ্টা চালাচ্ছেন। পরে জানতে পেরেছি ডা. সংযুক্তা সাহা ছিলেন না এবং তারা রোগীর কোনোরকম চেক-আপ ছাড়াই ডেলিভারির কাজ শুরু করে দেন।
এদিকে বৃহস্পতিবার (১৫ জুন) সকাল সাড়ে দশটার দিকে নীলক্ষেত মোড়ে ইডেন কলেজ শিক্ষার্থী মাহবুবা রহমান আঁখিকে ভুল চিকিৎসা দেওয়ার প্রতিবাদ ও ক্ষতিপূরণের দাবিতে সাত কলেজ শিক্ষার্থীরা মানববন্ধন করেছে। এসময় ‘নবজাতক হত্যার বিচার চাই, মাহবুবার সুচিকিৎসা চাই’, ‘সেন্ট্রাল হাসপাতালে ভুল চিকিৎসার বিচার চাই’, ‘চিকিৎসার নামে অর্থ-বাণিজ্য, অবহেলা বন্ধ হোক’ সহ বিভিন্ন প্ল্যাকার্ড প্রদর্শন করতে দেখা যায়।
মানববন্ধনে অংশ নেওয়া শিক্ষার্থীরা বলেন, মাহবুবা রহমান আঁখি ইডেন মহিলা কলেজের গণিত বিভাগের ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী ছিলেন। সেন্ট্রাল হাসপাতালের চিকিৎসকের অবহেলায় ও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের উদাসীনতার কারণে বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটে গেল। এই দুর্ঘটনার ক্ষতিপূরণ কোনোভাবেই সম্ভব নয়। আমরা এ ঘটনার পূর্ণ তদন্ত সাপেক্ষে বিচার দাবি করছি।
Leave a Reply