আরবি মাস সমূহের মধ্যে শাবান মাসের ফযীলতে দুটি বিশেষ কারণ রয়েছে। প্রথমত, এটা নিজেই ফযীলতের মাস। এর মধ্য ভাগে যে তিনটি রোযা রাখার বিধান রয়েছে তা নফল হলেও এর সাওয়াব অপরিসীম। দ্বিতীয়ত, শাবান মাস পবিত্র রমযান মাসের অগ্রদূত। এটা মুসলমানদেরকে রমযান মাসের রোযার জন্য প্রস্তুতির আহবান জানায়। এ মাসের তিনটি রোযা রমযানের রোযার প্রাথমিক প্রস্তুতি হিসাবে মু‘মিনদের মানসিকভাবে তৈরি করে।
পবিত্র রমযান মাসের ফযীলত বর্ণনা করে শেষ করা যায় না। এটা মাগফিরাত, রহমত ও জাহান্নাম থেকে মুক্তির মাস । রমযানের রোযা মানুষকে পানাহার ও স্ত্রী সঙ্গম থেকে বিরত রেখে রিপু দমন, প্রাণের সজীবতা সাধন, ইবাদতের আগ্রহ বৃদ্ধি, সময়ের সদ্ব্যবহার, মিতব্যয়ী ও ধৈর্যের শিক্ষা দেয়। গণতন্ত্র, নৈতিক শৃঙ্খলা ও আল্লাহর প্রতি দৃঢ় বিশ্বাস ও নির্ভরশীলতার শিক্ষা দেয়। রোযা স্বাস্থ্যের হানি ঘটায় না ; বরং তা দেহের জন্য সঞ্জীবনীর কাজ করে।
এ ছাড়া রমযান মাসে মানুষের পরম শত্রু শয়তানকে শৃঙ্খলিত করা হয় অর্থাৎ তাকে বাধাগ্রস্ত করে জাহান্নামের দরজা বন্ধ করে দেওয়া হয় এবং বেহেশতের দরজা খুলে দেয়া হয় এবং বেহেশতের দরজা খুলে দেওয়া হয় যেন রহমতের আবহাওয়া বিশ্ব জাহানের অলিতে গলিতে সর্বত্র ছড়িয়ে পড়তে পারে।
আরব-অনারব সব দেশে সব যুগেই বৎসরের কয়েকটি দিন উৎসবের জন্য নির্ধারিত ছিল এবং আছে। আইয়্যামে জাহিলিয়াতের যুগেও আরব দেশে নওরোয ও মোহরজান উপলক্ষে জনগণ আমোদ প্রবোদ ও খেলা ধুলা করত। এর পরিবর্তে রসূল সল্লাল্লাহু আলাহি ওয়া সাল্লাম তাঁর উম্মতগণকে উৎসবের জন্য ঈদু-উল-ফিতর ও ঈদু-উল-আযহা -এ দুটি খুশীর দিন নির্ধারিত করে দিয়েছেন। ইসলামের প্রত্যেক অনুষ্ঠানই যেরুপ অন্যান্য ধর্মালম্বীদের অনুষ্ঠান থেকে উন্নততর; উৎসবের দিন দুটিও ঠিক সেরুপ। এ দুটি দিনে বিশ্ব জাহানের মুসলমানগণ ভ্রাতৃত্ব,সহানুভূতি ও আত্মত্যাগের শিক্ষা গ্রহণের মাধ্যমে মির্মল উৎসব ও আনন্দ উপভোাগ করে। ঈদের এ দুটি দিন মুসলমানকে দুনিয়ার অনন্দ ও সুখ দান করে এবং আখিরাতে তাদের কল্যাণ ও মুক্তির পথ সহজ করে দেয়।
১. যখন পবিত্র শাবান মাসের অর্ধেকের (অর্থাৎ পনের তারিখের ) রাত্রি আগমন করে, তখন তোমরা সে রাত্রে কিয়াম কর (ইবাদত কর) এবং দিনে রোযা রাখ। কারন আল্লাহ্ এতে সূর্যাস্তের পর পরই পৃথিবীর নিকটতম আকাশে নেমে আসেন এবং বলেন, ‘কোন ক্ষমা প্রাথনাকারী কি নেই যে আমি তাকে ক্ষমা করতে পারি, কোন রিযিক অনুসন্ধানকারী কি নেই যে আমি তাকে রিযিক দিতে পরি ? কোন অসুস্থ ব্যক্তি কি নেই যে আমি তাকে সুস্থতা দান করতে পারি ? কোন যানজাকারী কি নেই যে আমি তাকে প্রার্থিত বস্তু দিতে পারি ? এরুপ নেই কি এরুপ নেই কি’ বলা হতে থাকে, যে পর্যন্ত না ফজরের উদয় হয়। ইবনে মাজাহ আলোচ্য হাদীসখানা হযরত আলী (রা) -এর সূত্রে বর্ণনা করেছেন।
২. আদম সন্তানদের প্রত্যেক কাজের সওয়াব দশগুণ থেকে সাতশত গুণ পর্যন্ত অথবা তদুর্ধ্বে বাড়ানো হয়। আল্লাহ্ যদি তা ইচ্ছা করেন। মহান ও মর্যাদাবান আল্লাহ বলেন,শুধু রোযা ছাড়া। ‘কারণ এটা বিশেষভাবে আমারই জন্য এবং আমিই এর প্রতিবাদ দিব। সে আমার জন্য তার কামস্পৃহা ও আহার পরিত্যাগ করে।’ রোযাদারদের জন্য দুটি আনন্দ রয়েছে, একটি আনন্দ তার ইফতারের সময়, আর অপর আনন্দটি তার প্রভুর সাথে সাক্ষাতের সময়। নিশ্চয়ই রোযাদারের মুখের গন্ধ আল্লাহর নিকট মৃগনাভির সুগন্ধি অপেক্ষা শ্রেষ্ঠতর। ইমাম আহমদ ও মুসলিম আলোচ্য হাদীসখানা হযরত আবু হুরায়রা (রা)এর সূত্রে নকল করেছেন।
৩. আদম সন্তানদের প্রত্যেক আমল তারই জন্য, কেবল রোযা ছাড়া। রোযা আমারই জন্য এবং আমিই এর প্রতিদান দিব। নিশ্চয়ই রোযাদারের মুখের গন্ধ আল্লাহর নিকট মৃগনাভির সুগন্ধি অপেক্ষা বেশি সুরভিত।” ইবনে হাব্বান আলোচ্য হাদীসখানা হযরত আবু হুরায়রা (রা)এর সূত্রে বর্ণনা করেছেন।
৪. মহান ও মর্যাদাবান আল্লাহ্ বলেন, ‘নিশ্চয়ই রোযা আমার জন্য এবং আমিই এর প্রতিদান দিব।’ রোযাদারদের জন্য দুটি আনন্দ রয়েছে, একটি আনন্দ তার ইফতারের সময়, আর অপরটি যখন সে আল্লাহর সাথে সাক্ষাত করবে এবং আল্লাহ্ তাকে প্রতিদান দিবেন তখন। আর যার হাতে মুহাম্মদের প্রাণ তার কসম ! নিশ্চয়ই রোযাদারের মুখের দুর্গন্ধ আল্লাহর নিকট মৃগনাভির সুগন্ধি অপেক্ষা অধিক সুগন্ধময়। নাসায়ী আলোচ্য হাদীসখানা হযরত আলী (রা) -এর সূত্রে বর্ণনা করেছেন।
৫. নিশ্চয় তোমাদের প্রতিপালক বলেন, ‘প্রত্যেক সওয়াব তার দশগুণের সমতুল্য থেকে সাতশত গুণ পর্যন্ত ধরা হয়। কিন্তু রোযা আমারই জন্য আমিই এর প্রতিদান দিয়ে থাকি।” রোযা জাহান্নাম থেকে বেঁচে থাকার ঢাল স্বরুপ। আর রোযাদারের মুখের দুর্গন্ধ আল্লাহর নিকট মৃগনাভির সুগন্ধি অপেক্ষা অধিকতর সুগন্ধযুক্ত। আর যখন রোযা রাখার অবস্থায় তোমাদের বিরুদ্ধে কোন মূর্খ অবজ্ঞা প্রদর্শন করে তখন তার বলা উচিৎ ,আমি রোযাদার। ইমাম তিরমিযী আলোচ্য হাদীসখানা হযরত আবু হুরায়রা (রা)এর সূত্রে বর্ণনা করেছেন।
৬. রোযা হলো ঢালস্বরুপ, তা মু‘মিনদের দুর্গগসমূহের একটি দুর্গ। প্রত্যেক আমলকারীর জন্য আল্লাহ্ বলেন, ‘রোযা রাখা হয় আমার জন্য এবং আমিই এর প্রতিদান দিব। ” তিবারাণী হাদীসখানা হযরত আবূ উমামা (রা)এর সূত্রে বর্ণনা করা হয়েছে।
৭. মহান ও মর্যাদাবান আল্লাহ্ বলেছেন, ‘আদম সন্তানের প্রত্যেকটি আমল তার নিজের জন্য, শুধু রোযা ছাড়া। এটা নিশ্চয় আমার জন্য এবং আমিই তার প্রতিদান দিব।” রোযা একটি ঢালস্বরুপ। যখন তোমাদের কারও জন্য রোযার দিন আসে , সে যেন কোন অশ্লীল কথা না বলে এবং চিৎকার না করে । আর যদি কেউ তাকে গালি দেয় অথবা তার সাথে ঝগড়া করে, তখন তার বলা উচিৎ, “আমি রোযাদার ব্যক্তি।” মোহাম্মদের প্রাণ যাঁর (কুদরতী) হাতে তাঁর কসম , নিশ্চয়ই রোযাদারের মুখের গন্ধ আল্লাহর নিকট মৃগনাভির সুগন্ধি অপেক্ষা অধিক উত্তম। রোযাদারদের জন্য দুটি আনন্দ রয়েছে, একটি আনন্দ তার ইফতারের সময়, আর অপর আনন্দটি তার প্রভুর সাথে সাক্ষাতের সময়। শাইখাইন আলোচ্য হাদীসখানা হযরত আবু হুরায়রা (রা)এর সূত্রে বর্ণনা করেছেন। (বুখারী ও মুসলিম)
৮. মহান ও মর্যাদাবান আল্লাহ্ বলেছেন , ‘সওয়াব দশগুণ ও ততোধিক ধরা হয় । আর পাপ একটিই ধরা হয়, তা আমি মুছে ফেলি। আর রোযা আমারই জন্য এবং আমিই এর প্রতিদান দিব।’ রোযা আল্লাহ্ তা‘আলার শাস্তি থেকে বাঁচার জন্য ঢালস্বরুপ। যদ্বারা তরবারীর মত অস্ত্র থেকে রক্ষা পাওয়া যায়। বাগাভী আলোচ্য হাদীসখানা কোন এক ব্যক্তির নিকট থেকে বর্ণনা করেছেন।
৯. মহান আল্লাহ্ তা‘আলা বলেছেন, ‘বান্দাদের মধ্যে আমার নিকট সর্বাপেক্ষা প্রিয় সেই ব্যক্তি, যে রোযা খোলার ব্যাপারে সর্বাপেক্ষা বেশি তাড়াহুড়া করে”। ইমাম আহমদ আলোচ্য হাদীসখানা হযরত আবু হুরায়রা (রা) এর সূত্রে বর্ণনা করেছেন।
১০. যখন কদরের রাত আগমন করে, তখন হযরত জিবরাইল (আঃ) ফেরেশতাদের একটি জামাআতসহ নেমে আসেন এবং যে বান্দা দাড়ানো ও বসা অবস্থায় আল্লাহর যিকির করে তাদের প্রত্যেকের উপর দো‘আ বর্ষণ করতে থাকেন। অতঃপর যখন তাদের ঈদ আসে, তখন আল্লাহ্ তাদের জন্য তাঁর ফেরেশতাদের নিকট গৌরব করে বলেন,“হে আমার ফেরেশতাগণ! যে মজুর তার কাজ শেষ করেছে তার কি প্রতিদান হতে পারে?” ফেরেশতাগণ আরয করে , ‘হে আমাদের প্রতিপালক ! তার প্রতিদান তার মজুরী পূর্ণমাত্রায় দিয়ে দেওয়া।’ আল্লাহ্ বলেন ,‘হে ফেরেশতাগণ ! আমার বান্দাগণ ! তাদের উপর আমার নির্ধারিত ফরয পূর্ণ করেছে , তারপর উচ্চস্বরে আমার নিকট দো‘আ করতে করতে ঈদের নামাজের জন্য বের হয়ে ঈদগাহে এসেছে। অতঃপর আমার ইজ্জত, আমার মহব্বত, আমার করুণা ,আমার উচ্চ মর্যাদা ও আমার উচ্চপদের কসম ! আমি নিশ্চয়ই তাদের দো’আ কবুল করব।’ তারপর তিনি বলেন, ‘তোমরা ফিরে আস আমি নিশ্চয়ই তোমাদেরকে ক্ষমা করে দিয়েছি।’ অতঃপর তারা ক্ষমাকৃত অবস্থায় ফিরে আসবে। ইমাম বায়হাকী আলোচ্য হাদীসখানা হযরত আনাস (রা) এর সূত্রে বর্ণনা করেছেন।
১১. মহান ও মর্যাদাবান আল্লাহ্ বলেন , ‘যে ব্যক্তির অঙ্গ-প্রতঙ্গ আমার নিষিদ্ধ কাজগুলো থেকে রোযা রাখে না (বিরত থাকে না), আমার উদ্দেশ্যে তার পানাহার ছেড়ে দেওয়ার কোন দরকার নেই। আবু নুয়াইম আলোচ্য হাদীসখানা হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা) এর সূত্রে বর্ণনা করেছেন।
১২. নিশ্চয়ই মহান মর্যাদাবান আল্লাহ্ তা‘আলা প্রহরারত ফেরেশতাগণকে (কিরামান কাতিবীন) এই বলে আদেশ দেন, ‘আমার রোযাদার বান্দাদের কোন পাপ আসরের পরে লিখিও না’ হাকেম আলোচ্য হাদীসখানা হযরত আনাস (রা) এর সূত্রে বর্ণনা করা করেছেন।
১৩. নিশ্চয়ই আল্লাহ্ তা‘আলা বনি ইসরাঈল বংশীয় কোন নবীর প্রতি এই বলে ওহী প্রেরণ করেছিলেন, ‘তোমার সম্প্রদায়কে এই সংবাদ দাও যে এরুপ ( রোযা) রাখে; আমি তখন তাকে দৈহিক সুস্থতা দান করি এবং তাকে বড় ধরনের পুরস্কার দিয়ে থাকি।’ ইমাম বায়হাকী আলোচ্য হাদীসখানা হযরত আলী (রা) এর সূত্রে বর্ণনা করেছেন।
১৪. যখন রমযান মাসের প্রথম দিন আগমন করে তখন মহান ও মর্যাদাবান আল্লাহর ঘোষণাকারীকে বেহেশতের অধ্যক্ষ রিজওয়ানকে আহব্বান করে বলেন, ওহে রিজওয়ান! তখন রিজওয়ান জবাবে বলেন , হে প্রতিপালক ! দাস আপনার খেদমতে হাজির আছে। তখন আল্লাহর আহব্বায়ক বলে, মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম -এর উম্মতের রোযাদার ও রাত্রিতে ইবাদতকারীদের জন্য জাহান্নামগুলোর দরজা বন্ধ করে দাও এবং তাদের এ মাস শেষ না হওয়া পর্যন্ত তা খুলো না। অতঃপর যখন তৃতীয় দিন আসে তখন আল্লাহ্ হযরত জিবরাঈল (আ) এর নিকট এ ওহী প্রেরণ করেন, ‘হে জিবরাঈল! তুমি দুনিয়ায় নেমে আস এবং বিদ্রোহী শয়তান ও উদ্ধত জিনগুলাকে শিকলে বেঁধে রাখ, যেন তারা আমার বান্দাদের রোযা নষ্ট করতে না পারে। ‘আর নিশ্চয়ই আল্লাহর এরুপ একজন ফেরেশতা আছে, যার মাথা আরশের নীচে রয়েছে এবং পদদ্বয় দুনিয়ার সপ্তম স্তরে অবস্থিত। আর তার দুটি বাহুর মধ্যে একটি রয়েছে সূর্যৃদ্বয়ের স্থলে, অপরটি দিগন্তে, একটি লাল ইয়াকুত পাথরের তৈরি ,অপরটি সবুজ মর্ম পাথর দ্বারা গঠিত। সে রমযান মাসের প্রতি রাত্রে এই বলে ডাকতে থাকে যে, ‘কোন তওবাকারী আছে কি, যার তওবা গ্রহণ করা হবে? কোন ক্ষমা প্রার্থনাকারী আছে কি, যাকে ক্ষমা করা হবে? হে মঙ্গলপ্রার্থী ! তুমি খুশি হও, হে অমঙ্গলকারী ! তুমি বিরত থাক এবং মনোনিবেশ কর। সাবধান, নিশ্চয়ই মহান ও মর্যাদাবান আল্লাহর আদেশে প্রতি রাত্রে সেহরী ও ইফতারের সময়ে দোযখ থেকে সাত হাজার লোক মুক্তি লাভ করে, যারা জগতের প্রতিপালকের শাস্তির যোগ্য হয়েছিল।’ আতঃপর যখন কদরের রাত আগমন করে তখন জিবরাঈল (আ) ফেরেশতাদের সমভিব্যাহারে দুনিয়ায় নেমে আসেন, মুক্তা ও ইয়াকুত খচিত তাঁর দুটি সবুজ বাহু আছে। হযরত জিবরাঈল এটা প্রতি বৎসর শুধু এক রাত্রি ছাড়া (অন্য কোন সময়) প্রসারিত করে না। আর এটাই মহান আল্লাহর উক্তি, তাদের প্রভুর অনুমতিক্রমে ফেরেশতাগণ ও জিবরাঈল নেমে আসেন। ফেরেশতাদের বলতে সেসব ফেরেশতাকেই বোঝায় যারা সিদরাতুল মুনতাহার নীচে অবস্থান করে।
[সিদরাতুল মুনতাহা অর্থ শেষ সীমানার বরইগাছ। মানুষের চিন্তা শক্তির বাহিরে বিশেষ সম্মানিত স্থানে কোন এক শেষ সীমানায় গাছটি রয়েছে যেখানে মিরাজের রাত্রে রাসূলে মাকবুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম গিয়েছিলেন।]
১৫. নিশ্চয়ই আদম (আ) যখন অবাধ্য হলেন এবং (নিষিদ্ধ বৃক্ষের ফল ভক্ষণ করলেন) আল্লাহ্ তাঁর নিকট ওহী প্রেরণ করলেন , ‘হে আদম ! আমার নিকট থেকে নেমে যাও। আমার ইজ্জতের কসম যে ব্যক্তি আমার অবাধ্য হয়েছে সে আমার নিকট অবস্থান করতে পারবে না। ‘অতপর তিনি মলিন মুখে দুনিয়ায় নেমে আসলেন। তখন ফেরেশতাগণ সিজদায় পতিত হয়ে ফরিয়াদ করতে লাগল এবং বলল, ‘হে প্রতিপালক ! তুমি নিজ হাতে যা সৃষ্টি করেছ, যাকে বেহেশতে স্থান দিয়েছ, একটি মাত্র গুনাহের দরুন তার সমুদয় উজ্জ্বলতা পরিবর্তন করে দিলে?’ অতঃপর আল্লাহ্ ওহী প্রেরণ করে বলেন, ‘হে আদম! আমার উদ্দেশ্যে এই দিনটিতে, মাসের ১৩ তারিখ রোযা রাখ, ‘অতঃপর আদম (আঃ) সে দিন রোযা রাখলেন, তারপর তাঁর শরীরের এক-তৃতীয়াংশ সাদা হয়ে গেল। অতঃপর আল্লাহ পুনরায় ওহী প্রেরণ করলেন, ‘হে আাদম! আমার জন্য এ দিনটিতে মাসের ১৪ তারিখ রোযা রাখ’ তারপর তিনি সেদিন রোযা রাখলেন, তখন তাঁর শরীরের দুই -তৃতীয়াংশ সাদা হয়ে গেল। তারপর তার নিকট আল্লাহ পুনরায় ওহী প্রেরণ করলেন, ‘হে আাদম ! তুমি আমার উদ্দেশ্যে এই দিনটিতে ১৫ তারিখ রোযা রাখ, তখন তিনি সেদিন রোযা রাখলেন , তারপর তাঁর সমস্ত শরীর সাদা হয়ে গেল। অতঃপর এ দিনগুলোর নাম রাখা হয়েছে আইয়ামুল বীয অর্থাৎ সাদা দিবস। খতীব আলোচ্য হাদীসখানা হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা) এর সূত্রে বর্ণনা করেছেন।
[আলোচ্য হাদীসটিতে রোযার ফযীলত ও আইয়ামুল বীযের তাৎপর্য বর্ণনা করা হয়েছে। আইয়ামুল বীয আরবী শাবান মাসের অর্থে ১৩,১৪,ও ১৫ তারিখকে বলা হয়েছে। প্রতি বছর চান্দ্র মাসে এ তিনদিন রোযা রাখার বিশেষ ফযীলতের কথা আলোচ্য হাদীসটিতে আলোচনা করা হয়েছে।
আর রূহ বলতে হযরত জিবরাঈলকে বুঝয়, যিনি তাঁর পাখা দ্বারা ( ধারিত্রীকে) স্পর্শ করতে থাকেন। আর জলে, স্থলে, দন্ডায়মান, ঘুমন্ত ও নামাযীদের ওপর এ বলে সালাম বর্ষণ করতে থাকেন, “তোমার প্রতি শান্তি বর্ষিত হোক। হে মু‘মিন!’ আতঃপর যখন সূর্য উদিত হয় তখন জিবরাঈল ও তার সাথে অন্যান্য ফেরেশতা উর্ধ্বে আরোহণ করেন। তাঁদের সাথে আকাশসমূহের অধিবাসীদের সাক্ষাত হয় এবং তারা তাকে জিঙ্গাসা করে, ‘হে জিবরাঈল! করুনার আধার মহান ও মর্যাদাবান আল্লাহ্ ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু” উক্তিটির অন্তর্ভুক্তদের জন্য কি করেছেন? জবাবে জিবরাঈল বলেন, কণ্যাণ করেছেন। তারপর তার সাথে ফেরেশতাদের মধ্যে প্রধানদের সাক্ষাত হয় এবং তারা তাঁকে জিঙ্গাসা করে, ‘করুণাময় আল্লাহ্ রমযান মাসের রোযাদারদের জন্য কি করেছেন?’ হযরত জিবরাঈল (আ) জবাবে বলেন, “ভাল করেছেন।” তারপর জিবরাঈল এবং তাঁর সঙ্গী ফেরেশতাগন সিজদায় পতিত হন। তখন মহান ও মর্যাদাবান আল্লাহ্ বলেন, ‘হে আমার ফেরেশতাগণ! তোমরা তোমাদের মাথা উঠাও, আমি তোমাদেরকে সাক্ষী রাখতেছি। আমি নিশ্চয়ই রমযান মাসের রোযাদারদেরকে ক্ষমা করে দিয়েছি। শুধু সে ব্যক্তি ছাড়া, যার প্রতি সালাম করতে জিবরাঈল অস্বীকার করেছে।’ আর জিবরাঈল সে রাত্রে মদ্যপানে আসক্তব্যক্তি, অন্যায়ভাবে কর আদায়কারী ব্যক্তি, জাদুকর, দাবা খেলোয়াড় , বংশীবাদক ও পিতা-মাতার অবাধ্য ব্যক্তির প্রতি সালাম করে না, অতঃপর যখন ইদুল ফিতরের দিন আগমন করে, তখন ফেরেশতাগণ নেমে আসে এবং সকল রাস্তার মুখে দাড়িয়ে থাকে মহান ও মর্যাদাবান আল্লাহ্ বলেন হে মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর উম্মতগণ! করুণাময় প্রভুর দিকে অগ্রসর হও।’ অতঃপর যখন তারা নামাযের স্থানে হাজির হয় তখন মর্যাদাবান আল্লাহ্ এই বলে আহ্বান করেন, ‘হে আমার ফেরেশতাগণ! যে মজুর তার কাজ শেষ করে অবসর গ্রহণ করে তার প্রতিদান কি হতে পারে?” তারা আরয করে, হে আমাদের প্রতিপালক ! তার প্রতিদান তাকে পূর্ণ মজুরী দিয়ে দেওয়া। তখন আল্লাহ্ বলেন, “নিশ্চয়ই তারা আমার বান্দা ও বান্দাদের সন্তান-সন্ততি, আমি তাদেরকে রোযা রাখতে আদেশ করেছিলাম। অতঃপর তারা রোযা রেখেছে, আমার আদেশ মান্য করেছে ও আমার ফরয আদায় করেছে।” অতপর এক আহব্বানকারী এ বলে আহ্বান করে, “হে মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর উম্মত! তোমরা সৎ পথ প্রদর্শিত অবস্থায় ফিরে যাও। নিশ্চয়ই আমি তোমাদেরকে ক্ষমা করে দিয়েছি।” আলোচ্য হাদীসখানা হযরত আনাস (রা) -এর সূত্রে বর্ণনা করেছেন।
Leave a Reply