অনলাইন সীমান্তবাণী ডেস্ক : শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে হিজাব পরার অনুমতি দিয়েছে কর্ণাটক সরকার। গত মে মাসে বিধানসভার ভোটে জিতে মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার পরেই এ বিষয়টি বিবেচনার আশ্বাস দিয়েছিলেন কংগ্রেস নেতা সিদ্দারামাইয়া। অবশেষে কর্নাটকের মুখমন্ত্রী হিসেবে তিনি ঘোষণা দিলেন, বিজেপি সরকারের আমলে রাজ্যের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে মুসলিম ছাত্রীদের হিজাব পরার বিষয়ে যে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছিল তা প্রত্যাহার করা হলো। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, কে, কোথায়, কী পোশাক পরবেন, সেটা তার ব্যক্তিগত পছন্দ। বর্তমান কংগ্রেস করকারের সিদ্ধানের ফলে মুসকানের মতো ানেক নারী শিক্ষার্থীর আশা পুরণ হলো।
মাইসুরুতে শুক্রবার (২২ ডিসেম্বর) রাতে এক কর্মসূচিতে সিদ্দারামাইয়া বলেন, আর কোনো বাধা রইল না। এবার হিজাব পরে যে কোনো জায়গায় যাওয়া যাবে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে হিজাব পরার অধিকার সংক্রান্ত বিষয়টি এখন সুপ্রিম কোর্টে বিচারাধীন।
ফলে কর্নাটকের মুখ্যমন্ত্রীর ঘোষণা নিয়ে রাজনৈতিক বিতর্কের সম্ভবনা রয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে। যদিও আইন বিশেষজ্ঞদের একাংশ মনে করছেন, কর্নাটকের কংগ্রেস সরকার বিভিন্ন আইনি দিক খতিয়ে দেখেই বিজেপি সরকারের আমলে জারি করা ওই নির্দেশিকা প্রত্যাহার করেছে।
২০২২ সালের ১ জানুয়ারি কর্নাটকের উদুপিতে একটি প্রি-ইউনিভার্সিটিতে কয়েকজন হিজাব পরিহিত শিক্ষার্থীকে ক্লাসে বসতে বাধা দেওয়ার ঘটনা ঘটে। কলেজ উন্নয়ন সমিতির সভাপতি তথা স্থানীয় বিজেপি বিধায়ক রঘুপতি ভট্ট স্পষ্ট জানিয়ে দেন, হিজাব পরে ক্লাসে প্রবেশ করা যাবে না। রাজ্যজুড়ে ওই বিতর্ক দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। হিজাবের পাল্টা হিসেবে গেরুয়া উত্তরীয় পরে আন্দোলন শুরু করে একাধিক হিন্দুত্ববাদী সংগঠন।
কয়েক জায়গায় হিজাবের পক্ষে-বিপক্ষে আন্দোলনকারীরা মুখোমুখি হয়ে পড়েন। পুলিশের সঙ্গেও একাধিক সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। কয়েকটি জেলায় ১৪৪ ধারা জারি করা হয়। সব স্কুল-কলেজ অনির্দিষ্ট কালের জন্য বন্ধ করে দেওয়া হয়। এরপর ২০২২ সালের ২৬ জানুয়ারি কর্ণাটক সরকারের শিক্ষা দফতর এ বিষয়ে একটি বিশেষ কমিটি গঠন করে। ঘোষণা করা হয়, কমিটি নির্দিষ্ট সুপারিশ করার আগে পর্যন্ত ছাত্রীরা কেবলমাত্র ইউনিফর্ম পরেই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে আসতে পারবেন। হিজাব বা গেরুয়া উত্তরীয় কিছুই পরার অনুমতি নেই।
তৎকালীন বিজেপি সরকারের সেই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে উদুপিরর কয়েকজন ছাত্রী কর্ণাটক হাইকোর্টে রিট দায়ের করেন। তারা আদালতকে জানান, হিজাব পরা তাদের মৌলিক অধিকারের মধ্যে পড়ে। কোনোভাবেই তা বাতিল করা যাবে না। সে বছরের ১০ ফেব্রুয়ারি কর্ণাটক হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি ঋতুরাজ অবস্তির নেতৃত্বাধীন তিন বিচারপতির বেঞ্চ অন্তর্বর্তী রায়ে বলেন, যত দিন না রায় ঘোষণা হচ্ছে, কোনো শিক্ষার্থী ধর্মীয় প্রতীকমূলক কোনো পোশাক পরে সরকারি স্কুল-কলেজে আসতে পারবেন না।
Leave a Reply