অনলাইন সীমান্তবাণী ডেস্ক : নতুন করে আর কেউ বীর মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে তালিকাভুক্ত হওয়ার আবেদন করতে পারবেন না। তবে যেসব আবেদন ইতোমধ্যে গৃহীত হয়েছে সেগুলো থেকে যাচাইবাছাই শেষে অন্তর্ভুক্তির সুযোগ আছে। বীরাঙ্গনা হিসেবে স্বীকৃতির আবেদন এখনও নেওয়া হচ্ছে। তবে আগামী ৩০ ডিসেম্বরের মধ্যে সেটিও বন্ধ হয়ে যেতে পারে। এই তথ্য নিশ্চিত করে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়কমন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক জানান, বীরাঙ্গনাদের ক্ষেত্রে ৩০ডিসেম্বর শেষ তারিখ নির্ধারণ করলেও পরবর্তীতেও কিছু ছাড় দেওয়া হবে।
এই বছর ২২ মে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয় থেকে জানানো হয়, আর কেউ মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে তালিকাভুক্ত হতে আবেদন করতে পারবেন না। তার আগে ১৮ মে একটি গণবিজ্ঞপ্তি জারি করে জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিল (জামুকা)। জামুকার মহাপরিচালক জহুরুল ইসলাম রোহেলের সই করা বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিলের ৭৯তম সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী শুধু নারী বীর মুক্তিযোদ্ধা (বীরাঙ্গনা) ছাড়া অন্য কোনও ক্যাটাগরির মুক্তিযোদ্ধার গেজেটভুক্তির নতুন আবেদন করার সুযোগ নেই।
বর্তমানে দেশে এক লাখ ৯১ হাজার ৫৩২ জন সাধারণ বীর মুক্তিযোদ্ধা মাসিক সম্মানি ভাতা পেয়ে থাকেন। এরপরও এটাই চূড়ান্ত তালিকা তা বলার বাস্তবতা তৈরি হয়নি। গত দুই বছর ধরে তালিকাভুক্তদের যাচাইবাছাই শুরু হওয়ায় চূড়ান্ত তালিকার কাজ পিছিয়ে গেছে। ২০২১ সালে ডিজিটাল সিস্টেমে মুক্তিযোদ্ধার সম্মানি ভাতা বিতরণের সময় প্রায় ২১ হাজার মুক্তিযোদ্ধার কাগজপত্র যাচাই বাছাইয়ের প্রশ্ন ওঠে। সেই কাজ বিভিন্ন ধাপে সম্পন্ন হওয়ার কথা। এখনও সেটি চূড়ান্ত করা যায়নি।
কুড়িগ্রামের বীর মুক্তিযোদ্ধা মোক্তার হোসেন সরকার মুক্তিযুদ্ধের ৫০ বছর পরে তালিকাভুক্তির আবেদন করেন। জীবনের পরোয়া না করে গেরিলাযোদ্ধা হিসেবে সম্মুখ সমরে অংশে নেওয়ার দাবি করলেও তাকে এখন আর অন্তর্ভুক্ত করা সম্ভব নয় বলে জানিয়ে দিয়েছে মন্ত্রণালয়। মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হককে বিষয়টি অবহিত করলে তিনি বলেন, স্বাধীনতার ৫০ বছর পূর্ণ হওয়ার পর আমরা মুক্তিযোদ্ধার তালিকাভুক্ত হওয়ার আবেদন বন্ধ করে দিয়েছি। যেকোনও গ্রাম-ইউনিয়নের এত মুক্তিযোদ্ধা তালিকাভুক্ত হলেন, এক-দুইজন ৫০বছরের পরে এলেন সেটা খুব যৌক্তিক হয় না। আমাদের একটা চূড়ান্ত তালিকা তো করতে হবে। এছাড়া আমার মনে হয় এর একটা ইতি টানা দরকার। তবে বীরাঙ্গনাদের তালিকাভুক্তির বিষয়টি ৩০ ডিসেম্বর পর্যন্ত বললেও যৌক্তিক কারণে এই তারিখের পরেও আবেদন নেওয়া হবে।
রাজশাহীর সফুরা বয়সের কারণে নানা রোগে আক্রান্ত।সারাজীবন টানাটানিতে কাটানো এই নারী এখন অভাবের কারণে চিকিৎসাও নিতে পারেন না। তিনবেলা কবে খেয়েছেন মনে নেই। এর মধ্যে আছে সবার অবজ্ঞা-অবহেলা। তিনি একজন বীরাঙ্গনা মুক্তিযোদ্ধা। তার কথা এখন প্রায় অনেকেই জানেন। তিনি তার অধিকার বুঝে নিতে চান। সারাজীবনের লাঞ্ছনার পরে এটাই তার সবচেয়ে বড় পাওয়া হবে। শুধু সফুরাই নন, একই অবস্থা আসমা-খাদিজা-শাহরুনসহ অনেক বীরাঙ্গনার। কোনও না কোনও কারণে এখনও তাদের তালিকাভুক্তি ঠেকে আছে।
জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিলের ৭৩তম সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ২০২১ সালের ৬ জুন গেজেট প্রকাশ করে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়। তাতে উল্লেখ আছে ২০১৫ সালের ১২ অক্টোবর থেকে এ পর্যন্ত ৪১৬ জন বীরাঙ্গনা মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি পেয়েছেন। কিন্তু ২০২১ সালের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী বর্তমান বীরাঙ্গনার সংখ্যা ৪৩৮ জন করা হয়।
বীরাঙ্গনাদের তালিকাভুক্তির বিষয়টি সময় দিয়ে বেধে দেওয়া ঠিক হবে না উল্লেখ করে ‘নারীপক্ষ’ এর প্রতিষ্ঠাতা সদস্য শিরীন হক বলেন, মুক্তিযুদ্ধের কয়েক দশক পরে বীরাঙ্গনারা মুখ খুলতে শুরু করেছেন। আমরাও তাদের নিয়ে কাজ করতে করতে ৪০ বছর পার করে দিয়েছি। ফলে এটা এখন সময় দিয়ে বেঁধে না দেওয়ার অনুরোধ করছি। তিনি বলেন, নির্যাতনের শিকার নারীদের বীরাঙ্গনা উপাধি দেওয়া হয়েছিল ১৯৭১ সালের ২২ ডিসেম্বর। তখনকার সমাজকল্যাণ মন্ত্রী এই উপাধি দিয়েছিলেন। তিনি চেয়েছিলেন, ওই নারীদের যেন কেউ অপমান না করে। কিন্তু পরবর্তী সময়ে দেখা গেল, বীরাঙ্গনা একটা গালিতে পরিণত হয়েছে। এই লড়াই সময় বেঁধে দিয়ে বোঝা যাবে না।
Leave a Reply