অনলাইন সীমান্তবাণী ডেস্ক : শ্বাসরুদ্ধকর ম্যাচ জিতে উৎসব চলছে ব্রিসবেনের গ্যাবার গ্যালারিতে। প্রতিপক্ষের সঙ্গে হাত মিলিয়ে বাংলাদেশ দলের ক্রিকেটাররা জয়ের আনন্দ করতে করতেই মাঠ ছাড়লেন। এমনকি মাঠকর্মীরাও উইকেট পরিচর্যা করতে মাঠে ঢুকে গেছেন। এমন অবস্থায় থার্ড আম্পায়ার জানালেন, মোসাদ্দেকের শেষ বলটি ‘নো’! বাংলাদেশের গ্যালারি তখন স্তব্ধ। অন্যদিকে জিম্বাবুয়ের ক্রিকেটার ও দর্শকরা আরও একটি সুযোগে আনন্দনৃত্য করছেন! অবশ্য দারুণ এই সুযোগটি কাজে লাগাতে পারেনি পাকিস্তানকে হারানো জিম্বাবুয়ে। আজ (রবিবার) গ্যাবায় সিকান্দার রাজা-শন উইলিয়ামসদের হারিয়ে বিশ্বকাপের সেরা সাফল্য তুলে নিলো সাকিব আল হাসানরা।
১৫ বছর আগে ২০০৭ সালে প্রথম টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে মূল পর্বে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে হারিয়েছিল বাংলাদেশ। লম্বা সময় পর চলতি বিশ্বকাপের প্রথম ম্যাচে নেদারল্যান্ডসকে হারিয়ে সেই খরা কাটিয়েছে লাল-সবুজ জার্সিধারীরা। আর এখন জিম্বাবুয়েকে হারিয়ে বিশ্বকাপের মঞ্চে দুই জয়ের সাফল্যে ভাসছে গোটা দল। এই জয়ে ৩ ম্যাচে ৪ পয়েন্ট নিয়ে টেবিলের দুই নম্বরে উঠে এসেছে বাংলাদেশ। ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে একটি ম্যাচ জিততে পারলে সেমিফাইনাল খেলার সম্ভাবনা থাকবে সাকিবদের।
শক্তিমত্তার বিচারে বাংলাদেশ এগিয়ে থাকলেও সাম্প্রতিক সময়ে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষেও কঠিন লড়াইয়ের মুখোমুখি হতে হচ্ছে। অথচ এক বছর আগেও জিম্বাবুয়েকে ঘরে-বাইরে যেকোনও কন্ডিশনে বলে-কয়ে হারতো লাল-সবুজ জার্সিধারীরা। কিন্তু এখন চিত্রটা পাল্টেছে। চোখে চোখ রেখে কথা বলে শিখে গেছে সিকান্দার রাজারা! রবিবার শেষ বল পর্যন্ত লড়াই করেছে তারা। ব্যাটিং ব্যর্থতার জেরে বাংলাদেশকে এই ম্যাচটিতে কঠিন সংগ্রাম করে জিততে হয়েছে। আগের দুই ম্যাচের মতো এই ম্যাচেও ব্যাটিং অ্যাপ্রোচ প্রত্যাশা পূরণ করতে পারেনি। তারপরও সাম্প্রতিক বাস্তবতায় জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে এই জয়টি নিশ্চিতভাবেই অনেক বড় জয়।
মূল নাটকীয়তা শুরু হয় ম্যাচের ১৯তম ওভারে। শেষ দুই ওভারে জিম্বাবুয়ের প্রয়োজন ছিল ২৬ রানের। প্রথম তিন বলে রায়ান বার্ল ও শন উইলিয়ামস ৭ রান তুলে ফেলেন। তিন নম্বর বলে সাকিবকে চার মেরে চতুর্থ বলে সিঙ্গেল নিতে চেয়েছিলেন উইলিয়ামস। কিন্তু সাকিবের অবিশ্বাস্য এক ফিল্ডিংয়ে কাটা পড়েন তিনি। সাকিবের দুর্দান্ত ফিল্ডিংয়ে সরাসরি থ্রোয়ে উইলিয়ামস ৪২ বলে ৬৪ রানে মাঠ ছাড়েন। তার আউটের পরই ম্যাচে ফেরে বাংলাদেশ। মূলত সাকিবের এই রান আউটই ম্যাচের মোড় ঘুরিয়ে দিয়েছে।
এরপর শেষ ওভারে জিততে জিম্বাবুয়ের প্রয়োজন ১৬ রানের। বিশেষজ্ঞ বোলারদের সবার কোটাই শেষ হয়ে গেছে। সাকিব বল তুলে দিলেন অফ স্পিনার মোসাদ্দেকের হাতে। তিন ও চার নম্বরে ওভারে অতিরিক্ত ৪ ও এনগারাভার দারুণ এক ছক্কায় ম্যাচের নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার চেষ্টা করে জিম্বাবুয়ে। কিন্তু পঞ্চম বলে নুরুল হাসান সোহান ক্ষীপ্তগতিতে স্টাম্পিং করলে জয়ের সম্ভাবনা তৈরি হয় বাংলাদেশ। তখন শেষ বলে প্রয়োজনীয় ৫ রান তুলতে সজোরে ব্যাট চালান ব্লেসিং মুজারাবানি। কিন্তু স্টাম্পিং হয়ে সাজঘরের পথ ধরেন। ৪ রানের জয় নিশ্চিত করে মাঠ থেকে উঠে যান খেলোয়াড়রা। কিন্তু রিপ্লেতে দেখা যায়, বল স্টাম্প পেরোনোর আগেই সোহান বল ধরে স্টাম্পিং করেন, যা আইসিসির আইন অনুযায়ী ‘নো বল’।
ফলে নতুন করে ক্রিকেটারদের মাঠে নামতে হয়। শেষ বলে তখন টান টান উত্তেজনা। নতুন জীবন পাওয়া মুজারাবানি এবারও ব্যাটে বল সংযোগ করতে ব্যর্থ হয়েছেন। বাংলাদেশের স্বস্তির জয়ে নতুন করে আবারও গ্যালারিতে লাল-সবুজের উৎসব হয়। বিশ্বকাপে মঞ্চে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে এই জয়টি নিশ্চিতভাবেই ড্রেসিং রুমে আত্মবিশ্বাস বাড়াবে সাকিবদের!
বাংলাদেশের ম্যাচ জয়ের নায়ক তাসকিন আহমেদ। তার দারুণ বোলিংয়েই মূলত জিম্বাবুয়ের ব্যাটাররা দিশা হারায়। ম্যাচসেরার পুরস্কার নেওয়ার সময় তাসকিন জানিয়ে গেছেন, এমন কিছু এর আগে কখনও দেখেননি তিনি।
জয় নিশ্চিত করে মাঠ ছাড়ার পর ‘নো’ বলের সংকেত। ওই হতাশা নিয়ে আবার মাঠে নেমে পারফর্ম করা এবং চূড়ান্ত জয় পাওয়া- ক্রিকেট ইতিহাসেই তো এই ঘটনা বিরল!
Leave a Reply