অনলাইন সীমান্তবাণী ডেস্ক : শ্রীলঙ্কায় আগাম পার্লামেন্ট নির্বাচনে দেশটির নতুন বামপন্থি প্রেসিডেন্ট অনুরা কুমারা দিশানায়েকের নির্বাচনী জোট ন্যাশনাল পিপলস পাওয়ার (এনপিপি) বড় জয় পেয়েছে। নতুন প্রেসিডেন্ট শপথ নেওয়ার মাত্র সাত সপ্তাহ পর দেশটিতে পার্লামেন্ট নির্বাচনের এই ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়।
মূলত দেশের অর্থনৈতিক সংকট সৃষ্টির জন্য বড় দলগুলোকে প্রত্যাখ্যান করেছে ভোটাররা। বার্তাসংস্থা এএফপির বরাত দিয়ে শুক্রবার (১৫ নভেম্বর) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভি।
একজন আত্ম-স্বীকৃত মার্কসবাদী দিশানায়েক দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াই করার এবং চুরি হওয়া সম্পদ পুনরুদ্ধারের প্রতিশ্রুতি দিয়ে গত সেপ্টেম্বরের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে জয়লাভ করেন।
মূলত শ্রীলঙ্কার পার্লামেন্টের ২২৫ আসনের মধ্যে ১৯৬ জন সংসদ সদস্য সরাসরি নির্বাচিত হয়ে থাকেন। আর বাকিদের আনুপাতিক প্রতিনিধিত্বের হিসাবে ভোটের হারের ওপর ভিত্তি করে রাজনৈতিক দলগুলো মনোনীত করে থাকে।
বার্তাসংস্থা রয়টার্স বলছে, দিশানায়েকের মার্কসবাদী ন্যাশনাল পিপলস পাওয়ার (এনপিপি) জোট সরাসরি নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়া ১৯৬টি আসনের মধ্যে ১৩৭টি আসন জিতেছে। অর্থাৎ দুই-তৃতীয়াংশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়েছে তারা। তবে স্থানীয় মিডিয়ার ধারণা, আনুপাতিক আসন বণ্টন ব্যবস্থার অধীনে আরও আসন বন্টন হলে ২২৫ সদস্যের সংসদে তাদের আসনের সংখ্যা ১৫০ ছাড়িয়ে যাবে।
২০২০ সালের পার্লামেন্ট নির্বাচনে মাত্র তিনটি আসনে জেতা এনপিপি এবারের নির্বাচনে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেল।
সংবাদমাধ্যম বলছে, শ্রীলঙ্কা পার্লামেন্টের আসন সংখ্যা ২২৫টি। এর মধ্যে ১৯৬ আসনে সরাসরি ভোট হয়। বাকি ২৯টি আসন প্রতিদ্বন্দ্বী রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে প্রাপ্ত ভোটের অনুপাতের ভিত্তিতে বণ্টন করা হয়। অর্থাৎ, সংখ্যাগরিষ্ঠতার জন্য প্রয়োজন ১১৩টি আসন।
চলতি বছরের সেপ্টেম্বরে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ৪২.৩ শতাংশ ভোট পেয়ে জিতেছিলেন অনুরা। আর ৩২.৭ শতাংশ ভোট পেয়ে দ্বিতীয় স্থানে ছিলেন এসজেবির নেতা সাজিথ প্রেমদাসা। বিদায়ী প্রেসিডেন্ট তথা ইউনাইটেড ন্যাশনাল পার্টির (ইউএনপি) প্রধান রনিল বিক্রমাসিংহে ১৭.২ শতাংশ ভোট পেয়ে তৃতীয় হয়েছিলেন।
এবারের পার্লামেন্ট নির্বাচনে রনিলের ইউএনপি কয়েকটি ছোট দলের সঙ্গে নিউ ডেমোক্র্যাটিক ফ্রন্ট (এনডিএফ) জোট গড়ে লড়তে নেমেছিল। পাশাপাশি দুই সাবেক প্রেসিডেন্ট— গোটাবায়া রাজাপাকশে এবং তার ভাই মাহিন্দার নেতৃত্বাধীন এসএলপিপি ভোটে অংশ নিয়েছিল।
শ্রীলঙ্কায় এবারের ভোটে ৮ হাজার ৮৮০ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছেন। ভোটারের সংখ্যা পৌনে দুই কোটির বেশি। বৃহস্পতিবারের এই ভোটে প্রায় ৬৫ শতাংশ ভোট পড়েছে।
প্রসঙ্গত, উচ্চ মূল্যস্ফীতি, খাদ্য এবং জ্বালানির ঘাটতি ঘিরে ২০২২ সালে দ্বীপ রাষ্ট্র শ্রীলঙ্কায় ব্যাপক রাজনৈতিক সংকট তৈরি হয়। দেশটিতে জনতার আন্দোলনের মুখে পদত্যাগ করে পালিয়ে যেতে বাধ্য হন তৎকালীন প্রেসিডেন্ট গোটাবায়া রাজাপাকসে। পরে রনিল বিক্রমাসিংহের নেতৃত্বে দেশটিতে নতুন সরকার গঠন করা হয়।
দেশটির অর্থনৈতিক সংকট মোকাবিলায় আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) দ্বারস্থ হয় গোটাবায়া সরকার। পরে শ্রীলঙ্কার জন্য ৩ বিলিয়ন ডলারের একটি বেলআউট প্যাকেজ চূড়ান্ত করে আইএমএফ। এরপরও দেশটিতে সাধারণ জনগণের দুর্ভোগ তেমন লাঘব হয়নি।
Leave a Reply