22 Feb 2025, 10:43 pm

সাগর পাড়ি দিয়ে ইন্দোনেশিয়ায় পৌঁছেছে ৪০০ রোহিঙ্গা

নিজস্ব প্রতিবেদকঃ

অনলাইন সীমান্তবাণী ডেস্ক :  সমুদ্র পাড়ি দিয়ে আরও প্রায় ৪০০ জন জাতিগত রোহিঙ্গা শরণার্থী ইন্দোনেশিয়ায় পৌঁছেছে। রোববার (১০ ডিসেম্বর) বিপুল সংখ্যক এসব রোহিঙ্গাকে বহনকারী জরাজীর্ণ নৌকা দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার এই দেশটির আচেহ প্রদেশে পৌঁছায়।

সাম্প্রতিক সময়ে এই দেশটিতে মায়ানমারের মুসলিম সংখ্যালঘুদের আগমন ব্যাপকভাবে বেড়েছে। রোববার এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে বার্তাসংস্থা রয়টার্স।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আনুমানিক ৪০০ জন জাতিগত রোহিঙ্গাকে বহনকারী জরাজীর্ণ নৌকা রোববার ইন্দোনেশিয়ার আচেহ প্রদেশে পৌঁছেছে বলে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার এই দেশটির প্রাদেশিক মৎস্যজীবী সম্প্রদায়ের প্রধান নিশ্চিত করেছেন।

অবশ্য রোববার বিপুল সংখ্যক এসব রোহিঙ্গার পৌঁছানোর আগে জাতিসংঘের শরণার্থী সংস্থা (ইউএনএইচসিআর) বলেছিল, গত নভেম্বর থেকে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর ১২০০ জন সদস্য মায়ানমার থেকে ইন্দোনেশিয়ার উপকূলে এসে পৌঁছেছে।

আচেহ প্রদেশের মৎস্যজীবী সম্প্রদায়ের প্রধান মিফতাহ কাট আদে বলেছেন, রোববার ভোরে দুটি নৌকা আচেহ প্রদেশে এসে পৌঁছেছে। এর একটি পিডি জেলায় এবং অন্যটি আচেহ বেসার জেলায়। প্রতিটি নৌকায় আনুমানিক ২০০ জন করে রোহিঙ্গা ছিল বলেও জানান তিনি।

স্থানীয় সামরিক কর্মকর্তা অ্যান্ডি সুসান্তো বলেছেন, প্রায় ১৮০ জন রোহিঙ্গা রোববার স্থানীয় সময় ভোর ৪ টায় পিডিতে এসে পৌঁছেছেন। পরে আরও তথ্য সংগ্রহের জন্য ঘটনাস্থলে যান কর্মকর্তারা।

সুসান্তো নিশ্চিত করেছেন, সামরিক বাহিনী রোহিঙ্গাদের বহনকারী দ্বিতীয় একটি নৌকা সম্পর্কেও অবগত রয়েছে। তবে ওই নৌকাটি ঠিক কোথায় এসে পৌঁছেছে বা কতজন সেই নৌকায় অবস্থান করছে সে সম্পর্কে তাদের কাছে কোনও তথ্য নেই।

ইন্দোনেশিয়ার প্রেসিডেন্ট জোকো উইদোদো গত শুক্রবার এক বিবৃতিতে বলেন, নৌকায় করে রোহিঙ্গাদের আগমন সাম্প্রতিক সময়ে বৃদ্ধির পেছনে মানব পাচারের মতো বিষয় রয়েছে বলে তিনি সন্দেহ করেন। আর তাই এই সমস্যা মোকাবিলায় আন্তর্জাতিক সংস্থার সাথে কাজ করার প্রতিশ্রুতিও দেন তিনি।

রয়টার্স বলছে, ইন্দোনেশিয়া ১৯৫১ সালের ইউনাইটেড নেশনস কনভেনশন অন রিফিউজিতে স্বাক্ষরকারী দেশ নয়। কিন্তু দেশটির উপকূলে শরণার্থীরা এসে পৌঁছালে তাদের আশ্রয় দেওয়ার ইতিহাস দেশটির রয়েছে।

কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে বিপুল সংখ্যায় শরণার্থীদের আগমন সোশ্যাল মিডিয়ায় ব্যাপক প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি করেছে এবং আচেহ প্রদেশের স্থানীয় বাসিন্দারা কিছু শরণার্থীকে ফেরতও পাঠিয়েছে। মূলত আচেহ হচ্ছে ইন্দোনেশিয়ার সবচেয়ে পশ্চিমাঞ্চলীয় অঞ্চল যেখানে শরণার্থীদের বহনকারী বেশিরভাগ নৌকা অবতরণ করে থাকে।

বস্তুত, মায়ানমারের সংখ্যালঘু জাতিসত্ত্বা রোহিঙ্গাদের বিশ্বের সবচেয়ে নিপীড়িত জনগোষ্ঠীগুলোর মধ্যে একটি বলে বিবেচনা করা হয়। ২০১৭ সালের পর এই ধারণা আরও বেশি প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।

২০১৭ সালে মিয়ানমারের আরাকান রাজ্যে সেনাবাহিনীর হত্যা, ধর্ষণ, লুটপাট, অগ্নিসংযোগের সামনে টিকতে না পেরে লাখ লাখ রোহিঙ্গা সীমান্ত পাড়ি দিয়ে বাংলাদেশসহ আশপাশের বিভিন্ন দেশে পালাতে শুরু করে।

বাংলাদেশ সরকারের হিসাব অনুযায়ী, প্রায় ১০ লাখ রোহিঙ্গা মায়ানমার থেকে পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছেন।

রয়টার্স বলছে, প্রতি বছর নভেম্বর থেকে এপ্রিলের মধ্যে যখন সমুদ্র শান্ত হয়, তখন মায়ানমারের নির্যাতিত সংখ্যালঘু রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর সদস্যরা কাঠের নৌকায় করে প্রতিবেশী থাইল্যান্ড এবং মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ বাংলাদেশ, মালয়েশিয়া ও ইন্দোনেশিয়ায় পাড়ি জমিয়ে থাকে।

 

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *