26 Nov 2024, 04:20 am

সাবেক এমপিদের নামে আনা বিলাস বহুল ৫০ টি গাড়ী পড়ে রয়েছে চট্টগ্রাম বন্দরে

নিজস্ব প্রতিবেদকঃ

বশির আলমামুন, চট্টগ্রাম : শুল্কমুক্ত সুবিধায় আনা ৫০টি বিলাসবহুল গাড়ি এখন সাবেক সংসদ সদস্যদের গলার কাঁটা। এসব গাড়ি চট্টগ্রাম বন্দরে পৌঁছানোর আগেই জাতীয় সংসদ বিলুপ্ত ঘোষণা করা হয়। ফলে গাড়িগুলো এখন ছাড় নিতে হলে অন্তত ছয় কোটি টাকা করে শুল্ক দিতে হবে। এগুলোর আমদানি মূল্য পড়েছে কোটি টাকার মধ্যে।

চট্টগ্রাম কাস্টমস হাউজের কর্মকর্তারা বলেছেন, সংসদ সদস্য না থাকায় তারা এখনও আর শুল্কমুক্ত গাড়ি ছাড়ের সুবিধা পাবেন না। এসব গাড়ি ছাড় নিতে হলে নির্ধারিত শুল্ক পরিশোধ করতে হবে। তবে চার হাজার সিসির প্রতিটি গাড়িতে শুল্ক দিতে হবে ৮২৬ শতাংশ হারে।

মঙ্গলবার (২৭ আগস্ট) বিকালে বন্দরের কার শেডে গিয়ে দেখা গেছে, শেডের একটি লাইনে বিলাসবহুল গাড়িগুলো সারিবদ্ধভাবে রাখা হয়েছে। এর বাইরেও এখানে রয়েছে আমদানি করা বিপুল পরিমাণ গাড়ি।

শেডের নিরাপত্তায় নিয়োজিত কর্মচারীরা জানান, ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের কয়েকদিন আগে কয়েকজন সংসদ সদস্য গাড়ি খালাস নিয়েছেন। এর মধ্যে ছিলেন সাবেক সংসদ সদস্য ক্রিকেটার সাকিব আল হাসান, সাবেক সংসদ সদস্য চিত্রনায়ক ফেরদৌস আহমেদসহ কয়েকজন। তবে সাবেক সংসদ সদস্য ব্যারিস্টার সৈয়দ সায়েদুল হক সুমনসহ অনেক মন্ত্রী-এমপি গাড়ি ছাড় করাতে পারেননি।

কাস্টমস সূত্র জানিয়েছে, শুল্ক সুবিধার আওতায় বেশিরভাগ গাড়ি জাপান ও সিঙ্গাপুর থেকে আমদানি করা হয়েছে। টয়োটা ল্যান্ড ক্রুজার, টয়োটা জিপ, টয়োটা এলসি স্টেশন ওয়াগট মডেলের এসব গাড়ির ইঞ্জিন ক্যাপাসিটি চার হাজার সিসি। সংসদ সদস্যরা প্রতি পাঁচ বছরে একবার শুল্কমুক্ত সুবিধায় গাড়ি আমদানি করতে পারেন। এ ধরনের গাড়ির ওপর কর ৮১০ শতাংশ পর্যন্ত হতে পারে; তবে এমপিদের তা দিতে হয় না। চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেটে সংসদ সদস্যদের গাড়ির ওপর ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপের প্রস্তাব করা হয়েছিল। শেষ পর্যন্ত প্রস্তাবটি গ্রহণ করা হয়নি। আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের কয়েকদিন পর জাতীয় সংসদ বিলুপ্ত ঘোষণা করা হয়। এর ফলে শুল্কমুক্ত সুবিধাও বাতিল হয়ে যায়।

কাস্টমস কর্মকর্তারা বলছেন, শুল্কমুক্ত সুবিধার কাগজপত্র দিয়ে এসব গাড়ি আনা হলেও সংসদ ভেঙে দেওয়ায় আর সেই সুবিধা পাবেন না তারা। এখন স্বাভাবিক শুল্ককর দিয়ে গাড়িগুলো খালাস করতে হবে।

কাস্টমসের একটি সূত্র জানিয়েছে, শুল্কমুক্ত সুবিধার আওতায় গাড়িগুলো আমদানি করেছেন সাবেক ডেপুটি স্পিকার শামসুল হক টুকু, সাবেক মন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাক ও মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া, সাবেক তথ্য প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ আলী আরাফাত, ক্রিকেটার সাকিব আল হাসান, সাবেক সংসদ সদস্য চিত্রনায়ক ফেরদৌস, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সাবেক সিনিয়র সচিব নেত্রকোনার সাবেক সংসদ সদস্য সাজ্জাদুল হাসান, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সাবেক সংসদ সদস্য এস এ কে একরামুজ্জামান, ফয়জুর রহমান, সিরাজগঞ্জের চয়ন ইসলাম, জান্নাত আরা হেনরি, নাটোরের আবুল কালাম, সিদ্দিকুর রহমান পাটোয়ারী, বগুড়ার মজিবুর রহমান মঞ্জু, রেজাউল করিম তানসেন, টাঙ্গাইলের অনুপম শাহজাহান জয়, হবিগঞ্জের ব্যারিস্টার সৈয়দ সায়েদুল হক সুমন, সুনামগঞ্জের রনজিৎ সরকার, ড. সাদিক, গাইবান্ধার আবুল কালাম আজাদ, বিএনপি থেকে আওয়ামী লীগে যোগ দেওয়া সাবেক এমপি ব্যারিস্টার শাহজাহান ওমর, যশোরের নওয়াব আলী জোয়ার্দার, ঝিনাইদহের নাসের শাহরিয়ার জাহিদি, লক্ষ্মীপুরের মাসুদ উদ্দিন চৌধুরী এবং দিনাজপুরের মুহাম্মদ জাকারিয়া।

এ ছাড়া সাবেক এমপিদের মধ্যে গাড়ি আমদানি করেছেন আব্দুল মোতালেব, মোহাম্মদ গোলাম ফারুক, শাহ সরওয়ার কবির, এবিএম আনিসুজ্জামান, সাদ্দাম হোসাইন পাভেল, এস এম আল মামুন, আক্তারুজ্জামান, মো. সাইফুল ইসলাম, এস এম কামাল হোসেন, মাহমুদ হাসান রিপন, মুজিবুর রহমান, এস এম আতাউল হক, মাহমুদুল হক সায়েম, মো. মতিউর রহমান, মো. তৌহিদুজ্জামান, মোহাম্মদ আব্দুল ওয়াহেদ ও সিদ্দিকুল আলম। সংরক্ষিত আসনের সাবেক সদস্যদের মধ্যে গাড়ি আমদানি করেছেন তারানা হালিম, সানজিদা খানম, নাসিমা জামান ববি, খালেদা বাহার বিউটি, রুনু রেজা ও সাহিদা তারেক দিপ্তি।

গাড়ি আমদানিকারক সংগঠন বাংলাদেশ রিকন্ডিশন্ড ভেহিকেলস ইমপোর্টার্স অ্যান্ড ডিলারস অ্যাসোসিয়েশনের (বারভিডা) সভাপতি মো. হাবিব উল্লাহ ডন বলেন, ‘শুল্কমুক্ত সুবিধায় সংসদ সদস্যদের আমদানি করা গাড়িগুলো বন্দর থেকে ছাড় দিচ্ছে না কাস্টমস। সংসদ বহাল না থাকায় কাস্টমস শুল্কমুক্ত সুবিধায় গাড়ি ছাড় দিচ্ছেন না। গাড়িগুলো চার হাজার সিসির। এগুলোতে ৮২৬ শতাংশ শুল্ক দিতে হবে। এসব গাড়ি কোটি টাকার মধ্যে কেনা পড়লেও এখন শুল্ক দিতে হবে সাড়ে পাঁচ থেকে ছয় কোটি টাকা। তবে এত টাকা শুল্ক দিয়ে এসব গাড়ি তারা খালাস নেবেন কিনা তা এখন দেখার বিষয়।’

এ প্রসঙ্গে চট্টগ্রাম বন্দরের সচিব ওমর ফারুক বাংলা বলেন, ‘চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে বিভিন্ন সময় গাড়ি আমদানি করা হয়। ইতোমধ্যে ৫০টি বিলাসবহুল গাড়ি বন্দরে এসেছে। এগুলোর মধ্যে কিছু কার শেডে, বাকিগুলো বন্দরের ভেতর মাল্টিপল শেডে রক্ষিত আছে। সিঅ্যান্ডএফ এজেন্টের মাধ্যমে আমদানি করা হয়েছে। তবে ভিআইপিদের নামে কতটি গাড়ি আমদানি করা হয়েছে, তার সঠিক তথ্য আমার কাছে নেই।’

এ বিষয়ে চট্টগ্রাম কাস্টমস হাউজের কমিশনার মোহাম্মদ ফাইজুর রহমান বলেন, ‘সংসদীয় আসনে এমপিদের কার্যক্রম পরিচালনার জন্য এ সুবিধা দিয়ে আসছিল সরকার। বর্তমানে সংসদ ভেঙে দেওয়ায় তা শুল্কমুক্ত সুবিধায় খালাসের সুযোগ নেই। আইন অনুযায়ী, স্বাভাবিক হারে শুল্ককর পরিশোধ করেই খালাসের অপেক্ষায় থাকা গাড়ি ছাড়িয়ে নিতে হবে। সম্প্রতি যেসব গাড়ি খালাস হয়েছে, তা ৬ আগস্টের আগে শুল্কায়ন কার্যক্রম সম্পন্ন ছিল। ফলে আইনিভাবে তা আটক করার সুযোগ ছিল না। তবে যেসব গাড়ি ৬ আগস্টের পরে আমদানি হয়েছে, তা খালাসের সুযোগ নেই। শুল্ককর দিয়েই নিতে হবে।’

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

  • Visits Today: 13461
  • Total Visits: 1313299
  • Total Visitors: 4
  • Total Countries: 1668

আজকের বাংলা তারিখ

  • আজ মঙ্গলবার, ২৬শে নভেম্বর, ২০২৪ ইং
  • ১১ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ (হেমন্তকাল)
  • ২৩শে জমাদিউল-আউয়াল, ১৪৪৬ হিজরী
  • এখন সময়, ভোর ৪:২০

Archives

MonTueWedThuFriSatSun
    123
252627282930 
       
15161718192021
293031    
       
  12345
2728     
       
     12
3456789
10111213141516
17181920212223
31      
  12345
6789101112
13141516171819
20212223242526
27282930   
       

https://youtu.be/dhqhRb9y018