অনলাইন সীমান্তবাণী ডেস্ক : চলতি বছরের হজ কার্যক্রম উদ্বোধন করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শুক্রবার (১৯ মে) বেলা ১১টায় রাজধানীর আশকোনা হজ ক্যাম্পে এ কার্যক্রম উদ্বোধন করেন তিনি। উদ্বোধন শেষে হজযাত্রীদের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় করেন প্রধানমন্ত্রী।
অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সরকার ডিজিটাল ব্যবস্থা নেওয়ায় হজ ব্যবস্থাপনা অনেকটাই সহজ হয়েছে। এতে হাজীদের আর দুর্ভোগ পোহাতে হয় না।
শেখ হাসিনা বলেন, বিএনপি-জামায়াত জোট আমলে বাংলাদেশে ইসলামের নামে মানুষ হত্যা, খুন, বোমাবাজি ছিল নিত্য-নৈমিত্তিক বিষয়। আমরা সেই ভীতিকর অবস্থা থেকে দেশকে মুক্ত করেছি। শান্তির ধর্ম ইসলামে সন্ত্রাসবাদ ও জঙ্গিবাদের কোনও স্থান নেই।
তিনি বলেন, বিএনপি-জামায়াত আমলের সব অব্যবস্থাপনা কাটিয়ে আমরা হজ ব্যবস্থাপনায় আমূল পরিবর্তন এনেছি। এর ফলে প্রতিবছর হজযাত্রীর সংখ্যা বেড়ে চলেছে। ২০০৬ ও ২০০৭ সালে হজযাত্রীর সংখ্যা ছিল যথাক্রমে ৪৭ হাজার ৯৮৩ জন, ৪৫ হাজার ৭৬৩ জন। আর এ বছর হজযাত্রীর সংখ্যা ১ লাখ ২২ হাজার ২২১ জন। হজযাত্রীর সংখ্যা বৃদ্ধির আরও কারণ হলো, আমরা বাংলাদেশকে সুদৃঢ় অর্থনৈতিক ভিত্তির ওপর দাঁড় করাতে পেরেছি, মানুষের আয় ও জীবন-মান বৃদ্ধি পেয়েছে।
উপস্থিত হজযাত্রীদের উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সদ্য স্বাধীন বাংলাদেশে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এই হজ ব্যবস্থাপনার উন্নয়নে বিভিন্নমুখী পদক্ষেপ নিয়েছিলেন। কম খরচে হজ পালনের জন্য তিনি হিজবুল বাহার জাহাজ ক্রয় করেন এবং বাংলাদেশ থেকে সমুদ্রপথে হজযাত্রী প্রেরণ করেন। দুঃখের বিষয়, জিয়াউর রহমান ক্ষমতায় এসে এই হিজবুল বাহার জাহাজকে প্রমোদতরি বানিয়েছিলেন।
তিনি বলেন, জাতির পিতা ইসলামিক ফাউন্ডেশন ও মাদ্রাসা বোর্ড প্রতিষ্ঠা করেন। জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমের উন্নয়ন, সম্প্রসারণ ও সৌন্দর্য বৃদ্ধি করেন। তাবলীগ জামাতের জন্য কাকরাইল মসজিদে জমি দান করেন। টঙ্গীর তুরাগ নদীর তীরে বিশ্ব ইজতেমার জন্য জায়গা বরাদ্দ দেন। বেতার ও টেলিভিশনের অনুষ্ঠান শুরু ও সমাপ্তিতে কোরআন তিলাওয়াতের প্রচলন করেন। তিনিই প্রথম আইন করে মদ নিষিদ্ধ করেন; ঘোড়দৌড় ও জুয়া বন্ধ করেন। যে মদের লাইসেন্স বঙ্গবন্ধু বন্ধ করে দিয়েছিলেন তা জিয়ার আমলে উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়।
তিনি বলেন, অতীতে হজ পালনে দুর্ভোগ, হজের অব্যবস্থাপনা, মধ্যস্বত্বভোগীদের দৌরাত্ম্য, হজযাত্রীদের হয়রানি, ভিসা জটিলতা, ফ্লাইট বিপর্যয় ইত্যাদি সমস্যা ছিল নিত্যনৈমিত্তিক। আমরা এ সমস্যা দূর করতে ‘ই-হজ ব্যবস্থাপনা’ প্রবর্তন করেছি।
ই-হজ ব্যবস্থাপনার আওতায় হজযাত্রীদের প্রাক-নিবন্ধন, নিবন্ধন, রিফান্ড, মক্কা রোড সার্ভিস, ই-হেলথ, ই-ভিসা, ফ্লাইট, হেল্পডেস্ক, কল সেন্টার, মোবাইল অ্যাপ, এজেন্সি প্রোফাইল ব্যবস্থাপনাসহ বিভিন্ন কার্যক্রম সম্পাদিত হয়েছে। হজ বিষয়ক ওয়েব পোর্টাল এবং হজযাত্রীদের সেবা প্রদানকারী মোবাইল অ্যাপস প্রস্তুত করা হয়েছে। এর ফলে হজযাত্রীরা তাদের ভিসা, পাসপোর্ট, আবাসন, মেডিক্যাল সুবিধা, সৌদি আরব গমন, প্রত্যাগমন ইত্যাদি বিষয়ে সহজে সেবাগ্রহণ করতে পারছেন। ২০২২ সালে বাংলাদেশের হজ ব্যবস্থাপনা বিশ্বব্যাপী প্রশংসিত হয়েছে।
“প্রযুক্তির সাথে কাবার পথে” প্রতিপাদ্য ধারণ করে ডিজিটাল হজ ব্যবস্থাপনার উদ্যোগ গ্রহণের ফলে সেবা প্রদানকারী ও গ্রহণকারীর সঙ্গে সরাসরি ডিজিটাল সম্পর্ক স্থাপিত হয়েছে। মধ্যস্বত্বভোগী-প্রতারক চক্রের দৌরাত্ম্য হ্রাস পেয়েছে। আমরা জনগণকে সময়োচিত, দায়িত্বশীল, স্বচ্ছ ও জবাবদিহিমূলক হজ ব্যবস্থাপনা উপহার দিতে পেরেছি।
হজযাত্রীদের স্বাস্থ্য নিরাপত্তা নিশ্চিতে আমরা ই-হেলথ প্রোফাইল প্রবর্তন করেছি। সৌদি আরবে অসুস্থ হজযাত্রীদের সুশৃঙ্খলভাবে সেবা প্রদানে কিউ ব্যবস্থাপনা সিস্টেম চালু করা হয়েছে। হজযাত্রীরা কোনও প্রকার ভোগান্তি ছাড়াই সৌদি ই-ভিসা সিস্টেমের মাধ্যমে ভিসার আবেদন করে ভিসা সংগ্রহ করতে পারছেন। মক্কা রোড সার্ভিসের আওতায় বাংলাদেশি হজযাত্রীরা এ বছর থেকে শতভাগ হজযাত্রী সৌদি পর্বের ইমিগ্রেশন ঢাকায় হযরত শাহজালাল বিমান বন্দরে সম্পন্ন করতে পারবেন ফলে জেদ্দা হজ টার্মিনালে দীর্ঘ অপেক্ষা দূর হবে।
হজ ফ্লাইট ব্যবস্থাপনা ও মনিটরিংয়ের মাধ্যমে ফ্লাইট বিপর্যয় রোধ করা সম্ভব হচ্ছে। হজযাত্রীদের লাগেজ হারানো এবং এ বিষয়ক অব্যবস্থাপনা আমরা দূর করেছি। প্রত্যেক হজযাত্রীকে এসএমএস-এর মাধ্যমে হজ বিষয়ক নোটিফিকেশন প্রদান করা হচ্ছে। এছাড়াও রয়েছে হজ বিষয়ক কল সেন্টার ১৬১৩৬।
তিনি আরও বলেন, হজের জন্য বাংলাদেশের আবেদনকারীর সংখ্যা বেশি হওয়ায় আমাদের প্রাক-নিবন্ধনের প্রক্রিয়া বছরব্যাপী চলতে থাকে। প্রাক-নিবন্ধনের পর আবেদনকারীরা ন্যায্যতার ভিত্তিতে ক্রমানুযায়ী হজে যাওয়ার সুযোগ পেয়ে থাকেন। কেউ প্রাক-নিবন্ধনের পর তা বাতিল করতে চাইলে অনলাইনে আবেদন করে সহজেই ইএফটির মাধ্যমে অর্থ ফেরত পাচ্ছেন। চূড়ান্তভাবে নির্বাচিত হজযাত্রীরা ডিজিটালভাবে নিবন্ধন সম্পন্ন করে থাকেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা বিমানের হজ পূর্ববর্তী খালি ফ্লাইটে জমজমের পানি আনার ব্যবস্থা করেছি। হজযাত্রীগণ ঢাকা, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিমানবন্দরে জমজমের পানি গ্রহণ করছেন। জেদ্দা, মক্কা ও মদিনায় হজ প্রশাসনিক দল, হজ চিকিৎসক দল, হজ সহায়তাকারী দল এবং আইটি টিম প্রেরণ করা হয়েছে।
তিনি বলেন, আমরা ‘হজ ও ওমরাহ ব্যবস্থাপনা আইন-২০২১’ প্রণয়ন করেছি; এর ফলে হজ কার্যক্রমে অব্যবস্থাপনা, অনিয়ম ও অসদাচরণের অভিযোগের প্রতিকার সহজ হচ্ছে। হজযাত্রীদের সঙ্গে প্রতারণা ও হয়রানি করেছে এমন এজেন্সিগুলোর লাইসেন্স বাতিল, জামানত বাজেয়াপ্ত ও আর্থিক জরিমানাসহ বিভিন্ন ফৌজদারি শাস্তির ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে ধর্ম প্রতিমন্ত্রী ফরিদুল হক খান, বেসরকারি বিমান পরিবহন ও পর্যটন প্রতিমন্ত্রী মাহবুব আলী, সংসদ সদস্য হাবিব হাছান, ধর্ম বিষয়ক সচিব কাজী এনামুল হাসান, ঢাকায় নিযুক্ত সৌদি রাষ্ট্রদূত ঈসা বিন ইউসুফ আল দুহাইলান, হজ এজেন্সিস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (হাব) সভাপতি এম শাহাদাত হোসাইন তসলিমসহ ১৪০ হজযাত্রী উপস্থিত ছিলেন।
এ বছরের হজ ফ্লাইট শুরু হচ্ছে শনিবার (২০ মে) রাতে। প্রি-হজ ফ্লাইটে মোট ১৬০টি ডেডিকেটেড ফ্লাইট পরিচালনা করবে বাংলাদেশ বিমান। প্রথম ফ্লাইট বিজি ৩০০১ ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে জেদ্দার উদ্দেশে যাত্রা করবে।
চাঁদ দেখা সাপেক্ষে চলতি বছরের ২৭ জুন পবিত্র হজ অনুষ্ঠিত হবে। এ বছর বাংলাদেশ থেকে এক লাখ ২৭ হাজার ১৯৮ জন হজ করতে পারবেন। এরমধ্যে সরকারি ব্যবস্থাপনায় ১৫ হাজার জন ও অবশিষ্ট এক লাখ ১২ হাজার ১৯৮ জন বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় হজ করার সুযোগ পাবেন।
ইতোমধ্যে হজযাত্রীদের নিবন্ধন শেষ হয়েছে। তবে হজের খরচ বেশি হওয়ায় কোটা পুরোপুরি পূরণ করা যায়নি। চলতি বছর বাংলাদেশ থেকে হজ পালনে সাড়ে ৩ হাজার হজযাত্রীর কোটা খালি থাকবে।
Leave a Reply