অনলাইন সীমান্তবাণী ডেস্ক : ময়মনসিংহে তৃতীয় লিঙ্গের জনগোষ্ঠী হিজড়াদের জন্য নির্মাণ করা হয়েছে মসজিদ। নগরীর ৩৩ নম্বর ওয়ার্ডের দক্ষিণ চর কালিবাড়ী এলাকায় ব্রহ্মপুত্র নদের তীরে সরকারি জমিতে নির্মিত টিনশেডের এই মসজিদে ধর্মীয় শিক্ষা গ্রহণসহ নিয়মিত নামাজ আদায় করছেন তারা। এ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে প্রসংশায় ভাসছেন হিজড়ারা।
স্থানীয় সূত্র জানায়, দক্ষিণ চর কালিবাড়ী এলাকায় সরকারের আবাসন প্রকল্পের ৩৩টি ঘরে তৃতীয় লিঙ্গের জনগোষ্ঠীর ৪০ জন বসবাস করছেন। গত ২৬ জানুয়ারি আবাসন প্রকল্পের পাশেই তাদের জন্য ৩৩ শতাংশ জায়গায় মসজিদ ও কবরস্থান উদ্বোধন করেন বিভাগীয় কমিশন উম্মে সালমা তানজিয়া। পরে তৃতীয় লিঙ্গের জনগোষ্ঠীর সদস্যরা নিজেদের শ্রম ও অর্থে স্থাপন করেন ‘দক্ষিণ চর কালীবাড়ি আবাসন জামে মসজিদ’। রোজার ৩ দিন আগে মসজিদটি উদ্বোধন করা হয়েছে।
স্থানীয়রা জানান, হিজড়াদের আচার-আচরণে অনেকে বিরক্ত। কিন্তু অনেক দিন ধরে এই এলাকায় বসবাসকারী হিজড়াদের আচার-আচরণে এমনটি লক্ষ্য করা যায়নি। তারা সামাজিকভাবে সবার সঙ্গে বসবাস করছেন। মসজিদ নির্মাণ করে তারা ধর্মীও শিক্ষাসহ মসজিদে নিয়মিত নামাজ আদায় করছেন। তাদের পাশাপাশি স্থানীয় মুসল্লিরাও মসজিদে আসছেন।
স্থানীয় মাইনুল হোসেন জানান, প্রথমে ভেবেছিলাম হিজড়ারা মসজিদ বানালেও নিয়মিত নামাজ পড়বে না। তবুও আমার মতো অনেকেই মনে করেছে দেখি তারা আসলেই ইসলামের পথে আসতে পারে কিনা- তবে এখন তারা ধর্মীয় শিক্ষাসহ শুদ্ধভাবে নামাজ আদায়ের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। এজন্য তারা নিঃসন্দেহে প্রশংসার দাবিদার।
সোনিয়া হিজড়া বলেন, ছোটবেলায় ধর্মীয় শিক্ষার জন্য মক্তবে যেতাম। কিন্তু সবাই যখন বুঝতে পারেন আমি তৃতীয় লিঙ্গের, তখন থেকে আমাকে আর মসজিদে ঢুকতে দেওয়া হতো না। এখন থেকে আর কেউ আমাকে মসজিদে নামাজ পড়তে বাধা দিতে পারবে না।
জয়িতা তনু হিজড়া বলেন, নিজেদের নির্মিত মসজিদে আমরা ধর্মীয় শিক্ষা গ্রহণসহ নামাজ আদায় করবো, এটি আমাদের স্বপ্ন ছিল। কারণ সাধারণ মসজিদে আমাদের নামাজ আদায় করতে দেওয়া হয় না। এখন নিজেদের মসজিদে নামাজ আদায় করে প্রশান্তি পাচ্ছি। স্থানীয় লোকজনও আমাদের সঙ্গে নামাজ আদায় করছেন।
হিজড়া কল্যাণ সংস্থার প্রতিষ্ঠাতা মুফতি আবদুর রহমান আজাদ বলেন, আগেও শহরে মসজিদ তৈরির উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল, কিন্তু স্থানীয়দের প্রতিবাদে তা আর হয়ে ওঠেনি। তবে এই মসজিদ নির্মাণে আমাদের জায়গা দিয়ে সহযোগিতা করেছেন বিভাগীয় কমিশনার।
এছাড়াও স্থানীয়রাও কেউ বাঁধা দেয়নি। ফলে তাদের সহযোগিতার কারণেও নির্মাণ সম্ভব হয়েছে। এখন মসজিদের পাঁচ কাতারে কমপক্ষে ৬০ জন মুসল্লি হয়। নিয়মিত নামাজ আদায় করা হচ্ছে।
দক্ষিণ চর কালীবাড়ি আবাসন জামে মসজিদের ইমাম আবদুল মোতালেব বলেন, আমরা সবাই আল্লাহর সৃষ্টি। কারো সঙ্গে বৈষম্যমূলক আচরণ ধর্মে নেই। সমাজের আর দশজনের মতো হিজড়ারাও মানুষ। তারা যেহেতু ধর্মীয় শিক্ষার পাশাপাশি নামাজ আদায় করতে চায়, তাই তাদেরকে সহযোগিতা করা উচিৎ। তারা খুব আন্তরিক। এলাকাবাসীও তাদের পছন্দ করে।
ময়মনসিংহ বিভাগীয় কমিশনার উম্মে সালমা তানজিয়া স্থানীয় সাংবাদিকদের বলেন, প্রথমে তারা আমার কাছে এসে অভিযোগ দিয়েছিল মসজিদে নামাজ পাড়তে বাঁধা দেওয়া হচ্ছে। পরে তারা নিজেরাই মসজিদ করতে আবেদন করে। যেহেতু আবাসন প্রকল্পের পাশেই খাস জায়গা ছিল, তাই মসজিদ নির্মাণে তাদেরকে জায়গা দিয়েছি। ধর্মের প্রতি তাদের আগ্রহ এবং স্থানীয় বাসিন্দাসহ ইমামদের সর্বাত্মক সহযোগিতার কারণে কাজটি সহজেই সম্পন্ন হয়েছে।
Leave a Reply