অনলাইন সীমান্তবাণী ডেস্ক : গৌতম আদানির বাণিজ্যিক সাম্রাজ্য টালমাটাল করে দেওয়া হিনডেনবার্গ রিসার্চ আরও একটি অনুসন্ধানী প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। তাদের এবারের নিশানায় যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক বহুজাতিক প্রযুক্তি সংস্থা ব্লক ইনকরপোরেটেড। বৃহস্পতিবার (২৩ মার্চ) মোবাইল পেমেন্ট সম্পর্কিত সংস্থাটির বিষয়ে বিশাল দুর্নীতি লুকানোর অভিযোগ তোলে হিনডেনবার্গ। আর তারপর থেকেই হয়তো ভরাডুবি শুরু হয়েছে এর সহ-প্রতিষ্ঠাতা জ্যাক ডরসির। খবর ব্লুমবার্গের।
প্রতিবেদন প্রকাশের কয়েক ঘণ্টার মধ্যে ৫২ কোটি ৬০ লাখ মার্কিন ডলারের সম্পদ হারিয়েছেন ব্লকের প্রধান নির্বাহী (সিইও)। গত বছরের মে মাসের পর থেকে এত বড় আর্থিক ক্ষতির মুখে আর পড়েননি তিনি।
ব্লুমবার্গ বিলিয়নিয়ার ইনডেক্স অনুসারে, ১১ শতাংশ কমে যাওয়ার পর ডরসির বর্তমান সম্পদের মূল্যমান দাঁড়িয়েছে ৪৪০ কোটি ডলার।
শুধু ডরসি নিজে ডুবছেন তা নয়, প্রতিবেদন প্রকাশের পর ধস নেমেছে ব্লকের শেয়ারেও। বার্তা সংস্থা রয়টার্সের খবর অনুসারে, বৃহস্পতিবার সংস্থাটির যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক শেয়ারের ১৫ শতাংশ দরপতনের পর শুক্রবার অস্ট্রেলিয়াভিত্তিক শেয়ারের দর কমেছে প্রায় ২০ শতাংশ।
হিনডেনবার্গের নতুন প্রতিবেদনে দাবি করা হয়েছে, ডরসির ব্লক ইনকরপোরেটেড ব্যবহারকারীদের মেট্রিক্স (ইউজার মেট্রিক্স) বাড়িয়ে দেখিয়েছে।
গবেষণা সংস্থাটি বলছে, ব্লকের সাবেক কর্মচারীদের যত অ্যাকাউন্ট তারা পর্যালোচনা করেছে, তার মধ্যে ৪০ থেকে ৭৫ শতাংশই ভুয়া অথবা জালিয়াতির সঙ্গে জড়িত অথবা একই ব্যক্তির সঙ্গে সংযুক্ত অতিরিক্ত অ্যাকাউন্ট ছিল।
তবে হিনডেনবার্গের তোলা সব অভিযোগই অস্বীকার করেছে ব্লক কর্তৃপক্ষ। আদানি গ্রুপের মতো তারাও শর্ট-বিক্রেতা সংস্থাটির বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার হুমকি দিয়েছে।
টুইটারের অন্যতম সহ-প্রতিষ্ঠাতা জ্যাক ডরসি। তবে তার বেশিরভাগ ব্যক্তিগত সম্পত্তি এখন ব্লকের সঙ্গে সম্পর্কিত। ব্লুমবার্গ সম্পদ সূচক অনুসারে, ব্লক ইনকরপোরেটডের বর্তমান মূল্যমান প্রায় ৩০০ কোটি ডলার। এর বাইরে টুইটারে ৩৮ কোটি ৮০ লাখ ডলার মূল্যের শেয়ার রয়েছে ডরসির।
টালমাটাল আদানি গ্রুপ : চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে ভারতের আদানি গ্রুপকে নিয়ে একটি গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশ করে হিনডেনবার্গ রিসার্চ। তার পরপরই পতন শুরু হয় আদানি সাম্রাজ্যের।
অনুসন্ধানী ওই প্রতিবেদনে গৌতম আদানির বিরুদ্ধে ‘করপোরেট জগতের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় ধোঁকাবাজি’র অভিযোগ তোলে হিনডেনবার্গ রিসার্চ। তাদের দাবি, আদানি গ্রুপের কোম্পানিগুলো কয়েক দশক ধরে শেয়ারবাজারে ধোঁকাবাজি এবং হিসাবপত্র জালিয়াতি করে আসছে।
হিনডেনবার্গ আরও দাবি করেছে, আদানির কোম্পানিগুলোর কাঁধে বিশাল ঋণ রয়েছে, যা পুরো গ্রুপটির অর্থনৈতিক ভিত্তিকে অনিশ্চিত করে তুলেছে।
গত ২৪ জানুয়ারি ওই প্রতিবেদন প্রকাশের পর থেকে এ পর্যন্ত আদানি গ্রুপের তালিকাভুক্ত সাতটি কোম্পানি প্রায় ১৪ হাজার কোটি ডলারের বাজারমূল্য হারিয়েছে। ধস নেমেছে আদানির ব্যক্তিগত সম্পদেও। প্রতিবেদনটি প্রকাশের আগে তিনি ছিলেন বিশ্বের তৃতীয় শীর্ষধনী। কিন্তু সম্পত্তি কমতে কমতে ধনীদের তালিকায় তিনি এখন ২১তম।
তবে হিনডেনবার্গের তোলা সব অভিযোগই অস্বীকার করেছে আদানি গ্রুপ। তাদের দাবি, আদানির বিরুদ্ধে জালিয়াতির অভিযোগ তোলা ভারতের পরিকল্পিত আক্রমণের অংশ।
আদানি গ্রুপের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ তদন্ত করতে গত ২ মার্চ পাঁচ সদস্যের একটি স্বাধীন প্যানেল গঠনের নির্দেশ দিয়েছেন ভারতের সুপ্রিম কোর্ট।
Leave a Reply