বশির আল-মামুন, চট্টগ্রাম : চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা বিএনপির বিলুপ্ত হওয়া আহ্বায়ক কমিটির তিন নেতার প্রাথমিক সদস্যপদও স্থগিত করা হয়েছে। রবিবার (১ সেপ্টেম্বর) রাতে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী স্বাক্ষরিত এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।
এতে বলা হয়, চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা বিএনপির সাবেক আহ্বায়ক আবু সুফিয়ান, প্রথম যুগ্ম আহ্বায়ক মো. এনামুল হক এনাম ও আহ্বায়ক কমিটির সদস্য এস এম মামুন মিয়ার প্রাথমিক সদস্যসহ সকল পর্যায়ের পদ স্থগিত করা হয়েছে। পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত এ আদেশ কার্যকর থাকবে।
এর আগে রবিবার বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা বিএনপির কমিটি বিলুপ্ত করা হয়।
ওই চিঠিতে বলা হয়, আজ রবিবার দলের গৃহীত সিদ্ধান্ত অনুযায়ী চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটি বিলুপ্ত করা হয়েছে। পরবর্তী কমিটি ঘোষিত না হওয়া পর্যন্ত চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা বিএনপির নামে কোনও সাংগঠনিক কার্যক্রম চালানো যাবে না।
বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক ব্যারিস্টার মীর মোহাম্মদ হেলাল উদ্দিন এসব তথ্য নিশ্চিত করেন।
এর আগে এস আলম গ্রুপের বেশ কয়েকটি বিলাসবহুল গাড়ি সরিয়ে নিতে সহায়তার অভিযোগে চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা বিএনপির তিন নেতাকে শোকজ করা হয়েছে। নোটিশ পাওয়া বিএনপির এই নেতারা হলেন— চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা আহ্বায়ক আবু সুফিয়ান, যুগ্ম আহ্বায়ক এনামুল হক এনাম এবং কর্ণফুলী থানা বিএনপির আহ্বায়ক এস এম মামুন মিয়া। তাদের ২৪ ঘণ্টার মধ্যে শোকজের জবাব দিতে (কারণ দর্শাতে) বলা হয়।
এদিকে, এস আলম গ্রুপের গাড়ি বের করে নিরাপদে পৌঁছে দেওয়ার সঙ্গে জড়িত নয় বলে দাবি করেছেন চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা বিএনপির আহ্বায়ক আবু সুফিয়ান এবং দক্ষিণ জেলা বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক এনামুল হক এনাম।
শনিবার (৩১ আগস্ট) দুপুরে চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা বিএনপির কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন ডেকে এ দাবি করেন তারা।
এর আগে, নগরীর কর্ণফুলী থানাধীন মইজ্জার টেক এলাকায় এস আলম গ্রুপের ওয়্যারহাউজ ফ্যাক্টরি থেকে একাধিক বিলাসবহুল গাড়ি বৃহস্পতিবার (২৯ আগস্ট) রাতের আঁধারে নিরাপদে সরিয়ে নেওয়ার অভিযোগ ওঠে। এসব গাড়ি সরাতে চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা বিএনপির আহ্বায়ক আবু সুফিয়ান ও যুগ্ম আহ্বায়ক এনামুল হক এনামসহ দলটির কয়েকজন নেতার বিরুদ্ধে সহায়তার অভিযোগ উঠে। এ সংক্রান্ত একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও ব্যাপক ভাইরাল হয়েছে।
উল্লেখ্য, ২০১৯ সালের ২ অক্টোবর ৬৫ সদস্যবিশিষ্ট চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটি গঠন করা হয়। এতে আবু সুফিয়ানকে আহ্বায়ক ও এনামুল হক এনামকে প্রথম যুগ্ম আহ্বায়ক করা হয়।
চট্টগ্রাম বন্দরের অঘোষিত রাজা তরফদার রুহুল আমিন
বশির আল-মামুন,চট্টগ্রাম ব্যুরো : দেশের বহুল আলোচিত সমালোচিত চট্টগ্রাম বন্দর ভিত্তিক ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান সাইফ পাওয়ার টেক এর মালিক ও ব্যবস্হাপনা পরিচালক বন্দর খেকো খ্যাত দূর্নীতির মহারাজা তরফদার রুহুল আমীনে সীমাহীন দূর্নীতির অজানা কাহিনী বেরিয়ে আসতে শুরু করেছে। বিগত স্বৈরাচারী সরকারের সময়ে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের আড়ালে গত ১৬ বছরে বন্দর থেকে হাতিয়ে নিয়েছেন ১০ হাজার কোটি টাকা। এই টাকা ব্যবসার নাম দিয়ে আমেরিকা সহ বিভিন্ন দেশে পাচারও করে দিয়েছেন।
খোজ নিয়ে জানাগেছে দুবাইতে থামাক এক্সেল টাওয়ারে রয়েছে তার বিলস বহুল অফিস। রয়েছে ২ টি আলিশান ফ্লাট। ঢাকার পূর্বাচলে আছে নামে বেনামে ১০০ টি প্লট। আমেরিকায় টাকা পাচার করে কাউচার নামক তার এক স্বজনের মাধ্যমে বিলিয়ন ডলারের ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছেন। বন্দরের যন্ত্রপাতি ক্রয়ের নামে বিদেশে পাচার করতেন টাকা। ২০০৪ সাল থেকে যারা রাস্ট্র ক্ষমতায় ছিলেন রূপ বদলীয়ে রুহুল আমীন রাতারাতি তাদের লোক বনে যেতেন। সে থেকে আইনকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে দেশের সব বন্দরের কন্টেইনার হ্যান্ডেলিং এর কাজ বর্তমানে ১৬ বছর পর্যন্ত তার কব্জায় রেখেছেন। অভিযোগ উঠেছে কোথাও টেন্ডার কোথাও টেন্ডার বিহীন টিবিএফ পদ্ধতিতে নিয়ে নিতেন কাজ গুলা। এ ভাবে চট্টগ্রাম ও মোংলা সহ সব বন্দের ঠিকাদারী নেন তিনি।
জানাগেছে ২০০৫ সালে বিএনপি সরকারের মন্ত্রীর লোক সেজে প্রথম চট্টগ্রাম বন্দরে ডোকেন তরফদার রুহুল আমীন। এর পর ওয়ান ইলেভেনের সময় তত্বাবধায়ক সরকারকে ম্যানেজ করে ঠিকাদারি অব্যাহত রেখে বন্দরের কোষাগার থেকে হাজার কোটি টাকা হাতিয়ে নেন। ২০০৮ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসলে আবারও আওয়ামীলীগার সেজে দেশের সব বন্দরের কন্টেইনার খাতে ঠিকাদারি পাকাপোক্ত করেন। ঠিকাদারীর আড়ালে তরফদার এবার হাতিয়ে নেন ১০ হাজার কোটি টাকা। শুধু ঠিকাদারীই নয় এর পাশাপাশি হাতিয়ে নেন বন্দর শ্রমিকের লক্ষ কোটি টাকাও।
তরফদার রুহুল আমীন তার কন্টেইনার হ্যান্ডেলিং এর ঠিকাদারী ধরে রাখার জন্য এবার আওয়ামী সরকারের ক্রীড়াঙ্গনে নজর দেন। এসব ক্রীড়ায় তিনি কোটি কোটি টাকা বিনিয়োগ করেন। কোটি কোটি টাকা খরচ করে সারা দেশে শেখ কামাল টুর্নামেন্টের আয়োজন করতেন হাছিনা সরকারকে খুশি রাখার জন্য। এমনকি শেখ রাসেল ক্লাবের যাবতীয় ক্রীড়া সরঞ্জাম কিনে দিয়েছিলেন তরফদার রহুল আমীন। এমনও অভিযোগ সাবেক নৌ প্রতিমন্ত্রী কে দিয়ে বন্দরের কন্টেইনার হ্যান্ডলিং খরচ ৮ শতাংশ বাড়িয়ে নিয়ে অর্থ হাতিয়ে নিয়েছিলেন। সর্বশেষে বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের সভাপতি হওয়ার খায়েশ জেগে ছিল তার। বর্তমানে অন্তর্বর্তী সরকারের আস্হাবাজন হয়ে বন্দর নিয়ন্ত্রণ করে যাচ্ছেন।
এদিকে অভিযোগ উঠেছে একজন ঠিকাদার একটি বন্দরের ঠিকাদারী করার নিয়ম থাকলেও আইন অমান্য করে দেশের সব বন্দের ঠিকাদারী নিজের হাতে রেখে তিনি লক্ষ কোটি টাকার মালিক।
তরফদার রুহুল আমিন চট্টগ্রাম বন্দরের কন্টেইনার হেন্ডেলিং ছাড়াও নিউ মুরিং কন্টেইনার টার্মিনালের ৪ বার্থ, ঢাকার কেরানীগঞ্জ গঞ্জ পান্হ কন্টেইনার টার্মিনাল, ওভারফ্লো ও সাউথ কন্টেইনার টার্মিনাল একা নিয়ে নেন। ভাগিয়ে নেন সড়ক, মহাসড়ক ও বিদ্যুতের কাজও। হাসিনা সরকারকে একক ভাবে ম্যানেজ করে তরফদার রুহুল আমীন হয়ে যান মাফিয়া ডন।
এদিকে সাইফ পাওয়ারটেক লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক তরফদার মো. রুহুল আমিনের অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত নিয়েছে দুনীতি দমন কমিশন (দুদক)। দীর্ঘদিন ধরে অভিযোগ ছিল সরকারি প্রতিষ্ঠানকে প্রভাবিত করে বন্দর পরিচালনা কাজে একচেটিয়া বাণিজ্য প্রতিষ্ঠা করেছে বেসরকারি বার্থ অপারেটর সাইফ পাওয়ারটেক লিমিটেড।
দুদক প্রধান কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক মুহাম্মদ জয়নাল আবেদীনকে অনুসন্ধানকারী কর্মকর্তা নিয়োগ দিয়েছে কমিশন। তাঁকে নির্ধারিত সময়ে অনুসন্ধান করে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। অনুসন্ধানের তদারককারী কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন দুদকের পরিচালক সৈয়দ ইকবাল হোসেন।
দুদকের দায়িত্বশীল সূত্র জানায়, সাইফ পাওয়ারটেক লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালকের বিরুদ্ধে অভিযোগ, তিনি একচেটিয়া বাণিজ্য প্রতিষ্ঠা করে এবং রাজস্ব ফাঁকির মাধ্যমে কোটি কোটি টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জন পূর্বক বিদেশে অর্থ পাচারসহ মানিলন্ডারিং করছেন। অভিযোগ পেয়ে দুদক বিষয়টি অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত নেয়।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ২০০৭ সালে কোনো লাইসেন্স ছাড়াই সাইফ পাওয়ারটেক লিমিটেড চট্টগ্রাম বন্দরের কনটেইনার হ্যান্ডেলিংয়ের কাজ নেয়। পরবর্তীতে প্রতিষ্ঠানটি একাই বন্দরের কনটেইনার হ্যান্ডেলিংয়ের প্রায় ৭০ ভাগ কাজ নিয়ন্ত্রণে নিয়ে নেয়। এ ছাড়া ঢাকা ইনল্যান্ড কনটেইনার ডিপো (আইসিডি), পানগাঁও কনটেইনার টার্মিনাল (পিসিটি), চট্টগ্রাম বন্দরের ওভারফ্লো কনটেইনার ইয়ার্ড এবং বন্দরের যন্ত্রপাতি সরবরাহ ও রক্ষণাবেক্ষণের কাজও একচেটিয়া পায় সাইফ পাওয়ারটেক।cn
ইসলামী ব্যাংকে ১৩০০ কোটি টাকা ঋণ রেখে পালাচ্ছিল আনসারুল, বিমান বন্দরে আটক
বশির আল-মামুন, চট্টগ্রাম ব্যুরো ; ১৩০০ কোটি টাকার ঋণ পরিশোধ না করে দুবাইয়ে পালিয়ে যাওয়ার সময় আনসারুল আলম চৌধুরী নামে এক ঋণখেলাপিকে চট্টগ্রাম শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমান বন্দরে আটক করা হয়েছে। সোমবার (২ সেপ্টেম্বর) সকাল ৯টা ৪৫ মিনিটে তাকে আটক করা হয়।
চট্টগ্রাম শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের জনসংযোগ কর্মকর্তা ইব্রাহিম খলিল এ তথ্য নিশ্চিত করে বলেন, আনসারুল আলম চৌধুরী একজন বড় ঋণখেলাপি। সকালে বিএস-৩৪৩ ফ্লাইটযোগে দুবাই যাওয়ার সময় বহির্গমন টার্মিনালে তাকে আটক করা হয়।
তিনি সিভিল এভিয়েশন ও বিমানবন্দরের বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার রাজনৈতিক সন্দিগ্ধ তালিকাভুক্ত ছিলেন বলে জানান বিমানবন্দরের এই কর্মকর্তা।
তিনি আরও জানান, আটক আনসারুল আলম চৌধুরীর ইসলামী ব্যাংক চট্টগ্রামের চাক্তাই শাখা থেকে এক হাজার ৩০০ কোটি টাকার বেশি ঋণ রয়েছে। এসব ব্যাংক ঋণ তিনি পরিশোধ করছেন না। দেশ ছেড়ে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা চালিয়েছেন।
Leave a Reply