অনলাইন সীমান্তবাণী ডেস্ক : ইরানের বিরুদ্ধে ব্যাপক পরিসরে মার্কিন নিষেধাজ্ঞা পরিকল্পনাকারী হিসেবে পরিচিত রিচার্ড নেফিউ স্বীকার করেছেন: তেহরানের বিরুদ্ধে ওয়াশিংটনের নিষেধাজ্ঞা অকার্যকর হয়ে পড়েছে।
বারাক ওবামা প্রশাসনে ইরানের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা পরিকল্পনাকারী রিচার্ড নেফিউ এবং ওয়াশিংটনের নিকট প্রাচ্য নীতির থিঙ্ক ট্যাঙ্কের সদস্য বলেছেন, আজকের নতুন পরিবর্তিত পরিস্থিতি এবং ইরানের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা বাস্তবায়ন করার কাজ বিরাট চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে। পূর্ববর্তী বছরের মতো ইরানের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞাগুলো ফের আরোপ করা কঠিন হয়ে পড়েছে। ওয়াশিংটন থিঙ্ক ট্যাঙ্কের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত এক লেখায় রিচার্ড নেফিউ স্বীকার করেছেন যে বর্তমান পরিস্থিতিতে ইরানের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞা বাস্তবায়ন করা আগের মতো সম্ভব হচ্ছে না।
নিষেধাজ্ঞা স্বয়ংক্রিয়ভাবে বাস্তবায়িত হয় না : রিচার্ড নেফিউ তার এই নিবন্ধে, ইরানের বিরুদ্ধে ঐকমত্য গড়ে তোলার মার্কিন প্রচেষ্টার ব্যর্থতার কথা উল্লেখ করে বলেছেন যে, কারো কারো কল্পনার বিপরীতে, আসলে নিষেধাজ্ঞাগুলোর পরিকল্পনা, পর্যবেক্ষণ ও তা বাস্তবায়ন অত্যন্ত কঠিন কাজ এবং এর জন্য প্রচুর শক্তির প্রয়োজন।
প্রাক্তন এই আমেরিকান কর্মকর্তা এই পরিস্থিতিটিকে একটি হাঁসের সাথে তুলনা করেছেন যেটি শান্তভাবে পানিতে সাঁতার কাটছে কিন্তু লড়াই করছে পানির নিচে ।
তিনি নিষেধাজ্ঞা বাস্তবায়নের অসুবিধা সম্পর্কে লিখেছেন : নিষেধাজ্ঞাগুলো তাত্ত্বিকভাবে নিজে নিজেই বাস্তবায়িত হবে বলে মনে হতে পারে, কিন্তু বাস্তবে তা নয়। উদাহরণস্বরূপ, ইরান তার ক্ষেপণাস্ত্রের যন্ত্রাংশ আমদানির উপর নিষেধাজ্ঞা মেনে চলতে অস্বীকার করে এবং বিভিন্ন কোম্পানি, শিপিং কোম্পানি ও ব্যাংকগুলো অনেক ক্ষেত্রে নিষেধাজ্ঞা বাস্তবায়নে সহযোগিতা করে না।
রিচার্ড নেফিউ এর মতে, এই জটিলতার কথা চিন্তা করে পাঁচ যোগ এক গ্রুপের সাথে ইরানের পরমাণু চুক্তির আগে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ইরান বিরোধী নিষেধাজ্ঞাগুলো বাস্তবায়ন না করার পরিণতি সম্পর্কে বিভিন্ন দেশের সরকার, ব্যাংক এবং পরিষেবা প্রদানকারী সংস্থাগুলোকে সতর্ক করেছিল।
কিন্তু নিষেধাজ্ঞা তেমন বাস্তবায়িত না হওয়ায় মার্কিন সরকার অবশেষে “দ্বিতীয় ধাপের নিষেধাজ্ঞা” নামে একটি কাঠামো তৈরি করে হুমকির দিয়েছে, যে কেউ ইরানের সাথে লেনদেনে জড়িত থাকবে তাদের মার্কিন আর্থিক ব্যবস্থা বা সুবিধা থেকে বাদ দেওয়া হবে।
রিচার্ড নেফিউ লিখেছেন, “বর্তমানে ইরানীরা নিজেদের এবং তাদের সম্পদকে আরও দক্ষতার সাথে রক্ষা করছে। ট্রাম্পের সর্বোচ্চ চাপ প্রয়োগের পদ্ধতি ইরানের অর্থনীতিতে নেতিবাচক প্রভাব ফেললেও এবং ব্যাপক চাপের মুখে থেকেও তেহরান প্রস্তাবিত নতুন পারমাণবিক চুক্তির মেনে নেয়নি।”
ইরানের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞা জোরদার করা এটি বড় চ্যালেঞ্জ : এই প্রাক্তন মার্কিন কর্মকর্তা বৈশ্বিক পরিবর্তনের দিকে ইঙ্গিত করে বলেছেন: সাম্প্রতিক বছরগুলোতে,ইরানের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা বহুগুণে বেড়েছে। কিন্তু ইসলামী প্রজাতন্ত্র ইরান এখন অতীতের তুলনায় আরো শক্তিশালী হয়েছে এবং পরমাণু কেন্দ্রের হাজার হাজার সেন্ট্রিফিউজ চালু রেখেছে।
প্রতিবেদনের শেষে তিনি আরো বলেছেন, আজ এটা সত্য যে ২০১৫ সালে পাঁচ যোগ এক গ্রুপের সাথে ইরানের যে পরমাণু চুক্তি হয়েছিল তার প্রতি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় সমর্থন জানিয়েছিল। তাই ইরান বিরোধী এই নিষেধাজ্ঞা তীব্রতর বা আরো কঠোর করা অত্যন্ত কঠিন হবে। কেননা বিশ্বের দেশগুলো ইরানের শান্তিপূর্ণ পারমাণবিক কর্মসূচিকে হুমকি হিসাবে দেখছে না।
ইরানের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা আরোপের এই পরিকল্পনাকারীর মতে, তেহরানের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা বাস্তবায়নের জন্য যে আন্তর্জাতিক সাহায্য-সহযোগিতা ও সমর্থন প্রয়োজন তা এ মুহূর্তে নেই।
Leave a Reply